জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا مَا لم تعْمل بِهِ أَو تَتَكَلَّم»
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতের হৃদয়ে যে খেয়াল জাগ্রত হয় তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিণত করে বা মুখে উচ্চারণ করে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের অন্তরে যে ওয়াস্ওয়াসাহ্ বা খটকার উদয় হয়, আল্লাহ তা‘আলা তা মাফ করে দিবেন, যতক্ষণ না তারা তা কার্যে রূপায়ণ করে অথবা তা মুখে প্রকাশ করে।
সহীহ : বুখারী ২৫২৮, মুসলিম ১২৭,মিশকাত ৬৩।)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রথমে আমরা এই হাদীসের ব্যাখ্যা বুঝি নেই।
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ-
ব্যাখ্যা: (تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِىْ) ‘‘আমার কারণে আমার উম্মাতকে ক্ষমা করেছেন’’ এক বর্ণনাতে এমনটি উল্লেখ রয়েছে। এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, উম্মাতে মুহাম্মাদীর মর্যাদার কারণ নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং। অতএব আল্লাহর অপার দয়া আমাদের ওপর রয়েছে যার কোন শেষ নেই। এতে এ ইঙ্গিতও রয়েছে এ বৈশিষ্ট্য শুধু এ উম্মাতেরই।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ওয়াস্ওয়াসাহ্ দু’ ধরনের- (১) জরুরী, (২) ইখতিয়ারী। জরুরী বলা হয় এমন ওয়াস্ওয়াসাকে যা মানুষের হৃদয়ে তার সূচনা হয় আর মানুষ তা রোধ করতে সক্ষম নয়। এ ধরনের ওয়াস্ওয়াসাহ্ সকল উম্মাতের জন্যই ক্ষমা।
ইখতিয়ারী হলো এমন ওয়াস্ওয়াসাহ্ যা হৃদয়ে অব্যাহতভাবে চলতে থাকে এবং লোকে তা কার্যে পরিণত করতে চায় এবং মনে মনে এ বিষয়ে সাধ ও অনুভব করে। যেমন মনের মধ্যে কোন মহিলার প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা এবং ঐ ভালোবাসা বাস্তবে রূপ দিতে চায়। এ ধরনের ওয়াস্ওয়াসাহ্ শুধু এ উম্মাতের জন্যই আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মাতের মর্যাদার কারণে।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কোনো মানুষ কোনো গুনাহ করার খেয়াল করলে তাতে গুনাহ হবেনা।
কোনো গুনাহ করবে,এমনটি মনে মনে ভাবলে গুনাহ হবেনা।
তবে যখন সে কাজে পরিনত করবে,তথা মনে উদিত হওয়া সেই গুনাহের ভাবনাকে বাস্তবে কাজে পরিনত (তথা সেই গুনাহের কাজটি করে) তাহলেই কেবল গুনাহ হবে।
শুধু মনে মনে কাজ করবে বলে ভাবলে গুনাহ হবেনা,আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন।
যেমন কাহারো মনে চুরি করা ইচ্ছা হলো,এটা নিয়ে মনে মনে সে কৌশল আটলো।
এতে যতক্ষন পর্যন্ত চুরি করবেনা,ততক্ষন পর্যন্ত গুনাহ হবেনা।
মনে মনে চুরি করার কল্পনা আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الحسناتِ والسيِّئاتِ: فَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لهُ عندَهُ حَسَنَة كَامِلَة فَإِن هم بعملها كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ إِلَى أَضْعَافٍ كَثِيرَةٍ وَمَنْ هَمَّ بسيئة فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً فَإِن هُوَ هم بعملها كتبهَا الله لَهُ سَيِّئَة وَاحِدَة
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা সৎ-অসৎ চিহ্নিত করে রেখেছেন। যে ব্যক্তি সৎ কাজের সংকল্প করে, কিন্তু তা করেনি আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একটি পূর্ণ নেকী লিখে নেন। আর যদি সৎ কাজের সংকল্প করার পর তা বাস্তবায়ন করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে এই একটি সৎ কাজের জন্য দশ গুণ হতে সাতশ’ গুণ, বরং বহুগুণ পর্যন্ত সৎ কাজ হিসেবে লিখে রাখেন। আর যে ব্যক্তি অসৎ কাজের সংকল্প করে, কিন্তু বাস্তবে তা না করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একে একটি পূর্ণ নেক কাজ হিসেবে লিখে নেন। আর যদি অসৎ কাজের সংকল্প করার পর তা বাস্তবে করে, তাহলে আল্লাহ এর জন্য তার একটি মাত্র গুনাহ লিখে রাখেন।
(সহীহ : বুখারী ৬৪৯১, মুসলিম ১৩১, আহমাদ ২৮২৭, শু‘আবূল ঈমান ৩২৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৭,মিশকাত ২৩৭৪।)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কোনো গুনাহ করার কল্পনা করলে সে গুনাহ করলে যেই গুনাহ হতো,সেই গুনাহ হবেনা।
মনে মনে গায়রে মাহরামকে নিয়ে ভাবা, যৌন উদ্দীপক আলোচনা মস্তিষ্কের মধ্যে নেয়া,মনে মনে অশ্লীল বিষয় ভেবে উত্তেজিত হওয়া এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গুনাহ।
এটিকে হাদীসে অন্তরের যেনা বলা হয়েছে।
সুতরাং কেহ যদি শুধু মনের মধ্যে নিয়ত করে যে আজকে যেনা করবে,তাহলে যেনা করার আগ পর্যন্ত তার যেনার গুনাহ হবেনা।
তবে সে যদি মনে মনে গায়রে মাহরামকে নিয়ে ভাবে, যৌন উদ্দীপক আলোচনা মস্তিষ্কের মধ্যে নেয়,মনে মনে অশ্লীল বিষয় ভেবে উত্তেজিত হয়,সেক্ষেত্রে এটিকে যেহেতু হাদীসে অন্তরের যেনা বলা হয়েছে,তাই এক্ষেত্রে অন্তরের যেনার গুনাহ হবে।
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
(০২)
কুরবানী করার আগ পর্যন্ত মনের অবস্থা পূর্ণ ভাবে প্রকাশ পায়না।
আপনার প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ঠিকই তোলা যায় যে আল্লাহ তায়ালা যেহেতু জানেনই যে কে কে দুনিয়াতে ঈমান আনবে,আমল করবে,তাহলে দুনিয়াতে পাঠালেন কেনো?
আল্লাহ তায়ালা যার ব্যপারে জানেন যে সে দুনিয়াতে ঈমান আনবে,তাকে জান্নাত দিয়ে দিতেন,আর যার ব্যপারে জানেন যে সে দুনিয়াতে ঈমান আনবেনা,তাকে জাহান্নাম দিয়ে দিতেন,এমনটি করলেননা কেনো?
আসলে আল্লাহ তায়ালা সবই জানেন,তবে সেই জানার ভিত্তিতে জান্নাত জাহান্নাম দেয়া আল্লাহর তরীকা নয়।
কেননা এক্ষেত্রে কোনো জাহান্নামী বলেই ফেলতো যে আমাকে জাহান্নামে দেয়া ঠিক হয়নি,আমাকে দুনিয়াতে পাঠালে আমি ঠিকই ঈমান আনতাম,ইত্যাদি।
এই দুনিয়া পরীক্ষার স্থান।
যদিও আল্লাহ তায়ালা সকলের পরিনাম সম্পর্কে আগে থেকেই জানেন,তারপরেও এই।দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন যাতে কেউ আখেরাতে বলতে না পারে যে অমুক কাজ কাজ তো আমি করিনি,তাহলে এর জন্য আমাকে শাস্তি দেয়া হবে কেনো?
(০৩)
ইবাদত দ্বারাই তো আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ পাবে,নতুবা আল্লাহর আনুগত্য কিভাবে প্রকাশ পাবে?
আর আল্লাহ তায়ালা ইবাদতের জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।
অন্য কোনো কারনে নয়।
সুতরাং ইবাদত করা আবশ্যক।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ ﴿۵۶﴾
আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে।
(সুরা যারিয়াত ৫৬)
الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ ۙ﴿۲﴾
যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি পর্যক্রমশালী, ক্ষমাশীল।
(সুরা মূলক ০২)