বিসমিল্লা তা'আলা
জবাবঃ-
ইজারা বা ভাড়ায় দানকৃত বস্তুর সম্ভাব্য তিনটি সূরত হতে পারে।প্রকারভেদে তার হুকুমও ভিন্ন হবে।যথা-
(প্রথমত)
স্পষ্টত হারাম কাজে জন্য ব্যবহারের জন্য ভাড়ায় কোনো বস্তু প্রদাণ করা।এমতাবস্থায় উক্ত হারাম কাজ এবং তার বিনিময়টা-ই যেন চুক্তির মূল বিষয়বস্তু।
যেমন পতিতাবৃত্তির জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া অথবা মদের কারখানা বা মদপানের জন্য জায়গা বাড়া দেয়া,ইত্যাদি।
শরীয়তের দৃষ্টিতে এমন চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।এবং ভাড়া বাবৎ অর্জিত টাকা হারাম বলে গণ্য হবে।এ টাকাকে সামাজিক কল্যাণ মূলক কাজে সওয়াবের নিয়্যাত ব্যতীত ব্যায় করা ওয়াজিব।
যেমন চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ
"আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যাহ " (৮/২২৮)এ বর্ণিত রয়েছে,
ﻓَﻼَ ﻳَﺠُﻮﺯُ ﻋِﻨْﺪَ ﺟُﻤْﻬُﻮﺭِ ﺍﻟْﻔُﻘَﻬَﺎﺀِ ﺇِﺟَﺎﺭَﺓُ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻟِﻐَﺮَﺽٍ ﻏَﻴْﺮِ ﻣَﺸْﺮُﻭﻉٍ ، ﻛَﺄَﻥْ ﻳَﺘَّﺨِﺬَﻩُ ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﺄْﺟِﺮُ ﻣَﻜَﺎﻧًﺎ ﻟِﺸُﺮْﺏِ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮِ ﺃَﻭْ ﻟَﻌِﺐِ ﺍﻟْﻘِﻤَﺎﺭِ ، ﺃَﻭْ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَّﺨِﺬَﻩُ ﻛَﻨِﻴﺴَﺔً ﺃَﻭْ ﻣَﻌْﺒَﺪًﺍ ﻭَﺛَﻨِﻴًّﺎ .
ﻭَﻳَﺤْﺮُﻡُ ﺣِﻴﻨَﺌِﺬٍ ﺃَﺧْﺬُ ﺍﻷْﺟْﺮَﺓِ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﺤْﺮُﻡُ ﺇِﻋْﻄَﺎﺅُﻫَﺎ ، ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻤَﺎ ﻓِﻴﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻹْﻋَﺎﻧَﺔِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤَﻌْﺼِﻴَﺔِ " ﺍﻧﺘﻬﻰ
শরীয়ত কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত কোনো কাজের জন্য ঘর বাড়ায় প্রদাণ করা জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতে নাজায়েয।যেমন,মদপান বা জুয়া খেলা,কিংবা গির্জা স্থাপন,অথবা মুর্তি পূজার জন্য কোনো ঘর বাড়ায় প্রদাণ করা।উক্ত পদ্ধতিতে যেভাবে ঘর ভাড়া দেয়া নাজায়েয ঠিক তেমনি ভাড়া বাবৎ অর্জিত বিনিময় ও নাজায়েয। কেননা এমতাবস্থায় গোনাহের কাজে সাহায্য করা হচ্ছে।
(দ্বিতীয়ত)
বৈধ কোনো কাজের জন্য কোনো বস্তুকে বাড়ায় প্রদাণ করা।যেমন বসবাস,বা বৈধ ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি।এমন চুক্তি জায়েয।এতে কোনো সন্দেহ নাই।পরবর্তীতে মুস্তাজির(যিনি বাড়ায় বস্তুকে নিয়েছেন)উক্ত উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের সাথে সাথে তাতে কোনো প্রকার শরীয়ত বিরোধী কাজ করলে, সেটার প্রভাব আজীর(যিনি বাড়ায় বস্তকে প্রদাণ করেছেন)এর উপর পড়বে না।এবং এ চুক্তি ও বাতিল বলে গণ্য হবে না।এবং বাড়া বাবৎ অর্জিত বিনিময় ও হারাম হবে না।
দেখুন-ইমাম সারখাসী রাহ বলেন,
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺴﺮﺧﺴﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ : " ﻭﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﺄﻥ ﻳﺆﺍﺟﺮ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺩﺍﺭﺍ ﻣﻦ ﺍﻟﺬﻣﻲ ﻟﻴﺴﻜﻨﻬﺎ ، ﻓﺈﻥ ﺷﺮﺏ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﺨﻤﺮ ، ﺃﻭ ﻋﺒﺪ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﺼﻠﻴﺐ ، ﺃﻭ ﺃﺩﺧﻞ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﺨﻨﺎﺯﻳﺮ : ﻟﻢ ﻳﻠﺤﻖ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺇﺛﻢ ﻓﻲ ﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ ، ﻷﻧﻪ ﻟﻢ ﻳﺆﺍﺟﺮﻫﺎ ﻟﺬﻟﻚ ، ﻭﺍﻟﻤﻌﺼﻴﺔ ﻓﻲ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﻤﺴﺘﺄﺟﺮ ، ﻭﻓﻌﻠﻪ ﺩﻭﻥ ﻗﺼﺪ ﺭﺏ ﺍﻟﺪﺍﺭ ؛ ﻓﻼ ﺇﺛﻢ ﻋﻠﻰ ﺭﺏ ﺍﻟﺪﺍﺭ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ " ﺍﻧﺘﻬﻰ ﻣﻦ " ﺍﻟﻤﺒﺴﻮﻁ " ( 16/39 ) .
মুসলমান কর্তৃক কোনো অমুসলিম যিম্মিকে বসবাসের জন্য ঘর বাড়ায় প্রদাণ করা জায়েয।পরবর্তীতে যদি উক্ত মুস্তাজির যিম্মি তাতে মদপান শুরু করে দেয় বা গির্জা স্থাপন করে নেয় কিংবা শুকুর কে প্রবেশ করিয়ে নেয় তাহলে এর দায়ভার মুসলমান আজীরের উপর পড়বে না।কেননা সে উক্ত শরীয়ত বিরোধী কাজের জন্য ঘরকে ভাড়ায় প্রদাণ করেনি।বরং সে বৈধ কাজের জন্য ঘরকে বাড়ায় দিয়েছিলো।তাই গোনাহ মুস্তাজিরের হবে।ঘরের মালিকের কোনো প্রকার গোনাহ হবে না।
আল-মাবসুত-১৬/৩৯
(তৃতীয়ত)
আজীর বৈধ কাজের জন্য বস্তুকে বাড়ায় প্রদাণ করেছে,কিন্তু মুস্তাজির আজীরের অজ্ঞাতসারে চুক্তি বিরোধী হারাম কাজ আঞ্জাম দিতে শুরু করল।এমতাবস্থায় উক্ত হারাম কাজ সমূহ জানার পূর্ব পর্যন্ত আজীরের জন্য উক্ত চুক্তিকে বহাল রাখা এবং ভাড়ার অর্জিত মুনাফা গ্রহণ করা বৈধ হবে।
কিন্তু মুস্তাজিরের উপর ওয়াজিব হল,যখনই সে হারাম কাজ জানবে তখনই সে উক্ত চুক্তিকে ভেঙ্গে দিবে।
বিশিষ্ট আলেম আতিয়্যা সাক্বর রাহ বলেন,
আজীর দুই অবস্থা থেকে মুক্ত নয়,
(১)হয়তো সে মুস্তাজিরের শরীয়ত বিরোধী কাজ সম্পর্কে জানবে।যেমন মুস্তাজির চুক্তির সময়ে এই হারাম কাজের শর্ত করলো। কিংবা শর্ত করেনি তবে মুস্তাজিরের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে আজীর আন্দাজ করতে পারবে যে,তার উদ্দেশ্য হল হারাম কিছু
(২)অথবা মুস্তাজির এ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে।এবং তার হারাম কাজের উদ্দেশ্যকে আন্দাজ করতে অক্ষম হবে।
দ্বিতীয় অবস্থায় সর্বসম্মতিক্রমে ইজারা চুক্তি সহীহ বলে গণ্য হবে।এবং ইজারার মূল্য হালাল হবে।তবে প্রথম অবস্থায় তিন ইমাম তথা ইমাম মালিক রাহ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ, ইমাম শাফেয়ী রাহ, এবং ইমাম আবু-হানিফার দুই শাগরেদ ইমাম আবু-ইউসুফ রাহ, ও ইমাম মুহাম্মদ রাহ,গণের মতে উক্ত ইজারা চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।
ফাতাওয়া দারুল ইফতা মিশর-শামেলা-(৯/৩৭৪)
সুপ্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে,
কোনো বস্তু চায় বাসা হোক বা মাইক হোক বা অন্য কিছু হোক,ভাড়া
দেয়ার সর্বমোট তিনটি পদ্ধতি হতে পারে।
যদি হারাম কোনো কাজের কথা বলে কেউ কিছু ভাড়া নিতে চায় তাহলে এমতাবস্থা ভাড়া দেয়া জায়েয হবে না।এবং ভাড়া বাবৎ অর্জিত মুনাফা ও জায়েয হবে না।বরং এ মুনাফাকে সদকা করতে হবে।
কিন্তু যদি কেউ হালাল কোনো কাজের জন্য কিছু ভাড়ায় নেয়,এবং উক্ত হালাল কাজ আঞ্জামের সাথে সাথে সে কিছু হারাম কাজও তাতে সম্পাদন করে, তাহলে এমতাবস্থা ভাড়ায় দেয়া বা বাড়া বাবৎ অর্জিত মুনাফার কোনো সমস্যা হবে না।এক্ষেত্রে বরং গোনাহ মুস্তাজিরেরই হবে। এতে আজীরের কোনো সমস্যা হবে না।
হ্যা যদি কেউ হালাল কাজের কথা বলে কিছু বাড়ায় নেয়,পরবর্তীতে হালালের পরিবর্তে তাতে হারাম কাজকে সম্পাদন করতে থাকে।তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত হারাম সম্পর্কে আজীরের জানার পূর্ব পর্যন্ত ভাড়া বাবৎ মুনাফা জায়েয হবে।কিন্তু যখন আজীর মুস্তাজিরের হারাম কাজ সম্পর্কে জেনে যাবে তখন আর আজীরের জন্য উক্ত চুক্তিকে বাতিল করা ওয়াজিব হবে।নতুবা হারাম কাজে সাহায্য করা হয়ে যাবে,যা জায়েয নয়।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
বিস্তারিত জানতে দেখুন-
জাদীদ ফেকহী মাসাঈল-১/২৭৫
কিতাবুল ফাতাওয়া-৫/৪০৪(যমযম,করাচি)
শামী-৯/৫৬২(যাকারিয়া)
জা'মেউল ফাতাওয়া-৬/৪৫০
ফাতাওয়ায়ে রহামিয়্যাহ-৬/১৫৬
উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, IOM.