بسم
الله الرحمن الرحيم
জবাব,
শরীয়তে ঈমানের
পরই নামাযের স্থান এবং তা ইসলামের স্তম্ভ ও বড় নিদর্শনের একটি। পাঁচ ওয়াক্ত নামায
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করা ফরয। কখনো কোনো ওয়াক্তের ফরয নামায ছুটে গেলে কিংবা
দীর্ঘকাল অবহেলাবশত নামায না পড়লে পরবর্তীতে এর কাযা আদায় করতে হবে। এ বিষয়টি সহীহ
হাদীস, আছারে সাহাবা ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা প্রমাণিত।
হাদীস শরীফে
এসেছে-
من نسي
صلاة أو نام عنها فكفارتها أن يصليها إذا ذكرها
যে ব্যক্তি
নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল,
যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা
আদায় করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭৬)
উক্ত হাদীসে
نسي শব্দটি লক্ষ্যণীয়। আরবী
ভাষায় এটি যেমনিভাবে ‘ভুলে যাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয় তদ্রূপ কোনো কাজ অবহেলা করে
ছেড়ে দেওয়ার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ( দেখুন : আলইসিতিযকার ১/৩০০)
অতএব কাযা
আদায়ের বিধানটি শুধু ঘুম ও বিস্মৃতি এই দুই অবস্থার সাথে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। বরং
অবহেলাবশত ছেড়ে দিলেও কাযা জরুরি।
অন্য বর্ণনায়
এসেছে, যখন তোমাদের কেউ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকে বা নামায থেকে গাফেল থাকে তাহলে যখন
তার বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬৮৪, ৩১৬)
অন্য হাদীসে
আছে, যে ব্যক্তি নামায রেখে ঘুমিয়ে গেছে বা নামায থেকে গাফেল রয়েছে তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
এর কাফফারা হল যখন তার নামাযের কথা
স্মরণ হবে তখন তা আদায় করে নেওয়া। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬১৪)
উপরোক্ত হাদীসসমূহ
থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোনো নামায সময়মতো আদায় না করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা অপরিহার্য। নামাযটি ভুলক্রমে
কাযা হোক, নিদ্রার কারণে হোক অথবা গাফলতি বা অবহেলার কারণে হোক- সর্বাবস্থায় কাযা আদায়
করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দলীল হল, ইজমায়ে উম্মত। চার মাযহাবে চার ইমামসহ প্রায় সকল মুজতাহিদ
এ বিষয়ে একমত যে, ফরয নামায নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে না পারলে পরে হলেও তা আদায় করতে হবে। ইচ্ছাকৃত
ছেড়ে দেওয়া কিংবা ওজরবশত ছেড়ে দেওয়া উভয় ক্ষেত্রের একই বিধান।-আলইসতিযকার ১/৩০২
কুয়েতের ইসলামী
বিষয় ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ইফতা বোর্ডের সম্মিলিত ফাতাওয়াও এটিই। (দেখুন : মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া আশশারইয়্যাহ ১/২০৪)
সুতরাং উমরী
কাযা ভিত্তিহীন, কাযা আদায় না করে শুধু তাওবাই যথেষ্ট-প্রশ্নের এসব কথা সহীহ নয়। তদ্রূপ একথাও
সহীহ নয় যে, উমরী কাযায় সময় ব্যয় না করে নফল ও তাহাজ্জুদ আদায় করা উচিত। এর স্বপক্ষে যে
দলীল পেশ করা হয়েছে তাও ঠিক নয়। কারণ সুনানে আবু দাউদে প্রশ্নোক্ত হাদীসটির মূল পাঠ
হল-
إن أول
ما يحاسب الناس به يوم القيامة من أعمالهم الصلاة، قال يقول ربنا عز وجل لملائكته
وهو أعلم انظروها في صلاة عبدي أتمها أم نقصها؟ فإن كانت تامة كتبت له تامة وإن
كان انتقص منها شيئا قال انظروا هل لعبدي من تطوع؟ فإن كان له تطوع قال أتموا
لعبدي فريضة من تطوعه
কেয়ামতের
দিন মানুষের সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে তা হল নামায। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে
বলবেন, তোমরা আমার বান্দার ফরয নাময দেখো। সে পূর্ণরূপে তা আদায় করেছে,
নাকি তা আদায়ে কোনো ত্রুটি করেছে?
যদি পূর্ণরূপে আদায় করে থাকে তবে
তার জন্য পূর্ণ নামাযের ছওয়াব লেখা হবে। আর আদায়ে কোনো ত্রুটি করে থাকলে আল্লাহ তাআলা
ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখ, আমার বান্দার নফল নামায আছে কি না? যদি থাকে তবে এর দ্বারা তার ফরয নামায আদায়ে যে
ত্রুটি হয়েছে তা পূর্ণ করে দাও। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৬৪)
উক্ত হাদীসে
‘কারো ফরয নামায কম পড়ে গেলে নফল দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে’-যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ
হয়েছে-এ কথা নেই; রবং এতে রয়েছে, আদায়কৃত নামাযে ত্রুটির বিষয়। (ফয়যুল কাদীর ৩/৮৭;
ইতহাফু সাদাতিল মুত্তাকীন ৩/১১;
আলফাতহুর রববানী ১/১৮২;
বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন : মাসিক
আলকাউসারের উদ্বোধনী সংখ্যা (ফেব্রুয়ারি ২০০৫, পৃষ্ঠা : ১৩)
উমুরী কাযা
নামায আদায় করতে হলে প্র্রথমে কোন ওয়াক্ত নামায কত রাকাত কাযা হয়েছে তা নির্ণিত করে
নিতে হবে। যদি তা জানা সম্ভব না হয়। তাহলে অনুমান করে নিবে। অনুমান করে কোন নামায কত ওয়াক্ত
কাযা করেছে তা নির্ধারণ করে নিবে। তারপর একে একে তা আদায় করবে। যেমন: ফজরের
নামায ৭০ ওয়াক্তের কাযা হয়েছে। তখন কাযা নামায আদায় করার সময় এভাবে নিয়ত করবে,
আমার জিম্মায় যত ফজরের নামায কাযা
আছে, তার অনাদায়কৃত প্রথম ফজরের কাযা আদায় করছি” এমন নিয়তে নামায আদায় করবে।
তারপর যিম্মায়
৬৯ ওয়াক্তের ফজরের নামায বাকি থাকে। তবু এভাবেই নিয়ত করবে যে,
আমার যিম্মায় যত ফজরের নামায কাযা
আছে, তার প্রথম অনাদায়কৃত ফজরের নামাযের নিয়ত করছি”। এভাবে হিসেবে করে পড়তে থাকবে। প্রতিবার
অনাদায়কৃত প্রথম ফজর নামায বলার দ্বারা যে নামায বাকি আছে,
তার প্রথম নামাযের নিয়ত হচ্ছে,
তাই নিয়তটি নির্দিষ্ট নামাযের হয়ে
যায়। ঠিক উল্টোভাবেও করা যায়। অর্থাৎ যত নামায কাযা আছে তার সর্বশেষ অনাদায়কৃত কাযার
নিয়ত করছি। এভাবেও পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে বাকি নামাযের কাযা আদায় করা যাবে। এভাবে বাকি নামায আদায়
করবে। যোহর, আছর, মাগরিব, ইশাও এভাবে আদায় করবে।একদিনে একাধিক চারদিন পাঁচদিনের,
যত দিনের ইচ্ছে কাযা আদায় করা যাবে।
কোন সমস্যা নেই। এক ওয়াক্তের কাযা ভিন্ন
ওয়াক্তে অর্থাৎ ফজরের নামাজ জোহরের ওয়াক্তেও আদায় করা যাবে।
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
উমরী কাযা
আদায়ের বিশেষ কোনো পদ্ধতি নেই। সাধারণ নামাজের মতোই তা পড়া যায়। অতীত ৯ বছরের নামাজ এখন আদায় করলে প্রতিদিনের পাঁচ
ওয়াক্ত ফরজ ও বিতরসহ মোট ছয়টি নামাজ আদায় করতে হবে। সুন্নত ও নফল নামাজের কাযা করতে
হয় না। প্রতিদিনের নির্দিষ্ট নামাজের সঙ্গে পূর্ববর্তী দু’টি নামাজ নিয়মিত আদায় করলে
সাড়ে ৪ বছরে উমরী কাযা শেষ হবে। আরও বেশি করে পড়লে আরও দ্রুত শেষ হবে। কাযা নামাজ অনেক বেশি থাকলে উপস্থিত নফলের স্থলে কাযা আদায় করা যেতে পারে। তবে সুন্নতে মোয়াক্কাদা ছেড়ে দেয়া কিছুতেই
উচিত হবে না।