আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
316 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আসসালামুআলাইকুম, উস্তায অনেক পেরেশানিতে আছি আমরা স্বামী-স্ত্রী। বৈবাহিক সম্পর্ক টিকে আছে কীনা বা বিয়ে পড়ানোর কোনো সুযোগ আছে কীনা বিস্তারিত পড়ে উত্তর দিবেন প্লিজ। হারাম সম্পর্কে থাকতে চাইনা, এ জন্য সঠিক তথ্য জানা জরুরী।

১) বিয়ের বয়স ৬ বছর, বিয়ের পর থেকেই এত ঝামেলা যে প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই ঝগড়া আর ঝগড়া হলেই আমি তার কাছে তালাক চাইতাম। অর্থাৎ সবগুলো ঝগড়ার মজলিস তালাকের মজলিস ছিলো। তালাক চাইলে বলতো ঠিক আছে চলে যাও,তোমার ইচ্ছা হলে চলে যেতে পারো, অন্য কোথাও বিয়ে করতে পারো। যেহেতু অন্তরে তালাকের নিয়ত ছিলো না কিন্তু তালাকের মজলিস ছিলো তাহলে তো এক তালাকে বায়েন পতিত হয়েছে তাইনা?

২) একবার তালাক চাইলে মুখে "এক তালাক" বলে। কিন্তু উস্তায প্রায় ৫ বছর আগের ঘটনা, আমাদের স্পষ্ট করে মনে নেই যে মুখে তালাক আগে বলছে,  নাকি আমি তালাক চাওয়ার প্রেক্ষিতে কেনায়া বাক্যগুলো আগে বলছে। অন্তরের খবর তো আল্লাহ ভালো জানেন, আমাদের লুকানোর কোনো ইচ্ছা নেই। আবার এত বছর আগের ঘটনা স্পষ্ট করে মনে করারোও উপায় নেই। এমতাবস্থায় ফয়সালা কী?

৩) তালাক সম্পর্কে কোনো ধারনা ছিলো না। ১ বছর আগে সন্দেহ হওয়ায় মুফতির কাছে যাই এবং এখানেও প্রশ্ন করি। এক তালাকে বায়েন এর ভিত্তিতে নতুন করে মোহরানা করে বিয়ে পড়ানো হয়। এরপরও কয়েকবার সমস্যা হয়েছে। আমি বাসা থেকে চলে গিয়েছি কয়েকবার। যখন চলে যাই তখন বলেছিলাম আর কখনোই ফিরবো না, সেও ধরে নিয়েছিল আমি আর ফিরবো না। কিন্তু আমি তালাক চাইনি, সেও দেয়নি। কিন্তু সে ভেবেছিল আমরা আর কখনোই একত্রিত হবোনা। এতে কী তালাক হয়েছে?

৪) ৩ দিন আগে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলার সময় আমার স্বামী অনেক রেগে যায় এবং বলে তোর সাথে এভাবে থাকা সম্ভব নয়, সকাল হলে চলে যাবি, একসাথে থাকা পসিবল নয়, পরে তালাক বলে দিবো। আরও হয়তো কিছু বলেছিল। উল্লেখ্য আমি তার কাছে তালাক চাইনি। খুব সম্ভবত তালাকের কথাও হয়নি। কিন্তু কেনায়া যে বাক্যগুলো বলেছে এতে যদি তার তালাকের নিয়ত থাকে তাহলে কী তালাক হয়েছে? আর যদি তালাকের নিয়তের কথা মনে করতে না পারে তাহলেও কী তালাক হয়েছে?

৫) সব ঘটনার প্রেক্ষিতে সর্বমোট কয় তালাক পতিত হয়েছে? সম্পর্ক কী টোটালি হারাম হয়ে গেছে? নাকী আছে? থাকলেও কী বিয়ে পড়াতে হবে? সম্পর্ক কন্টিনিউ করার সুযোগ আছে?

৬) যদি সম্পর্কটা ঠিক থাকে, আর পরে যদি আমাদের সন্দেহ হয় যে মনে হয় সম্পর্কটা ঠিক নেই, এতো কিছুর পরেও সম্পর্ক ঠিক থাকে কীভাবে, এতে কী আমাদের গুনাহ হবে? বা এটা কী শয়তানের ওয়াসওয়াসা হিসেবে ধরে নিতে হবে।

খুবই দুশ্চিন্তা হচ্ছে, আপনাদের ফয়সালার ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিক।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك أَنَّهُ سَمِعَ ابْنَ شِهَابٍ يَقُولُ فِي الرَّجُلِ يَقُولُ لِامْرَأَتِهِ بَرِئْتِ مِنِّي وَبَرِئْتُ مِنْكِ إِنَّهَا ثَلَاثُ تَطْلِيقَاتٍ بِمَنْزِلَةِ الْبَتَّةِ قَالَ مَالِك فِي الرَّجُلِ يَقُولُ لِامْرَأَتِهِ أَنْتِ خَلِيَّةٌ أَوْ بَرِيَّةٌ أَوْ بَائِنَةٌ إِنَّهَا ثَلَاثُ تَطْلِيقَاتٍ لِلْمَرْأَةِ الَّتِي قَدْ دَخَلَ بِهَا وَيُدَيَّنُ فِي الَّتِي لَمْ يَدْخُلْ بِهَا أَوَاحِدَةً أَرَادَ أَمْ ثَلَاثًا فَإِنْ قَالَ وَاحِدَةً أُحْلِفَ عَلَى ذَلِكَ وَكَانَ خَاطِبًا مِنْ الْخُطَّابِ لِأَنَّهُ لَا يُخْلِي الْمَرْأَةَ الَّتِي قَدْ دَخَلَ بِهَا زَوْجُهَا وَلَا يُبِينُهَا وَلَا يُبْرِيهَا إِلَّا ثَلَاثُ تَطْلِيقَاتٍ وَالَّتِي لَمْ يَدْخُلْ بِهَا تُخْلِيهَا وَتُبْرِيهَا وَتُبِينُهَا الْوَاحِدَةُ قَالَ مَالِك وَهَذَا أَحْسَنُ مَا سَمِعْتُ فِي ذَلِكَ

মালিক (রহঃ) বলেনঃ তিনি ইবন শিহাব (রহঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছেন, যে ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে বলিলঃ “আমার তোমা হইতে দায়িত্বমুক্ত হইয়াছি। তুমিও আমা হইতে দায়িত্বমুক্ত।” ইহা দ্বারা তালাকাই আল-বাত্তা-এর মতো তিন তালাক প্রযোজ্য হইবে।

যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে বলিলঃ (أَنْتِ خَلِيَّةٌ أَوْ بَرِيَّةٌ) “তুমি দায়মুক্ত” (أَنْتِ بَائِنَةٌ) “তুমি আমা হইতে পৃথক।” মালিক (রহঃ) বলেনঃ সে স্ত্রী যাহার সঙ্গে সহবাস করা হইয়াছে এইরূপ হইলে তবে তাহার স্বামীর উপরিউক্ত বাক্যগুলির দ্বারা তাহার উপর তিন তালাক বর্তাইবে। আর যদি সেই স্ত্রী এমন হয় যাহার সহিত সহবাস করা হয়নি, তবে ধর্মত স্বামীকে বিশ্বাস করা হইবে এবং তাহার নিকট জিজ্ঞাসা করা হইবে-সে উপরিউক্ত বাক্যগুলি দ্বারা এক তালাক উদ্দেশ্য করিয়াছে, না তিন তালাক। যদি সে এক তালাক উদ্দেশ্য করিয়াছে বলিয়া প্রকাশ করে তাহা হইলে এই বিষয়ে সেই ব্যক্তিকে হলফ দেওয়া হইবে। (যেহেতু স্বামীর উক্তির দ্বারা স্ত্রীর প্রতি এক তালাক বায়েন প্রযোজ্য হইয়াছে, তাই পুনর্বিবাহ ছাড়া স্বামী সেই স্ত্রীকে গ্রহণ করিতে পারবে না) তাই সে বিবাহের প্রস্তাবকারী হিসাবে অন্য লোকদের মতো একজন বলিয়া পণ্য হইবে। ইহার কারণ এই যে, যে স্ত্রীর সহিত সঙ্গম করা হইয়াছে সেই স্ত্রী তিন তালাক ছাড়া দায়িত্বমুক্ত বা স্বামী হইতে পৃথক হইবে না। আর যাহার সহিত সঙ্গম হয় নাই সেই স্ত্রী এক তালাক দ্বারা দায়িত্বমুক্ত ও পৃথক হইয়া যায়।

মালিক (রহঃ) বলিয়াছেনঃ এ বিষয়ে যাহা আমি শুনিয়াছি তন্মধ্যে ইহাই আমার নিকট উত্তম।
(মুয়াত্তা মালিক ১১৬৫)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
https://ifatwa.info/1049/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ  

 "ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া) তে বর্ণিত রয়েছে,

 لَا يَقَعُ بِهَا الطَّلَاقُ إلَّا بِالنِّيَّةِ أَوْ بِدَلَالَةِ حَالٍ كَذَا فِي الْجَوْهَرَةِ النَّيِّرَةِ. ثُمَّ الْكِنَايَاتُ ثَلَاثَةُ أَقْسَامٍ (مَا يَصْلُحُ جَوَابًا لَا غَيْرُ) أَمْرُك بِيَدِك، اخْتَارِي، اعْتَدِّي (وَمَا يَصْلُحُ جَوَابًا وَرَدَّا لَا غَيْرُ) اُخْرُجِي اذْهَبِي اُعْزُبِي قُومِي تَقَنَّعِي اسْتَتِرِي تَخَمَّرِي (وَمَا يَصْلُحُ جَوَابًا وَشَتْمًا) خَلِيَّةٌ بَرِيَّةٌ بَتَّةٌ بَتْلَةٌ بَائِنٌ حَرَامٌ


কেনায়া শব্দাবলী দ্বারা নিয়ত ব্যতীত বা তালাকের ব্যাপারে ইশরা ইঙ্গিত ব্যতীত তালাক পতিত হয় না।কেনায়া তালাক তিন প্রকার যথাঃ-


(১)

যে সমস্ত শব্দাবলী দ্বারা তালাক ব্যতীত ভিন্ন কিছু বুঝা যায় না।যেমন,তোমার বিষয় তোমার হাতে,তুমি পছন্দ করো,তুমি গণনা করো।


(২) যে সমস্ত শব্দাবলী দ্বারা তালাক হওয়া এবং না হওয়া উভয়টি বুঝায়।যেমন,তুমি বের হও,তুমি চলে যাও,তুমি আমার কওম থেকে দূরে চলে চাও,তুমি নেকাব পরিধান করো,তুমি পর্দার আড়ালে চলে যাও,তুমি উড়না পরিধান করো।


(৩) যা তালাক এবং গালির উভয়টির সম্ভাবনা রাখে। হারাম,বায়িন,মুক্ত,দায়মুক্ত, বাত্তাহ,বাতলাহ ইত্যাদি শব্দাবলি।


পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট তিন প্রকারঃ যথাঃ- 

وَالْأَحْوَالُ ثَلَاثَةٌ (حَالَةُ) الرِّضَا (وَحَالَةُ) مُذَاكَرَةِ الطَّلَاقِ بِأَنْ تَسْأَلَ هِيَ طَلَاقَهَا أَوْ غَيْرُهَا يَسْأَلُ طَلَاقَهَا (وَحَالَةُ) الْغَضَبِ 

পরিবেশ ও পরিস্থিতি তিন প্রকার।(১) হালতে রেযা- খুশির হালত(২) তালাকের শব্দাবলী উচ্ছারণের হালত(৩) রাগান্বিত অবস্থা।


فَفِي حَالَةِ الرِّضَا لَا يَقَعُ الطَّلَاقُ فِي الْأَلْفَاظِ كُلِّهَا إلَّا بِالنِّيَّةِ وَالْقَوْلُ قَوْلُ الزَّوْجِ فِي تَرْكِ النِّيَّةِ مَعَ الْيَمِينِ

(১) খুশির হালতে নিয়ত ব্যতীত কেনায়া শব্দাবলী দ্বারা তালাক পতিত হবে না।নিয়ত না থাকার বিষয়ে স্বামীর কথাই কসমের সাথে গ্রহণযোগ্য। 


وَفِي حَالَةِ مُذَاكَرَةِ الطَّلَاقِ يَقَعُ الطَّلَاقُ فِي سَائِرِ الْأَقْسَامِ قَضَاءً إلَّا فِيمَا يَصْلُحُ جَوَابًا وَرَدَّا فَإِنَّهُ لَا يُجْعَلُ طَلَاقًا كَذَا فِي الْكَافِي

(২)তালাকের আলোচনার পরিস্থিতিতে সকল প্রকার কেনায়া তালাকে তালাক পতিত হবে।তবে যে শব্দগুলো তালাকের আবেদনের জবাব এবং রদ উভয়টা বুঝাবে,সে শব্দগুলো দ্বারা তালাক পতিত হবে না।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩৭৫)


প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনাদের মাঝে দুই তালাক পতিত হয়েছে।
(১ নং প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এক তালাক,আর দুই নাম্বার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ২য় তালাক।)

এক্ষেত্রে এরপর যেহেতু আপনানাদের আবারো বিবাহ পড়ানো হয়,সুতরাং আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক এখন শুদ্ধ।

এর পরবর্তী ঘটনা গুলির দরুন কোনো তালাক পতিত হয়নি।

সুতরাং আপনারা এখন নিশ্চিন্তে ঘর সংসার চালিয়ে যেতে পারেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
আফওয়ান উস্তায, ১ এবং ২ নং ঘটনা কোনটা আগে আর কোনটা পরে ঘটেছে আমরা নিশ্চিত জানিনা, যদি বায়েন তালাক আগে হয়ে থাকে তাহলে পরের মুখে "এক তালাক" বলার দ্বারা কী তালাক পতিত হবে? নাকী  স্পষ্ট কোনটা আগে ঘটেছে যেহেতু জানিনা সেহেতু ২টা আলাদা তালাক পতিত হবে?
উস্তায ৪ নং ঘটনায় তালাক পরে বলে দিবো ব্যতীত বাকী কথাগুলো যদি তালাকের নিয়তে বলে তাহলে কী তালাক পতিত হয়েছে? বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ
by
উস্তায দয়া করে কমেন্টের উত্তর দিবেন প্লিজ, পেরেশানিতে আছি।
by (565,890 points)
কমেন্টের বিবরণ মতে জবাব একই হবে।

অর্থাৎ আপনাদের মাঝে দুই তালাক পতিত হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...