بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
https://ifatwa.info/14917/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ-
ঈদ অর্থ আনন্দ।মিলাদ অর্থ জন্ম।ঈদে মীলাদুন্নবী অর্থ নবী সাঃ এর জন্ম উপলক্ষ্যে ঈদ উৎসব।
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্মদিনকে উপলক্ষ্য করে কোনো প্রকার উৎসব বা অনুষ্টানের আয়োজন করা না রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জমানায় প্রচলিত ছিলো,না সাহাবা ও তাবেঈন বা তাদের পরবর্তী যুগে প্রচলিত।বরং ইসলামি স্বর্ণযুগের অনেক পর বাদশা মুজাফফর উদ্দীন খৃষ্টানদের বড়দিনের আদলে তাদের অনুসরণ করে মুসলমানদের জন্য ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রচলন করার অপচেষ্টা করেন।কিন্তু ইরাকের তৎকালিন জনগণ বাদশার ভন্ডামিকে খুবই শক্তভাষায় প্রত্যাখ্যান করেন।
যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে নেই,সেগুলোর প্রচলন বিদআত।
রাসুল সাঃ বলেন-
وَإِيّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنّ كُلّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
আর সকল নব উদ্ভাবিত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কারণ, সকল নব উদ্ভাবিত বিষয় বিদআত। আর সকল বিদআত গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা।’ (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭১৪২, ১৭১৪৫)
আরেক হাদীসে আছে-
হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত
عن أمِّ المؤمنين أم عبدالله عائشةَ رضي الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ((من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رَدٌّ))؛ [رواه البخاري ومسلم]،
‘যে আমাদের এই বিষয়ে (অর্থাৎ দ্বীন ও শরীয়তে) এমন কিছু উদ্ভাবন করবে, যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখাত।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭১৮; সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭
★ঈদ ই মিলাদুন্নবি এটি নব আবিষ্কৃত,এটি ইসলামের স্বর্ণযুগে ছিলোনা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন, বেশি সম্মান করতেন, তাঁর অধিকার সম্পর্কে পরবর্তীদের চেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল ছিলেন। সুতরাং তাঁদের নিকট যা কিছু দ্বীনের অংশ ছিল না; সেটা তাঁদের পরেও দ্বীন হিসেবে সাব্যস্ত হবে না।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এ ভিত্তি দিয়ে ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের বিপক্ষে দলিল পেশ করেছেন যারা মসজিদে গোল হয়ে বসে সম্মিলিতভাবে পাথর টুকরা দিয়ে গুণে গুণে যিকির করা শুরু করেছিল: ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে রয়েছে আমার প্রাণ; তোমরা কি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রজন্মের চেয়ে উত্তম কোন প্রজন্মের মধ্যে আছ? নাকি তোমরা পথভ্রষ্টতার দরজা উন্মোচন করছ!! তারা বলল: আবু আব্দুর রহমান, আমাদের উদ্দেশ্য নেকির কাজ করা। তিনি বললেন: কত লোক এমন আছে যে ভাল কাজ করতে চায় কিন্তু সঠিক দিশা পায় না।[সুনানে দারেমী ২১০]
আবু দাউদ (১১৩৪) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এলেন সে সময় মদিনাবাসীরা বিশেষ দুটি দিনে খেলাধুলা করত। (তা দেখে) তিনি বললেন: “এ দুটি দিনের বিশেষত্ব কি?” তারা বলল: আমরা জাহেলী যুগেও এ দুটি দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি বললেন: “আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে এ দুই দিনের পরিবর্তে আরও ভাল দুটি দিন দিয়েছেন- ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমাদের বিষয়ের মধ্যে নতুন কিছু চালু করে যা এতে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত।”[সহিহ বুখারী (২৬৯৭) ও সহিহ মুসলিম (১৭১৮)]
সুতরাং ঈদ-এ-মিলাদুন্নাবী উপলক্ষে মসজিদে দোয়া, মাহফিল,মিলাদ, সবশেষে তবারক দেওয়া। এগুলো বিদআত ও পরিত্যাজ্য।
রাসুল সাঃ এর জন্মের খুশিতে ঈদ পালন নয় রোযা রাখাই আমার নবীর শিক্ষা:
আবু কাতাদা আনসারী রাযিঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসূল সাঃ কে তাঁর সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হল, [কারণ রাসূল সাঃ সোমবার দিন রোযা রাখতেন] তখন রাসূল সাঃ [কারণ দর্শাতে গিয়ে] বলেন যে, এদিন আমি জন্ম নিয়েছি, আর এদিনই আমার উপর কুরআন নাজিল হয়েছে। [তাই আমি শুকরিয়ার নিমিত্তে রোযা রাখি]
{সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-২৮০৭
সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং-২৪২৮
সুনানে বায়হাকী [কুবরা],হাদীস নং-৮২১৭
সহীহ ইবনে খুজাইমা,হাদীস নং-২১১৭
মুসনাদে আবি আওয়ানা,হাদীস নং-২৯২৬
মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং-২২৫৫০}
আমরা লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবো, রাসূল সাঃ আমাদের এই হাদীসে কি চমৎকার একটি শিক্ষা দিলেন। সেটা হল-জন্মের খুশিতে রোযা রেখে আল্লাহর শুকরিয়া জানানো, এই কাজে আনন্দ উল্লাস করা মুসলমানের কাজ নয়।
আর আমরা জানি-ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম যা নাকি বহু হাদীসে সরাসরি উল্লেখ আছে। যদি নবীজী সাঃ এর জন্মদিনটা ঈদের দিন হত তাহলে নবীজী সাঃ নিষিদ্ধ রোযা রাখলেন কেন? রাসূল সাঃ এর রোযা রাখার মাধ্যমে এটাই শিখালেন যে, এটা কোন ঈদের দিন নয়। আনন্দ উল্লাসের দিন নয়। বরং শুকরিয়া জানিয়ে রোযা রাখার দিন।
আরো জানুন
https://ifatwa.info/4988/
প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই / বোন!
১. উপরে উল্লেখিত আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ইসলামে ঈদের দিন দুইটি। ঈদে মীলাদুন্নবী বলতে শরীয়তে কোন ঈদ নেই।
২. মিলাদ মানে হল জন্ম। মূলত এ বিদআতের সূচনা হয়েছিল রাসূল সাঃ এর জন্ম তারিখে খানাপিনা উৎসবের একটি বিদআতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। যা করেছিল ৬০৪ হিজরীর এক অপব্যায়ী বাদশা এবং তার এক কাজ্জাব দরবারী আলেম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৬০৪ হিজরী সনে ইরাকের মসোল শহরের বাদশাহ আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দীন কাওকারী [মৃত-৬৩০ হিজরী] এবং আবুল খাত্তাব ওমর বিন দিহইয়া [মৃত্যু-৬৩৩ হিজরী] এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম প্রচলিত পদ্ধতির মিলাদ মাহফিলের সূচনা হয়। সে সময় শুধুমাত্র ১২ ই রবিউল আওয়ালে তা পালন করা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে তা যেকোন দুআর অনুষ্ঠানেই পালন করা শুরু হয়।
উক্ত দরবারী আলেম আবু খাত্তাব বিন ওমর বিন দিহয়া সর্বপ্রথম মিলাদ মাহফিলের বৈধতা প্রদান করে “আততানবীর ফী মাওলিদিসসিরাজিম মুনীর” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করে। ফলে বাদশা খুশি হয়ে উক্ত আলেমকে কে হাজার দিনার বখশীশ দান করেন।
উক্ত আলেম সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ লিখেন-
كثير الوقيعة في الأئمة وفي السلف من العلماء خبيث اللسان أحمق شديد الكبر قليل النظر في أمور الدين متهاونا
সে পূর্ববতী ইমাম ও আলেম উলামাদের সাথে বেয়াদবীমূলক আচরণ করতো। সে ছিল অশ্লীলভাষী, প্রচন্ড নির্বোধ, অহংকারী দ্বীন সম্পর্কে সংকীর্ণমনা ও অলস। {লিসানুল মিযান-১/৩৩৮}
সুতরাং বুঝা গেল এ প্রচলিত মিলাদ আল্লাহর রাসূল সাঃ ও সাহাবা তাবেয়ী ও তাবেয়ীগণ কিংবা বুজুর্গ কর্তৃক প্রচলিত বিষয় নয়। এটি একটি মিথ্যুক ব্যক্তির সেচ্ছাচারিতার ফসল। তাই এটি পরিত্যাজ্য বিদআত।
যদিও দরূদ পড়া খুবই সওয়াবের কাজ। কিন্তু এর সাথে আরো অনেক শরীয়ত গর্হিত বিষয়ের অনুপ্রবেশ হবার কারণে উক্ত প্রচলিত পদ্ধতির মিলাদ মাহফিল বিদআত এতে কোন সন্দেহ নেই।