আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
325 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (18 points)
আসসালামু আলাইকুম। আজকাল অনলাইনের মাধ্যমে কাঠের তৈরি, কুশিকাটা ইত্যাদি ধরনের গয়না বিক্রির ব্যবসা করা হয়। কিন্তু ক্রেতা কি উদ্দেশ্যে গয়না কিনছে সেটা বিক্রেতার পক্ষে জানা অনেক সময় সম্ভব হয় না। কেউ মাহরাম পুরুষকে দেখানোর জন্য গয়না পরে আবার কেউ গায়রে মাহরামদের দেখানোর জন্য গয়না কেনে। এক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যবসা কি জায়েজ হবে?

1 Answer

+1 vote
by (589,260 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ- 
https://www.ifatwa.info/242 নং প্রশ্নের জবাবে আমরা একটি মূলনীতি মূলক ফাতাওয়া উল্লেখ করেছিলাম,
প্রথম অবস্থাঃ-
বিক্রেতার বিশ্বাস বা ধারণা রয়েছে যে, এই কাপড়গুলো হালাল ত্বরিকায়-ই ব্যবহৃত হবে,হারাম ত্বরিকায় কখনো ব্যবহৃত হবে না।
তাহলে এই সমস্ত কাপড় বিক্রি করা জায়েয।
এতে কোনো অসুবিধা নেই।


দ্বিতীয় অবস্থা
বিক্রেতার বিশ্বাস বা ধারণা রয়েছে যে, এই কাপড়গুলো হারাম ত্বরিকায় ব্যবহৃত হবে।তথা মহিলা এগুলো পড়ে পরপুরুষের সামনে সুন্দর্য্য প্রদর্শন করবে।তাহলে এই সমস্ত কাপড় বিক্রি করা সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরামদের মতপার্থক্য রয়েছে।একদল উলামায়ে কেরাম বলেন, হারাম।কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেন,
তোমরা গোনাহ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যকে সাহায্য করো না।সূরা মায়েদা-০২
অপরদিকে একদল উলামায়ে কেরাম বলেন,জায়েয।গোনাহ তারই হবে যে কাপড় পড়বে।বিক্রেতার এক্ষেত্রে কোনো গোনাহ হবে না।
কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ রেশম কাপড় বিক্রির অনুমতি হযরত উমর রাযি কে দিয়েছিলেন,

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ: أَنَّ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ رَأَى حُلَّةً سِيَرَاءَ تُبَاعُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَوِ ابْتَعْتَهَا تَلْبَسُهَا لِلْوَفْدِ إِذَا أَتَوْكَ وَالجُمُعَةِ؟ قَالَ: «إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ» وَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ بَعْدَ ذَلِكَ إِلَى عُمَرَ حُلَّةًسِيَرَاءَ حَرِيرٍ كَسَاهَا إِيَّاهُ، فَقَالَ عُمَرُ: كَسَوْتَنِيهَا، وَقَدْ سَمِعْتُكَ تَقُولُ فِيهَا مَا قُلْتَ؟ فَقَالَ: «إِنَّمَا بَعَثْتُ إِلَيْكَ لِتَبِيعَهَا، أَوْ تَكْسُوَهَا»
উমর (রাঃ) একটি রেশমী হুল্লা বিক্রী হতে দেখে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যদি এটি খরীদ করে নিতেন, তা হলে যখন কোন প্রতিনিধি দল আপনার কাছে আসে তখন এবং জুমুআর দিনে পরিধান করতে পারতেন। তিনি বললেনঃ এটা সে ব্যক্তিই পরতে পারে যার আখিরাতে কোন অংশ নেই। পরবর্তী সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর (রাঃ) এর নিকট ডোরাকাটা রেশমী হুল্লা পাঠান। তিনি কেবল তাকেই পরতে দেন। উমর (রাঃ) বললেন, আপনি এখনি আমাকে পরতে দিয়েছেন, অথচ এ সম্পর্কে যা বলার তা আমি আপনাকে বলতে শুনেছি। তিনি বললেন আমি তোমার কাছে এজন্য পাঠিয়েছি যে, তুমি এটি বিক্রি করে দিবে অথবা কাউকে পরতে দিবে।
(সহীহ বুখারী-২/৮৬৮, হাদীস নং-৫৮৪১, ইফাবা-৫৪২৩)

ইবনে নুজাইম রাহ লিখেন,
أن بيع العصير ممن يتخذه خمرا إن قصد به التجارة، فلا يحرم وإن قصد به لأجل التخمير حرم (الأشباه والنظائر-53)
আঙ্গুরের শরাব যা থেকে মদ তৈরী করা হবে, যদি সেটার ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তাহলে জায়েয।আর যদি সেটার ক্রয়-বিক্রয় মদ তৈরীর জন্য হয়ে থাকে, তাহলে সেটা জায়েয হবে না।(আশবাহ ওয়ান-নাযাইর-৫৩)

কোনো মাসঅালায় হালাম হারাম উভয় রকম মতামত চলে আসলে, হারামকে অগ্রাধিকার দেয়াই মু'মিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। 

প্রশ্ন হল ক্রেতার ব্যবহার সম্পর্কে বিক্রেতা কিভাবে জানবে?
প্রতিউত্তরে বলা যায় যে,কাপড়ের ধরণ ও ক্রেতা মহিলার চালচলনের মাধ্যমেই উক্ত কাপড়ের ব্যবহার সম্পর্কে বিক্রেতা ধারণা করবে।
কিছু কাপড় এমন রয়েছে যে,মহিলা যতই বেপর্দা হোক না কেন তা উগ্রতার জন্য পরিধান করবে না।
এমনকি এগুলো পরিধান করে পরপুরুষের সামনে বের হবে না এবং হওয়াও সম্ভব না।
আর কিছু কাপড় এমন রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে বিক্রেতার ধারণা এমনি ইয়াক্বিন(পূর্ণ বিশ্বাস) পর্যন্ত পৌছে যায় যে,ক্রেতা এগুলাকে হারাম ত্বরিকায়-ই পরিধান করবে।

সুতরাং বিক্রেতার উপর ওয়াজিব যে,সে ক্রেতার অবস্থার প্রতি লক্ষ করে যা জানবে বা যা ধারণা করবে, সে অনুযায়ী আ'মল করবে।
কখনো কাপড় এমন হয় যে,যেগুলোকে হালাল- হারাম উভয় ত্বরিকায় ব্যবহার করা যায়,কিন্ত ক্রেতা মহিলা হিজাবী হওয়া বা রাষ্ট্র কর্তৃক হিজাব বাধ্যতামূলক হওয়া,এ সমস্ত জিনিষ এই কাপড়গুলোকে হারামে ব্যবহৃত হতে বাধাগ্রস্ত করে।তাহলে এমতাবস্থায় এগুলো বিক্রি করতে কোনো অসুবিধা নেই।


তৃতীয় অবস্থা
যদি বিক্রেতা সন্দেহ করে এবং দিধাবোধ করে যে, এই কাপড়গুলো হারামে ব্যবহৃত হবে না হারামে ব্যবহৃত হবে।এবং কাপড় ও এমন যে, ইহা উভয় ত্বরিকায়ই ব্যবহৃত হয়,এবং হলাল-হারাম পরিধানের কোনো একটিকে অগ্রাধিকার দেয়ার কোনো বিষয়ও আপাতত সামনে নেই,তাহলে এমতাবস্থায় এই কাপড় গুলোকে বিক্রি করতে কোনো অসুবিধা নেই।কেননা ব্যবসা হালাল হওয়াই প্রথম ও মূল মূলনীতি।
যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন-
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন।
সূরা বাক্বারা-২৭৫

ওয়াজিব হল যে, যে কাপড়গুলো ক্রয় করবে সে যেন তা হালাল ত্বরিকায়-ই ব্যবহার করে,সে যেন সেগুলোকে হারাম ত্বরিকায় ব্যবহার না করে।


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
তৃতীয় মূলনীতির আলোকে আমরা বলব,
আপনি প্রশ্নে বর্ণিত জিনিষ বিক্রি করতে পারবেন।



(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...