হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَمُجْتَمَعًا لِلْحُورِ الْعِينِ يَرْفَعْنَ بِأَصْوَاتٍ لَمْ تَسْمَعِ الْخَلَائِقُ مِثْلَهَا يَقُلْنَ: نَحْنُ الْخَالِدَاتُ فَلَا نَبِيدُ وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبْأَسُ وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلَا نَسْخَطُ طُوبَى لِمَنْ كانَ لنا وَكُنَّا لَهُ .
’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতের হুরগণ এক জায়গায় সমবেত হয়ে উঁচুস্বরে এমন সুন্দর লহরীতে গাইবে, সৃষ্ট জীব সেই ধরনের লহরী কখনো শুনতে পায়নি। তারা বলবে, আমরা চিরদিন থাকব, কখনো ধ্বংস হব না। আমরা সর্বদা সুখে-সানন্দে থাকব, কখনো দুঃখ ও দুশ্চিন্তায় পতিত হব না। আমরা সদা খুশি থাকব কখনো নাখোশ হব না। অতএব তাকে ধন্যবাদ, যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি।
(তিরমিযী ২৫৬৪,মুসনাদে আহমাদ ১৩৪২.মিশকাত ৫৬৪৯)
অন্য এক রিওয়ায়াতে এসেছে, সাহাবীরা বলেন, আমরা বললাম, হে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)! সেই গানটি কি হবে? তিনি বলেন, তা হবে আল্লাহর তাসবীহ ও প্রশংসা এবং তার পবিত্রতা বর্ণনা করা। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৫৬৪৯)
আল্লামা ইবন কাসির (রা.) বলেন, হজরত দাউদ (আ.) কিয়ামতের দিন আরশে আজিমের স্তম্ভের কাছে দণ্ডায়মান থাকবেন। আল্লাহ তখন বলবেন, হে দাউদ! দুনিয়ায় তুমি যে মধুর সুরে আমার প্রশংসা ও মহত্ত্ব প্রকাশ করতে, সে রকম মধুর সুরে আজ আমার প্রশংসা ও মহত্ত্ব প্রকাশ করো। দাউদ বলবেন, হে আল্লাহ! আপনি তো সে সুর আমার থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন। এখন আমি কীভাবে প্রশংসা করব। আল্লাহ বলবেন, আজ আমি আবারও তোমাকে সে সুর ফিরিয়ে দিচ্ছি। সুতরাং প্রশংসা করো। এরপর দাউদ সুমধুর সুরে প্রশংসা করবেন। আর সে সুরে জান্নাতবাসীরা মুগ্ধ হবে।’ (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা: ৬১৮)
وَعَنْ صُهَيبٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّةَ يَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰـى: تُريدُونَ شَيئاً أَزِيدُكُمْ ؟ فَيَقُولُونَ : أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا ؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الجَنَّةَ وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ ؟ فَيَكْشِفُ الحِجَابَ فَمَا أُعْطُوا شَيْئاً أَحَبَّ إلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إلَى رَبِّهِمْ رواه مسلم
সুহাইব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, তখন মহান বরকতময় আল্লাহ বলবেন, ’তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের জন্য আরো কিছু বেশি দিই?’ তারা বলবে, ’তুমি কি আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করে দাওনি? আমাদেরকে তুমি জান্নাতে প্রবিষ্ট করনি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাওনি?’ অতঃপর আল্লাহ (হঠাৎ) পর্দা সরিয়ে দেবেন (এবং তারা তাঁর চেহারা দর্শন লাভ করবে)। সুতরাং জান্নাতের লব্ধ যাবতীয় সুখ-সামগ্রীর মধ্যে জান্নাতীদের নিকট তাদের প্রভুর দর্শন (দীদার)ই হবে সবচেয়ে বেশী প্রিয়।’’ (আহমাদ ৪/৩৩২, মুসলিম ৪৬৭)
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ سَمِعَهُ يُحَدِّثُ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ نَاسٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ " هَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ فِي الظَّهِيرَةِ لَيْسَتْ فِي سَحَابَةٍ " . قَالُوا لاَ . قَالَ " هَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَيْسَ فِي سَحَابَةٍ " . قَالُوا لاَ . قَالَ " وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ إِلاَّ كَمَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ أَحَدِهِمَا " .
ইসহাক ইবন ইসমাঈল (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আমাদের মহান রবকে কিয়ামতের দিন দেখতে পাব? তিনি বলেনঃ যখন আকাশে কোন মেঘ থাকে না, তখন দুপুরের সূর্য দেখতে তোমাদের কি কোন অসুবিধা হয়? তারা বলেনঃ না এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ পূর্ণিমার রাতে আকাশে যখন কোন মেঘ থাকে না, তখন ঐ চাঁদকে দেখতে তোমাদের কি কোন অসুবিধা হয়? তারা বলেনঃ না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যাঁর নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন, তাঁর শপথ! সূর্য ও চাঁদ দেখতে তোমাদের যেমন অসুবিধা হয় না, এরূপ মহান আল্লাহ্র দর্শনে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না।
(আবু দাউদ ৪৬৫৫)
মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ..... আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব? জবাবে তিনি বললেন, আকাশে মেঘ না থাকাবস্থায় দুপুরের সময় সূর্য দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সাহাবাগণ বললেন, জী না। অতঃপর তিনি বললেন, আকাশে মেঘ না থাকাবস্থায় পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সাহাবাগণ বললেন, জী না। তারপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার জীবন! চন্দ্ৰ-সূৰ্য কোন একটি দেখতে তোমাদের যেরূপ কষ্ট হয় না, তোমাদের রবকেও দেখতে তোমাদের ঠিক তদ্রুপ কষ্ট হবে না। আল্লাহর সাথে বান্দার সাক্ষাৎ হবে। তখন তিনি বললেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে সম্মান দান করিনি, কর্তৃত্ব দান করিনি, জোড়া মিলিয়ে দেইনি, ঘোড়া-উট তোমার কাজে লাগিয়ে দেইনি এবং সুখ-স্বাচ্ছদের মাঝে তোমার পানাহারের ব্যবস্থা করিনি? জবাবে বান্দা বলবে, হ্যাঁ, হে আমার রব। তারপর তিনি বলবেন, তুমি কি মনে করতে যে, তুমি আমার মুখোমুখী হবে? সে বলবে, না, তা মনে করতাম না। তিনি বললেন, তুমি যেরূপভাবে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে তদ্রুপভাবে আমিও তোমাকে ভুলে যাচ্ছি।
অতঃপর দ্বিতীয় অপর এক ব্যক্তির আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হবে। তখন তিনি তাকেও বলবেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে সম্মান দান করিনি, নেতৃত্ব দেইনি, তোমার পরিবার (জোড়া মিলিয়ে) দেইনি, উট-ঘোড়া তোমার কাজে লাগিয়ে দেইনি এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পানাহারের জন্য তোমাকে কি সুবিধা করে দেইনি? সে বলবে, হ্যাঁ করেছেন। হে আমার পালনকর্তা! তারপর তিনি বললেন, আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে এ কথা তুমি মনে করতে? সে বলবে, না। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি যেমন আমাকে ভুলে গিয়েছিলে অনুরূপভাবে আমিও তোমাদেরকে ভুলে যাব। তারপর তৃতীয় অপর এক ব্যক্তির আল্লাহর সাথে দেখা হবে। এরপর তিনি আগের মতো অবিকল বলবেন। তখন লোকটি বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার প্রতি এবং কিতাব ও রসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছি। আমি সালাত আদায় করেছি, সাওম পালন করেছি এবং সাদাকা করেছি। এমনিভাবে সে যথাসাধ্য নিজের প্রশংসা করবে। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এখনই তোমার মিথ্যা প্রকাশিত হয়ে যাবে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর তাকে বলা হবে, এখনই আমি তোমার উপর আমার সাক্ষী উপস্থিত করব। তখন বান্দা মনে মনে চিন্তা করতে থাকবে যে, কে তার বিপক্ষে সাক্ষী দিবে? তখন তার জবান বন্ধ করে দেয়া হবে এবং তার উরু, মাংস ও হাড়কে বলা হবে, তোমরা কথা বলো। ফলে তার উরু, মাংস ও হাড় তার আমলের ব্যাপারে বলতে থাকবে। এ ব্যবস্থা এজন্য করা হবে যেন, আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোন সুযোগ তার অবশিষ্ট না থাকে। এ ব্যক্তি হচ্ছে মুনাফিক যার প্রতি আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট। (মুসলিম ৭৩২৮.ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৭২২২)