মুহতারাম,
আসসালামু আলাইকুম।
আমি একজন ২৭ বছর বয়স্ক নারী, সাধ্যমত ইসলামী শরীয়ত মেনে চলার চেষ্টা করি। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে পারিবারিকভাবে জনৈক ব্যক্তির সাথে আমার বিবাহের আক্বদ সম্পন্ন হয়। আমার বিবাহের মোহরানা ১২,৫০,০০০/- (বার লাখ পঞ্চাশ হাজার) টাকা ধার্য করা হয়, যার মধ্যে আনুমানিক ১ লাখ টাকা গহনা বাবদ আক্বদের সময় আদায় করা হয়। বাকি মোহরানার কিছু অংশ পাত্রপক্ষ বিবাহের অনুষ্ঠানের সময় পরিশোধ করবে বলে জানায়, তবে অনুষ্ঠান কবে করবে তার কোন তারিখ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। আক্বদের পর থেকেই স্বামী তার ইচ্ছায় আমার বসবাসস্থলে অর্থাৎ আমার বাবার বাসায় সপ্তাহে ১/২ দিন আসতো (যেহেতু সে আমাকে তার নিজ গৃহে উঠিয়ে নেয় নাই) ও রাতে থাকতো, এবং এ পর্যায়ে শুরু থেকেই সে আমার সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক করে। তবে আক্বদের পর থেকেই তার গুরুতর চারিত্রিক সমস্যা এবং সংশ্লিষ্ট অনৈসলামী ও অনৈতিক কার্যকলাপ ধরা পড়ে। প্রায় পাঁচ মাস তাকে বুঝানোর বহু চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে শুধরাতে অস্বীকৃতি জানায়। এই অবস্থায় নিরুপায় হয়ে আমি পারিবারিকভাবে আলোচনা করে তার থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যদিও এতে আমার এবং আমার পরিবারের সামাজিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রচুর ক্ষতি হবে, তার সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই কারণ একজন চরিত্রহীন, ইসলামবিরোধী কার্যকলাপে প্রতিনিয়ত অভ্যস্ত ব্যক্তির সাথে স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়।
আমার বিবাহের কাবিননামার ১৮ নং পয়েন্টে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। সেই প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই মাসের শুরুতে অর্থাৎ বিবাহের প্রায় ছয় মাস পরে পারিবারিক সিদ্ধান্তে আমি নিজের উপর “তালাকে তাফউইজ” বা অর্পিত তালাক কার্যকর করেছি এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কাজি অফিসের মাধ্যমে আমি আমার স্বামীকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছি।
এমনতাবস্থায় মেহেরবানি করে নিচের প্রশ্নগুলোর শরীয়তসম্মত বিস্তারিত উত্তর প্রদান করলে বাধিত হবঃ
১) আমি জানি, সাধারণ অবস্থায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেয়ার সময় বিশেষ নিয়মে তিন বার দিতে হয়। এখন আমার ক্ষেত্রে স্বামীকে প্রদত্ত তালাকে তাফউইজ এর নোটিশটি কি তিন তালাকের সমতুল্য? যদি না হয়, তাহলে কখন এবং কিভাবে ২য় ও ৩য় তালাক অর্পন করতে হবে?
২) আমরা জেনেছি যে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তালাকে তাফউইজ এর নোটিশ পাঠানোর তিন (০৩) মাস পর তালাকটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। আমার প্রশ্ন হল, ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী আমার নিজের উপর অর্পিত তালাকটি কি অনতিবিলম্বে অর্থাৎ এখনই কার্যকর হয়েছে, নাকি তিন মাস পর কার্যকর হবে?
৩) এই তিন মাসের মধ্যে আমার উপর ইসলামী কী কী বিধিবিধান আরোপযোগ্য হবে? যেমন, আমি প্রয়োজনে (মেডিকেল কলেজে ক্লাস করার জন্য) বাইরে যেতে পারব কিনা?
৪) আমি স্বল্প জানামতে, “খুলা তালাক” হলে স্ত্রীকে দেয়া মোহরানা স্বামীকে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এটি “খুলা তালাক” নয়, বরং স্বামীর চারিত্রিক দোষের কারণে স্বামী কর্তৃক প্রদত্ত তালাক নেয়ার ক্ষমতাবলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক আরোপ করেছেন (ইতোমধ্যে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন)। এমতাবস্থায় শরীয়তমতে স্ত্রী কি স্বামীর কাছ থেকে অনাদায়কৃত মোহরানা দাবি করতে পারেন? অর্থাৎ আমি কি তার কাছে শরীয়ত মোতাবেক আমার মোহরানার অনাদায়কৃত টাকা দাবি করতে পারি?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর বিস্তারিত উত্তর লিখিত আকারে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। আপনার উত্তরের জন্য আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম জাযা দান করুন, আমিন।