বিষয় : খাতা কলমের যৌথ ব্যবসার মাসআলা।
আব্দুর রহিম সাহেবের খাতা কলম বিক্রির ট্রেড লাইসেন্স আছে। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে খাতা কলমের নমুনা প্রদান করেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছা অনুযায়ী পছন্দকৃত নমুনার ওয়ার্ক অর্ডার (কাজের নির্দেশনামা, পরিমান, নির্ধারিত দাম এবং কার্য সম্পাদনের সময়সীমা) নিয়ে আসেন।
ধরা যাক, তিনি "ক" প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪৫ টি খাতার অর্ডার পেলেন যার সর্বমোট মূল্য ১৫০ টাকা। এই কাজটি সম্পন্ন করতে হলে তাকে কাঁচামাল হিসেবে কাগজ, সুতা, কাভার এবং খাতা বানানোর জন্য একটি কারখানার প্রয়োজন। পুরো কাজটি করতে তার ১০০ টাকা পুঁজি দরকার এবং এই পরিমান টাকা তার কাছে নাই অথবা ঘাটতি আছে।
কাজটি যেহেতু সম্পন্ন করতে হবে , তাই সে তার পরিচিত এক ভাই আব্দুল্লার কাছে গেলো এবং ব্যাবসার লভ্যাংশ ভাগাভাগির (৪০/৬০) প্রস্তাব করে ১০০ টাকা চাইলো। শর্ত হলো, ক্ষতি হলে টাকা আব্দুল্লাহর বিনিয়োগের থেকে কাটা যাবে এবং আব্দুর রহিমের পরিশ্রম বৃথা যাবে। আব্দুল্লাহ এই প্রস্তাবে রাজি হলো।
কিন্তু আব্দুল্লাহর কাছে যে টাকা আছে তা যথেষ্ট নয় । তাই সে ওসামার কাছে গেলো এবং আব্দুর রহিম সাহেবের ব্যবসার বৃত্তান্ত বর্ণনা করে টাকা চাইলো।
ওসামা বলল আমি আব্দুর রহিম সাহেবকে চিনিনা এবং এতো বেশী টাকার ঝুঁকি একজন অপরিচিত মানুষের উপর নিতে পারিনা। বরং আমি তোমাকে (আব্দুল্লাহ) চিনি এবং টাকা দিতে পারি। তখন আব্দুল্লাহ, ওসামার কাছ থেকে ১০০ টাকা এই শর্তে আনলেন যে, লাভ এবং ক্ষতি যা হবে তা দুই জনে মিলে সমান সমান (অর্ধেক - অর্ধেক )ভাগে ভাগ করে নিবে।
আব্দুল্লাহ ওসামার কাছ থেকে টাকা এনে আব্দুর রহিম সাহেব নিকট গেলেন এবং ওসামার সাথে কৃত চুক্তির কথা বর্ণনা পূর্বক ১০০ টাকা দিলেন (৪০/৬০ শর্ত অনুযায়ী)।
আব্দুর রহিম সাহেব টাকা নিয়ে ৫০ টাকার কাগজ, ১০ টাকার সুতা, ১০ টাকার কাভার কিনে একটি কারখানার মালিককে ২০ টাকা মজুরিতে কাগজ, সুতা ও কাভার দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে নির্দেশ প্রদান করলেন ।
নির্ধারিত সময়ের পর,আব্দুর রহিম সাহেব প্রস্তুতকৃত ৪৫ টি খাতা নিয়ে ১০ টাকা পরিবহন খরচের মাধ্যমে "ক" প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করলেন এবং মোট ১৫০ টাকা পেলেন।
উপরোক্ত লেনদেনে মোট ক্ষতি = ০।
এবং মোট লাভ = ৫০ টাকা (পুঁজি ১০০ টাকা এবং লাভ ৫০ টাকা )।
আব্দুর রহিম সাহেবের লাভের অংশ = ৫০ x .৪ (৪০ শতাংশ ) = ২০ টাকা
আব্দুল্লাহ এবং ওসামার যৌথ লাভের অংশ = ৫০ x .৬ (৬০ শতাংশ ) = ৩০ টাকা
শুধু আব্দুল্লাহ লাভের অংশ =৩০ x .৫ (৫০ শতাংশ ) = ১৫ টাকা
শুধু ওসামার লাভের অংশ =৩০ x .৫ (৫০ শতাংশ ) = ১৫ টাকা
ক্ষতি হলে অর্থাৎ বিক্রিত খাতার মূল্য না পেলে/ কম পেলে , আব্দুর রহিম সাহেব কোনো টাকা পেতেন না, শুধু পরিশ্রম বৃথা যেত । অন্য দিকে,আব্দুল্লাহ এবং ওসামার আর্থিক ক্ষতি হতো বিনিয়োগকৃত মূলধনের সমান সমান (অর্ধেক - অর্ধেক) অংশ ।
প্রশ্ন : এই প্রকারের যৌথ কারবার ইসলামী শরীয়তে জায়েজ কি না ?
বি. দ্রঃ আমরা সুদ মুক্ত লেনদেনের মাধ্যমে এই ব্যবসা করতে চাই। আমাদের কারোই একক পুঁজি এই ব্যবসার জন্য যথেষ্ট নহে। যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজন।