আমাদের এলাকার জামে মসজিদে খতিব আছেন, কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার ইমাম নেই। খতিব সাহেব মাঝে মাঝে এসে অন্যান্য সালাতের ইমামতি করেন, অন্য সময় মুয়াজ্জিন সাহেব ইমামতি করেন। মুয়াজ্জিন সাহেবের কেরাত অশুদ্ধ। প্রায়ই টানে উচ্চারনে ভুল করেব কিন্তু তা লাহনে জলি কিনা তা আমি বুঝতে পারি না, তবে বুঝতে পারি এটা ভুল। তার থেকে আমি আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো তেলওয়াত করতে পারি। এখন, যখন মুয়াজ্জিন সাহেব ইমামতি করাবেন তখন আমি যদি জামাতের নিয়ত না করা একা সালাতের নিয়ত করি এবং তার রুকু সিজদার সাথে মিলিয়ে রুকু সেজদা এবং অন্য সবকিছু করি তবে কি আমার সালাত হয়ে যাবে? আমি সবকিছু নিঃশব্দে পড়ব, ফজর থেকে এশা সব সালাতে।
উল্লেখ্য, আমি সব মুসল্লির থেকে বয়সে ছোটো, বিশ বছর। আমি কথা ঠিকভাবে গুছিয়ে বলতে পারি না। কাউকে একটা বুঝাকে বুঝে আরেকটা। কথা বলতে ভয় পাই আর বুক কাপে। তখন আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় আর পথ হারিয়ে। ভেবেছিলাম খতিব সাহেব না থাকলে একদিন মাগরিব বা এশার সালাতে আমি ইমামতি করার কথা বলবো, যাতে সবাই আমার কেরাত শুনে আমাকেই ইমামতি করতে বল। কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ খতিব সাহেব মাগরিব ও এশার সালাতে আসছিলেন নিয়মিত। আমি তাই একদিন আসরের সালাতে ইমামতি করার কথা বলি। আমাকে মুয়াজ্জিন সাহেব অনুমতি দেন। আমি আবার দ্বিতীয় আর শেষ রাকাতে যেভাবে পা ভেঙে বসে সেভাবে বসতে পারি না। সালাতের পর মুয়াজ্জিন সাহেব আমাকে বললেন, "তোমার নামাজ হয়ঞ্জ, কারন তুমি মেয়েদের মত বসছ।" সবাই তার সুরে সুর মেলালো (আমাদের মসজিদের পাঁচ ওয়াক্তের গড় মুসল্লি ৬-৭ জন)। আমি তাদের বুঝানোর চেষ্টা করলাম এটা তো ফরজ-ওয়াজিব না তাই সমস্যা হবে না। কিন্তু ঐ যে বলেছিলাম আমি কথা গুছিয়ে বলতে পারি না, তাই তারা ভাবলেন অন্য কথা। আমাকে বুঝাতে লাগলেন যে নিজের ভুল সবসময় স্বীকার করে নিতে হয়। আসলে এনাদের মাঝে দ্বীনি ইলম মারাত্মকভাবে কম (উদাহরণস্বরূপ, মুয়াজ্জিন সাহেব আমাকে 'তোমার নামাজ হয়নি' বললেও কাউকে নামাজ দোহরাতে বলেননি)। এমনকি খতিব সাহেবের শিক্ষাগত যোগ্যতা ফাজিল পাশ। খতিব সাহেবকে আমি কৌশলে (যেমন জানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে এবং তার জবাবের উপর মন্তব্য করে) ঐদিন জোহরের নামাজের পর (তিনি এসেছিলেন) বলেছিলাম আপনি বাদে বাকি সবার থেকে আমার কেরাত ভালো। তিনি এমন কিছু বলেননি যা থেকে আমি বুঝতে পারব যে তিনি এই বিষয়টা নিয়ে ভাববেন বা ভেবেছেন বা এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। আমি যদি নিজে নিজে সবাইকে বুঝাতে যাই তবে হিতে বিপরীত হওয়ার আশংকা আছে। তাই জামাতত্যাগী হওয়ার তকমা থেকে বাঁচতে উপরের প্রশ্নটি করা। ফজরের সালাতের পর নামাজ দোহরানোর সময় থাকে না, আর আছরের নামাজের পর বাড়ি এসে নামাজ পড়লে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, সত্য বললে আমার মসজিদে যাওয়ার উপায়ও বন্ধ হয়ে যাবে। বাড়ির সবাই আমাকে সবসময় বাড়িতে বসে আমার বাবার সাথে জামাতে (আমি ও বাবা দুই জন) সালাত আদায় করতে বলেন। কিন্তু মসজিদে না গেলে আমি জামাতত্যাগী হওয়ার অপবাদ পাবো। আমি যদি কাউকে বিবাহের প্রস্তাব দিই তবে তিনি তো সবার আগে আমার এলাকার মসজিদের ইমামের কাছে আমার ব্যপারে জানতে চাইবেন।
উল্লেখ্য, আমি প্রায়ই ইচ্ছা থাকা সত্বেও ফজরে উঠতে পারি না। যদিও আমি জানি না এটা জবাব প্রস্তুতে প্রয়োজনীয় কি না।
আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে উত্তম নসিহত করুন যা আমার উপর কষ্ট বয়ে আনবে না। আপনার যতটা সময় প্রয়োজন নিন। কিন্তু আল্লাহর ওয়াস্তে আমার প্রশ্নের বিবরন মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।