জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
কোনো অসুস্থ ব্যক্তি শরয়ীভাবে মা'যুর প্রমাণিত হওয়ার জন্য শর্ত হলো,
شرط ثبوت العذر ابتداء أن يستوعب استمراره وقت الصلاة كاملا وهو الأظهر كالانقطاع لا يثبت ما لم يستوعب الوقت كله-
শরয়ীভাবে মা'যুর প্রমাণিত হওয়ার জন্য কোনো নামাযের শুরু থেকে শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত উযর স্থায়ী থাকা শর্ত।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৪০)
কোনো ব্যাক্তি মা'যুর প্রমানিত হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী ওয়াক্ত গুলোতে পুরো সময় উক্ত ওযর পাওয়া জরুরি নয়,বরং পরবর্তী প্রতি ওয়াক্তে এক বারও যদি উক্ত ওযর পাওয়া যায়,তাহলে সে মা'যুরই থাকবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ جَاءَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ أَبِي حُبَيْشٍ إِلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم فَذَكَرَ خَبَرَهَا وَقَالَ " ثُمَّ اغْتَسِلِي ثُمَّ تَوَضَّئِي لِكُلِّ صَلَاةٍ وَصَلِّي "
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবাইশ রাযিয়াল্লাহু ‘আনহা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তার ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ তারপর গোসল করবে এবং প্রত্যেক সলাতের জন্য অযু করে সলাত আদায় করবে।
(আবু দাউদ ২৯৮.ইবনু মাজাহ (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ ঋতুবতী নারীর হায়িযের ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর রক্ত নির্গত হওয়া প্রসঙ্গে, হাঃ ৬২৪), আহমাদ (৬/৪২, ২৬২)
حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ أَيُّوبَ، حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا أَبُو بِشْرٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ، أَنَّ أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ جَحْشٍ، اسْتُحِيضَتْ فَأَمَرَهَا النَّبِيُّ صلي الله عليه وسلم أَنْ تَنْتَظِرَ أَيَّامَ أَقْرَائِهَا ثُمَّ تَغْتَسِلُ وَتُصَلِّي فَإِنْ رَأَتْ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ تَوَضَّأَتْ وَصَلَّتْ
‘ইকরিমাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ বিনতু জাহশের ইস্তিহাযা হলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হায়িযের দিনসমূহে (সলাত ইত্যাদির জন্য) অপেক্ষা করার পর গোসল করে সলাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর অযু করে এক ওয়াক্ত সলাত আদায়ের পর রক্ত দেখা গেলে পরের ওয়াক্তের জন্য পুনরায় অযু করে সলাত আদায় করতে বললেন।
(আবু দাউদ ৩০৫)
حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ سُمَىٍّ، مَوْلَى أَبِي بَكْرٍ أَنَّ الْقَعْقَاعَ، وَزَيْدَ بْنَ أَسْلَمَ، أَرْسَلَاهُ إِلَى سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ يَسْأَلُهُ كَيْفَ تَغْتَسِلُ الْمُسْتَحَاضَةُ فَقَالَ تَغْتَسِلُ مِنْ ظُهْرٍ إِلَى ظُهْرٍ، وَتَتَوَضَّأُ لِكُلِّ صَلَاةٍ، فَإِنْ غَلَبَهَا الدَّمُ اسْتَثْفَرَتْ بِثَوْبٍ
আবূ বাকর (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম সুমাই সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা‘কা‘আ এবং যায়িদ ইবনু আসলাম (রহঃ) সুমাইকে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাবের নিকট পাঠালেন। যাতে সুমাই তাকে জিজ্ঞেস করেন, মুস্তাহাযা কিভাবে গোসল করবে? সাঈদ (রাঃ) বললেন, মুস্তাহাযা গোসল করবে যুহর থেকে যুহর পর্যন্ত (অর্থাৎ প্রত্যেক যুহর সলাতের পূর্বে গোসল করবে)। আর ওযু করবে প্রত্যেক সলাতের জন্য। যদি অত্যধিক রক্তস্রাব হয় তাহলে যেন কাপড়ের পট্টি পরিধান করে।
(আবু দাউদ ৩০১)
আরো জানুনঃ-
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছেঃ-
"তার পুরো ওয়াক্ত জুরে স্রাব যায়না।
কখনো কিছুদিন সুস্থ হলে ওয়াক্তে থেমে থেমে যায়।আবার কিছুদিন কোনো সময় টানা যেতেই থাকে থামেনা"
★শরয়ীভাবে মা'যুর প্রমাণিত হওয়ার জন্য কোনো নামাযের শুরু থেকে শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত উযর স্থায়ী থাকা শর্ত।
কোনো ব্যাক্তি মা'যুর প্রমানিত হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী ওয়াক্ত গুলোতে পুরো সময় উক্ত ওযর পাওয়া জরুরি নয়,বরং পরবর্তী প্রতি ওয়াক্তে এক বারও যদি উক্ত ওযর পাওয়া যায়,তাহলে সে মা'যুরই থাকবে।
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত বোনের যদি কোনো ওয়াক্তে টানা স্রাব আসে,ঐ ওয়াক্তের কোনো সময়েই অযু করে পবিত্রতার সহিত নামাজ পড়ার মতো সুযোগ না হয়,বরং সারা ওয়াক্ত জুড়েই স্রাব আসে,সেক্ষেত্রে সে মা'যুর বলে বিবেচিত হবে।
এর পরবর্তী ওয়াক্ত গুলোতে পুরো ওয়াক্ত জুড়ে স্রাব না আসলেও যদি নুন্যতম একবার স্রাব আসে,সেক্ষেত্রেও সে মা'যুর থাকবে।
তবে কোনো ওয়াক্তে যদি একবারও আর স্রাব না আসে,সেক্ষেত্রে সে সুস্থ বলে বিবেচিত হবে।
★এই বিবরণ মতে সে মা'যুর হলে সে প্রতি ওয়াক্তের জন্য একবার অযু করবে। এরপর ঐ ওয়াক্তে যত ইচ্ছা নামাজ কুরআন তিলাওয়াত চালিয়ে যেতে পারবে।
(০২)
মাগরিবের ওয়াক্ত আসলে তাকে আলাদা ভাবে ওযু করতে হবে,ঈশার ওয়াক্ত আসলে তাকে আলাদা ভাবে আবারো ওযু করতে হবে।
(০৩)
সে যদি উপরের বিবরণ মতে মা'যুর হয়,সেক্ষেত্রে তাকে আর চেক করতে হবেনা।
(০৪)
যদি পুরো ওয়াক্ত জুড়েই তার এইভাবে পেশাব বের হয়ে থাকে তথা সে যদি মা'যুর বলে সাব্যস্ত হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে তার উক্ত নামাজ গুলি আদায় হয়ে গিয়েছে।
(৫.৬)
এক্ষেত্রে বীর্য সম্পর্কে নিশ্চিত হলে গোসল ফরয হবে। মযি সম্পর্কে নিশ্চিত হলে গোসল ফরয হবে।
নতুবা অন্য কোনো ছুরতে তার জন্য গোসল ফরয হবেনা।
বিস্তারিত জানুনঃ-
(০৭)
এক্ষেত্রে গোসল ফরজ হবেনা।
(০৮)
এটি মনি নাকি মযি,সেটি তার অবস্থা দেখে নির্ণয় করতে হবে।
,
সুতরাং আমরা জেনে নেই যে মনি ও মযি কেমন?
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য এক প্রসঙ্গে বলেন,
مَاءَ الرَّجُلِ غَلِيظٌ أَبْيَضُ وَمَاءَ الْمَرْأَةِ رَقِيقٌ أَصْفَرُ
“সাধারণত পুরুষের বীর্য হয় গাঢ় ও সাদা এবং স্ত্রীলোকের বীর্য হয় পাতলা ও হলদে।” (সহীহ মুসলিম-৩১১,মিশকাত-৪৩৪)
এ সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/11414
এ সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/1689
(০৯)
যেহেতু সে মা’যুর,তাই সে নামাজের অযুতেই পড়তে পারবে।
(১০)
যেহেতু সে মা’যুর,তাই অযু ভাঙ্গার অন্য কোনো কারন পাওয়া মা গেলে তাকে বারবার অযু করতে হবেনা।
ওয়াক্ত চলে গেলে অযু করতে হবে।
(১১)
না,পড়া যাবেনা।
(১২)
সে মা’যুর হয়ে থাকলে এক্ষেত্রে অযু ভেঙ্গে যাবেনা।
(১৩)
এক্ষেত্রে স্বপ্নদোষ স্বরন থাকলে ৫ নং প্রশ্নের জবাবের ন্যায় বিধান হবে।
আর স্বপ্নদোষ স্বরন না থাকলে,
বীর্য সম্পর্কে নিশ্চিত হলে গোসল ফরয হবে
মযি সম্পর্কে নিশ্চিত হলে গোসল ফরয হবে না।
বীর্য না মযি? এ নিয়ে সন্দিহান হলে তারাফাইন এর মাযহাব মতে গোসল ফরয হবে।
এক্ষেত্রে গোসল করারই পরামর্শ থাকবে।
(১৪)
তার তো বিরতি হবেনা।
কেননা উক্ত স্রাব অনবরত।
তাই তাকে বিরতির জন্য অপেক্ষা করতে হবেনা।
হ্যাঁ সে মা'যুর না হয়ে থাকলে তাকে বিরতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।