بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
নিজের সন্তানদের
মাঝে ইনসাফ ও সমতা রক্ষা করা মা-বাবার ওপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এটি ইসলামের অনন্য
বিধানও। প্রত্যেক মা-বাবা যেমন কামনা করেন তার সন্তানরা সবাই যেন তার সঙ্গে ভালো আচরণ করে,
অনুরূপভাবে সন্তানরাও চায় তাদের মা-বাবা
তাদের সবার সঙ্গেই ইনসাফ ও সমতা বজায় রাখবেন, তাদেরকে বৈষম্যের শিকার করবেন না। কেননা অসম আচরণে সন্তানদের
অনুভূতিতে আঘাত লাগে, তখন
সন্তানদের একে অন্যের প্রতি দুঃখ, ভালোবাসার স্থলে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মনোভাব স্থান পায়,
পরস্পরের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিবাদ ও অনৈক্য।
তাই সর্বদা মা-বাবাকে সন্তানের মধ্যে আচরণে সমতা রক্ষা
করে চলতে হবে।
হজরত আমের (রহ.)
থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি
নুমান ইবনে বশীরকে (রা.) মিম্বরের ওপর বলতে শুনেছি যে,
আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন
(আমার মাতা) আমরা বিনতে রাওয়াহা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহকে (সা.) সাক্ষী রাখা ব্যতীত আমি এতে সম্মত
নই। তখন তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন,
আমি আমরা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার
পুত্রকে কিছু দান করেছি। ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে।
তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার
সব ছেলেকেই কি এ রকম দিয়েছ? তিনি
বললেন, না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তবে
আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। নুমান (রা.) বলেন,
অতঃপর তিনি ফিরে এসে সেই দানটি ফিরিয়ে
নিলেন। (বুখারি : হাদিস ২৪৪৭)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন,
‘...অতএব এ ব্যাপারে আমাকে সাক্ষী
রেখ না। কারণ আমি জুলুমের সাক্ষী হতে পারি না।’(মুসলিম : হাদিস ৪২৬৯)
এ হাদিস দ্বারা
এটাই প্রমাণিত হয় যে, সন্তানদের
কোনো কিছু দেওয়ার ক্ষেত্রে ইনসাফ ও সমতা রক্ষা করা আবশ্যক। তাদের মাঝে বৈষম্য করা হারাম।
পারিবারিক জীবনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় হাদিসটির গুরুত্ব অপরিসীম। এ হাদিসটি পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা
বজায় রাখার এক বিরাট উদাহরণ। অতএব স্নেহের আতিশয্যে কোনো সন্তানের প্রতি পক্ষপাতমূলক
আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়, বরং
তা ইনসাফের পরিপন্থি। তাই মা-বাবা যদি তাদের জীবদ্দশায় সন্তানদের মাঝে টাকা-পয়সা,
কাপড়-চোপড় অথবা খাদ্যবস্তু বণ্টন করেন
তবে সে ক্ষেত্রে সবার মধ্যে সমতা রক্ষা করা জরুরি। মেয়েকে সে পরিমাণ দেবে,
যে পরিমাণে ছেলেকে দিয়েছে। ছোট সন্তানকে
সেই পরিমাণ দেবে যে পরিমাণ বড় সন্তানকে দিয়েছে। মা-বাবা যখন প্রয়োজনের বাইরে অথবা খুশি
হয়ে সন্তানদের কিছু দেবে সে ক্ষেত্রেও এ সমতা রক্ষা করা আবশ্যক। যেমন,
ঈদের সময় ঈদের বকশিশ অথবা সফর থেকে ফিরে
এসে সন্তানদের হাদিয়া দেওয়া ইত্যাদি। তবে প্রয়োজনের বিষয়টি ভিন্ন।
মা-বাবা যদি প্রয়োজনে
কোনো সন্তানের জন্য কিছু ব্যয় করেন যেমন, অসুস্থতার জন্য খরচ করছেন,
কারও শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যয় করছেন,
ছেলে অথবা মেয়ে কেউ সফরে যাচ্ছে,
কারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খরচ কম,
কারও বেশি,
কারও সফর ছোট,
কারও সফর বড়,
কারও সফরে বেশি টাকার প্রয়োজন আবার কার
কম, এভাবে
প্রয়োজনের সময় সন্তানদের জন্য ব্যয়ের ক্ষেত্রে কম-বেশি করার মধ্যে কোনো গুনাহ নেই।
বরং যার যতটুকু প্রয়োজন তাকে ততটুকু দিতে পারবে।
অন্য হাদিসে এসেছে,
জনৈক আনসারী সাহাবিকে রাসুল (সা.) ডাকলেন।
ইতোমধ্যে ওই সাহাবির এক পুত্রসন্তান তার কাছে এলো। তিনি তাকে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে
নিলেন এবং কোলে বসালেন। কিছুক্ষণ পর তার এক কন্যাসন্তানও সেখানে উপস্থিত হলো। তিনি
তার হাত ধরে নিজের কাছে বসালেন। এটি লক্ষ করে রাসুল (সা.) বললেন,
উভয় সন্তানের প্রতি তোমার আচরণ অভিন্ন
হওয়া উচিত ছিল। তোমরা নিজেদের সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। এমনকি চুমু দেওয়ার ক্ষেত্রেও। (মুসান্নাফ আবদুর
রাযযাক : হাদিস ১৬৫০১)
এ হাদিস থেকে বুঝে
আসে যে, সন্তানদেরকে
কোনো কিছু দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন সমতা রক্ষা করা আবশ্যক তদ্রুপ ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রেও সমতা রক্ষা করা আবশ্যক। যদিও ভালোবাসা ও মহব্বতের সম্পর্ক
হলো অন্তরের সঙ্গে। এতে মানুষের ইচ্ছার দখল নেই। এ জন্য এ ক্ষেত্রে সমতা রক্ষার বিষয়ে
মানুষ বাধ্যও নয়। তবে ভালোবাসা প্রকাশ তো মানুষের ইচ্ছার অধীন। অনেকে এ ক্ষেত্রেও কম-বেশি
করে। যার প্রতি টান বেশি তাকে বেশি বেশি খাওয়ায়, বেশি বেশি ঘুরতে নিয়ে যায়। আর যার প্রতি টান কম তাকে জিজ্ঞাসাও
করে না। এভাবে সে সন্তানদের মাঝে ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে কম-বেশি করে। যেহেতু ভালোবাসা
প্রকাশ করা মানুষের ইচ্ছাধীন বিষয় তাই এ ক্ষেত্রে কম-বেশি করা অন্যায়। সুতরাং কখনও
মা-বাবা কথায় ও কাজে এমন ভাব প্রকাশ করবে না, যাতে সন্তানরা বুঝতে পারে,
মা-বাবা অমুককে বেশি ভালোবাসেন,
অমুককে কম ভালোবাসেন। এমনটা করবে না। যদি
মা-বাবা এমনটা করেন তাহলে তা হবে অন্যায় এবং কেয়ামতের দিন এর জন্য পাকড়াও করা হবে।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
আপনার মায়ের এমন
আচরণ করা জায়েয নেই। এর ফলে তিনি গুনাহগার হবেন। তাকে হেকমতের সাথে ভালোবাসা দিয়ে বুঝানোর
চেষ্টা করবেন। তবে তার সাথে খারাপ আচরণ করবেন না। আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতে থাকুন,
যেন তিনি তাকে দ্বীনের পূর্ণ বুঝ দান করেন।