বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
শরীয়তের বিধান হলো,দেন মোহর সহবাসের পূর্বে পুরোপুরি প্রদান করাই উত্তম। তবে যদি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই।
,
বাকি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে বাঁধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা দিতে পারবে না। কিন্তু স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।
স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।
স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে মোহর কিছু দেওয়া এবং কিছু অংশ বাকি রাখা শরীয়ত সম্মত।
,
পবিত্র কুরআন শরীফে এসেছে
আল্লাহ তায়ালা বলেন
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا [٤:٤]
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। [সূরা নিসা-৪]
فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤]
অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। [সূরা নিসা-২৪]
,
★আলোচ্য আয়াত দ্বারা একথা স্পষ্ট হয় যে যদি মোহরানা নির্ধারন হওয়ার পর স্ত্রী যদি (মোহরানা মাফ করে দেওয়া বা কম করে দেওয়া বা বাকি রেখে অন্য সময়ে দেওয়া) কোনো বিষয়ের উপর স্বামীর সাথে একমত হয়, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।
সুতরাং স্ত্রীর সম্মতিতে মোহরানা বাকি রাখা জায়েজ আছে।
لَا خِلَافَ لِأَحَدٍ أَنَّ تَأْجِيلَ الْمَهْرِ إلَى غَايَةٍ مَعْلُومَةٍ نَحْوَ شَهْرٍ أَوْ سَنَةٍ صَحِيحٌ وَإِنْ كَانَ لَا إلَى غَايَةٍ مَعْلُومَةٍ فَقَدْ اخْتَلَفَ الْمَشَايِخُ فِيهِ قَالَ بَعْضُهُمْ يَصِحُّ وَهُوَ الصَّحِيحُ وَهَذَا؛ لِأَنَّ الْغَايَةَ مَعْلُومَةٌ فِي نَفْسِهَا وَهُوَ الطَّلَاقُ أَوْ الْمَوْتُ أَلَا يَرَى أَنَّ تَأْجِيلَ الْبَعْضِ صَحِيحٌ، وَإِنْ لَمْ يَنُصَّا عَلَى غَايَةٍ مَعْلُومَةٍ، كَذَا فِي الْمُحِيطِ.
এ বিষয়ে কারো কোনো মতভেদ নেই যে,নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধযোগ্য সম্পূর্ণ মহরকে বাকী রাখা জায়েয।যেমনঃ- এক মাস বা এক বৎসর।কিন্তু যদি নির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ না থাকে, তাহলে এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে,কিছুসংখ্যক উলামায়ে কেরাম জায়েয বলে থাকেন।এটাই বিশুদ্ধ মত।কেননা বাস্তবে একটি দিন-তারিখ অবশ্যই নির্দিষ্ট রয়েছে।আর ইহা হল,তালাক বা মৃত্যু।কেননা দিন-তারিখ উল্লেখ ব্যতীত মহরের কিছু অংশ বাকী রাখা জায়েয[মুহিত]
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩১৮)
★স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে মোহরানার কিছু অংশ বাকি রাখা জায়েজ হবে।
স্ত্রীর অনুমতি থাকলে এটি অনুচিত হবেনা।
তবে উত্তম হলো একেবারে নগদ পরিশোধ করে দেওয়া।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
পরিপূর্ণ দেনমোহর বিবাহের পর সহবাসের পূর্বে পরিশোধ করা উত্তম। তবে স্বামী চাইলে স্ত্রীর সন্তুষ্টি চিত্তে কিছু দেন মোহর পরিশোধ করে কিছু অংশ বাকি রাখতে পারে।
তবে এটি স্বামীর জিম্মায় ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে,অন্যান্য পাওনাদারদের ঋনের টাকার মতো।
স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।
এটি যেহেতু স্বামীর উপর ঋন,তাই স্ত্রী যখনই চাইবে,সামর্থ থাকলে তখনই স্বামীকে সম্পূর্ণ মোহর আদায় করতে হবে।
স্ত্রী না চাইলে সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মোহর আদায়ের শেষ টাইম তালাক বা মৃত্যুর সাথে নির্দিষ্ট থাকবে।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
তালাকের দ্বারা যেহেতু স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়,তা তালাকের পর আর দেন মোহর বাকি রাখার সুযোগ নেই। পরিপূর্ণ ভাবে শোধ করে দিতে হবে।
চাই এক তালাক হোক, বা দুই তালাক হোক, বা তিন তালাক হোক।
চাই স্বামী তালাক দিক,চাই স্ত্রী স্বামী কর্তৃক তালাকের প্রদানের ক্ষমতাবলে নিজেকে নিজে তালাক দিক।
সর্বাবস্থায় পরিপূর্ণ ভাবে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে।
হ্যাঁ, এখানে একটি মাসয়ালা আছে,তাহা হলো খোলা তালাক।
অর্থাৎ স্ত্রী যদি তালাক চায়,আর স্বামী যদি তালাক না দিতে চায়,সেক্ষেত্রে স্ত্রী টাকার বিনিময়ে স্বামী হতে তালাক নিতে পারে। মোহরানা আর শোধ করতে হবেনা,এই নিমিত্তেও তালাক নিতে পারে,এক্ষেত্রে এটি খোলা তালাকের অন্তর্ভুক্ত হবে।
এক্ষেত্রে স্বামীকে মোহরানার টাকা পরিশোধ করতে হবেনা।