আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
126 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আস-সালামু আলাইকুম

গতকাল আমি আমার এক পরিচিত লোকের পোস্টে একটি ছবি দেখতে পাই যেখানে লেখা,"অপমানিত স্থানে কখনো দ্বিতীয়বার ফিরবেন না! যোগাযোগের তৃষ্ণায় মা'রা যাবেন তবুও যোগাযোগ করবেন না, আবারো বলছি কখনোই না!' আর সবচেয়ে বড় কথা এই কথা কে বলেছেন তার রেফারেস্ন হিসেবে আবু ত্বহা আদনান হুজুরকে দেওয়া হয়েছে।আমি অনেক যাচাই করার পর কিছুটা ধারনা পেলাম এটা উনি বলেননি কিন্ত এই অপমান সম্পর্কে কথাটি অনেক আগে থেকেই ফেসবুকে প্রচলিত আছে তবে কে বলেছেন তার রেফারেস্ন নেই।কিন্তু আমার কাছে শক্তিশালী প্রমান না থাকার কারণে আমি আমার সেই লোককে এটা ভুয়া এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।এবং আমি চাই না যে এসব কথায় আদনান হুজুরের রেফারেস্ন পেয়ে সবাই অপমান সম্পকিত এ কথায় বিশ্বাস করুক(যদি ইসলাম অনুযায়ী বিশ্বাসযোগ্য না হয়)।কিন্তু এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না  থাকায় আমি এর প্রতিবাদ করতে পারছিনা (যদি তা প্রতিবাদযোগ্য হয়)।আমার প্রশ্ন হলো ইসলাম এই বিষয়ে (অপমানিত স্থানে কখনো দ্বিতীয়বার ফিরবেন না! যোগাযোগের তৃষ্ণায় মা'রা যাবেন তবুও যোগাযোগ করবেন না, আবারো বলছি কখনোই না!') কি বলে।

ধন্যবাদ

1 Answer

0 votes
by (59,190 points)
edited by


بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

 সবর তথা ধৈর্য মহান আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। দুনিয়াতে সবরকারী বা ধৈর্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নেয়ামতের ঘোষণা করেছেন। আবার কারো প্রতি অন্যায়ের বিচার তথা প্রতিশোধ নেওয়ার বিধানও দিয়েছে ইসলাম। কেউ কারো প্রতি কোনো অন্যায় করলে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করা বৈধ। তবে প্রতিশোধ নেওয়ার মানদণ্ড নির্ধারণ করা আছে। তবে কেউ যদি প্রতিশোধ গ্রহণ না করে সবর বা ধৈর্য অবলম্বন করে তবে তা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন-

  صَبَرۡتُمۡ لَهُوَ خَیۡرٌ لِّلصّٰبِرِیۡنَ‘আর যদি কাউকে তোমরা শাস্তি দাও, তবে ততখানি শাস্তি দেবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। আর যদি সবর করো তাহলে তা তার জন্যই উত্তম।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১২৬)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রতিশোধের কথা যেমন বলেছেন, তেমনি সবর তথা ধৈর্যধারণ করার কথাও উল্লেখ করেছেন। ইসলামে উভয়টি জায়েয আর প্রতিশোধ নেওয়ার থেকে সবর অবলম্বন করা উত্তম।

প্রতিশোধ গ্রহণআল্লাহর পথে দাওয়াত দানকারীদের আইনগত অধিকার দেওয়া হয়েছে যে, যারা নির্যাতন চালায়, তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা বৈধ, কিন্তু শর্ত হলো- প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্যাতনের সীমা অতিক্রম করা যাবে না। যতটুকু জুলুম প্রতিপক্ষের তরফ থেকে করা হয়, প্রতিশোধ ততটুকুই গ্রহণ করতে হবে; বেশি হতে পারবে না। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘এক ইহুদি এক মেয়েকে দুই পাথরের মাঝে রেখে হত্যা করে, মৃত্যুর আগে সে মেয়ে এক ইহুদির প্রতি ইঙ্গিত করে। সেই ইহুদিকে নিয়ে আসা হলে সে তা (হত্যার কথা) স্বীকার করে। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ইহুদিকে দুই পাথরের মাঝখানে বেঁধে হত্যা করার আদেশ করেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

সবরের পরামর্শসুরা নাহলে ১২৬নং আয়াতের শেষাংশে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, যদিও প্রতিশোধ গ্রহণ করার অধিকার আছে, কিন্তু সবর অবলম্বন করা উত্তম। ওহুদের যুদ্ধে সত্তর জন সাহাবির শাহাদতবরণ এবং হজরত হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যার পর তার লাশের নাক-কান কর্তনের ঘটনা দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দারুণভাবে মর্মাহত হলেন।সাহাবায়ে কেরাম (আনসারগণ) বললেন, ‘আমরা যদি তাদের ওপর জয়লাভ করি, তবে তাদেরকে দেখিয়ে দেব। তারপর মক্কা বিজয়ের দিন এলো। তখন আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেন-

وَ اِنۡ عَاقَبۡتُمۡ فَعَاقِبُوۡا بِمِثۡلِ مَا عُوۡقِبۡتُمۡ بِهٖ ؕ وَ لَئِنۡ صَبَرۡتُمۡ لَهُوَ خَیۡرٌ لِّلصّٰبِرِیۡنَ‘আর যদি কাউকে তোমরা শাস্তি দাও, তবে ততখানি শাস্তি দেবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। আর যদি সবর করো তাহলে তা তার জন্যই উত্তম।’ (সুরা নহল : আয়াত ১২৬)তখন এক লোক বললো, ‘আজকের পরে কুরাইশদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘৪ জন ছাড়া আর সবাইকে ছেড়ে দাও।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, তিরমিজি, নাসাঈ)

প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই বা বোন! 

ইসলামে প্রতিশোধ গ্রহণ জায়েয তবে সবরে রয়েছে সর্বোত্তম কল্যাণ। তবে প্রতিশোধের ক্ষেত্রে অবশ্যই জুলুমের মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এটাই ইসলামের চূড়ান্ত ঘোষণা।

সুতরাং কোন ব্যক্তি অপমান করলে সবর করতে হবে ও তার সংশোধনের জন্য দোয়া করতে হবে। দ্বীনের সার্থে তার কাছে যাওয়াতে কোন সমস্যা হবে না। কারণ,  রাসূল সা. কে অপমান করা সত্বেও কাফের ও মুশরিকদের নিকট বারংবার দাওয়াত দিয়েছেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...