আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
247 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (64 points)
আসসালামু আলাইকুম।

১) কবিরা গোনাহে লিপ্ত কারো প্রশংসা করার বিধান কি? যেমন বর্তমানে ব্যাংকের ম্যানেজার হওয়াকে অনেক সম্মানজনক চাকরি ভাবা হয়। সে তো অনেক বড় চাকরি পেয়েছে, অনেক বেতন পায় ইত্যাদি বলে প্রশংসা করে থাকে, গর্ব করে থাকে। বা বেপর্দা মহিলা বা দাড়ি রাখা না এমন লোককে সুন্দর লাগছে বলা ইত্যাদির বিধান কি?

২) কবিরা গোনাহকারীর অন্যান্য ভালো গুনের জন্য মানুষের কাছে প্রসংশা করার বিধান কি?

৩)সগীরা গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তির প্রশংসা করার বিধান কি? যেমন কোন মেয়ে বেপর্দা অবস্থায় ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে চাকরি করছে এজন্য তাকে জীবনে সফল হয়েছে বলে মনে করা, তার বাবা মাকে সফল বাবা মা মনে করা ,এজন্য লোকেদের কাছে প্রশংসা করা, নিজের মেয়েদের তার মত হতে বলা ইত্যাদির বিধান কি?

৪) সুদখোর, ঘুষখোর, মানুষের সম্পদ দখলকারী ইত্যাদি মানুষদের তার সন্তানদের দুনিয়ায় কত বিলাসী জীবন যাপন করতে দেখা যায়। অপরদিকে আলেম ওলামাদের দুঃখ কষ্ট, অভাবে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এমন কেন হয়? আল্লাহ তাআলা তো বলেছেন আল্লাহর কথা মেনে চললে আল্লাহ দুনিয়াতেও সাচ্ছন্দ্যময় জীবন দিবেন সফলতা দিবেন ও আখেরাতেও সফলতা দিবেন। ওলামারা কেন অভাবে থাকেন কষ্টে থাকেন আর বড় বড় গোনাহকরীরা কেন এত আরামে থাকে সচ্ছল থাকে?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

(১.২)

কুরআনুল কারিমে এসেছে-‘তুমি মনে করো না- তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং না করা বিষয়ের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে। এরূপ কখনও মনে করো না, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা আল ইমরান : আয়াত ১৮৮)

হজরত আবু বকর রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সা:-এর মজলিসে এক ব্যক্তির প্রশংসা করা হলো। তিনি তা শুনতে পেয়ে বললেন, ‘সর্বনাশ! তুমি তো তোমার ভাইয়ের গলা কেটে দিলে!’ এ কথা তিনি বারবার উচ্চারণ করলেন। এরপর তিনি বললেন, ‘তোমাদের কারো যদি একান্তই প্রশংসা করতে হয়, তাহলে এরূপ বলবে- আমার ধারণামতে তিনি এরূপ। অবশ্য যদি সে সত্য সত্য সে রূপ হয়ে থাকে। অথচ তার প্রকৃত অবস্থা তো আল্লাহই ভালো জানেন। আর আল্লাহর সম্মুখে কেউ নির্দোষ নয়।’ [সহিহ বুখারি]।


 হজরত আবু মুসা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সা:এক ব্যক্তিকে আরেক ব্যক্তির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে শুনলেন। তখন তিনি বললেন, ‘তুমি তো তাকে হত্যা করে ফেললে, অথবা তার পিঠ কেটে ফেললে।’। [আদাবুল মুফরাদ]।
۔
উপরোল্লিখিত হাদিসগুলোয় রাসূলুল্লাহ সা: ও তাঁর সাহাবিদের কাছ থেকে ব্যক্তি প্রশংসা বা তোষামোদ সম্পর্কিত যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে, তাতে একজন ব্যক্তিত্ববান মুসলিমের পক্ষে এমন হীন কর্মে প্রবৃত্ত হওয়া মোটেও সমীচীন নয়। এতে অপরের পাশাপাশি নিজের ব্যাপারেও ভুল বিশ্বাস তৈরি হয় এবং নিজের অজান্তে আত্মোপলব্ধির অনুভূতি হ্রাস পায়। অন্য দিকে অতিশয় প্রশংসিত ব্যক্তি যদি সমাজের ক্ষমতাশালী কেউ হয়, তা হলে সে আরো স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দেখা দেয়। কাজেই সর্বাবস্থায় ব্যক্তি প্রশংসা থেকে বিরত থাকা উত্তম।
ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তির যদি প্রশংসা করতে হয়, তা হলে এতটুকু বলা যায় যে, তিনি একজন ভালো লোক। 
,
সুতরাং কারো প্রশংসা, খোশামোদ, তোষামোদ করতে গিয়ে অতিরঞ্জিত না করাই ইসলামের বিধান। কেননা অতিরক্তি প্রশংসা ও তোষামোদের দ্বিমুখী ক্ষতি রয়েছে। যে ব্যক্তি প্রশংসা করে আর যার প্রশংসা করা হয়, উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
۔,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কবিরা গুনাহ কারীর উক্ত গুনাহের প্রশংসা করা কোনোভাবেই জায়েজ নেই। 
দ্বীনের স্বার্থে তার অন্যান্য নেক আমল এর প্রশংসা করা যাবে,তবে অতিরঞ্জন করা জায়েজ হবেনা।
,
(০৩) 
ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে বেপর্দা হয়ে চাকরি  করা জায়েজ নেই।
তার সেই চাকরির প্রশংসা করাও জায়েজ নেই।
   
(০৪)
রাসুল সাঃ বলেন
الدنيا سجن المؤمن وجنة الكافر
দুনিয়া মুমিনদের জন্য জেল খানা,আর কাফের দের জন্য বেহেশত স্বরুপ। 
কিছু মুহাদ্দিসিনে কেরামগন এখানে কাফের দের সাতগে ফাসেকদের নামও উল্লেখ করেছেন।
 
প্রিয়নবী (সা.) হাদিসে বলেন, ‘আল্লাহ যার ভালো চান তাকে দুঃখ কষ্টে ফেলেন। ’
 (বুখারি, হাদিস নং: ৫৬৪৫)

হাদিসে রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘যদি কারো উপর কোনো কষ্ট আসে, আল্লাহ তাআলা এর কারণে তার গুনাহসমূহ ঝরিয়ে দেন; যেমনভাবে গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে। ’  (বুখারি, হাদিস নং: ৫৬৮৪)
,
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,  দুঃখের পর সুখ আছে,মুমিনদের জন্য সুখ হিসেবে জান্নাত অপেক্ষা করছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন  
 ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে, অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি রয়েছে।’ (সুরা ৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৫-৬)।

কাজেই কোনো দুঃখে মুষড়ে পড়া মুমিনের সাজে না। মানুষ যত বড় পাপীই হোক, আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। আপনি যত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেই থাকুন না কেন, আল্লাহকে স্মরণ করুন; নিশ্চয় তিনি আপনার ডাকে সাড়া দেবেন। এটা আল্লাহর ওয়াদা, তিনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না। 

এ বিষয়ে কোরআন কারিমের ঘোষণা, ‘তামাদের পালনকর্তা বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেব”।’ (সুরা ৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)। 

তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা হতাশ হয়ো না এবং দুঃখ কোরো না, যদি তোমরা মুমিন হও, তবে তোমরা জয়ী হবেই।’
 (সুরা ৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৯)। 

‘তিনি অসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তিনি বিপদ-আপদ দূর করে দেন।’ (সুরা ২৭ নামল, আয়াত: ৬২)।
,
আল্লাহকে ডাকুন,ধৈর্য ধারন করুন।
আল্লাহ সহায় হবেন,ইনশাআল্লাহ।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...