শরীয়তের বিধান হলো ওয়াতনে আসলী (স্থায়ী নিবাস) তে এক দিনের জন্য গেলেও পুরো নামাজ পড়তে হবে।
ব্যক্তি নিজের স্থায়ী নিবাসে গেলে কখনো মুসাফির হয়না। স্থায়ী নিবাস বলে এমন স্থানকে-“যেখানে ব্যক্তির বসবাসের জন্য স্থায়ী গৃহ থাকে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে যেখানে সর্বদার জন্য থাকার নিবাস হয়”।
শরীয়তের বিধান হলো কোন স্থানে গিয়ে সেখানে যদি কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত না করে, তাহলেও কসর পড়তে হবে। বেশি দিন থাকার নিয়ত করলে কসর করতে পারবে না।
৭৮ কিলোমিটার হল সফরের দূরত্ব। এর কম নয়। সুতরাং কেউ যদি ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের সফরের নিয়তে বের হয়,সেখানে গিয়ে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করে,তাহলেই কেবল সেই ব্যক্তি কসর পড়বে।
চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত কর আদায় করবে।
এরচে’কম দূরত্বের সফরের জন্য কসর পড়া জায়েজ নয়।
আয়েশা রাযি. বলেন,
فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ، فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ، وَزِيدَ فِي صَلَاةِ الْحَضَرِ
মুকিম ও মুসাফির অবস্থায় নামায দু’দু রাক’আত ফরজ করা হয়েছিল। পরে সফরের নামায ঠিক রাখা হল কিন্তু মুকিমের নামাযে বৃদ্ধি করা হল। (বুখারী ১০৪০ মুসলিম ৬৮৫)
অপর হাদিসে এসেছে,
عِيسَى بْنُ حَفْصِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى طَرِيقٍ – قَالَ – فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَقْبَلَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ مَا يَصْنَعُ هَؤُلاَءِ قُلْتُ يُسَبِّحُونَ. قَالَ لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلاَتِى يَا ابْنَ أَخِى إِنِّى صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ – ﷺ – فِى السَّفَرِ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ عُمَرَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَصَحِبْتُ عُثْمَانَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
ইবনে উমর রাযি. বলেন, নিশ্চয় আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি আবু বকর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও আমরণ সফরে ২ রাকাতই পড়েছেন। আমি উমর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি উসমান রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (মুসলিম ১৬১১)
.
★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে বিয়ের পর সফরের দূরত্ব অতিক্রম করে শশুর বাড়িতে গিয়ে ৭ দিন থাকার সময়েই সে যদি স্থায়ী ভাবে এই শশুর বাড়িতে থাকার নিয়ত করে,সেক্ষেত্রে সেখানে গিয়ে পূর্ণ নামাজ আদায় করবে।
কসর আদায় করবেনা।
কেননা শশুর বাড়িতে সে মুকিম,এটিই তার ওয়াতনে আসলি।
আর যদি সে সেই সময় পর্যন্ত শশুর বাড়িতে স্থায়ী ভাবে থাকার নিয়ত না করে থাকে,বরং নিজ বাবার বাসাতেই বা অন্যত্রে স্থায়ী ভাবে থাকার নিয়ত করে, এরপর পরবর্তী বার শশুর বাড়িতে যাওয়ার পর শশুর বাড়িতে স্থায়ী ভাবে থাকার নিয়ত করে,সেক্ষেত্রে আগের সেই ৭ দিন থাকার সময় কসরের নামাজ আদায় করবে।
কেননা এ সময়ে সে শশুর বাড়িতে মুসাফির বলে বিবেচিত হবে।
তখনও সেটি তার ওয়াতনে আসলি হয়নি।
সফর অবস্থায় যদি আসরের ওয়াক্ত, মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার শংকা হয়,সেক্ষেত্রে যানবাহনেই সে নামাজ আদায় করবে।
অযুর পানি বা তায়াম্মুমের কোনো বস্তুর খোজ পাওয়া সত্ত্বেও সে সময়ে সালাত আদায় না করে গন্তব্যে পৌঁছে সালাত আদায় করলে গুনাহগার হবে।