আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
141 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (13 points)
edited by
১) ফেসবুকে একটা পোষ্ট পড়লাম, পোষ্টটির লিঙ্ক হল
https://www.facebook.com/wafilife/posts/pfbid02jAnToSirUGP8WM1RinuRVVdp82kZFVFDgbu4oyF6Mo5osQ2vs1qwa4GBk7z54HLGl

আমিও সব সময় আল্লাহর কাছে বিভিন্ন জিনিস বিপদ আপদ চাওয়া পাওয়া তে দোয়া করতে বসি কিন্তু কখনও কিছু চাইতে পারি না।  যখনই কিছু চাইতে যাই । আমার মনে শুধু প্রশ্ন ওঠে আমার জন্য কি ভাল আমি কি করে বুঝব আমার আল্লাহ আমার জন্য যেটা ভাল সেটা ঠিক করে দিক।  আর আমি শুধু নিচের  দুয়া পাঠ করি আর কিছু চাইতে পারিনা।

রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার। অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।

কিন্তু এটা কি ঠিক হচ্ছে? আল্লাহর নবি তো সব ধারনের দোয়াই আমাদের শিক্ষা দিযেছেন।  তাইলে আমার কিভাবে দোয়া করা উচিত?
২) আমি জেনারেল শিক্ষিত ছেলে আমার আরবি উচ্চারণ ঠিকমত হয় না একানে আমি যে আরবি দোয়া করি সেগুলোর অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে কিন্তু আমি তো মূল অর্থ জেনে দোয়া করি। উচ্চারনের ভুলের কারনে দোয়া কবুলের কি কোন সমস্যা হবে?
৩) মাসনূন দোয়া আরবি মুখস্থ না করে বাংলা পড়ে সে অনুসারে  দোয়া করলে কি কবুল  হওয়ার সম্ভাবনা কোনটার বেশি আরবিতে নাকি বাংলায়?
আমি জানি মাতৃভাষা আর আরবি উভয় দোয়াই আল্লাহ কবুল করেন আমার মূলত জানতে চাওয়া  কোরআন আর  হাদীসের দোয়া গুলোর আরবিতে মুখস্থ করে দোয়া করলে কি অতিরিক্ত কোন ফায়দা আছে দোয়া কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে নাকি বাংলা অর্থ আর আরবিতে উভয় ক্ষেত্রে দোয়া করলে কবুল হওয়ার সম্বাবনা একই রকম।

1 Answer

0 votes
by (566,790 points)
জবাবঃ- 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «اللَّهُمَّ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وقنا عَذَاب النَّار»

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ করতেন, ‘‘আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্না-র’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের ‘আযাব [শাস্তি] হতে বাঁচাও)।

(সহীহ : বুখারী ৬৩৮৯, মুসলিম ২৬৯০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩০২, আহমাদ ১৩১৬৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৩৮,মিশকাত ২৪৮৭।)

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু‘আটি এজন্যে সবচেয়ে বেশি পড়তেন যে, এ দু‘আটি ব্যাপক অর্থবোধক ও কুরআন থেকে চয়নকৃত। দু‘আটির শুরু বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন শব্দে এসেছে। কোথাও ‘‘আল্ল-হুম্মা আ-তিনা-’’, কোথাও ‘‘আল্ল-হুম্মা রব্বানা- আ-তিনা-’’, কোথাও ‘‘রব্বানা- আ-তিনা-’’ শব্দে এসেছে। সবগুলো বর্ণনাই সহীহ।

অত্র হাদীসে মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়ায় হাসানাহ্ বলতে এবং মৃত্যুর পরে আখিরাতে হাসানাহ্ বলতে কী বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে মুফাসসির ও ‘আলিমগণের বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। নিম্নে মতসমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলোঃ কারো মতে, দুনিয়ায় হাসানাহ্ বলতে দুনিয়ায় ব্যক্তির ইচ্ছা ও স্বভাব অনুযায়ী জীবনোপকরণ, স্বচ্ছলতা, সুস্থতা, সুন্দরী মহিলা; এছাড়াও তার মন হালাল যা চায় ও তার চোখ হালাল যা কিছুর স্বাদ নিতে চায় তা। আর আখিরাতে হাসানাহ্ বলতে ঐসব কিছুকে বুঝানো হচ্ছে যা কোন মাধ্যমে বা মাধ্যম ছাড়াই ব্যক্তি পাবে তা। কারো মতে দুনিয়ায় হাসানাহ্ বলতে নেক্কার স্ত্রী ও আখিরাতে হাসানাহ বলতে জান্নাতী হূর এবং জাহান্নামের আগুনের ‘আযাব বলতে খারাপ নারীকে বুঝানো হয়েছে।

হাসান বাসরী (রহঃ)-এর মতে, দুনিয়াতে হাসানাহ্ বলতে উপকারী জ্ঞান, ‘ইবাদাত, পবিত্র রিযক এবং আখিরাতে হাসানাহ্ বলতে জান্নাত বুঝানো হয়েছে। কাতাদাহ্’র মতে, এর দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা বুঝানো হয়েছে।

সুদ্দী ও মুকাতিল-এর মতে, দুনিয়ার হাসানাহ্ দ্বারা প্রশস্ত হালাল রিযক (জীবিকা), সৎ ‘আমল এবং আখিরাতের হাসানাহ্ দ্বারা ক্ষমা ও সাওয়াব উদ্দেশ্য। ‘আত্বিয়্যাহ্-এর মতে আখিরাতের হাসানাহ দ্বারা হিসাব সহজকরণ ও জান্নাতে প্রবেশকে বুঝানো হয়েছে। কারো মতে দুনিয়ার হাসানাহ্ হলো, সুস্থতা, ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতা এবং আখিরাতের হাসানাহ্ হলো পরকালে আল্লাহর নিকট থেকে সাওয়াব ও রহমাতপ্রাপ্তি।

হাফেয ইবনু কাসীর (রহঃ) তাঁর তাফসীরে বলেন, এ দু‘আটির মধ্যে দুনিয়ার সকল কল্যাণকেও একত্র করা হয়েছে এবং সকল মন্দকে দূর করা হয়েছে। এখানে ‘দুনিয়ার হাসানাহ্’ শব্দ ঐ সবকিছুকেই শামিল করে যা দুনিয়ার কাঙ্ক্ষিত বিষয় ও বস্ত্ত। যেমন- সুস্থতা বা সুস্বাস্থ্য, প্রশস্ত ঘর, সুন্দরী স্ত্রী, সৎকর্মশীল সন্তান, প্রশস্ত রিযক, উপকারী জ্ঞান, সৎ ‘আমল, হালকা বাহন, উত্তম প্রশংসা ইত্যাদি। এর কোনটিই দুনিয়ার হাসানার বাইরে নয়। অপরদিকে আখিরাতের হাসানাহ্ বলতে যা বুঝাচ্ছে তার সর্বোচ্চ হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ। এছাড়াও যা বুঝাচ্ছে তা হলো, খোলা মাঠে সর্বাধিক ভীতিপ্রদ চিৎকার থেকে নিরাপদ থাকা, হিসাব সহজ করা এবং আখিরাতের উত্তম কর্মসমূহ ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি। জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষার অর্থ হলো তা থেকে রক্ষাকারী কাজ। যেমন- হারাম ও গুনাহের কাজ থেকে দূরে থাকা এবং হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়াবলী বর্জন করা।

ইমাম কুরতুবী বলেন, বেশিরভাগ ‘আলিমের মতে দুনিয়া ও আখিরাতের হাসানাহ্ বলতে এ দু’ স্থানের নিয়ামতসমূহ বুঝানো হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেন, সম্ভবত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য এ দু‘আটি সর্বাধিক পড়তেন যে, এটি ছিল একটি ব্যাপক দু‘আ; যা দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণকে শামিল করেছে।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
এটি ঠিক হচ্ছে।
আপনি এই একটি দোয়াই চালিয়ে যান,আপনার মনের সমস্ত দোয়া কবুল হবে,ইনশাআল্লাহ। 

(০২)
উচ্চারনের ভুলের কারনে দোয়া কবুলের কোন সমস্যা হবেনা।
কেননা আল্লাহ তায়ালা আপনার মনের সমস্ত চাওয়াকেই জানেন।

(০৩)
উভয় ক্ষেত্রেই কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে কুরআন হাদীসে বর্ণিত দোয়া করলে আরবীতে দোয়া করলে বরকত হবে,ইনশাআল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...