بسم
الله الرحمن الرحيم
জবাব,
রাসুলুল্লাহ (স.) জানাজার
নামাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাজায়
উপস্থিত থাকবে, তার
জন্য এক কিরাত, আর
যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দুই কিরাত। জিজ্ঞাসা
করা হলো দুই কিরাত কী? তিনি
বললেন, দুটি
বিশাল পর্বত সমতুল্য (সওয়াব)।’ (সহিহ বুখারি: ১৩২৫)
জানাজার নামাজের ফরজ দুইটি।
এক. চারবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলা। দুই. দাঁড়ানো। জানাজা সহিহ হওয়ার জন্য লাশ উপস্থিত
থাকা শর্ত।
জানাজার সুন্নত তিনটি। এক.
আল্লাহর হামদ ও সানা পড়া। দুই. নবীজি (সা.)-এর
ওপর দরুদ পড়া। তিন. মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। (ইলাউস সুনান : ৮/১৭৪)
জানাযা নামাজ পড়ার পদ্ধতি
হলো- জানাজার নামাজ আদায়ের আগে মৃতকে কিবলার দিকে জমিনে রাখতে হবে। ইমাম তার বক্ষ বরাবর
দাঁড়াবেন। এরপর জানাজার নিয়ত করতে হবে। নিয়ত মনে মনে করলেই যথেষ্ট। মুখে আলাদা করে
উচ্চারণ করতে হয় না; তবে
কেউ করলে অসুবিধা নেই।
নিয়ত এভাবে করা যায়- ‘আমি
জানাজার ফরজে কিফায়া নামাজ চার তাকবিরের সঙ্গে কিবলামুখী হয়ে এই ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে
আদায় করছি, আল্লাহু
আকবার।’
তাকবির বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত
ওঠাতে হয়। এরপর নাভির নিচে হাত বেঁধে সানা পড়তে হয়। এরপর তাকবির বলে দরুদে ইবরাহিম
পড়তে হয়। তারপর তাকবির বলে নির্দিষ্ট দোয়া পড়তে হয়। চতুর্থ তাকবির বলে ডানে-বাঁয়ে সালাম
ফেরাতে হয়।
লক্ষণীয় যে,
কেউ যদি ইমাম চতুর্থ তাকবির বলার পর সালাম
ফেরানোর আগ মুহূর্তেও তাকবির বলতে পারেন, তাহলে সে জানাজা পেয়েছে বলে গণ্য হবে। আর কেউ দেরি করে
ফেললে তখন লাশ উঠিয়ে নেওয়ার আগে সানা, দরুদ ও দোয়াসহ তাকবির বলে সালাম ফেরাতে পারলে,
তা-ই করে নিতে হবে। যদি লাশ উঠিয়ে নেওয়ার
আশঙ্কা হয়, তাহলে
শুধু তিন তাকবির বলে সালাম ফিরিয়ে নেবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/১১৬)
মৃত ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক
হলে নিম্নস্বরে এই দোয়া পড়তে হয়- তৃতীয় তাকবিরের পর প্রাপ্তবয়স্ক মৃত ব্যক্তির জন্য
যে দোয়া পড়তে হয় -
اَللّٰهُمَّ
اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِ نَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا
وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَنَا اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا
فَاَحْيِهِ عَلٰى الْاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى
الْاِيْمَانِ
অপ্রাপ্তবয়স্ক মৃতব্যক্তির
জন্য যে দোয়া পড়তে হয় তার আরবি
وَاجْعَلْهُ
لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا
اَجْرًا وَذُخْرًا
অর্থ: ‘হে আল্লাহ,
আপনি তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তী হিসেবে
কবুল করুন, তাকে
করুন আমাদের জন্য প্রতিদান স্বরূপ এবং তাকে বানান আমাদের জন্য সুপারিশকারী -যার সুপারিশ
কবুল করা হবে।’ অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে হলে ‘হু’ (هُ) স্থানে ‘হা’ (هَا) বলতে হবে।
তারপর চতুর্থ তাকবির বলবে।
তখনও হাত ওঠাবে না। (দারাকুতনি: ১৮৫৩, ইবনে আবি শায়বা: ৩/২৯৫)। অতঃপর ডান ও বাম দিকে সালাম ফেরাবে।
(সুনানে কুবরা: ৭২৩৮)
ইমাম উচ্চৈঃস্বরে তাকবির বলবে
এবং বাকি দোয়া-দরুদ অনুচ্চস্বরে পড়বে। মুক্তাদিরা সবই অনুচ্চস্বরে করবে। (আবু দাউদ:
২৭৮৪, সুনানে
কুবরা: ৭৪৩৩)
আরো জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/34502/
মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজে
কারা উপস্থিত থাকছেন সেটা লক্ষণীয়। মৃতের আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার ইমাম—উভয়ে-ই যদি উপস্থিত থাকেন, আর ইমাম ইলম ও আমলে মৃতের আত্মীয়ের চেয়ে বেশি যোগ্য হন,
তাহলে জানাজার নামাজ পড়ানোর বেশি হকদার
ওই ইমাম।
প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম আন-নাখায়ি
(রহ.) বলেন, ‘জানাজার নামাজ পড়াবে মসজিদের ইমামরা। তোমরা তাদের পেছনে ফরজ নামাজ পড়তে রাজি।
কিন্তু জানাজা পড়তে রাজি না (এটা কেমন কথা)! (কিতাবুল আসার,
হাদিস: ২৩৭)
অন্য বর্ণনায় তাবেয়ি সালেম
(রহ.), তাউস
(রহ.), কায়েস
(রহ.), মুজাহিদ
(রহ.) ও আতা (রহ.) প্রমুখ আলেমগণ ইমাম সাহেবকে জানাজা পড়ানোর জন্য আগে বাড়িয়ে দিতেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১১৪৩২)
পক্ষান্তরে মৃতের আত্মীয়রা
যদি এলাকার ইমাম থেকে বেশি যোগ্য ও বড় আলেম হন, তাহলে অবশ্যই তারা বেশি হকদার।
তথ্যসূত্র: আল-বাহরুর রায়েক:
২/১৮০; আদ্দুররুল
মুখতার: ২/২১৯; কিতাবুল
আছল: ১/৩৪৯; খুলাসাতুল
ফাতাওয়া: ১/২২২; ফাতাওয়া
হিন্দিয়া: ১/১৬৩।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
উপরে জানাযার নামাজ পড়ার ও পড়ানোর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।