আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
211 views
in ওয়াসওয়াসা by (26 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম শায়েখ,

আমি পরিপূর্নভাবে দ্বিনের পথে ফিরে আসতে চাই শায়েখ। সবকিছুর সাহায্যকারি একমাএ আল্লাহ। আমি কিছু বিষয় নিয়ে ওয়াসওয়াসা বা তীব্র মানুষিক কষ্টে ভুগছি। যার জন্য আমি নামাজ পড়া শুরু করতে পারছি না। এসব ওয়াসওয়াসার জন্য নামাজ পড়া শুরু করতে পারছি না। এসব বিষয় আমাকে সারাদিন চিন্তিত করে রাখে। কোন কিছু ভাল লাগে না। সারাটাদিন এসব নিয়ে ভাবতে থাকি। অনেক বিষয় যেগুলো সাধারনত কেউ ভাবে না, কিন্তু আমি সেগুলো নিয়েও ভাবতে থাকি। আশা করি শায়েখ আপনি আমার সমস্যাগুলি বুঝবেন। এবং আমাকে কিছু প্রশ্নের উওর দিয়ে আমার মনের কনফিউশন দূর করবেন। সকল কিছুর প্রশংসা একমাএ আল্লাহর।

(১) আমার মনে সারাক্ষন তালাকের কথা ঘুরতে থাকে। এই ওয়াসওয়াসা এতটায় বেশি যে, আমি রাতে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখি যে, আমি আমার ওয়াইফকে তালাক দিচ্ছি অথবা দিয়ে দিছি। কাউকে কোন ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললে মনে হচ্ছে আমি যেন আমি আমার ওয়াইফকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললাম। এমনকি কেউ যদি কথার ভিতর "শেষ" শব্দ উচ্চারন করে তখন আমার মনে আমি আমার ওয়াইফের সাথে সম্পর্ক শেষ বললাম। সেসময় আমার মনে হয় এমন বক্য আমার মুখ দিয়ে উচ্চারন হয়ে যাবে। বিশেষ করে আমি ওয়াসরুমে থাকা কালিন মনে হয় তালাক শব্দ মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাবে, আমার কন্টোল করতে খুব কষ্ট হয় শায়েখ। সেজন্য বার বার থুথু ফেলতে থাকি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার ওয়াইফ এটা করলে তালাক,আবার ওটা করলে তালাক। এমন শর্তযুক্ত তালাক মনের ভিতর একের পর এক আসতে থাকে।
ওয়াইফ ফোন দিলেই আগেই তালাকের কথা মনে হয়। যতক্ষন কথা বলি মনে হয় তালাক উচ্চারন করে ফেলবো। আবার বাসায় ঢোকা কালিন গেটে ওয়াইফকে দেখা মাএই মনের ভিতর তালাক শব্দ আসতে থাকে। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি শায়েখ।
ইদানিং তালাক এর কথা মনে আসলে আমার খুবই অশস্তি লাগে। তাই আমি মুখ দিয়ে "উহ উহ" শব্দ করি। শরিল খারাপ থাকলে মানুষ যেমন করে আরকি। এজন্য মনে তালাক দিলাম শব্দ আসলে যদি আমি "উহ" শব্দ করি তাহলে মনে হচ্ছে আমি মনে হয় আমি "উহ বা  হ্যা" বলে তালাকের সম্মতি দিলাম। এমন সন্দেহ মনে আসছে।আমি খুবই মানসিক কষ্টের স্বীকার শায়েখ। আবার কখনো কোন মিথ্যা কথা বললে মনে হচ্ছে আমি এই মিথ্যা কথা মাধ্যকে আমার ওয়াইফকে তালাক দিয়ে দিলাম।
এগুলার দ্বারা কি তালাক পতিত হবে শায়েখ?

(২) আমি মাদ্রাসায় পড়তাম অনেক বছর আগে ২০১০ সালের দিকে হতে পারে।  ৩ বছর মত পড়েছি । মাদ্রাসায় পড়ার সময় যেহেতু আমরা সারাদিন কোরআন নিয়েই থাকতাম, তাই কোরআনকে সাধারন মানুষের মত অতটা গুরুত্ব দিতাম না। তাই অনেক সময় ওজু ছাড়া কোরআন ধরা, কোরআন সামনে নিয়ে একে অপরের সামনে অনেক বাজে বাজে কথা বার্তা বলতাম। কোরআনকে সামনে নিয়ে গান গাওয়া থেকে শুরু করে গানও শুনেছি। আরো অনেক খারাপ কাজ করেছি যা আমি বলতে লজ্জাবোধ করছি। হয়তো ওই সময় কোরআনের গুরুত্ত কতটা বুঝিনি। হয়তোবা খুবই খারাপ মানুষ ছিলাম আমি। পরে সম্পূর্র হেফজ্ না শেষ করেই মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে এসে হাতের কাজ শিখলাম ২ বছর ধরে । পরে আবার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হলাম। ১ বছর মত পড়লাম। তারপর ১ বছর মত জব করার পর বিয়ে করলাম। এখন ১৪/১৫ বছর পর এখন আমার মনে হচ্ছে আমি মাদ্রাসায় পড়া কালিন এত গুনাহর কাজ করেছিলাম। তখন এত গুনাহর কাজ করার জন্য আমি মনে হয় আর মুসলমান ছিলাম না। এজন্য তার এত বছর পর বিয়ে করার পরও এখন আমার মনে হচ্ছে আমার বিয়ে করা বোধহয় জায়েজ হয়নি। তাই আমার জেনার গুনাহ হচ্ছে এখন পর্যন্ত। এসব কথা এখন আমার ১৪/১৫ বছর পরে মনে আসছে। এসব কথা এখন আমার মনে হচ্ছে আর আর সন্দেহ সৃষ্টি করছে আর আমি কষ্ট পাচ্ছি। আর মনে হচ্ছে আমার বিয়ে মনে হয়  যায়েজ হয়নি আগের করা পাপের জন্য।
এসব চিন্তা ভাবনা করা কি ঠিক হচ্ছে আমার জন্য শায়েখ?
এগুলা কি ওয়াসওয়াসা??
বা এর জন্য কি আমার বিবাহিত জিবনে কো সমস্যা হবে?

(৩) আমার এক বন্ধু বাববার আমাকে নামাজে যেতে বলে। আমি আজ থেকে পড়বো কাল থেকে পড়বো এমন করি। এভাবে মাঝে মাঝে তার সাথে ২/৩ ওয়াক্ত পড়ি, আবার নামাজ পড়া হয় না। তার সাথে থাকা কালিন নামাজ হয়, না থাকা কালিন হয় না। একদিন তাকে বলেছিলাম যে, অমক সময় থেকে পড়বে। সেই সময় আসলে আমি ভালভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন হয়ে ভালভাবে ওজু সেরে নামাজ পড়ি। সেও আমার সাথেও নামাজ পড়লো। সে সাথে না থাকলে হয়তো আমি ওই সময়টাতে নামাজে আসতাম না। এই বিষয়টা নিয়ে শায়েখ আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম। আপনি বলেছিলেন যে, শুধুমাএ বন্ধুকে দেখানোর উদ্দেশ্য থাকলে রিয়া হবে। কিন্তু আমার এখন সন্দেহ হচ্ছে আমি কি শুধুমাএ আমার বন্ধুকে দেখানোর জন্যই নামাজ পড়লাম? এমন সন্দেহ আসাতে আমার খুবই খারাপ লাগছে। টেনশন হচ্ছে।
তারপরের ওয়াক্ত সন্ধার আগে আমার বন্ধুর পা কেটে যাবার জন্য সে মসজিদে আসতে পারে না। কিন্তু আমি মসজিদে নামাজ পড়ি। মাগরিবের নামাজ পড়া শেষ করে আমার মনে হচ্ছিল যে, সুন্নাত না পড়ে বেরিয়ে আসি। ঠিক তখনি আমার মনে হচ্ছে আমি কি আমার বন্ধু দেখানের জন্য নামাজ পড়লাম? বন্ধু থাকলে তো সুন্নাত পড়তাম সম্ভবত। এমন চিন্তা মাথায় আসায় আমি সুন্নাত নামাজ পড়ি।

পরে একদিন অবশ্য বন্ধু কি মনে করবে ভেবে প্যান্ট নাপাক থাকা অবস্থায় নামাজ পড়েছি। তবে মনে কোন দ্বিনের প্রতি ঘৃনা বা তিরস্কার করার উদ্দেশ্যে নয়। বন্ধুর সাথে প্যান্ট নাপাক বিষয়টা শেয়ার করতে না পারায় ওইভাবেই পড়ে ফেলেছি। নামাজের ভিতরেও আমার মনে হচ্ছিল যে, আমার নামাজ হচ্ছে না। প্যান্ট নাপাক তাই। বিষয়টা নিয়ে খুব খারাপ লাগছে শায়েখ আমার।
উপরের সবগুলো বিষয় পড়ার পর আপনার মতামত কি শায়েখ?

এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ?
ও আমার বিবাহিত জিবনে কোন সমস্যা হবে?

(৪) ভিডিও কলে ওয়াইফের সাথে কথা বলতে বলতে আমার মেয়েকে আম্মু আম্মু বলে ডাকছিলাম। তখন আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন আমার ওয়াইফকে আম্মু বলে ডাকছি।

আবার, স্বাভাবিকভাবে কারো সাথে কথার বলার সময় কথার ভিতরে "দরকার নাই"যা খুশি তাই করে " এমন ধরনের কথা বললে মনে হয় আমি আমার ওয়াইফকে রাগ করে এই সকল কথা বলছি।

এতে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??

(5)আজ কিছু ভাল লাগছে না বললে মনে হয় আমি নামাজকেও ভাল লাগছে না বললাম।

কোম্পানি কয়দিন থাকবে বলে আপনার মনে হয়, এমন প্রশ্ন একজনকে করলাম।তারপর মনে হচ্ছে আমি তাকে গায়েব জিগ্গাসা করলাম।
এতে কি ঈমান চলে যাবে?
--------------------------------------------------------------------------------------

এসব ব্যাপারে আপনার মতামত কি শায়েখ? আমি কি মানসিকভাবে অসুস্থ?

আমার জন্য কি শরিয়তে কোন ছাড় আছে শায়েখ??
একটার পর একটা এসব উল্টা পাল্টা কথা আমার মাথায় আসাতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি শায়েখ। আমি আর চিন্তা করতে পারছি না। আমি ক্লান্ত শায়েখ। এসব চিন্তা মাথায় আসলে কিভাবে আমি মনকে বুঝ দেব আমাকে জানাবেন শায়েখ?

1 Answer

0 votes
by (559,380 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
শরীয়তের বিধান হলো, মুখে উচ্চারণ না করে শুধু মনে মনে তালাক দিলে বা মনে মনে শর্ত যুক্ত তালাক দিলে তাহা পতিত হবেনা।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ عَنْ زُرَارَةَ بْنِ أَوْفٰى عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِه„ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ
قَالَ قَتَادَةُ إِذَا طَلَّقَ فِي نَفْسِه„ فَلَيْسَ بِشَيْءٍ.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতের হৃদয়ে যে খেয়াল জাগ্রত হয় তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিণত করে বা মুখে উচ্চারণ করে।

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেনঃ মনে মনে তালাক দিলে তাতে কিছুইতালাক হবে না। [বুখারী শরীফ ৫২৬৯.২৫২৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৮)

অন্য এক হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ ".

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। (সহীহ বুখারী ২৫২৮)

আরো জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নের বিবরণ মতে তালাক পতিত হবেনা। 
আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। 

(০২)
এসব চিন্তা ভাবনা করা আপনার জন্য কোনো ভাবেই ঠিক হচ্ছেনা।
এগুলা ওয়াসওয়াসা।
অহেতুক চিন্তা।
এর জন্য আপনার বিবাহিত জীবনে কোনো সমস্যা হবেনা।
পরামর্শ থাকবে, এহেন চিন্তাকে পাত্তা না দেয়ার। 

(০৩)
উপরের সবগুলো বিষয় পড়ার পর মতামত হলো আপনার ঈমান চলে যায়নি।

এভাবে নাপাক প্যান্ট পরে নামাজ পড়ায় আপনার মারাত্মক গুনাহ হয়েছে।
তবে এতে আপনার ঈমান চলে যাবেনা
আপনার বিবাহিত জীবনে কোন সমস্যা হবেনা।

এখানে শুধু বন্ধুকে দেখানোর উদ্দেশ্য থাকলে,আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্য না হলে রিয়া হবে।

(০৪)
এতে তালাক পতিত হবেনা।

(০৫)
প্রশ্নের বিবরন মতে ঈমান চলে যাবেনা।

নামাজ নিয়ে ভালো না লাগার বিষয় মাথায় আসলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন। 

أعوذ بالله من الشيطان الرجيم 

لا حول ولا قوة الا بالله العلي العظيم 

বেশি বেশি পাঠ করবেন।

لا حول ولا قوة الا بالله العلي العظيم 
তিনবার পাঠ করে বাম দিকে প্রত্যেকবার থুথু ফেলতে পারেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...