بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا
كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلاَةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُم
مَّعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلْيَكُونُواْ مِن
وَرَآئِكُمْ وَلْتَأْتِ طَآئِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّواْ فَلْيُصَلُّواْ مَعَكَ
وَلْيَأْخُذُواْ حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ
যখন আপনি তাদের
মধ্যে থাকেন, অতঃপর
নামাযে দাঁড়ান, তখন
যেন একদল দাঁড়ায় আপনার সাথে এবং তারা যেন স্বীয় অস্ত্র সাথে নেয়। অতঃপর যখন তারা
সেজদা সম্পন্ন করে, তখন
আপনার কাছ থেকে যেন সরে যায় এবং অন্য দল যেন আসে, যারা নামায পড়েনি। অতঃপর তারা যেন আপনার সাথে নামায পড়ে
এবং আত্মরক্ষার হাতিয়ার সাথে নেয়। (সূরা নিসা ১০২)
উক্ত আয়াতের আলোকে অধিকাংশ ফকিহর মত, যে পুরুষ জামাতের সঙ্গে নামায আদায়
করতে সক্ষম তার জন্য জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করা ওয়াজিব।
ইবন মুনযির রহ.
বলেন,
ففي أمر الله
بإقامة الجماعة في حال الخوف : دليل على أن ذلك في حال الأمن أوجب
(উক্ত আয়াতে) আল্লাহ
তাআলা ভয়ের পরিস্থিতিতে জামাত কায়েমের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা একথার প্রমাণ যে,
এটি সাধারণ অবস্থায় তিনি ওয়াজিব করেছেন।
(আলআওসাত ৪/১৩৫)
এজন্য বিনা উযরে
মসজিদের জামাতে শরিক না হলে গুনাহ হয়। (এলাউস সুনান ৪/১৬৬; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/২৭১)
পক্ষান্তরে যদি উযর থাকে অথবা যদি সে মুসাফির হয়
তাহলে তার জন্য জামাতে নামায না পড়ার অনুমতি আছে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَمَا جَعَلَ
عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
তিনি ধর্মের ব্যাপারে
তোমাদের উপর সংকট আরোপ করেন নি।। (সূরা হজ ৭৮)
ইবন কুদামা রহ.
বলেন,
وَيُعْذَرُ
فِي ترك الجماعة... الْخَائِفُ ; لِقَوْلِ النَّبِيِّ ﷺ الْعُذْرُ : خَوْفٌ أَوْ
مَرَضٌ. وَالْخَوْفُ , ثَلَاثَةُ أَنْوَاعٍ : خَوْفٌ عَلَى النَّفْسِ , وَخَوْفٌ
عَلَى الْمَالِ , وَخَوْفٌ عَلَى الْأَهْلِ
আর জামাত ছেড়ে
দেয়ার ব্যাপার ভীত ব্যক্তিকে মাযুর হিসবে গণ্য করা হবে। কেননা রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘উযর হল, ভয়
অথবা অসুস্থতা।’ আর ভয় তিন প্রকার-প্রাণের ভয়, সম্পদের ক্ষতির ভয় বা পরিবারের ক্ষতির ভয়। (আল মুগনী ১/৩৬৬)
বিনা ওজরে জামাত
পরিত্যাগকারীর নিন্দায় নবীজী কঠোর কথা বলেছেন। রাসূল সা: বলেন,
‘আমার প্রাণ যাঁর হাতে,
তাঁর শপথ করে বলছি,
আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ
দেই আর নামাজের আজান দেয়ার জন্য হুকুম দেই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি,
যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর
আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা
নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই’ (বুখারি,
হাদিস : ৬১৮)।
তবে কিছু অপারগতার
কারণে জামাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি আছে। যথা:
১. যদি মুষলধারে
বৃষ্টি হয় (বুখারি : ১১২৬)।
২. প্রচণ্ড ঠাণ্ডা,
ঘর থেকে বের হলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবল
আশঙ্কা থাকলে জামাতে শরিক না হওয়ার অবকাশ আছে (বুখারি : ৬২৬)।
৩. রাস্তায় বেশি
কাদা হলে (বদরুল মুনির : ৪/৪১৯)।
৪. অতি আঁধার হওয়া
(জমউল জাওয়ামে : ১/৩০৫৮)।
৫. রাতে যদি অতিমাত্রায়
মেঘ হয় (মুসনাদে আহমাদ : ৫৩০২)।
৬. অসুস্থ হলে
(আবু দাউদ : ৪৬৪)।
৭. দৃষ্টিহীন ব্যক্তির
জন্য (সহিহ বুখারি : ৬২৭)।
৮. এমন বৃদ্ধ,
যিনি মসজিদে আসতে সক্ষম নন (ইবনে মাজাহ
: ৭৮৫)।
৯. কোনো রোগীর
সেবাশুশ্রুষায় আত্মনিয়োজিত থাকলে (প্রাগুক্ত)।
১০. ঘন ঘন প্রস্রাব-পায়খানার
বেগ হলে (তিরমিজি : ১৩২)।
১১. বন্দী অবস্থায়
(ইবনে মাজাহ: ৭৮৫)।
১২. এক পা বা উভয়
পা কর্তিত হলে (আবু দাউদ : ৪৬৪)।
১৩. এমন রোগ হওয়া,
যার কারণে চলতে অক্ষম। যেমন অর্ধাঙ্গ রোগ
ইত্যাদি (প্রাগুক্ত)।
১৪. খানা সামনে,
সেও ক্ষুধার্ত,
মনের আকর্ষণ খানার দিকে। এমন অবস্থায় জামাতে
না গেলেও চলবে (সহিহ বুখারি : ৬৩১)।
১৫. সফরের প্রস্তুতি
গ্রহণের সময় (সহিহ বুখারি : ৩/৬৭)।
১৬. জামাতে নামাজ
আদায় করতে গেলে কোনো সম্পদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জামাত ত্যাগ করতে পারবে (আবু দাউদ
: ৪৬৪)।
১৭. জামাতে যাওয়ার
কারণে ট্রেন, ফ্লাইট
বা গাড়ি চলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে জামাতে শরিক না হওয়ার অনুমতি আছে (আবু দাউদ : ৪৬৪)। (সংগৃহিত)
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
অসুস্থতার কারণে,
অনুরূপভাবে নিজের ক্ষতির ভয়,
সম্পদের বা পরিবারের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে
কিংবা অন্য যুক্তিসঙ্গত উযর থাকলে অথবা যদি মুসাফির হয় তাহলে মসজিদে জামাতে না গিয়ে
বাসা-বাড়িতে নামায পড়ার অনুমতি আছে।
সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে শীত প্রধান দেশে ফজরের সালাতের জন্য ঘর
থেকে বের হওয়ার ফলে অসুস্থতার প্রবল আশংকা বোধ করেন তাহলে আপনার জন্য বাড়িতে নামায পড়ার অনুমতি আছে। তবে শীত কমলে বা আবহাওয়া সহনীয় হলে আপনাকে
জামাতের সাথে সালাত আদায় করতে হবে।