আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
200 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (15 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওস্তাজ,

আমি এইচএসসি ২০২৩ ব্যাচ এর একজন ছাত্রী। আমি আমার বিষয়টা বুঝিয়ে বলছি ইং শা আল্লাহ্‌।

আমি ছোটো থাকতেই আমার আম্মু আব্বুর ইচ্ছা যে আমি ডক্টর হব। যদিও আমার ইচ্ছা ছোটোকাল থেকেই এরকম ছিলোনা । আমার আব্বু,ভাই, বোনজামাই- কে সবসময়য় দেখেছি নিজের অধিনস্ত মানুষদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে। তারা খুব্ব ভালো তবে তারা স্ত্রীদের সাথে প্রায়ই কটু কথা বলে। প্রায় কদিন পর পরই সংসারে অশান্তি হয় মা বাবা ও বোন বোনজামাইয়ের মধ্যে। ইদানিং মাকে খোটা দেওয়া হয় এই বলে যে সে যত কিছু করে বা সে যে টুকটাক টাকা জমায় বা ইত্যাদি সবই বাবার টাকার, মায়ের কোনো অবদান নাই- কারন মা টাকা রোজগার করেনি। ছেলেদের এতো অহংকার ও নিজেদের ভুল না বোঝা, বার বার স্ত্রীদের কষ্ট পাওয়া সহ্য করা ইত্যাদি দেখে বড় হই আমি। একসময় আমার সব ছেলেদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয় ও বিয়ের থেকে মন উঠে যায়। এখন এতো সমস্যা দেখে আমার মায়ের ইচ্ছা আমি নিজে টাকা আয় করবো বড় হয়ে, আর মাকে দেখভাল আমিই করবো। কিন্তু যদিও আমার ইচ্ছা (দ্বীনে ফেরার পর থেকে) বর অল্প টাকা আয় করলেও তাতেই খুশি থাকবো। আমি দেখেছি আমার পরিবারে কেউ ভালো স্বামী না। তাই আম্মু খুব করে চায় যাতে আমি ভালো করে পড়ি। এখন আমি দ্বীনে ফেরার পর মাদরাসায় ভর্তি হয়ে জেনারেল ছেড়ে দিতে চাইলে আম্মু খুব কষ্ট পায়। (আম্মু আমার পড়ার জন্য অনেক কষ্ট করে।) তারপর আমি IOM এ ভর্তি হই। কিন্তু ৩ বার ৩ ব্যাচ া পড়ার চেষ্টা করেও আমি ধৈর্য রাখতে পারিনি। এখন পড়িনা অনলাইনে। কারন ,আমার গুনাহের অতীত খুব খারাপ। আমি অনলাইনে ২ দিন ভালো করে থাক্লেও ৩ দিনের দিন ঠিক গুনাহ করে ফেলি, আর একসময় তো আমি খুব ভয়াবহ ভাবে গুনাহে ঢুকে পড়ি এখন্ব পুরোপুরি বের হতে পারছিনা, আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেকখানি বের হয়েছি। আমার এখন নামাজও ঠিক হচ্ছে না। আমি বার বার হারামে ঢুকছি। আমি বুঝেছি যে আমার অনলাইনে পড়া একদম ই সম্ভব না। জেনারেলের পড়াশোনার জন্যও অনলাইনে যাওয়া দরকার। কিন্তু আমি অনলাইন একেবারে ছেড়ে দিলে বেঁচে যেতাম। বেদ্বীন পরিবেশে ও অনলাইনে পাপের ভীড়ে আমি ঈমান নিয়ে টিকতে পারছিনা। কিন্তু এই গুনাহের জন্য অফলাইনের জেনারেল পড়ায়ও ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে। গোপন গুনাহ যদি প্রকাশ করা মানা না থাকতো আমি আম্মুকে আমার ভয়াবহ অবস্থার কথা জানাতাম আরেকজনের মাধ্যমে। কিন্তু এতে আমার অনেক ক্ষতি, তাই পারছিনা। এখন আমার মনে হচ্ছে মাদরাসায় দ্বীনই পরিবেশে থাকলে, শুধু দ্বীন নিয়েই ব্যস্ত থাকলে হয়তো আমি ঈমান ঠিক করতে এবং রাখতে পারবো। কারন সব স্বামী যে জ্বালাবে এমন না, আর আমি ওই নিয়তে পড়লে আমার ভাগ্যে অমন ই থাকবে, আর তাছাড়া আমার চাকরি করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই, আগেও ছিলোনা এখন ও নাই। কিন্তু আম্মু আব্বুর বিষয়ে ভাব্লে মনে হয়, হ্যাঁ, টাকা আয় করতে হবে। আম্মুর কষ্টের কথা ভাবলে মনে হয় যে ভাই তো আম্মুর সাথে এখনই খারাপ ব্যাবহার করে, তাহলে আম্মুকে আমি দেখবো.........কিন্তু ......তাও আমার মন জেনারেলে টিকছেনা.....তাছাড়া আমি পরিবেশ ও আশেপাশের মানুষদের সাথে প্রচুর মিশি, মানে আমি বেশিই মিশুক, আর খুবই বোকা(বিশ্বাস করুন, আমার জ্ঞ্যান একেবারেই নাই বললেই চলে) , তাই আমি সহজেই ফিতনায় পরে যাই। এতোসবের মধ্যে দিন দিন আমি কনফিডেন্ট একেবারে হারায়ে ফেলছি। কারন আমি শত বার চেষ্টা করেও, ওয়াদা করেও, আল্লাহকে কথা দিয়েও নিজেকে ঠিক করতে পারিনি।জেনারেল পড়াটাও এই সময়ে দরকারি। এখন আমি যে এইচএসসি দিবো - আমার মনে হচ্ছে আমি ফেইল করবো, কারন আমি কিচ্ছু পারিনা, মাঝখানে বদনজর লাগায় প্রায় ৬ মাস অসুস্থ এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলাম। রুকিয়াহ করার পর ঠিক হইয়েছি আলহামদুলিল্লহ। কিন্তু কনফডেন্ট সম্পূর্ণ হারায়ে ফেলছি।

বিয়ে তো পরের ব্যপার। আমি তো কদিন পরও মারা যেতে পারি, বিয়ের আগেই মারা যেতে পারি, মা-বাবার আগেই মারা যেতে পারি।
আমি এখন কি করবো? কিভাবে দ্বীনই ইলম অর্জন করবো? এইচএসসি পরীক্ষা না দিয়েই কি মাদ্রাসায় ভর্তি হবো? জেনারেল পড়াশোনা ছেড়ে দিবো কি?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


হযরত আনাস ইবনে মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত,নবীজী সাঃ বলেনঃ
ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ ﻗَﺎﻝَ : ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲِّ ﺻﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋﻠﻴﻪِ ﻭﺳﻠَّﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝَ : ( ﻃَﻠَﺐُ ﺍﻟﻌِﻠْﻢِ ﻓَﺮِﻳْﻀَﺔٌ ﻋَﻠَﻰْ ﻛُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ) . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ( 224 )
জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয।

مِنْ فَرَائِضِ الْإِسْلَامِ تَعَلُّمُهُ مَا يَحْتَاجُ إلَيْهِ الْعَبْدُ فِي إقَامَةِ دِينِهِ وَإِخْلَاصِ عَمَلِهِ لِلَّهِ تَعَالَى وَمُعَاشَرَةِ عِبَادِهِ. 

প্রত্যেক মুসলমানের উপর ইসলামের ফরয বিধানসমূহ থেকে একটি ফরয  হচ্ছে। দ্বীন প্রতিষ্টা তথা এখলাছের সাথে তার উপর আমল করতে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করা ও মানুষের সাথে সদাচরণের জ্ঞানার্জন করা(ফরয)।

وَفَرْضٌ عَلَى كُلِّ مُكَلَّفٍ وَمُكَلَّفَةٍ بَعْدَ تَعَلُّمِهِ عِلْمَ الدِّينِ وَالْهِدَايَةِ تَعَلُّمُ عِلْمِ الْوُضُوءِ وَالْغُسْلِ وَالصَّلَاةِ وَالصَّوْمِ، وَعِلْمِ الزَّكَاةِ لِمَنْ لَهُ نِصَابٌ، وَالْحَجِّ لِمَنْ وَجَبَ عَلَيْهِ وَالْبُيُوعِ عَلَى التُّجَّارِ لِيَحْتَرِزُوا عَنْ الشُّبُهَاتِ وَالْمَكْرُوهَاتِ فِي سَائِرِ الْمُعَامَلَاتِ. وَكَذَا أَهْلُ الْحِرَفِ، 

প্রত্যেক মুকাল্লাফ-মুকাল্লাফাহ(আক্বেল-বালেগ নর-নারী)এর উপর দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের পর ফরয হচ্ছে,ওজু,গোসল,নামায এবং রোযা,এর জ্ঞান অর্জন করা।এবং নেসাবপ্রাপ্ত মালের মালিকের উপর যাকাতের জ্ঞান অর্জন করা।এবং যার উপর হজ্ব ফরয,তার জন্য হজ্বের বিধি-বিধান অর্জন করা।এবং ব্যবসায়ীদের উপর ব্যবসা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা।এজন্য ফরয,যাতে তারা উক্ত বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন অস্পষ্টতা,সন্দেহ ও অপছন্দনীয় দিবসসমূহ থেকে অনায়াস বেছে থাকতে পারে।ঠিকতেমনিভাবে পেশাজীবীদের জন্য সংশ্লিষ্ট পেশা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা ফরয।

ইবনে আবেদীন শামী রাহ,জ্ঞান শিক্ষা ফরয সম্পর্কিত একটি মূলনীতি তুলে ধরেন।যাকে আমাদের সামনে আসলে,ভবিষ্যৎ অনেক অস্পষ্টতা দূরবিত হয়ে যাবে ইনশা'আল্লাহ।তিনি বলেনঃ

 وَكُلُّ مَنْ اشْتَغَلَ بِشَيْءٍ يُفْرَضُ عَلَيْهِ عِلْمُهُ وَحُكْمُهُ لِيَمْتَنِعَ عَنْ الْحَرَامِ فِيهِ اهـ

এবং যে বক্তিই কোনো জিনিষের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে,তার উপর উক্ত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা ফরয।যাতে করে উক্ত বিষয় ও বিষয় সংশ্লিষ্ট সমস্ত হারাম থেকে সে অনায়াসে বেছে থাকতে পারে। 
(রদ্দুল মুহতার-১/৪২)

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি যদি ফরজে আইন পরিমান জ্ঞান অর্জন করে থাকেন,সেক্ষেত্রে ঈমান আকীদা বিশুদ্ধ রেখে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে পূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করে জেনারেল লাইনে লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন।

অনলাইনে সারা দরুন যেহেতু গুনাহ হচ্ছে,সেক্ষেত্রে অনলাইন এর এই জগত পুরোপুরি ছেড়ে দিবেন।

আপনি যদি ফরজে আইন পরিমান জ্ঞান অর্জন না করে থাকেন,সেক্ষেত্রে জেনারেল লাইনে লেখাপড়ার পাশাপাশি অনলাইনে বা অফলাইনে কোথাও লেখাপড়া করে ফরজে আইন পরিমান জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।

এক্ষেত্রে অনলাইনে জ্ঞান অর্জন করতে হলে আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকবেন।
সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে লগ আউট করবেন।

পূর্ণ গুনাহ থেক মুক্ত থেকে জেনারেল লাইনে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন।

আল্লাহ তায়ালা আপনার সহায় হোন,আমিন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (15 points)
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَ
ওস্তাজ,
আমি অনেক চেষ্টা করেও গুনাহ থেকে বিরত থাকতে পারতেছিনা। ফরজ ইলমের জন্য অনলাইনে ভর্তি হয়েও ক্লাস কয়েকটা করে আর করার আগ্রহ থাকে নি। কোনোভাবেই পারিনি। বরং আমি আরও বেশি পাপে জরিয়ে যাচ্ছি। দ্বীন আস্তে আস্তে নিজের মধ্যে থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আগে তো আশেপাশের মানুষকে কষ্ট দিতামনা। এখন আশেপাশের মানুষও আমার ব্যবহারে কষ্ট পায়।  কেমন জেদী হয়ে যাচ্ছি। যতবার দৃঢ়ভাবে গুনাহ ছাড়তে চাই,ততবার গুনাহে দৃঢ়ভাবে আটকে যাচ্ছি।  নামাজ, একাডেমিক পড়া একেবারে ছুটে গেছে।  মনোযোগ টিকেই না। কোনো মানুষের সাথে মিশতে ইচ্ছে হয়না এখন। মনে হয় বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়ে ভিক্ষে করি- এরকম চিন্তা আসে বার বার। আমার আশেপাশে কোনো দ্বীনি বান্ধবী বা বড়মানুষ ও নেই।
কি করবো উস্তাদ? 
যেটা করতে বলে মাবাবা ওইটার প্রতি আরো ঘৃণা চলে আসছে। ঈমান একদম কম হয়ে গেছে। 
কি করবো আমি উস্তাদ? 
অনলাইন সম্পূর্ণ ছেড়ে দিলেও যখন গুনাহের ঝোক হয় তখন আলমারি থেকে ফোন বা অন্যের ফোন বা ল্যাপটপ ইউজ করেই ফেলি।কি করবো আমি উস্তাদ? 
অন্তর পাথর হয়ে গেছে,  মায়ের কষ্টেও কষ্ট পাচ্ছি না। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে।  কি করবো আমি উস্তাদ???? 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...