بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
কোথায় দাওয়াত খেতে গেলে
নিজ সন্তুষ্টি চিত্তে কিছু হাদিয়া নিয়ে যাওয়া ইসলাম বহির্ভুত নয়। এটি ইসলাম সমর্থিত কাজ। তবে
নিজ সন্তুষ্টি চিত্তে না হয়ে সমাজের চাপে পড়ে এ কাজ করা হলে সেটি ইসলাম সমর্থিত হবেনা।
সামাজিক চাপ নয়;
হাদিয়া আদান-প্রদান হওয়া উচিত আল্লাহর
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। ইসলামের হাদিয়ার যে ধারণা ও শিক্ষা সে অনুসারে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (কাউকে কিছু) দেয়,
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দেওয়া থেকে বিরত
থাকে; আল্লাহর
জন্যই যে ভালোবাসে আর আল্লাহর জন্যেই যে ঘৃণা করে, ... সে তার ঈমান পূর্ণ করল। -জামে তিরমিযী,
হাদীস ২৫২১
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে
আল্লাহ তাআলা আমাদের আদেশ করেছেন আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী প্রমুখের সঙ্গে সুন্দর
আচরণ করতে।
وَ اعْبُدُوا
اللهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْـًٔا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا، وَّ
بِذِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰی وَ
الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ، وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ ، اِنَّ اللهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ
مُخْتَالًا فَخُوْرَا.
তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে
এবং কোনো কিছুকে তাঁর সঙ্গে শরিক করবে না। আর সদাচরণ কর বাবা-মায়ের সঙ্গে এবং আত্মীয়-স্বজন,
এতীম-মিসকীন,
নিকট প্রতিবেশী ও দূর প্রতিবেশী,
সঙ্গীসাথী,
মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের
সঙ্গেও। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। -সূরা নিসা (৪) : ৩৬
আর হাদীয়া আদান প্রদানের মাধ্যমে
সুন্দর আচরন অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়,তাই এটির প্রচলন উচিত
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন-
تَهَادَوْا
فَإِنّ الهَدِيّةَ تُذْهِبُ وَحَرَ الصّدْرِ.
তোমরা একে অন্যকে হাদিয়া-উপহার
দাও। এ উপহার অন্তরের শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করে দেয়। -জামে তিরমিযী,
হাদীস ২১৩০
হাদীস বর্ণনা করেছেন ইমাম
বুখারী রাহ. তার ‘আলআদাবুল মুফরাদ’ নামক গ্রন্থে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
تَهَادَوْا
تَحَابّوا.
তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও,
ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। -আলআদাবুল মুফরাদ,
হাদীস ৫৯৪
হাদীয়া আদান-প্রদানে সামাজিক
বন্ধন যে কতটা বৃদ্ধি পায় তা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। এটা আমাদের দেখা বাস্তবতা।
পারস্পরিক এ নেয়া-দেয়াটা যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয় তখন দূর-বহুদূরের কারও সঙ্গেও গড়ে
ওঠে আত্মার সম্পর্ক।
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই,
বিয়ে-শাদি আকীকা কিংবা এ জাতীয় কোনো বৈধ
অনুষ্ঠানে কেউ যদি আমন্ত্রিত হয় তখন সেখানে কোনো উপহারসহ উপস্থিত হওয়া নিষেধ নয়। কেননা,
উপহার প্রদান এবং অন্যের আনন্দে শরিক হওয়া
মৌলিকভাবে এ দুটোই ইসলামসমর্থিত; বরং এ দুটি বিষয় ইসলামে কাঙ্ক্ষিতও।
রাসুলুল্লাহ ﷺ
বলেছেন,
تَهَادَوْا
فَإِنَّ الْهَدِيَّةَ تُذْهِبُ وَغَرَ الصَّدْرِ
তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময়
করো। এর দ্বারা অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ ৯২৫০)
অপর হাদীসে রাসুলুল্লাহ ﷺ
বলেছেন,
حَقّ
الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدّ السّلاَمِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ
وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدّعْوَةِ وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ.
এক মুসলমানের ওপর আরেক মুসলমানের
পাঁচটি অধিকার- ১. সালামের জবাব দেওয়া, ২. অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া,
৩. জানাযায় শরিক হওয়া,
৪. দাওয়াত করলে তা রক্ষা করা,
৫. হাঁচির জবাবে দুআ পড়া। (সহীহ বুখারী
১২৪০)
সুতরাং সামাজিক চাপ নয়;
হাদিয়া আদান-প্রদান হওয়া উচিত খুশি মনে
এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য
যে, আমরা
এই সুন্দর ও স্বাভাবিক বিষয়টিকে একপ্রকার সামাজিক বাধ্যবাধকতা বানিয়ে ফেলেছি। এ বাধ্যবাধকতা
দুই দিক থেকেই। যিনি আমন্ত্রিত, তিনি ভাবেন-একটি মানসম্মত উপহার ছাড়া সেখানে যাওয়া যাবে না।
আবার যারা আমন্ত্রক, তারা
অতিথিদের বরণ করার তুলনায় উপহার গ্রহণের প্রতিই অধিক মনোযোগী হয়ে থাকেন। উপহার গ্রহণের
জন্য থাকে ভিন্ন ব্যবস্থাপনা। এবং সেটাও অনেকটা এমনভাবে,
যেন চক্ষুলজ্জার কারণে হলেও কেউ উপহার
প্রদান না করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে না পারেন। যেন এটাই এখন সামাজিকতা। অথচ জাতীয়
সামাজিকতা পরিত্যাজ্য। কেননা, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
أَلَا لا
يَحِلُّ مالُ امرِىءٍ إلا بِطِيبِ نفسٍ منه
খবরদার! একজন মুসলমানের যে
কোনো জিনিস তার মনের সন্তুষ্টি ছাড়া অপর মুসলমানের জন্য হালাল নয়। (সহিহ আলজামি’ ৭৬৬২)
★প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনি বোন,
১. প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টি
বিদ'আত
নয়। যদি
সন্তুষ্টি চিত্তে হাদিয়া নিয়ে যাওয়া হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে,
তাহলে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর আদেশ মানার কারনে
অবশ্যই ছওয়াব হবে। কিন্তু সামাজিকতা রক্ষা বা লৌকিকতা যেন লক্ষ উদ্দেশ্য
না হয়।
২. জ্বী কোন গিফট না নিয়ে গেলেও আপনাদের
জন্য উক্ত দাওয়াতে যাওয়া ও খাওয়া জায়েয আছে।