বিপদাপদ ও বালা-মুছীবত নাযিল হ’লে কিছু করণীয় রয়েছে, যা করলে মানুষ ঐসব থেকে রক্ষা পেতে পারে।
সুতরাং আপনার প্রতি নিম্নোক্ত আমল গুলি করার পরামর্শ রইলোঃ-
জান-মালের উপরে বিপদাপদ ও আল্লাহর অসন্তোষ থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় হচ্ছে দান-ছাদাক্বাহ করা। আর অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ رَحْمَةَ اللهِ قَرِيْبٌ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ.
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতীব নিকটবর্তী’ (আ‘রাফ ৭/৫৬)।
তিনি আরো বলেন,
مَا عَلَى الْمُحْسِنِيْنَ مِنْ سَبِيلٍ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيْمٌ،
‘বস্ত্ততঃ সৎকর্মশীলদের বিরুদ্ধে কোনরূপ অভিযোগ নেই। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (তওবা ৯/৯১)।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ عَنْ أَهْلِهَا حَرَّ الْقُبُوْرِ، وَإِنَّمَا يَسْتَظِلُّ الْمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْ ظِلِّ صَدَقَتِهِ-
‘নিশ্চয়ই দান কবরের শাস্তিকে মিটিয়ে দেয় এবং ক্বিয়ামতের দিন মুমিন তার দানের ছায়াতলে ছায়া গ্রহণ করবে’।
(সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮১৬/৩৪৮৪।)
তিনি আরো বলেন, صَدَقَةُ السِّرِّ تُطْفِيُ غَضَبَ الرَّبِّ- ‘গোপন দান প্রতিপালকের ক্রোধকে মিটিয়ে দেয়’।
(সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৪০।)
★বিপদ আসলে বেশী বেশী ইবাদত-বন্দেগী করা উচিত। যাতে আল্লাহর রহমত নাযিল হয় এবং তিনি দয়াপরবশ হয়ে আপতিত বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করেন।
★বালা-মুছীবত আসলে নফল ছালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে তা থেকে রক্ষার জন্য দো‘আ করতে হবে।
বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে দোয়া করতে হবে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ،
‘আমাদের প্রতিপালক প্রত্যেক রাতেই নিকটবর্তী আকাশে (১ম আকাশে) অবতীর্ণ হন, যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে এবং বলতে থাকেন, কে আছে যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে যে আমার নিকট কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব এবং কে আছে যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব’।
(বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮; মিশকাত হা/১২২৩।)
আবূ উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ فَإِنَّهُ دَأْبُ الصَّالِحِيْنَ قَبْلَكُمْ وَهُوَ قُرْبَةٌ إِلَى رَبِّكُمْ وَمَكْفَرَةٌ لِلسَّيِّئَاتِ وَمَنْهَاةٌ لِلإِثْمِ. ‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণগণের অভ্যাস, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের উপায়, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং পাপ কর্মের প্রতিবন্ধক’।
(তিরমিযী হা/৩৫৪৯; মিশকাত হা/১২২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০৭৯; ইরওয়া হা/৪৫২।)
★যিকর করা আল্লাহর করুণা লাভের মাধ্যম। তাই বালা-মুছীবত আসলে বেশী বেশী আল্লাহর যিকর করার মাধ্যমে তাঁর রহমত লাভের চেষ্টা করা উচিত। যাতে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে বান্দাকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
★আযাব-গযব ও বিপদাপদ থেকে রক্ষার অন্যতম উপায় হচ্ছে আল্লাহর নিকটে বিনীতভাবে দো‘আ করা। কাকুতি-মিনতি সহকারে তাঁর নিকটে পাপ থেকে ক্ষমা চাওয়া এবং তাঁর সন্তোষ কামনা করা।
দো‘আ ইউনুস পড়া :
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ألاَ أُخْبِرُكمْ بِشَيْءٍ إذَا نَزَلَ بِرَجُلٍ مِنْكمْ كَرْبٌ أوْ بَلاءٌ مِنْ أمْرِ الدُّنْيا دَعَا بِهِ فَفُرِّجَ عَنْهُ دُعَاءُ ذِيْ النُّوْنِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أنْتَ سُبْحَانَكَ إنِّّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ،
‘আমি তোমাদেরকে এমন কোন বিষয়ের সংবাদ দিব যে, তোমাদের কারো উপরে যখন দুনিয়াবী কোন কষ্ট-ক্লেশ অথবা বালা-মুছীবত নাযিল হয়, তখন তার মাধ্যমে দো‘আ করলে তা দূরীভূত হয়। তাহ’ল মাছ ওয়ালা ইউনুস (আঃ)-এর দো‘আ- ‘লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাক ইন্নী কুনতু মিনায যলেমীন’।
(ছহীহুল জামে‘ হা/২৬০৫; ছহীহাহ হা/১৭৪৪।)
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
دَعْوَةُ ذِى النُّوْنِ إِذْ دَعَا وَهُوَ فِىْ بَطْنِ الْحُوْتِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّى كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ. فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِىْ شَىْءٍ قَطُّ إِلاَّ اسْتَجَابَ اللهُ لَهُ.
‘যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দো‘আ করেছিলেন তা হ’ল- ‘তুমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয়ই যালিমদের দলভুক্ত’ (আম্বিয়া ২১/৮৭)। যে কোন মুসলিম কোন বিষয়ে কখনো এর মাধ্যমে দো‘আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা তার দো‘আ কবুল করেন’।
(তিরমিযী হা/৩৫০৫; মিশকাত হা/২২৯২; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৮৩।)
খ.
اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ
‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুনূনি ওয়াল জুযা-মি ওয়া মিন সাইয়িইল আসক্বা-ম’। (হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেতরোগ, মস্তিষ্ক বিকৃতি, কুষ্ঠ এবং সব ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি হ’তে)।
(আবূদাঊদ হা/১৫৫৪; মিশকাত হা/২৪৭০।)
গ. أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
‘আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তাম্মা-তি মিন শার্রি মা খালাক্ব’ (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির যাবতীয় অনিষ্টকারিতা হ’তে পানাহ চাচ্ছি)।(মুসলিম হা/২৭০৮; মিশকাত হা/২৪২২।)