আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
68 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (24 points)
আসসালামু 'আলাইকুম, উস্তায । আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন । সামনে বোর্ড পরীক্ষা, দুআ করিয়েন

১. গীবত বিষয়ক : গীবত করার পরিণাম বা ভয়াবহতা সত্ত্বেও গীবত করা হলে, এবং যার নামে গীবত করা হয়েছে তার কাছে যদি ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ না থাকে বা উক্ত ব্যক্তি যদি মৃত হয় বা উক্ত ব্যক্তির কাছে গীবতের বিষয়ে মাফ চাওয়ার কারণে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে , এই জঘণ্য অপরাধ থেকে কিভাবে বের হবো এবং কিভাবে ও কতদিন তওবা করলে/তওবার নিয়তে দুই রাকাত নফল সলাত আদায় করে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত অন্তর নিয়ে  ক্ষমা চাইলেই কি হবে?

২. কাযা সলাহ-সিয়াম বিষয়ক : কাযা করা অনেক সলাহ থাকে, যেমন ফরয সলাত , বিতরের সলাত । আবার ফরয সিয়াম ।

এগুলো কি বয়ঃসন্ধিকালে পা দেয়ার আগের গুলো সহ পড়তে হবে এবং সিয়াম রাখতে হবে নাকি বয়ঃসন্ধিকালের পর থেকে হিসেব করে পড়তে হবে এবং সিয়াম রাখতে হবে আর কাযা সলাত গুলো কিভাবে বা কখন কোন ওয়াক্তে পড়ে শেষ করা যাবে ? আমায বর্তমান বয়স ১৮বছর ৭মাস ১৪দিন । যয়ঃসন্ধিক্ষণের বয়স ১৩ বছর । কত বছর হিসেব করে কাযা সলাত ও সিয়াম পূরণ করতে হবে ?( এক্ষেত্রে সুন্নত রাকাত গুলোও পূরণ করতে হবে?) আবার এমনও হয়েছে কারণবশত আল্লাহর নামে কসম করা হয়েছে, কিন্তু যেটার জন্য কসম দেয়া হয়েছিলো সেটা পূরণ হয়নি এ কারণে কাফাররা দিতে হবে, আমার সামর্থ্য নেই বিধায় ৩টি সিয়াম রাখতে হবে । কিন্তু, আমার সঠিক মনেও নেই কয়টা কসম ভঙ্গ হয়েছিলো , এক্ষেত্রে কি করবো এবং এই কাফররার সিয়াম রাখার আগে কি তওবা করে নিতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (63,440 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ [٤٩:١٢]

মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। {সূরা হুজুরাত-১২}

গীবতের গুনাহ খুবই মারাত্মক, তাই আমাদের জানতে হবে যে  গীবত কি?

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟» قَالُوا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ» قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ، فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ»

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কি? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ গীবত হল তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হলঃ আমি যা বলেছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে আপনি কি বলেন? তিনি বললেনঃ তুমি তার সম্পর্কে যা বলেছ তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে।

{সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৫৮৯, ৭০, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১১৪৫৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৭৫৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২৯৩, মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১৪১৭, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২১১৬৩}

গীবত করলে বান্দার হক্ব নষ্ট হয়। আর কেউ বান্দার হক্ব নষ্ট করলে আল্লাহ তা'আলা ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ না  উক্ত বান্দা ক্ষমা করে দিচ্ছে। কিন্তু যদি হক্ব নষ্ট কারী  ঐ বান্দা পরবর্তীতে খালিছ নিয়তে তাওবাহ করে ফেলে এবং আল্লাহর দয়া হয়ে যায়। তাহলে আল্লাহ তা'আলা সে বান্দা কে খুশী করে দিবেন যার হক্ব দুনিয়াতে নষ্ট হয়েছিলো। এবং আল্লাহ তা'আলা উক্ত বান্দাকে সেই হক্ব নষ্টের গোনাহ থেকে ক্ষমা করে দিবেন। তখন আর সেই বান্দা আল্লাহ কাছে বিচার দায়ের করবে না।

 এখন কথা হলো খালিছ নিয়তে বিশুদ্ধ তাওবাহ করার পদ্ধতি বা সূরত কি? তাওবাহ কবুল হওয়ার শর্ত হলো, আল্লাহর হক্ব সম্ভলিত বিষয় হলে আল্লাহর নিকট অনুনয় বিনয় করে আহাজারি করা, মিনতি করা।

আর বান্দার হক্ব হলে, সেই হক্ব কে আদায় করে দেয়া বা তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। সেজন্য এর পিছনে সাধ্যমত আপ্রাণ চেষ্টা করা। যদি নিজ সাধ্যমত আপ্রাণ চেষ্টা করার পরও উক্ত বান্দার হক্বকে আদায় করা সম্ভব না হয়,বা ক্ষমা না পাওয়া যায়,তাবে আল্লাহর নিকট নিজ সেই চেষ্টার কথা তুলে ধরে সমাধান চাওয়া।এবং ভবিষ্যতে কোনো বান্দার হক্ব নষ্ট না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। নিয়ত বিশুদ্ধ থাকলে অবশ্যই আল্লাহ তাওবাহকে কবুল করে নেবেন এবং উক্ত গোনাহ থেকে ক্ষমা করে দিবেন। গীবতের মাধ্যমে কারো হক্ব নষ্ট করলে এভাবেও তার নিকটে গিয়ে ক্ষমা চাইতে পারেন যে, শর দিবস যেমন ঈদ, আশুরা, ইত্যাদিতে তার নিকট গিয়ে বলা। প্রিয় ভাই/বোন!

আমরা এক সাথে চলাফেরা করেছি।ইসলাম সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞান না থাকায় আমাদের চলাফেরায় একজন অন্যজনের কত হক্বই না নষ্ট করেছি। আপনি না করলেও আমি অবশ্যই করেছি। দয়া করে আজকের এই পবিত্র দিনে আমাকে যাবতীয় হক্ব নষ্ট করার গোনাহ থেকে ক্ষমা করে দিন।

এভাবে ক্ষমা করিয়ে নিবেন। হ্যা ভবিষ্যতে আর এরকম কাজ কখনো করবেন না। তবেই আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/641

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

. যাদের গীবত করা হয়েছে, যদি ক্ষমা চাইতে যাওয়া হয় তা ব্যক্ত করে যে গীবত করেছি আপনার, তবে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। তাই সরাসরি গীবতের কথা না বলে বরং উপরে লিখিত পদ্ধতিতে শুধু ক্ষমা চাইতে হবে।

২. সাবালক হওয়ার পর থেকে সকল ফরজ ও বিতির নামাজ এবং ফরজ রোজা কাযা আদায় করতে হবে। নফল বা সুন্নাত নামাজরে কোন কাযা আদায় করতে হবে না। কা'যা নামায আদায় না করে শুধুমাত্র তাওবাহ ইস্তেগফার যথেষ্ট হবে না। বরং অবশ্যই আদায় করতে হবে এবং সাথে সাথে তাওবাহ ইস্তেগফার জারী রাখতে হবে।

কখন থেকে এবং কোন পদ্ধতিতে কা'যা নামায-কে আদায় করতে হবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/1609

যেমন: ফজরের নামায সর্বমোট ১০০ ওয়াক্তের কাযা হয়েছে। তখন কাযা নামায আদায় করার সময় এভাবে নিয়ত করবে যে, আমার জিম্মায় যত ফজরের নামায কাযা রয়েছে, সে অনাদায়কৃত নামায সমূহের মধ্য থেকে প্রথম ফজরের নামাযকে এখন কাযা আদায় করছি” এমন নিয়তে নামায আদায় করবে। এভাবে হিসেবে করে পড়তে থাকবে। প্রতিবার অনাদায়কৃত প্রথম ফজরের নামায বলার দ্বারা তার যিম্মায় যতগুলো নামায বাকি ছিলো, সেগুলোর প্রথম নামাযের নিয়ত হচ্ছে, তাই এক্ষেত্রে নিয়তটি নির্দিষ্ট নামাযেরই হচ্ছে। ঠিক উল্টোভাবেও করা যায়। অর্থাৎ যত নামায কাযা আছে তার সর্বশেষ অনাদায়কৃত কাযার নিয়ত করছি। এভাবেও পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে বাকি নামাযের কাযা আদায় করা যাবে। (রদ্দুল মুহতার-২/৫৩৮)

এ ধারাবাহিকতায় বাকি নামায সমূহের ক্বাযা আদায় করবে। যোহর, আছর, মাগরিব, ইশা এবং সাথে বিতিরের নামাযও এভাবেই আদায় করে নিবে। বিতিরের নামাযের ক্বাযা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/629


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 348 views
...