ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
(১)
মুযাকারায়ে তালাক কাকে বলে?
এ বিষয়ে রদ্দুল মুহতারে বর্ণিত রয়েছে,
"(قَوْلُهُ: وَهِيَ حَالَةُ مُذَاكَرَةِ الطَّلَاقِ) أَشَارَ بِهِ إلَى مَا فِي النَّهْرِ مِنْ أَنَّ دَلَالَةَ الْحَالِ تَعُمُّ دَلَالَةَ الْمَقَالِ قَالَ: وَعَلَى هَذَا فَتُفَسَّرُ الْمُذَاكَرَةُ بِسُؤَالِ الطَّلَاقِ أَوْ تَقْدِيمِ الْإِيقَاعِ كَمَا فِي اعْتَدِّي ثَلَاثًا وَقَالَ قَبْلَهُ الْمُذَاكَرَةُ أَنْ تَسْأَلَهُ هِيَ أَوْ أَجْنَبِيٌّ الطَّلَاقَ".
( كتاب الطلاق، بَابُ الْكِنَايَاتِ، ٣ / ٢٩٧)
মুযাকারায়ে তালাকের অর্থ হল, স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর নিকট তালাকের আবেদন করা ,অথবা তৃতীয় কোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকে স্বামীর নিকট তালাকের আবেদন এবং তামান্না করা। এই উভয় প্রকারকে 'মুতালাবায়ে তালাক' নামে অভিহিত করা হয়।তাছাড়া স্বামী যদি ইতিপূর্বে স্ত্রীকে এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকে,তাহলে এদ্বারাও মুযাকারায়ে তালাক প্রমাণিত হবে।এই তৃতীয় প্রকারকে তাকদীমূল ঈ'কা বলা হয়ে থাকে।(রদ্দুল মুহতার-৩/২৯৭)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
ঝগড়ার মূহুর্তকে মুযাকারায়ে তালাক বলা যাবে না। বরং স্ত্রী যদি তালাক চায়, তাহলে সেই তালাক চাওয়ার মজলিসকেই মুযাকারায়ে তালাক বলা হবে।
(২)
(ক)
ঝগড়ার মুহুর্তে শুধুমাত্র সে সব শব্দ দ্বারাই তালাক হবে, যেগুলো দ্বারা তালাকের আবেদনের সম্মতি বা গালিগালাজ বুঝায়, সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়
"যা ইচ্ছা করো,যা খুশি করো
যেমন মন চায় করো বা মন যেমন বলে তেমন করো
তুমি পছন্দ করো
তোমার বিষয় তোমার হাতে
তুমি যেটা চাও
অন্য কাউকে খুজে নাও"
যেহেতু এই শব্দাবলী দ্বারা তালাকের সম্মতি বুঝায়, কাজেই এগুলো দ্বারা তালাকের আবেদনের ক্ষেত্রে তালাক পতিত হবে।
(খ)
স্ত্রী তালাক চাইলে স্বামী যদি তালাক চাওয়াতে আরো রেগে গিয়ে গালিগালাজ করে(তোমার জামাই না লাগলে বিয়ে করছো কেন,তোমাকে বিয়ে করে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি এইরকম) এবং উপরিউক্ত বাক্য সমূহ বলে, তাহলে এক্ষেত্রে তালাক হবে না।
(গ)
একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে যেটা তালাক সংক্রান্ত নয়, ঝগড়ার কারণে স্ত্রী রাগের মাথায় তালাক চাচ্ছে, আর স্বামী উদ্দেশ্য এবং নিয়ত ব্যতীত যদি ঐসব বাক্য বলে যা সম্মতি বুঝায় তাহলেও এক্ষেত্র তালাক হয়ে যাবে।
(৩)দিয়ানাতান তালাক না হলে পুনরায় বিয়ে না করেও সংসার করা যাবে যদি স্বামী স্ত্রী উভয়ের সম্মতি থাকে।
(৪)
(ক)
তুমি বিচ্ছিন্ন, তুমি সম্পর্ক মুক্ত,তুমি ভিন্ন,তুমি হারাম,তুমি শুণ্য,তুমি মুক্ত,তোমার রশি তোমার কাঁধে,তুমি তোমার পরিবারবর্গের সাথে মিলিত হও,আমি তোমাকে তোমার পরিবারের জন্য হেবা-দান করলাম,আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম,আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম,তোমার বিষয় তোমার হাতে,তুমি আযাদ,তুমি ঘোমটা পড়,তুমি ওড়না দ্বারা নিজেকে আবৃত করো,তুমি আড়াল হও (পর্দা করো), তুমি বিদূরিত হও, তুমি বের হয়ে যাও,তুমি চলে যাও,তুমি দন্ডায়মান হও (দাঁড়িয়ে যাও), তুমি অন্য স্বামী খুজো।
(স্বামীর যদি এখানে নিয়ত না থাকে,তাহলে এ সব বাক্য দ্বারা তালাক হবেনা। তবে মুযাকারায়ে তালাকের ক্ষেত্রে হলে কাযা'আন তালাক হবে। দিয়ানাতান তালাক হবেনা।)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
কাযাআন তালাক হলে এবং দিয়ানাতান তালাক না হলে, স্বামী স্ত্রী উভয় সম্মত থাকলে তখন কিন্তু পূনর্বার সংসার করা যাবে।
(খ)
কোন একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে যেটা তালাক সংক্রান্ত নয়, ঝগড়ার কারণে স্ত্রী রাগের মাথায় তালাক চাচ্ছে (উদ্দেশ্য এবং নিয়ত ব্যতীত) আর স্বামী উদ্দেশ্য এবং নিয়ত ব্যতীত এইসব উক্ত বাক্যের কোন একটা বলে এবং স্বামী নাই জানে যে এসব কেনায়া বাক্য এক্ষেত্রও দিয়ানাতান তালাক হবে না।স্বামী স্ত্রী উভয় সম্মত থাকলে তারা আবার সংসার করতে পারবে।