আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
639 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
edited by
আমি ২৫ বছর বয়সের একজন ছেলে, এই বছর জানুয়ারিতে এক পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছি। ১ বছর হবে দ্বীনের পথে এসেছি, আলহামদুলিল্লাহ। নিজেকে দ্বীনের পথে ঠিক রাখা অর্থাৎ গুনাহ থেকে বেচে থাকার জন্য বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম। এদিকে আমার বাবা প্রায় বেদ্বীন একজন ব্যক্তি। হারাম-হালাল এর তোয়াক্কা করে না, শুধু সমাজে গর্বভরে চলাফেরা করার জন্য যা দরকার করেন। টাকার সমস্যার মিথ্যা অযুহাত দেখিয়ে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে না। অথচ আমাদের তিন তালা বাড়ি আছে, ব্যবসা আছে। আমি নিজেও অনলাইনে ব্যবসা করি। আবার বিয়ে দিতে চাইলেও আমার নিজের পছন্দমত মেয়েকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অযুহাতে কতগুলো দ্বীনদার মেয়েকে তিনি রিজেক্ট করেছেন। কয়েকমাস ধরে তিনি খুজে পান না মেয়ে। আমি কোন রিলেশন করি না। শুধু দ্বীনের খাতিরে একজন দ্বীনদার মেয়ে বিয়ে করতে চাচ্ছি। এদিকে আমার প্রতিনিয়ত নফসের সাথে যুদ্ধ করে চলতে হচ্ছে, এবং কষ্টও হচ্ছে খুব। অনেক সময় ঠিকমত পারিও না। নিয়মত রোজা রাখছি, আমল করার চেষ্টা করছি, ইলম অর্জন করার চেষ্টায় আছি। তারপরও খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে পুরোপুরি ঠিক থাকা। সেক্ষেত্রে আমার কি প্রয়োজন বলে আপনার মনে হয়??? উল্লেখ্য যে কিছুদিন আগে এক দ্বীনদার মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়, কিন্তু ক্ষুদ্র অযুহাত দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করতে দিলো না। এখন আমি কি বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে কি করা উচিত????

1 Answer

0 votes
by (590,550 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহাম।
সমাধানঃ-
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন- 
لا طاعة في معصية إنما الطاعة في المعروف
গোনাহের কাজে কারো বশ্যতা স্বীকার করা যাবে না।(শরীয়ত যাদের বিধিনিষেধ মেনে চলার আদেশ দিয়েছে তাদের) আদেশ শুধুমাত্র বৈধ ও নেকীর কাজে মানা যাবে।(সহীহ বুখারী-৭২৫৭
সহীহ মুসলিম-১৮৪০)

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
আল্লাহর অবাধ্যতায় কারো বিধিনিষেধ কে মান্য করা যাবে না।(মুসনাদে আহমাদ-১০৯৮)

চার মাযহাবের গ্রহণযোগ্য ফেকহী গ্রন্থ 'আল-মা'সুআতুল ফেকহীয়্যায়(২৮/৩২৭)' বর্ণিত রয়েছে,

"طاعة المخلوقين - ممّن تجب طاعتهم – كالوالدين ، والزّوج ، وولاة الأمر : فإنّ وجوب طاعتهم مقيّد بأن لا يكون في معصية ، إذ لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق" انتهى
শরীয়ত কর্তৃক যাদের বিধিনিষেধের অনুসরণ করা ওয়াজিব।যেমনঃ মাতাপিতা,স্বামী,এবং রাষ্ট্রীয় প্রধান বা তাদের আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ।তাদের বিধিনিষেধ আমলে নেয়া তখনই ওয়াজিব যখন তা শরীয়ত বিরোধী হবে না।কেননা 'সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীতে কোনো সৃষ্টজীবের অনুসরণ করা যায় না'(মর্মে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে)

 
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا ، وَلِحَسَبِهَا ، وَلِجَمَالِهَا ، وَلِدِينِهَا ، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ) 
চারটি জিনিস দেখে মহিলাকে সাধারণত বিয়ে করা হয়,(১)সম্পদ(২)বংশ(৩)সুন্দর্য্য (৪)দ্বীনদারী
তুমি দ্বীনদারীকে অগ্রাধিকার দাও।{যদি তা না করো তবে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে(تَرِبَتْ يَدَاكَ এর অনেক ব্যাখার একটি ব্যাখা)}(সহীহ বুখারী-৪৮০২,সহীহ মুসলিম-১৪৬৬)


সম্মাণিত দ্বীনী ভাই!
আপনি আপনার ফ্যমিলি র সদস্যবৃন্দকে বুঝাতে থাকুন এবং আল্লাহর কাছে দু'আ করতে থাকুন।বলা তো যায় না কখন আপনার দু'আ আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যাবে।

দ্বীনদার জীবনসঙ্গী-ই জীবনের অনেক বড় পাওয়া।নিজে নিজে পাত্রী দেখে বিয়ে করাটা যদিও জায়েয।তবে তা অদ্য কোনো মুসলিমের জন্য সমুচিত হবে না।এক্ষেত্রে লজ্জার বিষয়টাও বিবেচ্য।হ্যা আপনার পিতা যেরকম পাত্রীর কথা বলছেন,সেরকম পাত্রীকে বিয়ে করাটাও আবার নাজায়েয না। কেননা শুধুমাত্র ঈমান এবং আক্বিদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ থাকলেই তার সাথে বিয়েশাদী করা যায়।যদিও তা উত্তমতা ও কল্যাণের খেলাফ।হেকমত এবং নরম ভাষায় তাদের বুঝাতে থাকুন।

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 
ﺍﺩْﻉُ ﺇِﻟِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺑِﺎﻟْﺤِﻜْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻮْﻋِﻈَﺔِ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔِ ﻭَﺟَﺎﺩِﻟْﻬُﻢ ﺑِﺎﻟَّﺘِﻲ ﻫِﻲَ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻫُﻮَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﻤَﻦ ﺿَﻞَّ ﻋَﻦ ﺳَﺒِﻴﻠِﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﺎﻟْﻤُﻬْﺘَﺪِﻳﻦَ
আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন হেকমত তথা জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও নরমভাবে উপদেশ শুনিয়ে, এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।(সূরা নাহল-১২৫)

আপনার বা আপনার পরিচিত কারো যদি কোনো দ্বীনদার পাত্র সম্পর্কে জানা থাকে তবে সেই পাত্রকে আপনার ফ্যামিলির নিকট পাঠান।এবং কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দু'আ করতে থাকুন।আল্লাহ অবশ্যই শুনবেন।

আল্লাহ তা'আলা বলেন
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻜُﻢُ ﺍﺩْﻋُﻮﻧِﻲ ﺃَﺳْﺘَﺠِﺐْ ﻟَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺴْﺘَﻜْﺒِﺮُﻭﻥَ ﻋَﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩَﺗِﻲ ﺳَﻴَﺪْﺧُﻠُﻮﻥَ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺩَﺍﺧِﺮِﻳﻦَ
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।(সূরা আল-মু'মিন-৬০)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
আপনার পিতা ও পরিবারবর্গ কে বুঝাতে যদি আপনি অক্ষম হন,সব রকম চেষ্টা-প্রচেষ্টা আপনার ব্যর্থ হয়,তাহলে আপনি নিজে নিজে বিয়ে করে নিতে পারেন।এক্ষেত্রে আপনার কোনো গোনাহ হবে না।কেননা ঈমান বাঁচানো এবং বাঁচানোর চেষ্টা করা ফরয।এক্ষেত্রে মাতপিতার সন্তুষ্টির অর্জন করা শরীয়তে প্রয়োজনীয় নয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...