আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
91 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (16 points)

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ।।

 

আমি বিবাহিত (২২) বিয়ের বয়স প্রায় ২ বছর।

আমি গাজীপুর একটি সিরামিক কোম্পানিতে জব করি মাসিক স্যালারি ১০৫০০৳ কোন অভার টাইম নাই থাকাখাওয়া ও হাতখরচ ৫৫০০৳।

আমার পরিবার দারিদ্র ও ঋণগ্রস্ত এবং আমার পরিবারে মা-বাবা দুই ভাই (১৫/৩) ও একজন বোন (৫) আছে, পরিবারে আমি ও আমার বাবাই কর্ম করি।।

আমি আইবিএস ও উচ্চরক্তচাপ এর রোগী যার ফলে হোটেল এর খাবার খাওয়া আমার শরীরের জন্য রিস্ক।

এই অল্প বেতনে চাকরি করে আমি আমার পরিবারে তেমন কোন হেল্প করতে পারি না আবার স্ত্রীর খরচ দিতে হই।(আর আমার শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণে অতিরিক্ত অভার টাইম বা রাত জেগে চাকরি করা সম্ভব না)

* এদিকে আমি আমার স্ত্রীকে ছাড়া অনেক কষ্টে আছি,আর আমার স্ত্রীরও আমাকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হয় তাই সে আমাকে প্রায় বলে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও একা থাকতে খুব কষ্ট হয়। ( আমার কর্মস্থল থেকে আমার বাড়িতে আসতে যাইতে সম্পূর্ণ দুইদিন লাগে)

* এক হোটেল বা ম্যাচের খাওয়া আমার জন্য ক্ষতিকর, দুই আমাদের দুজনেরই একে অপরকে ছাড়া একা থাকা বিষণ কষ্টকর।

*তাই আমি ভাবছি আমার স্ত্রীকে আমার কাছে নিয়ে আসবো উক্ত স্যালারিতে আমাদের থাকা খাওয়া ভালোভাবেই চলবে কিন্তু বাড়িতে হেল্প করা সম্ভব না।

এর ফলে পিতামাতা আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন।

এখন আমার প্রশ্ন হলো ঃ

(১) এহেন পরিস্থিতিতে স্ত্রীকে নিয়ে আসা কি ঠিক হবে?

(২) যদি স্ত্রীকে নিয়ে আসা ঠিক হয় আর তাকে এখানে নিয়ে আসাতে পিতামাতা যদি অসন্তুষ্ট হয় বা তারা নিয়ে আসতে মানা করা সত্যেও যদি নিয়ে আসি তাহলে কি আমি গুনাহগার হবো / পিতামাতার অবাধ্য সন্তান হিসাবে গণ্য হবো?

 

প্রিয় শায়েখ,উত্তম পরামর্শের জন্য বিস্তারিত সব বললাম দয়া করে উত্তম পরামর্শই দিবেন।।

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا 23 وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرً 24

অর্থ : তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সুরা বানি ইসরাইল, আয়াত:23-24)

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের স্বীয় ইবাদাতের সাথে সাথে পিতামাতার সাথে সদাচরণ এবং তাদের জন্য দোয়া করতে নির্দেশ দিয়েছে। এই আয়াত ছাড়া আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমের সুরা নিসা-এর ৩৬ নং আয়াত, সুরা লোকমান ১৪ নং আয়াত, সুরা আনকাবুত ৮ নং আয়াত, সুরা নূহ এর ২৮ নং আয়াতে এবং বুখারি মুসলিমের হাদিসসহ অসংখ্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. সন্তাতকে পিতামাতার খেদমত এবং তাদের সাথে সদ্ব্যহারের আদেশ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। ইসলাম এক্ষেত্রে বিষয়গুলো সন্তনের ওপরই সীমাবদ্ধ রেখেছে। কুরআন হাদিসের কোথাও পুত্রবধুকে শশুর-শাশুড়ী, ননদ-দেবর কিংবা স্বামীর আত্মীয়দের সেবাযত্ন করা বা তাদের কাজে সহেযোগিতা করার ব্যাপারে নির্দেশনা অবতীর্ণ হয়নি।

কিন্তু বর্তমান সমাজে বিষয়টাকে এমনভাবে দেখা হয় যে, যেন এটা তার অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। বরং এটিই যেন তার প্রধান দায়িত্ব! বিভিন্ন পরিবারের অবস্থা তো এমন যে, ছেলের জন্য বউ আনা হয় কেবল শ্বশুর-শাশুড়ির সেবার জন্য। এমনকি কোনো স্ত্রী যদি শারীরিকভাবে কর্মঠ না হয় কিংবা অনভিজ্ঞ হয় এই অজুহাতে তাকে শশুর বাড়ীর লোকজনের কটু কথা শোনতে হয়। ইসলামের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। মা-বাবার সেবা-শুশ্রূষা করা সন্তানের দায়িত্ব কোনোভাবেই পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক : ৪/১৯৩; কিফায়াতুল মুফতি : ৫/২৩০)

গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, পুত্রবধু ও শ্বশুর-শাশুড়ির সম্পর্ক এবং প্রাপ্তিগুলো কখনো একপক্ষীয় নয় বরং দ্বিপাক্ষিক। শশুর-শাশুড়ীকে এখানে নিজেদের কর্তব্য ও অধিকারের সীমারেখা সম্পর্কে অনুভব থাকতে হবে। তাদের এটা অনুধাবন করতে হবে যে, আমাদের সকল পাওনা-দেনা আমাদের সন্তানের সাথে। স্বামীর মা-বাবার খেদমতের প্রয়োজন দেখা দিলে, স্বামী নিজ কর্তব্যে তাদের সেবা-যত্ন করবেন। নিজে না পারলে প্রয়োজনে পারিশ্রমিক দিয়ে লোক ঠিক করে নিবেন।

তাহলে কি স্ত্রী শশুর-শাশুড়ী কিংবা তার আত্মীয়-স্বজনকে দূরে ঠেলে দিবে? তার কোনো করণীয় নেই? না, সে শশুর-শাশুড়ীকে দূরে ঠেলে দিবে না। বরং তার অবশ্যই কিছু করণীয় আছে। তার হৃদয়ে শশুর-শাশুড়ীর পরিচয় জানা থাকতে হবে। তার এই অনুভূতি থাকতে হবে যে এরা আমার জীবনসঙ্গী স্বামীর জন্মদাতা পিতা এবং গর্বধারীণী মাতা। যেভাবে আমিও কোনো বাবা-মায়ের সন্তান। এভাবে আমার স্বামীও এদেরই সন্তান। কাজেই আমার হৃদয়ে যেভাবে আমার পিতামাতার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা-ভালোবাসা রয়েছে এমনিভাবে তাঁরও একটি হৃদয় আছে যেখানে তার পিতা-মাতা বসবাস করেন। স্ত্রীকে সবথেকে বেশী যে জিনিসটি খেয়াল রাখতে হবে যে, আজকে যেভাবে তাঁরা আমার খেদমতের মুখাপেক্ষী হয়েছেন, বেঁচে থাকলে আমাকেও একদিন শাশুড়ী হতে হবে। আজ যদি আমি তাদের খেতমতে নিজেকে ধন্য করি তাহলে কাল আমি কিছুটা হলেও খেদমত লাভের আশা করতে পারব।

ইসলাম ও নৈতিকতাবোধের দাবি এটা যে, স্ত্রী স্বামীর বাবা-মাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান দেবেন। তাদের প্রতি সমীহের চোখে দেখবেন। মনেপ্রাণে তাদের ভালোবাসবেন। তাদের সেবা-যত্নকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবেন। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িরও কর্তব্য হলো- পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও মমতায় আবদ্ধ করা। তার সুখ, আনন্দ ও সুবিধার প্রতি সবিশেষ মনোযোগ দেওয়া।

কিন্তু শশুর-শাশুড়ী যদি পুত্রবধুর ওপর জুলুম করে? উপরে আমরা পুত্রবধু থেকে শশুর-শাশুড়ীর প্রাপ্তির সীমারেখা উল্লেখ করেছি। সুতরাং জুলুম-নির্যাতন করা তো দূরের বিষয়-যদি কোনো শাশুড়ী উক্ত সীমা অতিক্রম করেন এবং পুত্রবধু ওই সংসারে (শশুর-শাশুড়ীর সাথে) থাকতে রাজী না হয় তাহলে স্বামীর জন্য আবশ্যক হলো, স্ত্রীকে আলাদা বাসস্থানে ব্যবস্থা করে দেওয়া। কেননা, ইসলামী শরিয়ত স্ত্রী জন্য স্বামীর ওপর যে হকগুলো আবশ্যক করেছে তার মধ্যে অন্যতম হক হলো, বাসস্থানের হক। স্বামীর কর্তব্য হলো, যদি স্ত্রী দাবী করে এবং এতেই সে সাচ্ছ্যন্দবোধ করে আর স্বামীরও সামর্থ্য থাকে তবে স্ত্রীর জন্য নিজের সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী পৃথক বাড়ী বা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্বামীর বাবা, মা, ভাই, বোন থাকবে না। আর স্বামীর যদি পৃথক বাড়ির সামর্থ্য না থাকে সেক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য হলো, অন্তত একই বাড়ির এক অংশে একটা পৃথক কামরা, রান্না ঘর ও বাথরুমের ব্যবস্থা করা যেটাতে স্বামীর বাবা, মা, ভাই, বোন বা অন্য কারও অধিকার থাকবে না। কেননা স্বামীকে নিয়ে নিরিবিলি ও একান্তে বসবাস করা এটা শরিয়ত কর্তৃক স্ত্রীর অধিকার। এই অধিকার খর্ব করার কারও জন্য জায়েজ নাই। চাই সে স্বামী নিজেই হোক কিংবা তার পরিবারস্থ কোনো মানুষ হোক। কোনো স্বামী যদি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীর এই অধিকার ক্ষুণ্ণ করে তাহলে তাকে হাশরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালার আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে আপনি আপনার প্রশ্নের কাঙ্খিত উত্তর পেয়ে গেছেন।

২. জ্বী না এতে কোন গুনাহ হবে না। তবে মা বাবার খেদমত করতে হবে। নিজ কর্তব্যে তাদের সেবা-যত্ন করবেন। নিজে না পারলে প্রয়োজনে পারিশ্রমিক দিয়ে লোক ঠিক করে নিবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 37 views
...