ইমান সম্পর্কে মারাত্মক ওসওয়াসা

Question

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

শায়েখ,

১।কেউ যদি আল্লাহর ভয়ে হারাম উপায় বাদ দিয়ে হালাল উপায়ে  রাসুল সঃ এর তরিকায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তাহলে সে সওয়াব পাবে।এখন প্রশ্ন হলো সে তো তার চাহিদা পূরন করার জন্য স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে তাহলে কি এটা রিয়া হবে ছোট শিরক হবে যেহেতু সে তার এই চাহিদা পূরনের উদ্দেশ্যে করছে। তাহলে আমি কিভাবে এবং কি নিয়ত করব?

২।কোন গাইরে মাহারাম পুরুষ যদি কোন গাইরে মাহারাম মহিলার দিকে তাকায় বা কথা বলে সেটা দেখে যদি কেউর রাগ হয় তার মনে যদি লাগে,অস্থিরতা অনুভব হয় বিশেষ করে যদি কোন কাছের মানুষ যদি এরকম করে তাহলে যদি কষ্ট লাগে রাগ হয় তার মনে লাগে কিন্তু সে আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের কে মানে গাইরে মাহারাম পুরুষ এবং গাইরে মাহারাম মহিলাকে আলাদা করার চেষ্টা করে কিন্তু তার তো এগুলো দেখে রাগ হয় মনে লাগে, কষ্ট লাগে অস্থিরতা অনুভব হয় তাহলে সেটা কি রিয়া হবে  সে কি করবে কিভাবে নিয়ত করবে?

৩।মনেকরেন কেউ তার স্ত্রীকে নিয়ে হাটতে বেরিয়েছে/ঘুরতে বেরিয়েছে বা বাসে আছে  এখন তার স্ত্রীকে সে এভাবে রাখছে যে কোন গাইরে মাহারাম পুরুষ যিনি তার সাথে কথা বলতে না পারে তাকে দেখতে না পারে তাকে স্পর্শ করতে না পারে কারন এসব করলে তার ( সেই পুরুষের) কষ্ট লাগে, খারাপ লাগে, মনে লাগে, অস্থিরতা অনুভব হয় এখন আর কিভাবে যে আপনাকে বলব একজন পর পুরুষ যদি একজন অন্য একজনের স্ত্রীকে স্পর্শ করে তাহলে যার স্ত্রীকে স্পর্শ করছে তার কেমন লাগতে পারে? এখন সেই পুরুষ চাচ্ছে আল্লাহকে খুশি করার জন্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার (সেই পুরুষের) স্ত্রীর সাথে যাতে এরকম সমস্যা না হয় সেই চেষ্টা করার জন্য। কিন্তু তার যে মনে রাগ, খারাপ লাগে,অস্থিরতা অনুভব হয় যদি কেউ তার স্ত্রীকে স্পর্শ করে তাহলে কি এটা রিয়া হবে কারণ সে আল্লাহকে খুশি করতে চাচ্ছে কিন্তু তার যে এসব মনে হচ্ছে যে তার কষ্ট লাগে তার অন্তরে লাগে তার অস্থিরতা অনুভব হয় এখন সে কি করবে কিভাবে নিয়ত করবে?তার কি রিয়া হচ্ছে?
আর এইভাবে স্ত্রীকে ভালোবাসা কি বড় শিরক?

৪।মসজিদে আযান দিছে এখন এমন জায়গায় সে আছে যে সেখানে খারাপ লোক আছে এখন সে যদি জামাতে সলাত আদায়ের জন্য যায় তাহলে তার স্ত্রী বা মেয়ে বা মা তাদের বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশংখা আছে তাহলে সে কি করবে জামাতে সলাত আদায়ের জন্য যাবে নাকি থেকে যাবে আর যদি এমন হয় ওয়াক্ত শেষ হবার সম্ভাবনা আছে তাহলে? আর এরকম ভালোবাসা কি বড় শিরক?আর ভালোবাসার শিরক সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

৫।কেউ যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য রাসুল সঃ এর অনুসরণ জুম'য়ার দিন সুগন্ধি মেখে সুন্দর জামা গায় দিয়ে যদি কেউ মসজিদে যায় তাহলে সে সওয়াব পাবে। এখন যদি কেউ একটু সুন্দর দেখাক বা মানুষ দেখে সুন্দর বলবে ভালো বলবে তাই জামা পরে তাহলে কি রিয়া হবে?

৬।কেউ বড় কুফুরি করছে সে এখন কালেমা শাহাদাৎ পড়ে নতুন করে ইসলাম গ্রহণ করবে এবং তওবা করবে। কিন্তু তার সামনে এমন পরিস্থিতি যে তার সামনে কেউ একজনকে ধর্ষণ করতে চাচ্ছে বা খুন করতে চাচ্ছে তাহলে সে কি করবে? কালেমায় শাহাদাৎ পড়ে আল্লাহর কাছে তওবা করে নিবে কারণ কার কখন মৃত্যু আসে একমাত্র আল্লাহ জানে নাকি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করব?

৭।এটা একটু ভিন্ন
কেউ বড় কুফুরি বা শিরক করছে কি না সন্দেহে আছে তাই সে এখন কালেমা শাহাদাৎ পড়ে নতুন করে ইসলাম গ্রহণ করবে এবং তওবা করবে। কিন্তু তার সামনে এমন পরিস্থিতি যে তার সামনে কেউ একজনকে ধর্ষণ করতে চাচ্ছে বা খুন করতে চাচ্ছে তাহলে সে কি করবে? কালেমায় শাহাদাৎ পড়ে আল্লাহর কাছে তওবা করে নিবে কারণ কার কখন মৃত্যু আসে একমাত্র আল্লাহ জানে নাকি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করব?

৮।কেউ যদি বলে শিরক কুফরি করতে তা না হলে তারা সেই ব্যাক্তির স্ত্রী, বাবা,মা,সন্তনদের খুন করবে সেই ব্যাক্তি যদি শিরক কুফরি না করে আর খুনিরা যদি তাদেরকে খুন করে তাহলে কি সেই ব্যাক্তির কি গুনাহ হবে?

৯।সন্দেহের কারনে যদি ইমান নবায়ন করার জন্য কালেমা শাহাদাৎ পড়ার সময় এবং আল্লাহর কাছে তওবা করার সময় যদি পিতা মাতা ডাকে ঠিক তখনকার জন্য যদি আমি কালেমা শাহাদাৎ না পড়ে আল্লাহর কাছে তওবা না চলে যাই তাহলে কি ইমান নষ্ট হয়ে যাবে?

১০।একটু ভিন্ন

সন্দেহের কারনে যদি ইমান নবায়ন করার জন্য কালেমা শাহাদাৎ পড়ার সময় এবং আল্লাহর কাছে তওবা করার সময় যদি কোন কারনে বা এমনিতেই উঠে যায় এবং তখনকার জন্য যদি আমি কালেমা শাহাদাৎ না পড়ে আল্লাহর কাছে তওবা না চলে যাই তাহলে কি ইমান নষ্ট হয়ে যাবে?

১১।এগুলো প্রশ্ন করার কারনে কি ইমানে সমস্যা হবে?

Answer 1

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

জবাবঃ- 

(০১)

হাদিস শরিফে এসেছে,

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَسْمَاءَ الضُّبَعِيُّ، حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا وَاصِلٌ، مَوْلَى أَبِي عُيَيْنَةَ عَنْ يَحْيَى بْنِ عُقَيْلٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمَرَ، عَنْ أَبِي الأَسْوَدِ الدِّيلِيِّ، عَنْ أَبِي، ذَرٍّ أَنَّ نَاسًا، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالُوا لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالأُجُورِ يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ . قَالَ " أَوَلَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ مَا تَصَّدَّقُونَ إِنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةً وَكُلِّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ قَالَ " أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ " .

‘আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা.)-এর সাহাবীদের কয়েকজন রাসূল (সা.)-কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বিত্তবানরা সওয়াব নিয়ে যাচ্ছে তারা আমাদের মত নামাজ আদায় করেন, আমাদের মত সিয়াম সাধনা করেন এবং তারা নিজেদের ধন সম্পদ হতে কিছু দান করে থাকেন। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য কী আল্লাহ তাআলা সদকা করার ব্যবস্থা করেননি? প্রতিটি তাসবীহ সদকা, প্রতিটি তাকবীর সদকা, প্রতিটি তাহমীদ সদকা, প্রতিটি তাহলীল সদকা, সৎকাজের আদেশ দেয়া, অসৎকাজ হতে বিরত রাখা সদকা এবং স্ত্রীর সঙ্গে মিলনও সদকা। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেউ যদি স্ত্রী সংগম করে এতেও কি সে সওয়াব পাবে? তিনি বললেন তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার পাপ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সওয়াব পাবে।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২০১ ইফাঃ]

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে রিয়া বা ছোট শিরক হবেনা।

এক্ষেত্রে আপনি গুনাহ থেকে বাঁচা, অসৎ কাজ হতে বিরত থাকার উদ্দেশ্য নিয়ে স্ত্রী সহবাস করবেন।

(০২)

এতে রিয়া হবেনা।

এক্ষেত্রে অন্যায় কাজে বাধা প্রদানের নিয়ত করবে।

(০৩)

এক্ষেত্রে রিয়া বা শিরক হবেনা।

সে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করানোর জন্যই এমন করছে,এটি নিয়ত করবে,পরবর্তীতে মানবিক কারনে, আত্মমর্যাদাবোধের কারনে উপরোক্ত বিষয় মাথায় আসলেও সমস্যা নেই।

এটি স্বাভাবিক।

(০৪)

এক্ষেত্রে তাকে নিরাপদ স্থানে রেখে মসজিদে যেতে হবে।

একেবারেই কোনো উপায় না পেলে মসজিদের কাছে নিয়ে গিয়ে কোথায় রাখবে।

প্রশ্নে উল্লেখিত কাজ শিরক নয়। 

★এরকম ভালোবাসায় কোনো শিরক হয়না।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

https://ifatwa.info/16411/

(০৫)

হ্যাঁ, এটি সঠিক।

(০৬)

এক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে দ্রুত কয়েক সেকেন্ড এ কালেমায়ে শাহাদাৎ পাঠ করবে।

এটি তার জন্য উক্ত ব্যাক্তিকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে সমস্যাকর হবেনা।

প্রয়োজনে সাহায্যের জন্য যেতে যেতে কালেমা পাঠ করবে। 

(০৭)

এক্ষেত্রেও পরামর্শ থাকবে দ্রুত কয়েক সেকেন্ড এ কালেমায়ে শাহাদাৎ পাঠ করবে।

এটি তার জন্য উক্ত ব্যাক্তিকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে সমস্যাকর হবেনা।

প্রয়োজনে সাহায্যের জন্য যেতে যেতে কালেমা পাঠ করবে। 

(০৮)

সেই ব্যাক্তির গুনাহ হবেনা।

তবে তার জন্য এক্ষেত্রে অনুমতি ছিলো,মনে পূর্ণ ঈমান ঠিক রেখে বাহ্যিক ভাকে শিরক/কুফরি করার।

(০৯)

তাহলে ইমান নষ্ট হয়ে যাবেনা।

(১০)

এক্ষেত্রেও ইমান নষ্ট হয়ে যাবেনা।

(১১)

এগুলো প্রশ্ন করার কারনে ঈমানে সমস্যা হবেনা।