জবাবঃ-
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ خَيَّرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاخْتَرْنَاهُ أَفَكَانَ طَلاَقًا؟ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي الضُّحَى، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ، بِمِثْلِهِ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْعِلْمِ فِي الْخِيَارِ فَرُوِيَ عَنْ عُمَرَ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ أَنَّهُمَا قَالاَ إِنِ اخْتَارَتْ نَفْسَهَا فَوَاحِدَةٌ بَائِنَةٌ . وَرُوِيَ عَنْهُمَا أَنَّهُمَا قَالاَ أَيْضًا وَاحِدَةٌ يَمْلِكُ الرَّجْعَةَ وَإِنِ اخْتَارَتْ زَوْجَهَا فَلاَ شَىْءَ . وَرُوِيَ عَنْ عَلِيٍّ أَنَّهُ قَالَ إِنِ اخْتَارَتْ نَفْسَهَا فَوَاحِدَةٌ بَائِنَةٌ وَإِنِ اخْتَارَتْ زَوْجَهَا فَوَاحِدَةٌ يَمْلِكُ الرَّجْعَةَ . وَقَالَ زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ إِنِ اخْتَارَتْ زَوْجَهَا فَوَاحِدَةٌ وَإِنِ اخْتَارَتْ نَفْسَهَا فَثَلاَثٌ . وَذَهَبَ أَكْثَرُ أَهْلِ الْعِلْمِ وَالْفِقْهِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ بَعْدَهُمْ فِي هَذَا الْبَابِ إِلَى قَوْلِ عُمَرَ وَعَبْدِ اللَّهِ وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِيِّ وَأَهْلِ الْكُوفَةِ وَأَمَّا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ فَذَهَبَ إِلَى قَوْلِ عَلِيٍّ رضى الله عنه .
আইশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার স্ত্রী হিসাবে থাকা বা না থাকার) স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আমরা তাকে গ্রহণ করলাম। এতে কি তালাক হল? — সহীহ, ইবনু মাজাহ (২০৫২)
একইরকম হাদীস আইশা (রাঃ) হতে মাসরুকের বরাতে আবুয যুহা হতে বর্ণিত আছে। আইশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। স্ত্রীকে যদি তার স্বামী তার সাথে থাকা বা না থাকার স্বাধীনতা দেয় তবে এর ফলাফল কি হবে সে বিষয়ে আলিমদের মধ্যে মত পার্থক্য আছে।
উমার ও ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, স্ত্রী নিজের প্রতি (স্বামী হতে পৃথক হওয়ার) ইখতিয়ার প্রয়োগ করলে তবে তাতে এক বাইন তালাক হবে। তাদের আরো একটি মত উল্লেখ আছে যে, তাতে এক রিজঈ তালাক হবে। আর যদি স্বামীর সাথে থাকাকেই স্ত্রী ইখতিয়ার করে তবে কোন তালাক হবে না।
আলী (রাঃ) বলেছেন, সে নিজেকে বেছে নিলে এক বাইন তালাক হবে এবং স্বামীকে বেছে নিলে এক রিজঈ তালাক হবে। যাইদ ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেন, তিন তালাক হবে যদি সে নিজেকে ইখতিয়ার করে এবং এক তালাক হবে যদি সে স্বামীকে ইখতিয়ার করে। উমার ও আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর মতকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশিরভাগ ফিকহবিদ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ গ্রহণ করেছেন।
এই মত গ্রহণ করেছেন সুফিয়ান সাওরী ও কুফাবাসী আলিমগণও। কিন্তু আলী (রাঃ)-এর মতকে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহঃ) গ্রহণ করেছেন।
(তিরমিজি ১১৭৯)
তালাক স্পষ্ট বাক্য দ্বারাও হতে পারে,আবার কেনায়া শব্দ,ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারাও হতে পারে।
কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ বলে তালাক দেওয়া।
★★শরিয়তের পরিভাষায় কেনায়া তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷
সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)
ফাতওয়ার কিতাবে আছেঃ
وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.
احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية
সারমর্মঃ
২য় প্রকার,কেনায়া বাক্য।
এর দ্বারা তালাক হবেনা,কিন্তু তালাকের নিয়ত অথবা অবস্থার ভিত্তিতে তালাক হবে। কেনায়া বাক্য দুই প্রকার। এর মধ্যে তিনটি শব্দ এমন আছে, যার দ্বারা তালাকে রজয়ী পতিত হয়।
সেগুলো হলোঃ- তুমি ইদ্দত পালন করো,তুমি তোমার গর্ভাশয় মুক্ত করো,তুমি এক।
আর কেনায়া তালাকের অন্যান্য শব্দ,যেক্ষেত্রে তালাকের নিয়ত করলে বায়েন তালাক হয়। তিন তালাকের নিয়ত করলে তিন তালাক পতিত হয়।
যদি দুই তালাকের নিয়ত করে,সেক্ষেত্রে এক তালাক পতিত হয়।
যেমনঃ- তুমি বিচ্ছিন্ন, তুমি সম্পর্ক মুক্ত,তুমি ভিন্ন,তুমি হারাম,তুমি শুণ্য,তুমি মুক্ত,তোমার রশি তোমার কাঁধে,তুমি তোমার পরিবারবর্গের সাথে মিলিত হও,আমি তোমাকে তোমার পরিবারের জন্য হেবা-দান করলাম,আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম,আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম,তোমার বিষয় তোমার হাতে,তুমি আযাদ,তুমি ঘোমটা পড়,তুমি ওড়না দ্বারা নিজেকে আবৃত করো,তুমি আড়াল হও (পর্দা করো), তুমি বিদূরিত হও, তুমি বের হয়ে যাও,তুমি চলে যাও,তুমি দন্ডায়মান হও (দাঁড়িয়ে যাও), তুমি অন্য স্বামী খুজো।
স্বামীর যদি এখানে নিয়ত না থাকে,তাহলে এ সব বাক্য দ্বারা তালাক হবেনা। তবে মুযাকারায়ে তালাকের ক্ষেত্রে হলে কাযা'আন তালাক হবে। দিয়ানাতান তালাক হবেনা।
(কুদুরী ৩৬৩.৩৬৪. হেদায়া শরহুল বিদায়াহ ১/২৪১,শরহে বিকায়াহ ২/৭৭)
বিস্তারিত জানুনঃ-
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
তোমার রশি তোমার কাঁধে,তোমার বিষয় তোমার হাতে।
এগুলো কেনায়া বাক্য,সুতরাং "যেমন ইচ্ছে হয় তেমন করে চল,,তোমার খুশিমতো চলো,মন যেমন চায় তেমন করে চলো"
এগুলো কেনায়া বাক্য।
তালাকের নিয়তে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললে তালাক হবে,নতুবা তালাক হবেনা।
(০২)
হ্যাঁ, এগুলো কেনায়া বাক্য।
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্বামী যদি তালাক প্রদানের নিয়তে না বলে,সেক্ষেত্রে তালাক হবেনা।
(এগুলো "কেনায়া বাক্য" বলে না জানলে তাতে স্বামীর তো তালাকের নিয়ত থাকার কথা নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে সমস্যা হবেনা।)
(০৩)
না,এসব ক্ষেত্রে তালাক হবেনা।