আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
113 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (39 points)
আসসালামু আলাইকুম হুজুর,

পারিবারিক বিষয়ে একটু শরয়ী দিক-নির্দেশনা চাচ্ছি!

উস্তাদ, আমার লেখাটা পুরোটা পড়বেন ইন শা আল্লাহ, আমি জান্নাতে যেতে চাই।

__________
আমার আব্বু সম্পদ ধ্বংস করে খুব, সে ছোট থেকেই দেখতেছি দাদার থেকে প্রাপ্ত বড় বড় বাড়ি, জমি বিক্রি করে মদ, জুয়া, জিনা এসবের পিছনে টাকা নষ্ট করছে!

এখনও করছে, কিন্তু আমরা বড় হয়েছি তাই সামনাসামনি করতে পারে না, কারণ তার সামনে আমরা বাধা হয়ে দাড়াই, তাই তিনি লুকিয়ে জায়গা জমি বিক্রি করে একটু একটু করে টাকা এনে এনে মেয়েদের পিছনে + আরও যাবতীয় উল্টো পাল্টা কাজে খরচ করে ফেলে। উনার নিয়ত হলো, যতদিন তিনি বাঁচবেন সম্পদ বিক্রি করে করে মজা করে কবরে চলে যাবেন, আমাদের কিছুই দিয়ে যাবেন না।

(উনি অন্য জগতের ঘোরে আটকে আছে, যেখানে নাই কোনো দুনিয়াদারি, নাই কোনো দ্বীনদারি , আছে শুধু টাকা দিয়ে মজ আর মাস্তি। সংসারের ঠিক মত খেয়াল রাখে না, মায়ের প্রতি জুলুম করে আর্থিক, মানসিক, আগের শারীরিক করতো; এখন আমাদের ভয়ে আম্মুর শরীরে আঘাত করতে পারে না।)

যখন ছোট থাকতাম তো তখন তো এতকিছু বুঝতাম না, যখন আমরা দুই ভাই বড় হলাম তখন থেকেই আব্বুকে এসব বিষয়ে মানা করতাম, কিন্তু উল্টো আমাদের সাথে, আম্মুর সাথে খারাপ ব্যবহার, মারামারি করেন।
(প্রায়) অনেকবার বাসা থেকে বেরও করে দিয়েছিল, আবার অনেকবার আমরা নিজেরাই বের হয়ে গেছিলাম, দেখেছিলাম উনি ভালো হন কিনা আমাদেরকে কাছে না পেয়ে, কিন্তু লাভ হয়নি।

তাই, আমি চাচাদের সরণাপন্ন হয়েছিলাম, তারাও কিছু করতে পারেনি, আমার আব্বু তাদের সাথেও বেয়াদবি করেছে, তাদের নামে কুৎসা রটিয়েছে, এজন্য তারা ভয়ে আর আমাদের এসব বিষয়ে নাক গলাতে চায় না। আমার আব্বুকে আমার দুই বড় চাচা দুবার রিহাবেও পাঠিয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন আমার চাচারা আমাদের বলতেছে আমাদের নিজের ব্যবস্থা নিজেই করে নিতে। কিন্তু আমরা তো ছেলে আমরা কী করতে পারবো? বাবা মা সম্মানের পাত্র, তাদের অনেক সম্মান দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা।

যেহেতু বাবা মার সাথে উচুঁ গলায় কথা বলা যায় না, তাই আমি আল্লাহর ভয়ে চুপ থাকার চেষ্টা করি।

আগে দীন বুঝতাম না, তারপর আল্লাহ আমাকে দ্বীনের বুঝ দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। আমার চুপ থাকা আমার আম্মু পছন্দ করেন না, আম্মু বলেন আমি নাকি মরা হয়ে গেছি, অধিকার আদায়ে সোচ্চার হচ্ছি না।

আমাদের সম্পত্তি বলতে এখন শেষ সম্বল থাকার বাড়িটাই আছে।

১. উস্তাদ, এখন আমার জন্য করণীয় কী? একটু নসিহত করবেন? আমরা (আম্মু, ছোট ভাই, আমি) কি আব্বুর সম্পত্তির আশা ছেড়ে দিবো? উনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই খরচ করুক। আমি মানসিকভাবে অনেক আগেই সম্পত্তির আশা ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু আমার ভাই, আম্মু তারা মেনে নিবে না। আর এখন দেশের যে অবস্থা একটা বাড়ি ছাড়া থাকাও একটু কষ্টের।

এ বিষয়ে আমি কি করতে পারি উস্তাদ?
২. উস্তাদ, আমার আব্বু এখন চাচ্ছে বাজারে দোকান বিক্রি করে খরচ করবেন, কিন্তু আম্মু চাচ্ছে দোকান বিক্রি করে বাড়ি বানাতে! (আমাদের সম্পত্তি বলতে বসবাসের বাড়িটাই রয়েছে)

তো আমার এক বড় চাচা আম্মুকে বলেছে, আমার নামে ব্যাংকে একাউন্ট খুলে টাকা জমা রেখে বাড়ির কাজ করতে। এটা কি জায়েজ হবে? সম্পত্তি তো আব্বুর, আমরা যদি এভাবে হস্তক্ষেপ করি, এটা জায়েজ হবে?
আর ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খুলা জায়িয?

৩. আমার আব্বু তো সম্পদ নষ্ট করে ফেলতেছে, এখন আব্বুকে যদি কোথাও জিম্মি বা বন্দী করে (যেমন রিহ্যাবে) সম্পত্তি (বাড়িটা) যদি আমাদের দু’ভাইয়ের নামে হেবা করা হয়, তাহলে এটা জায়েজ হবে?

আর একটা প্রাসঙ্গিক মাসআলা,
৪. মিরাসের হকদার আমার দাদি এখনও জীবিত, যদি কোনোক্রমে আমাদের দু ভাইয়ের নামে হেবা করা হয়, তারপর আমার আব্বু মারা যান, দাদী জীবিত থাকেন, তাহলে কি সেখান থেকে আমার দাদী মিরাস পাবে?

(এই প্রশ্নটা মাসআলা পরিষ্কার হবার জন্য)

*উস্তাদ, আমি জান্নাতে যেতে চাই, আমি চাই না এই সামান্য দুনিয়ার জন্য জাহান্নামে যেতে, আমি সেখানে এক মুহুর্তও থাকতে পারবো না, আমার ও আমার পরিবারের জন্য দুআ করবেন ইন শা আল্লাহ, উস্তাদ*

1 Answer

0 votes
by (676,960 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَعُودُنِي عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ مِنْ وَجَعٍ اشْتَدَّ بِي فَقُلْتُ إِنِّي قَدْ بَلَغَ بِي مِنْ الْوَجَعِ وَأَنَا ذُو مَالٍ وَلاَ يَرِثُنِي إِلاَّ ابْنَةٌ أَفَأَتَصَدَّقُ بِثُلُثَيْ مَالِي قَالَ لاَ فَقُلْتُ بِالشَّطْرِ فَقَالَ لاَ ثُمَّ قَالَ الثُّلُثُ وَالثُّلُثُ كَبِيرٌ أَوْ كَثِيرٌ إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ وَإِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ إِلاَّ أُجِرْتَ بِهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فِي امْرَأَتِكَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أُخَلَّفُ بَعْدَ أَصْحَابِي قَالَ إِنَّكَ لَنْ تُخَلَّفَ فَتَعْمَلَ عَمَلاً صَالِحًا إِلاَّ ازْدَدْتَ بِهِ دَرَجَةً وَرِفْعَةً ثُمَّ لَعَلَّكَ أَنْ تُخَلَّفَ حَتَّى يَنْتَفِعَ بِكَ أَقْوَامٌ وَيُضَرَّ بِكَ آخَرُونَ اللَّهُمَّ أَمْضِ لأَصْحَابِي هِجْرَتَهُمْ وَلاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أَعْقَابِهِمْ لَكِنْ الْبَائِسُ سَعْدُ بْنُ خَوْلَةَ يَرْثِي لَهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ مَاتَ بِمَكَّةَ

সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জে একটি কঠিন রোগে আমি আক্রান্ত হলে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার খোঁজ খবর নেয়ার জন্য আসতেন। একদা আমি তাঁর কাছে নিবেদন করলাম, আমার রোগ চরমে পৌঁছেছে আর আমি সম্পদশালী। একমাত্র কন্যা ছাড়া কেউ আমার উত্তরাধিকারী নেই। তবে আমি কি আমার সম্পদের দু’ তৃতীয়াংশ সদাকাহ করতে পারি? তিনি বললেন, না। আমি আবার নিবেদন করলাম, তাহলে অর্ধেক। তিনি বললেন, না। অতঃপর তিনি বললেন, এক তৃতীয়াংশ আর এক তৃতীয়াংশও বিরাট পরিমাণ অথবা অধিক। তোমার ওয়ারিসদের অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া, তাদেরকে খালি হাতে পরমুখাপেক্ষী অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম।  আর আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য তুমি যে কোন ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার বিনিময় প্রদান করা হবে। এমনকি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে (তারও প্রতিদান পাবে)। আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! (আফসোস) আমি আমার সাথীদের হতে পিছনে থেকে যাব? তিনি বললেন, তুমি যদি পিছনে থেকে নেক ‘আমল করতে থাক, তাহলে তাতে তোমার মর্যাদা ও উন্নতি বৃদ্ধিই পেতে থাকবে। তাছাড়া, সম্ভবত, তুমি পিছনে (থেকে যাবে)। যার ফলে তোমার দ্বারা অনেক কাওম উপকার লাভ করবে। আর অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ্! আমার সাহাবীগণের হিজরত বলবৎ রাখুন। পশ্চাতে ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু আফসোস! সা‘দ ইবনু খাওলার জন্য (এ বলে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করছিলেন, যেহেতু মক্কা্য় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। (বুখারী শরীফ ১২৯৫.৫৬, মুসলিম ২৫/১, হাঃ ১৬২৮, আহমাদ ১৫৪৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২১৮)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
উক্ত হাদীস থেকে জানা যায় যে কেউ যদি তার সম্পদের পুরো অংশ দান সদকাহ করে,তাহলে সে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হবে।

সর্বোচ্চ তিন ভাগের এক ভাগ সম্পদ সদকাহ করা যাবে।

সদকার ক্ষেত্রেই যখন এমন কঠিন বিধান,সেক্ষেত্রে আপনাদের বাবা তো আপনাদের নিঃস্ব বানিয়ে সব সম্পদ নাজায়েজ পথে,বা ফুর্তিতে ব্যয় করছে।

এখানে আপনাদেরকে অধিকার আদায় সোচ্চার হতে হবে।
মুরব্বিদের মাধ্যমে বুঝিয়ে সমাধান করতে হবে।
প্রয়োজনে আপনি স্বাভাবিক ভাবে অধিকার আদায়ে কথা বলবেন।
আপনার মাকে শক্ত কথা বলতে বলবেন,আর আপনারা মাকে সাপোর্ট দিবেন।

(০২)
এটি যদি আপনার বাবাকে বুঝিয়ে করা যায়,তাহলে জায়েজ হবে।
নতুবা আপনাদের জন্য এমনটি করা ঠিক হবেনা।

তবে মুরব্বিরা আপনার বাবাকে নিয়ে বসে বুঝিয়ে এমনটি করার মৌন সমর্থন নিতে পারলে আপনি এভাবে ব্যাংকে টাকা জমা করতে পারবেন,বাসার কাক করতে পারবেন।

বিশেষ প্রয়োজনে সূদ গরিবদের মাঝে দান করার শর্তে ইসলামী ব্যাংকে মুদারাবা একাউন্ট খোলার বৈধতা রয়েছে।

(০৩)
জিম্মি করা যাবেনা।
তবে সুস্থতার জন্য রিহ্যাবে রেখে তাকে বুঝিয়ে তাকে দিয়ে হেবা করাতে পারেন।
জোড় জুলুম করা যাবেনা।

(০৪)
আপনার দাদি ও আপনার মাকে তাদের প্রাপ্য  হক অনুযায়ী সম্পদ দিতে হবে।
নতুবা গুনাহ হবে।

হ্যাঁ যদি তারা নিজেদের হক ছেড়ে দেয়,সম্পদ না নেয়,সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...