আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
411 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (14 points)
কেউ যদি নফল রোজা গুলো রাখতে চাই কিন্তু তার মা তাকে রাখতে না দেয় এ অবস্থায় কি করা উচিত?

মায়ের কথা না শুনে রোজা রাখলে কি গুনাহ হবে?

মায়ের কথা শুনা টা কি বেশি জরুরী নাকি নফল রোজা রাখা বেশি জরুরি

1 Answer

0 votes
by (707,960 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ
(ক)আল্লাহ তা'আলা মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা এবং তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।তাদের অবাধ্য হওয়াকে হারাম ঘোষনা দিয়েছেন।এ বিষয়ে সমস্ত উলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করে থাকেন।
মাতাপিতার সাথে উত্তম ব্যবহারের মনোভাব রাখার সাথে সাথে নেকী উপার্জনের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য প্রশ্নকারী ভাই/বোনকে আন্তরিক ধন্যবাদ।আমরা আল্লাহর কাছে দু'আ করি,আল্লাহ যেন এই ভাই/বোনকে দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রকার কল্যাণ দান করেন।আমীন।

(দুই)প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন সহ যারা এই প্রবন্ধটি পড়বেন,তাদেরকে আমরা বলে দিতে চাই যে,আল্লাহর বিধি-বিধান দুই প্রকার যথাঃ-(১)ফরয/ওয়াজিব/সুন্নতে মু'আক্কাদা(২)এবং নফল/ মুস্তাহাব।

প্রথম প্রকারকে তরক করলে গোনাহ হবে।সুতরাং প্রথম প্রকারের বিধি-বিধানকে তরক করার জন্য মাতাপিতা সহ কারো আদেশকে মান্য করা যাবে না।কেননা হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।
ﻟَﺎ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ
আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(মুসনাদে আহমদ-১০৯৮)


মসজিদে জামাতের সাথে নামায পড়া ওয়াজিব বা সুন্নতে মু'ক্বাদা। সুতরাং কোনো প্রকার ক্ষতির আশংকা ব্যতীত মাতাপিতা যদি তার সুস্থ সবল বালেগ সন্তানকে মসজিদে যেতে বারণ করে, তাহলে এক্ষেত্রে মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা যাবে না।ঠিকতেমনিভাবে সন্তান ফরয হজ্বে যেতে চাইলে যদি মাতাপিতা বাধা প্রদান করে তাহলে এক্ষেত্রেও তাদের আদেশকে মানা যাবে না।

ইমাম বোখারী রাহ হাসান বসরী রাহ থেকে বর্ণনা করেন,
" إن منعتْه أمُّه عن العشاء في الجماعة شفقة:لم يطعها "
যদি মা তার সন্তানের কল্যাণ কামনায় তাকে অন্ধকারে এশার জামাতে যেতে বাধা প্রদান করে,তাহলে এক্ষেত্রে মায়ের আদেশকে মানা যাবে না।(সহীহ বোখারী-১/২৩০)

ইমাম আহমদ রাহ কে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো,যার পিতা তাকে মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে বারণ করে।ইমাম আহমদ রাহ প্রতিউত্তরে বললেন,
" ليس له طاعته في الفرض "
আল্লাহর ফরয বিধানের উল্টো পিতার আদেশকে মান্য করা যাবে না।(গেযাউল আদাব ফি শরহে মনযুমাতিল আদাব-১/৩৮৫)

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন
نصوص أحمد تدل على أنه لا طاعة لهما في ترك الفرض ،
ইমাম আহমদ রাহ এর মতামত এ কথার উপর দাবী রাখে যে,ফরয তরকের বেলায় মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা যাবে না।সুতরাং মাতাপিতার আদেশের  ভিত্তিতে জামাত তরক করা যাবে না।এবং হজ্বকে দেড়ীতে আদায় করা যাবে না।(আল মুসতাদরাক আ'লা মাজমুয়িল ফাতাওয়া-৩/২১৭) আরো জানুন- 1722

(তৃতীয়)
নফল এবং মুস্তাহাব ইবাদত সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই যে,ইহা কামিল ঈমানের পরিচায়ক এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম।এর বিপরীতে আল্লাহ তা'আলা সওয়াব প্রদান করবেন।ঐ সমস্ত নফল ইবাদত যা ফরয ইবাদতের জিনস থেকে হয়,যদি ফরয ইবাদতে কোনো প্রকার ত্রুটি থাকে,তাহলে ঐ নফল গুলো সেই ফরযের ত্রুটিকে পুরণ করে দেয়।যেমন নফল হজ্ব ফরয হজ্বের ঘাটতিকে পুরণ করে দেয়।ঠিকতেমনি নফল নামায ফরয নামযের ঘাটতিকে পূর্ণ করে দেয়।নফল সদকাহ ফরয যাকাতের ঘাটতিকে পূর্ণ করে দেয়,ইত্যাদি ইত্যাদি।সুতরাং কোনো মুসলমানের জন্য নফল এবং মুস্তাহাব ইবাদতকে পরিত্যাগ করা কখনো উচিৎ হবে না। 

এখন প্রশ্ন জাগে যে,মাতাপিতা নফল ইবাদতে বাধা প্রদান করলে,সন্তানের জন্য সেই নফল ইবাদত করার বিধান কি?

জবাবে বলা হবে,মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা মূলত তিনটি মূলনীতির আলোকে হয়ে থাকে।
(১) তাদের আদেশ কোনো মুবাহ বিষয়ে হতে হবে।কোনো ওয়াজিব তরকের ব্যাপারে হতে পারবে না।এবং কোন হারাম কাজের জড়িত হওয়ার জন্যও হতে পারবে না।
(২)যে কাজের আদেশ তারা দিবেন,এতে তাদের ফায়দা থাকতে হবে,বা শরীয়তের পছন্দসই কাজ হতে হবে।
(৩)যে কাজের আদেশ দিচ্ছেন,তা তাদের সন্তানদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারবে না।

সুতরাং যদি সন্তানের কষ্ট লাগবের জন্য তারা আদেশ দিয়ে থাকেন,তাহলে এক্ষেত্রে মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ লিখেন,
ويلزم الإنسان طاعة والديه في غير المعصية وإن كانا فاسقين ، وهو ظاهر إطلاق أحمد ، وهذا فيما فيه منفعة لهما ولا ضرر ، فإن شق عليه ولم يضره : وجب ، وإلا فلا 
গোনাহের কাজ ব্যতীত মুবাহ কাজে,মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।যদি তার ফাসিকও হয়।এটা তখন যখন তাতে মাতাপিতার ফায়দা থাকবে,এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক হবে না।যদি সন্তানের উপর কষ্টদায়ক হয় তবে ক্ষতিকারক না হয়, তাহলে তখন মাতাপিতার আদেশ মান্য করা ওয়াজিব।(আল-ফাতাওয়াল কুবরা-৫/৩৮১)

আল্লামা হাসক্বাফী রাহ লিখেন,
لَا يَحِلُّ سَفَرٌ فِيهِ خَطَرٌ إلَّا بِإِذْنِهِمَا. وَمَا لَا خَطَرَ فِيهِ يَحِلُّ بِلَا إذْنٍ وَمِنْهُ السَّفَرُ فِي طَلَبِ الْعِلْمِ
যে সফরে ক্ষতির আশংকা থাকবে সে সফর মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত বৈধ নয়।আর যে সফরে ক্ষতির সম্ভাবনা নাই,সে সফর মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত বৈধ।এর মধ্যে একটি হলো,ইলম অন্বেষণের জন্য সফর করা।অর্থাৎ ইলম অর্জনের জন্য সফর করা মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত ও বৈধ।

চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ "আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় " বর্ণিত রয়েছে,
ومذهب الحنفية: يكره الخروج إلى الحج إذا كره أحد أبويه وكان الوالد محتاجا إلى خدمة الولد، وإن كان مستغنيا عن خدمته فلا بأس.
وذكر في السير الكبير إذا كان لا يخاف عليه الضيعة فلا بأس بالخروج. وحج الفرض أولى من طاعة الوالدين، وطاعتهما أولى من حج  النفل - فتح القدير ٢ / ١١٨، والفتاوى الهندية ١ /٢٢٠   -بحوالة الموسوعة الفقهية،ج٢- ص،٢٠٤
হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্তঃ
যদি মাতপিতার কেউ একজন সন্তানকে হজ্বে যেতে নিষেধ করে এমতাবস্থায় যে, পিতা-মাতা উক্ত সন্তানের খেদমতের মুহতাজ।তাহলে এমন পরিস্থিতে সন্তানের জন্য হজ্বে যাওয়া মাকরুহ।আর যদি মাতাপিতা উক্ত সন্তানের খেদমতের মুহতাজ না হন,তাহলে এমতাবস্থায় সন্তান হজ্বে যেতে পারবে।এতে কোনো শরয়ী অসুবিধা নেই।
সিয়ারে কাবীর কিতাবে বর্ণিত আছে,যখন সন্তানের  ক্ষতির কোনো প্রকার সম্ভাবনা থাকবে না,(যেমন সাগরের সফর ইত্যাদি হবে না) তখন তার জন্য মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত সফর করা বৈধ রয়েছে।জেনে রাখা ভালো,ফরয হজ্ব মাতাপিতার খেদমতের চেয়ে উত্তম।তবে নফল হজ্বের চেয়ে মাতাপিতার খেদমতই উত্তম।(ফাতহুল ক্বাদির-২/১১৮,ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া,১/২০৬)


সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সুতরাং মাতাপিতা যদি সন্তানের খেদমতের মুহতাজ থাকে,এবং সন্তানের কাছে সহযোগিতার আবেদন করে,অন্যদিকে যদি সন্তান এমন কোনো নফল ইবাদতে ব্যস্ত হয়ে যায় যা মাতাপিতার খেদমতের অন্তরায় থাকে,তাহলে এমতাবস্থায় মাতাপিতার খেদমতই অগ্রগণ্য হবে।সন্তানের জন্য নফল ইবাদতে লিপ্ত হওয়া জায়েয হবে না।কেননা এক্ষেত্রে মাতাপিতার খেদমতে নিজেকে ব্যস্ত রাখা ওয়াজিব।সুতরাং নফলের উপর ওয়াজিবকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তবে যদি মাতাপিতা সন্তানের খেদমতের মুহতাজ না থাকে,বা নফল ইবাদতে বাধা প্রদানের কোনো হাজত না থাকে কিংবা এতে মাতাপিতার কোনো ফায়দা না থাকে,এবং এ ব্যাপারে শরীয়তের কোনো আকার ইঙ্গিত না থাকে,তাহলে এমতাবস্থায় মাতাপিতার উক্ত বিধিনিষেধের উপর নফল ইবাদতকে তারজিহ দেয়াই উত্তম হবে।সুতরাং মাতাপিতার আদেশকে না মেনে তখন নফল ইবাদতই উত্তম হবে।হ্যা অবশ্যই মাতাপিতার সাথে উত্তম শব্দ ব্যবহার করতে হবে। তাদেরকে হেকমতের সাথে নরম ভাষায় নফল ইবাদতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বুঝাতে হবে।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সুতরাং আপনি মাতাপিতার নিষেধ সত্তেও নফল রোযা রাখতে পারবেন।এবং নফল রোযা রাখাই আপনার জন্য উত্তম হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...