জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী অধিকাংশ শিয়ারাই কাফের।
উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে তার অনেকগুলো কারন রয়েছে,তার মধ্যে অন্যতম হলোঃ
★শিয়া কালিমা ও মুসলমানদের কালিমা ভিন্ন
আমরা জানি ঈমানের মূল হল কালিমা। সকল মুমীন মুসলিমই একথা জানে। যে ব্যক্তি কালিমায় বাড়ায় বা কমায় তাদের একজন সাধারণ মুমীন মুসলিমও কাফের বলে জানে।
মুসলিমদের কালিমা
لا إله الا الله محمد رسول الله
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদু রাসূল্লাহ।
অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহ তাআলার রাসূল।
এটাই মুমীন মুসলিমদের কালিমা। যদি উক্ত কালিমায় কোন ব্যক্তি কমায় বা বাড়ায় তার আকিদা বিশ্বাসের মাধ্যমে। তাহলে উক্ত ব্যক্তি কাফির। এতে কেউ সন্দেহ পোষণ করে না।
কিন্তু মুসলিমদের খেলাফ শিয়াদের কালিমার অংশ হল ৫টি। যথা-
শিয়াদের কালিমা
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদু রাসূল্লাহ, আলয়্যুন ওয়ালীউল্লাহ ওয়াসিয়্যু রাসূলিল্লাহ, খলীফাতুহু বিলা ফসল। {আকায়েদ দ্বীনিয়াত, বুক নং-১, ঈমামিয়া দ্বীনিয়াত, বাচ্চু কি দ্বীনী আওর আখলাকী কিতাব, পহলী কিতাব, প্রকাশক-ইমামিয়া এডুকেশন এ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট, নম্বর-৬৮, শিবাজী রোড,শিবাজী নগর ব্যাঙ্গালোর-৫৬০০৫১, সংকলক, [কথিত] হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা আলহাজ্ব সৈয়দ আসকারী রেজবী, ইমামে জুমআ করীমপুর, চতুর্থ প্রকাশ-মার্চ ২০০৩ ইং}
★তাদের অনেকেই আহলে বাইতের নামে কুরআনের স্পষ্ট আয়াত অস্বিকার করে।
আহলে বাইত শব্দটি আরবী। আহল বলা হয়, অধিকারী, পরিবার-পরিজন, বাসিন্দা ইত্যাদি।
আর বাইত বলা হয়, ঘরকে।
সুতরাং আহলে বাইত অর্থ হল, ঘরের অধিবাসী। ঘরের আত্মীয়-পরিজন ইত্যাদি।
আহলে বাইত তথা ঘরের অধিবাসী বলে মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে স্ত্রী। তারপর সন্তানাদী।
আহলে বাইত বলার দ্বারা মূল উদ্দেশ্য যে স্ত্রী এটি তিনভাবে প্রমাণিত। যথা-
১-শাব্দিক অর্থ দ্বারা।
২-কুরআনের আয়াত দ্বারা।
শাব্দিক অর্থে আহলে বাইত
বাইত শব্দটি এসেছে আরবী بات يبيت থেকে। যার অর্থ হল, রাতে বসবাস করা। রাতে পুরুষ ব্যক্তির সাথে কে থাকে? সন্তান না স্ত্রী?
নিশ্চয় স্ত্রী। কারণ সন্তান বড় হয়ে গেলে আলাদা ঘরে বসবাস করে। স্বামীর সাথে রাতে বসবাস করে একমাত্রই স্ত্রী।
সে হিসেবে কারো আহলে বাইত বললে, এর দ্বারা প্রথম উদ্দেশ্য হয় উক্ত ব্যক্তির স্ত্রী। সন্তান নয়।
তবে পরবর্তীতে সন্তানও আহলে বাইত অর্থে হয়, কারণ সন্তানও যেহেতু ব্যক্তির বাড়িতেই বসবাস করে থাকে। কিন্তু প্রথম অর্থ স্ত্রীকেই বুঝায়।
কুরআনের ভাষায় আহলে বাইত
পবিত্র কুরআনে আহলে বাইত শব্দটি দুইবার এসেছে। প্রথমবার এসেছে কুরআনে কারীমের ১১তম সূরা হুদে হযরত ইবরামীম আঃ এর আলোচনায়। কুরআনের ভাষ্য-
وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَى قَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ فَمَا لَبِثَ أَنْ جَاءَ بِعِجْلٍ حَنِيذٍ (69) فَلَمَّا رَأَى أَيْدِيَهُمْ لَا تَصِلُ إِلَيْهِ نَكِرَهُمْ وَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً قَالُوا لَا تَخَفْ إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَى قَوْمِ لُوطٍ (70) وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ (71) قَالَتْ يَا وَيْلَتَى أَأَلِدُ وَأَنَا عَجُوزٌ وَهَذَا بَعْلِي شَيْخًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عَجِيبٌ (72) قَالُوا أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ رَحْمَتُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَجِيدٌ (73)
আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন-সালাম। অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন!, কিন্তু যখন দেখলেন যে, আহার্য্যের দিকে তাদের হস্ত প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি সন্ধিগ্ধ হলেন এবং মনে মনে তাঁদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করতে লাগলেন। তারা বলল-ভয় পাবেন না। আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। তাঁর স্ত্রীও নিকটেই দাড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল। অতঃপর আমি তাকে ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরের ইয়াকুবেরও। সে বলল-কি দুর্ভাগ্য আমার! আমি সন্তান প্রসব করব? অথচ আমি বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে এসে উপনীত হয়েছি আর আমার স্বামীও বৃদ্ধ, এতো ভারী আশ্চর্য কথা। তারা বলল-তুমি আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে বিস্ময়বোধ করছ? হে আহলে বাইত তথা গৃহবাসীরা, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও প্রভুত বরকত রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রশংসিত মহিমাময়। {সূরা হুদ-৬৯-৭৩}
উপরোক্ত আয়াতে হযরত ইবরাহীম আঃ এর স্ত্রী হযরত সারা আঃ এর বিস্ময়বোধ করায় ফেরেস্তাগণ আহলে বাইত বলে সম্বোধন করে সান্ত¦না দিয়েছেন।
সুতরাং বুঝা গেলো যে আল্লাহ তাআলার কুরআনের ভাষায় আহলে বাইত হলেন মূলত স্ত্রীগণ।
তারপর কুরআনে কারীমের ৩৩তম সূরা আহযাবে আবার রাসূল সাঃ এর স্ত্রীগণকে আহলে বাইত সম্বোধন করা হয়েছে। দেখুন-
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا (33)
হে নবী পত্নীগন, তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। {সূরা আহযাব-৩২,৩৩}
কুরআনে কেবল এ দু’টি স্থানেই আহলে বাইত শব্দ এসেছে। যে উভয় স্থানে আল্লাহ পাক আহলে বাইত বলে স্ত্রীগণকেই উদ্দেশ্য নিয়েছেন। সন্তান নয়। তবে আহলে বাইতের মাঝে সন্তানও প্রবেশ করে তবে দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথমেই নয়। প্রথমতঃ আহলে বাইত বলার দ্বারা স্ত্রীই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।
রাসূল সাঃ এর আহলে বাইত বললে কাদের বুঝাবে?
আহলে বাইত মানে ঘরের বাসিন্দা। যার সাথে রাতে থাকা হয়। সুতরাং রাসূল সাঃ এর আহলে বাইত বললে প্রথমত উদ্দেশ্য হয়ে থাকে মুমিনদের আম্মাজান রাসূল সাঃ এর সম্মানিতা স্ত্রীগণ। তারপর পর্যায়ক্রমে সন্তান-সন্ততিগণ। এটাই স্বাভাবিক।
কুরআনে কারীমে যেহেতু রাসূল সাঃ এর স্ত্রীগণকে আহলে বাইত বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সন্তান সন্তুতিদের আহলে বাইত বলা হয়নি। তখন হয়তো কারো ধারণা হতে পারে যে, রাসূল সাঃএর সন্তানগণ আহলে বাইতের অন্তর্ভূক্ত নয়।
এ কারণে যখন উক্ত আয়াতে কারীমা নাজিল হয়, তখন রাসূল সাঃ হযরত উম্মে সালমা রাঃ এর গৃহে ছিলেন। তখন মানুষের এ গলদ ধারণা দূর করার জন্য নিজের চাদরের নিচে হযরত ফাতিমা রাঃ, হযরত হাসান রাঃ, হযরত হুসাইন রাঃ এবং হযরত আলী রাঃ কে নিয়ে বললেন, এরাও আমার আহলে বাইত। তাদের থেকেও আল্লাহ তাআলা অপবিত্রতা দূর করে পরিপূর্ণ পুত-পবিত্র করতে চান। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৪২৪}
সহীহ মুসলিমে নিম্নোক্ত শব্দে উক্ত বর্ণনা এসেছে-
قَالَتْ عَائِشَةُ: خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ، مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ، فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ، ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ، ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا، ثُمَّ جَاءَ عَلِيٌّ فَأَدْخَلَهُ، ثُمَّ قَالَ: ” {إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا} [الأحزاب: 33]
সুতরাং কী বুঝা গেল? রাসূল সাঃ এর আহলে বাইতের অন্তর্ভূক্ত নবীজী সাঃ এর স্ত্রীগণ একথা পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। আর রাসূল সাঃ এর সন্তান ও হযরত আলী রাঃ আহলে বাইতের অন্তর্ভূক্ত একথা প্রমাণিত রাসূল সাঃ এর হাদীস দ্বারা।
এ কারণেই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হল, রাসূল সাঃ এর আহলে বাইত রাসূল সাঃ এর সম্মানিতা স্ত্রীগণ এবং রাসূল সাঃ এর সন্তান ফাতিমা রাঃ, হযরত হাসান রাঃ, হযরত হুসাইন রাঃ এবং হযরত আলী রাঃ প্রমুখ।
আমাদের কাছে রাসূল সাঃ এর ঘরে থাকা সবাই আহলে বাইত।
কিন্তু শিয়া ধর্মাবলম্বীরা বলে থাকে যে, রাসূল সাঃ এর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত শুধু রাসূল সাঃ এর সন্তানগণ এবং হযরত আলী রাঃ।
তারা এ আক্বিদা পোষণ করে পবিত্র কুরআনের আয়াত অস্বিকার করছে। আর কুরআনের কোন একটি বিধান অস্বিকারকারীই মুসলমান থাকতে পারে না।
রাসূল সাঃ এর স্ত্রীগণ আহলে বাইত কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। আর রাসূল সাঃ এর সন্তান এবং হযরত আলী রাঃ আহলে বাইত তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
আমরা কুরআন ও মানি আবার হাদীস ও মানি। তাই নবীজী সাঃ এর স্ত্রীগণকে যেমন আহলে বাইত বিশ্বাস করি, তেমনি রাসূল সাঃ এর সন্তান এবং হযরত আলী রাঃ কেও আহলে বাইত বিশ্বাস করি।
কুরআন অস্বিকার করে কেউ যদি রাসূল সাঃ এর স্ত্রীগণকে আহলে বাইত বিশ্বাস না করে সে যেমন কাফের, তেমনি হাদীসের বর্ণনানুপাতে রাসূল সাঃ এর সন্তান ও হযরত আলী রাঃ যে আহলে বাইত না মানে সেও কাফের।
শিয়াদের কুফরী আকীদা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,বাংলা ভাষায় লিখিত মুহতারাম মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন সাহেব দাঃবাঃ এর লিখিত ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ বইটিতে শীয়া দের আকীদা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে।
অধ্যায়ন করতে পারেন।
,
(০২) উল্লেখিত বুযুর্গ ব্যাক্তির নাম খুজে পাইনি।