আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
110 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (6 points)
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

বেদ্বীন পরিবারের রূঢ় আচরণের মায়ের সাথে কীভাবে সন্তান ধৈর্য্য ধারণ করবে? ( স্বভাবত মা একটু কঠিন স্বভাবের, প্রায় সবাইকে কষ্ট দিয়ে কথা বলে। মায়ের নিজের ভাই-বোনদের মাঝেও মায়ের কঠিন আচরণের জন্য অনেকেরই মন:ক্ষুন্ন হয়। এ ব্যাপারে মা'কে বোঝাতে গেলেও রেগে যায়।)

আমি কয়েক বছর ধরে ইসলাম প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করছি। আগে মায়ের যেসব খারাপ আচরণে ধৈর্য্য ধরতে পারতাম না, এখন শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য সেসব ব্যাপারে ধৈর্য্য ধারণ করার চেষ্টা করি। তবে কখনো কখনো পরিস্থিতি এতো খারাপ হয়ে যায়, বেদ্বীন ছোটভাই যখন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দেয়, মা'কে আমার বিরুদ্ধে রাগিয়ে দেয়, তখন মা রেগে গিয়ে নানা রকম খারাপ কথা বলার পাশাপাশি অভিশাপ দিয়ে থাকে।যেমন: আমি তোর মুখ আর দেখতে চাই না। তোর কখনো বিয়ে হবে না। বিয়ে হলেও সংসার টিকবে না। তোর সব ইবাদাত নষ্ট হয়ে যাবে। হুজুর হইছিস খুব, জাহান্নামে যাবি তুই। আমি বলে দিলাম তুই জাহান্নামে যাবি। তুই ফাসি দিয়ে মরবি। আমাকে জ্বালাইছিস, তোর জীবনে কোনো উন্নতি হবে না। ইত্যাদি ভয়ংকর সব অভিশাপ দেয়।
মায়ের মাথা ঠান্ডা হলে, মায়ের অভিশাপ সন্তানের জন্য ঠিক না, তা বোঝানো হলেও, রাগের সময় মা অভিশাপ দিয়ে ফেলেন।

আমার বাবা-মা চান আমি পড়ালেখা করে উচ্চ পদস্থ চাকরি করি। ছোটবেলা থেকেই আমি পড়ুয়া ছিলাম। যখন থেকে বাবা-মা বুঝতে পারলো আমি ইসলামের বিধিনিষেধ মানার চেষ্টা করছি এবং চাকরির প্রতি আমার আগ্রহ কমছে, তখন থেকেই বাবা-মা প্রায়ই খুব খারাপ আচরণ করে। কোনো টাকা ইনকাম করছি না কেনো, অন্য বাচ্চাদের উদাহরণ দিয়ে প্রায়ই আমার ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করে। অন্তত অনার্স শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত টিউশন কেনো করছি না। (আমি ওনাদের শান্ত রাখার জন্য টিউশন খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না।)

ছোটভাই লেখাপড়ায় ভালো ছিলো না, আর আমার রেজাল্ট খুব ভালো হতো বলে, সেই আক্রোশ থেকে ছোটো ভাই এখন আমার চাকরি করতে না চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ও বাসার ছোটো-খাটো কাজ নিয়েও মা কে রাগিয়ে দেয়। মেয়েরা শুধু বাবা-মায়ের টাকা নষ্ট করে, টাকা ইনকাম করে বাবা-মা কে দেখার বেলায় নাই, ইত্যাদি কথা বলে। এমতাবস্থায় বিষয়টি এমন দাড়িয়েছে, মা আমার ও আমার ভাইয়ের মধ্যে আচরণে অনেক তফাত করে। খাবার থেকে শুরু করে অন্য সব বিষয়েও। মেয়ে বলে ভাইসহ মা-ও আমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে৷ মাঝে মাঝে মনে হয় আল্লাহ তা'আলা আমাকে ছেলে বানিয়ে পাঠালে হয়তো এতো খারাপ আচরণ সহ্য করতে হতো না। ছেলে হলে হিজাব, চাকরি ইত্যাদি বিষয়ে কোনো সমস্যা থাকতো না।

মায়ের এ খারাপ আচরণে আমিও কখনো কখনো উত্তর দিয়ে ফেলি, "তুমি আমাদের ক্ষেত্রে সমান আচরণ করো না। একই ক্ষেত্রে ভাইকে সহজ করে কথা বলো, আমাকে রেগে বকা দিয়ে কথা বলো। আমার ভার্সিটির এক্সামের পড়ার চাপেও তোমার হাত ব্যাথা করছে এই কথা বলে আমাকে খাবার বানিয়ে দাওনি, আমার নিজের বানিয়ে নিতে হয়। তাতেও সমস্যা নেই। কিন্তু তার ২/৩ মিনিট পরেই ভাইকে খাবার বানিয়ে দাও। এগুলো কিভাবে করো? আবার আমার পড়ার চাপের মধ্যেও বাসার কাজে একটু দেরি হলেই সেগুলো নিয়ে ঝামেলা করো। যেহেতু আমাকে সহ্যই করতে পারো না, আমার খাবারও ঠিক মতো বানাও না, তাহলে কেনো বাসার কাজে আমার সাহায্য আশা করো। আমি তাও সাহায্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা করি, একটু দেরি হলে কেনো ধৈর্য্য ধরতে পারো না,  আর ভাই ও বাবার কাছে গিবত করো।"

এগুলো শুনে মা রেগে বলেন আমি তর্ক করি। পাশাপাশি অনেক অভিশাপ দেয়। বাবাকে মিথ্যা অভিযোগ দেয়। আমি যদি সেই মিথ্যার প্রতিবাদে বলি, আমি এগুলো বলিনি ও সেক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধারণ করতে না পারি, তাহলে কি আল্লাহ তা'আলা আমাকে বাবা-মায়ের উপর জোরে কথা বলার জন্য পাকরাও করবেন?

এক্ষেত্রে যখন মায়ের দোষ প্রকাশ হতে থাকে, তখনই মা অভিশাপ দিতে থাকেন। বাবা বাসায় না থাকলে মারধরও করেন। পরিস্থিতি খুব কঠিন মনে হয় মাঝে মাঝে।
এমতবস্থায় আমার কী করণীয় দয়া করে আমাকে উত্তম নসিহাহ দিন। আমার কি বিসিএস ও অন্য চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নেওয়া উচিত?
আমি ভার্সিটির পাশাপাশি অনলাইনে কিছু ইসলামিক কোর্স করি। এক্ষেত্রে পড়ার চাপ একটু বেশি থাকে। মা চান ঘরের সব কাজ তৎক্ষনাৎ করি। কখনো কখনো একটু দেরি হলে, সেটা নিয়ে ছোট ভাইকে, ও বাসায় আসলে বাবাকে নালিশ করেন ও বাসায় খুব সমস্যা তৈরি হয়। ( যেমন গতকাল যোহরের নামাজ, একটা ৩০ মিনিটের অনলাইন ক্লাস, ও সব ফার্নিচার মুছে ঘর ঝাড়ু দিয়ে, থালাবাসন ধুতে দেরি হচ্ছিলো বলে, মা নিজে থালাবাসন ধুয়ে ফেলে। আমি তখন মাকে ধুতে নিষেধ করি, আমি বাকি অর্ধেক ঝাড়ু দেওয়া শেষ করেই, থালাবাসন ধুবো বলি। তাও মা ধুয়ে ফেলেন ও ভাইকে বলেন আমি কাজে সাহায্য করিনি। ভাই মাকে আমার ব্যাপারে, আমার ইসলাম পালনের ব্যাপারে রাগিয়ে দেন। পরবর্তীতে মা আবার অভিশাপ দেন।)
মা চান আমি পড়ালেখায়ও খুব ভালো করি, আবার বাসার সব কাজও করি। আমার জন্য দুইটাই যথাসময়ে মেইনটেইন করা কখনো কখনো কঠিন হয়ে যায়। আর যখন কঠিন হয়, তখনই বাসায় ঝামেলা হয়। এমনকি ভার্সিটির ফাইনাল এক্সামের খুব চাপের সময়েও আমাকে মার খেতে হয় এসব ব্যাপার নিয়ে, যখন বাবা বাসায় থাকেন না। আসলে মায়ের রাগ একটু বেশি। তাই ধৈর্য্য রাখতে না পেরে মারেন। তখন আমি মন খারাপ থাকার কারণে পড়ালেখায় মন দিতে পারিনা। আবার রেজাল্ট খারাপ করাও যাবে না।
পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে বোঝানোর জন্য এতো লম্বা মেসেজ লেখা। আমি মানসিকভাবে খুবই খারাপ আছি।

এমতবস্থায় আমার করণীয় কি, আমার ব্যাপারে মিথ্যা বললেও কি আমার চুপ থাকা উচিত, যেহেতু, বাবা-মায়ের উপর উহ্ শব্দ করাও ইসলামে নিষেধ। পাশাপাশি কিভাবে বাবা-মাকে সন্তুষ্ট রাখবো, সবার ব্যাপারে ধৈর্য্য রাখবো, চাকরির বিষয়, ইত্যাদি সকল বিষয়ে আমাকে উত্তম পরামর্শ দিন দয়া করে। মায়ের অভিশাপগুলো কি লেগে যাবে?

আমি আল্লাহর কাছে দু'আ করি, যেন আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করেন, ও আমাদের পরিবারের সবার মধ্যে সম্পর্ক সুন্দর করে দেন। শাইতান ও আমাদের নাফস আমাদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে দিচ্ছে। শাইতানের সবচেয়ে পছন্দের কাজ পরিবার ভেঙে দেওয়া৷ আমি খুব পরীক্ষার মধ্যে আছি। আমাদেন জন্য দু'আ করবেন।
জাযাকাল্লাহু খইরান।

1 Answer

0 votes
by (682,440 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


https://ifatwa.info/12178/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ  
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
    
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।(সূরা বনি ঈসরাইল-২৩)

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।(সূরা বনি ঈসরাইল-২৪)

আল্লাহ তা'আলা, রাগের মূুহুর্তে কারো দু'আকে কবুল করেন না, এমনকি মাতাপিতার দু'আককেও কবুল করেন না।
وَلَوْ يُعَجِّلُ اللّهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسْتِعْجَالَهُم بِالْخَيْرِ لَقُضِيَ إِلَيْهِمْ أَجَلُهُمْ فَنَذَرُ الَّذِينَ لاَ يَرْجُونَ لِقَاءنَا فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
আর যদি আল্লাহ তা’আলা মানুষকে যথাশীঘ্র অকল্যাণ পৌঁছে দেন যতশীঘ্র তার কামনা করে, তাহলে তাদের আশাই শেষ করে দিতে হত। সুতরাং যাদের মনে আমার সাক্ষাতের আশা নেই, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টুমিতে ব্যতিব্যস্ত ছেড়ে দিয়ে রাখি।(সূরা ইউনুস-১১)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সন্তানের দায়িত্ব হচ্ছে,মাতাপিতার সাথে সর্বদা উত্তম বাক্য ব্যবহার করা।তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার পরও যদি তারা সন্তানের সাথে উচ্ছবাক্য করে,তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে,তারপরও সন্তানের দায়িত্ব হচ্ছে,ধৈর্য্যর সাথে অপেক্ষা করা ও সদ্ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া। 

কিন্তু প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কখনো যদি ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে সন্তান বৈধ কারনে উচ্ছবাক্য ব্যবহার করে নেয়,তাহলে আশা করা যায়,এক্ষেত্রে সন্তানের কোনো গোনাহ হবে না।

সন্তানের করণিয় হল,মায়ের আচরণ পরিবর্তনের জন্য দুয়া করা।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি মায়ের সাথে কম কথা বলবেন।

তার বদ দুয়া থেকে বাঁচতে তার সামনে কম আসার চেষ্টা করবেন।তবে অবশ্যই সালাম চালিয়ে যাবেন।

তবে প্রশ্নের বিবরণ মতে তার অভিশাপে আপনার ক্ষতি হবেনা,ইনশাআল্লাহ। 

আপনি পূর্ণ শরীয়ত মেনে বিসিএস ও অন্য চাকরির পরীক্ষা দিতে পারলে মায়ের চাপের কারনে এর জন্য প্রিপারেশন নিতে পারবেন।

মায়ের আচরণ পরিবর্তনের জন্য দুয়া করা অব্যাহত রাখবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...