আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
213 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (7 points)

আসসালামু আলাইকুম,

হযরত, আশা করি আল্লাহ্‌র ফযলে ভালো আছেন। আমার দুইটি প্রশ্ন ছিল। নিচে উল্লেখ করছি। গতকালকে এই প্রশ্নটা করেছিলাম। কিন্তু পরে খেয়াল করলাম পোস্ট হয়নাই। তাই আবার লিখলাম। মেহেরবানী করে জানালে খুব উপকৃত হব। 

১. ফাতাওয়ায়ে মাদানিয়াতে দেখলাম এক প্রশ্নের উত্তরে লিখা হয়েছে, ওসওয়াসা গ্রস্থ ব্যক্তির মন বা মস্তিস্ক যদি ওসওয়াসা দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে যায় এবং কোন মুসলমান ডাক্তার এটা সত্যায়ন করে তাহলে সেই ব্যক্তির তালাক কার্যকর হয় না। আমার প্রশ্ন হল, এইখানে কি ধরনের ওসওয়াসার কথা বলা হয়েছে?

২. এক ব্যক্তির হালত এরকম যে, সবসময় মনে হয় সে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেবে। এই মনে হয় মুখ দিয়ে তালাক শব্দ বের হয়ে যাবে। অনেক সময় এমন হয় কারণ ছাড়াই বলে ফেলতে ইচ্ছে করে। কিছু সময় কল্পনার মাঝে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করতে করতে তালাক বলে দেয়। মুখে বলে না যদিও। স্ত্রীর সাথে রাগারাগি হলেই মনে হয় তালাক দিয়ে দেবে। অনেক কষ্টে মুখ আটকে রাখে সেসময়। এই ব্যক্তির আরও কিছু ওসওয়াসার সমস্যা আছে। যেমনঃ রাস্তায় যদি কোন লোককে অপছন্দ হয় তাহলে তাকে নিয়ে কল্পনা করা শুরু করে দেয়। কল্পনার মাঝে সেই লোকটাকে ধরে পিটায় অথবা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। রাতের বেলা বা ফজরের সময় রাস্তায় পিছন পিছন কেউ হাঁটলে মনে হয় এই আমাকে পিছন থেকে এসে চাকু মেরে দিবে। ঘরের মাঝে বা বাড়িতে একা থাকলে মনে হয় এই হয়ত কোন ভয়ানক জীন সামনে চলে আসবে। বাথরুমে রাতের বেলা গেলে খুব জীনের ভয় হয়। তাছাড়া মাঝে মাঝে ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে জীন তাকে ভয় দেখাচ্ছে কিংবা ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইছে। এই ব্যক্তি মাঝে মাঝে খুব রেগে যায় এবং রাগ বেশি হলে জিনিসপাতি ভাঙচুর করে। আবার অল্পতেই ইমোশনাল হয়ে কান্নাও করে। এছাড়া সব স্বাভাবিক। এই ব্যক্তি যদি কখনও রাগের বশে তিন তালাক/তালাক শব্দ বলে ফেলে তাহলে কি তার তালাক কার্যকর হবে?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠّﻢ ﻗﺎﻝ : ( ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘُﻮﻝَ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﺭَﺑَّﻚَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﻌِﺬْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟْﻴَﻨْﺘَﻪِ ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻣﺴﻠﻢ : ( ﺁﻣﻨﺖ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻠﻪ)

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,শয়তান তোমাদের কারো নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, এটা কে বানিয়েছে?ওটা কে বানিয়েছে?শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে, খোদা-কে বানিয়েছে? যখন এমন অবস্থায় কেউ পতিত হবে,সে যেন আল্লাহর নিকট পানাহ চায়।এবং সাথে সাথে সে যেন উক্ত বিষয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকে।এক বর্ণনায় এসেছে সে যেন আ'মানতু বিল্লাহি ওয়া রুসুলিহি পড়ে নেয়।(সহীহ বোখারী-৩১০২,সহীহ মুসলিম-১৩৪)

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ( ﺟَﺎﺀَ ﻧَﺎﺱٌ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺴَﺄَﻟُﻮﻩُ ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﺠِﺪُ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻨَﺎ ﻣَﺎ ﻳَﺘَﻌَﺎﻇَﻢُ ﺃَﺣَﺪُﻧَﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﻜَﻠَّﻢَ ﺑِﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻗَﺪْ ﻭَﺟَﺪْﺗُﻤُﻮﻩُ ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻧَﻌَﻢْ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺫَﺍﻙَ ﺻَﺮِﻳﺢُ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ )

কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন,আমাদের অন্তরে অনেক সময় মন্দ চিন্তাভাবনা চলে আসে।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, এটা কি সম্ভব? তারা বলল, জ্বী হ্যা। রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, মাঝেমধ্যে এমন সন্দেহ মনে উঁকি দেয়াই হল, কামিল ঈমানের পরিচায়ক। (সহীহ মুসলিম-১৩২)

ইমাম নববী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,
ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺃﻥ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﻮﺳﻮﺱ ﻟﻤﻦ ﺃﻳﺲ ﻣﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻓﻴﻨﻜﺪ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ؛ ﻟﻌﺠﺰﻩ ﻋﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ : ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺄﺗﻴﻪ ﻣﻦ ﺣﻴﺚ ﺷﺎﺀ ، ﻭﻻ ﻳﻘﺘﺼﺮ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ، ﺑﻞ ﻳﺘﻼﻋﺐ ﺑﻪ ﻛﻴﻒ ﺃﺭﺍﺩ ، ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : ﺳﺒﺐ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ : ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﺃﻭ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ﻋﻼﻣﺔ ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﺧﺘﻴﺎﺭ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻋﻴﺎﺽ ...

অর্থাৎ শয়তান সে ব্যক্তিকেই প্ররোচনা দেয়, যাকে গোমরাহ করতে সে নিরাশ হয়ে যায়। সে কাউকে গোমরাহ করতে নিরাশ হয়ে গেলে সর্বশেষে সে মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে চায়।
له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان

‘ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. জ্বী তাদের ফাতওয়া সঠিক। তালাকের ওয়াসওয়াসাকে পরিহার করতে হবে। কিভাবে পরিহার করা যাবে,সেটা হল, যখনই মনে এরকম ওয়াসওয়াসা আসবে, সাথে সাথেই মনকে বলবেন, আমি যেহেতু ওয়াসওয়াসার রোগী, তাই আমার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুমে শীতিলতা রয়েছে। আমি অন্য দশজনের মত নই। কেননা ওয়াসওয়াসা রোগি কাউকে হত্যা করলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে কেসাস আসেনা। ওয়াসওয়াসার রোগী সারাদিন কুফরি বাক্য উচ্ছারণ করলেও সে কাফির হয়না।বরং তার ঈমান বহাল থাকে।
যদি ওয়াসওয়াসা থেকে আপনি বের না হন,তাহলে আপনার ভবিষ্যত আপনি নিজেই নষ্ট করবেন।ওয়াসওয়াসা থেকে বের হওয়ার একমাত্র মাধ্যম হল, এই চিন্তাকে পরিহার করে ভিন্ন চিন্তা গ্রহণ করা, লোকদের সাথে হাশিখুশিতে থাকা।
প্রশ্নেল্লিখিত সমস্যাগুলি হওয়ার মূল কারণ হলো ওয়াসওয়াসা । প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে তালাক হবে না। ওয়াসওয়াসা আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। সে চায় মানুষকে পেরেশান ও অস্থির করে রাখতে যাতে সে আল্লাহ তায়ার ইবাদতে মাশগুল থাকতে না পারে। বিধায় এমন পরিস্থিতিতে আপনি হতাশ হবেন না। বরং ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচতে উপরে উল্লেখিত আমলগুলি করুন এবং মানসিক রোগের কোন ভালো চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা করুন।

কারণ, ওয়াসওয়াসাকে মেডিক্যালের ভাষায় অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসওর্ডার (OCD) বলে, যা সাধারণত ব্রেইনের সেরোটোনিন নামক একটা নিউরোকেমিক্যালের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য হয়ে থাকে। অনেক দিনের শয়তানি ওয়াসওয়াসা এ রোগে পরিনত হয় এবং আক্রান্ত রোগীকে মানসিকভাবে অনেক কষ্ট দিতে থাকে। ইনশাআল্লাহ এ রোগ ৩/৪ মাস মেডিসিন ও কাউন্সিলিং এ ভাল হয়, সাথে আল্লাহর কাছে এ রোগ মুক্তির দোয়া করতে হবে। আশা করি ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনবেন।
২. জ্বী এমন ব্যক্তি ওয়াসওয়াসার রোগী হিসেবে বিবেচিত। তার তালাক কার্যকর হবে না।

(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by
জাযাকাল্লাহ হযরত। কিছু মনে করবেন না। আরেকবার একটু জিজ্ঞাস করছি। উল্লিখিত সুরতের ব্যক্তি যদি রাগের বশে কখনো তিন তালাক শব্দ বলেও ফেলে তাহলেও কি তালাক হয় না?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...