(০১)
ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া একটি উত্তম আমল।
এটি মহান গুরুত্বপূর্ণ ও বরকত পূর্ণ একটি আমল।
এর গুরুত্বের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে আনুমানিক সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামগন এই কাজ করেছেন।
,
যেহেতু এই দাওয়াত দানের মাধ্যমে মানুষ সরল পথের দিশা পায়। এর মাধ্যমে মানুষকে তার দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তির পথ দেখানো হয়।তাই এটি মহান কাজ,খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক কাজ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
ঐ ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে। আর বলে অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।”[সূরা ফুস্সিলাত, আয়াত: ৩৩]
ইসলামের দিকে আহ্বান করা একটি মর্যাদাপূর্ণ মিশন। এটি নবী-রাসূলদের কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর মিশন এবং তাঁর অনুসারীদের মিশন হচ্ছে- আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “বলুন, এটাই আমার পথ, আমি জেনে-বুঝে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারা। আর আল্লাহ্ কতই না পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।”[সূরা ইউসূফ, আয়াত: ১০৮]
আমভাবে সকল মুসলমান এবং খাসভাবে আলেমসমাজকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
★এটি উম্মাহের উপর ফরজে কিফায়াহ।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম।”[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১০৪]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমার কাছ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছিয়ে দাও”[সহিহ বুখারী (৩৪৬১)]
আল্লাহ্র দিকে দাওয়াত দান একটি মহান মিশন ও গুরু দায়িত্ব। কারণ দাওয়াত মানে- মানুষকে এক আল্লাহ্র ইবাদতের দিকে ডাকা, তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসা, অনিষ্টের জায়গায় কল্যাণ বপন করা, বাতিলের বদলে হক্ককে স্থান করে দেয়া। তাই যিনি দাওয়াত দিবেন তার ইলম, ফিকহ, ধৈর্য, সহনশীলতা, কোমলতা, দয়া, জান-মালের ত্যাগ, নানা পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানুষের আচার-অভ্যাস সম্পর্কে অবগতি ইত্যাদি গুণ থাকা প্রয়োজন।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “আপনি মানুষকে দাওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও উত্তম ওয়াযের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে তর্ক করুন উত্তম পদ্ধতিতে। নিশ্চয় আপনার রব, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি বেশী জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালভাবেই জানেন।”[সূরা নাহল, আয়াত: ১২৫]
আল্লাহ্র দিকে দাওয়ার দেয়ার রয়েছে মহান মর্যাদা ও অফুরন্ত প্রতিদান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোন হেদায়েতের দিকে আহ্বান করে সে ব্যক্তির জন্য রয়েছে এমন প্রতিদান যে প্রতিদান এ হেদায়েতের অনুসরণকারীগণও পাবেন; কিন্তু অনুসারীদের প্রতিদান হতে বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করে সে ব্যক্তির জন্য রয়েছে এমন গুনাহ যে গুনাহ এ ভ্রষ্টতাতে লিপ্ত ব্যক্তিরা পাবে; কিন্তু অনুসারীদের গুনাহ থেকে বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না”[সহিহ মুসলিম (২৬৭৪)]
দাঈ বা দাওয়াত দানকারী দাওয়াত দিতে গিয়ে তর্কের সম্মুখীন হতে পারেন। বিশেষতঃ আহলে কিতাবদের (ইহুদী ও খ্রিস্টান) সাথে। যদি তর্কের পর্যায়ে পৌঁছে যায় সেক্ষেত্রে আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম পন্থায় তর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তম তর্ক হচ্ছে- কোমলতা ও দয়ার মাধ্যমে, ইসলামের বুনিয়াদি দিকগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে, ঠিক যেভাবে নির্মলভাবে কোনরূপ জোর-জবরদস্তি ব্যতিরেকে এ বুনিয়াদগুলো এসেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: “আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া কিতাবীদের সাথে বিতর্ক করবে না, তবে তাদের সাথে করতে পার, যারা তাদের মধ্যে যুলুম করেছে। আর তোমরা বল, আমাদের প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে, তাতে আমরা ঈমান এনেছি। আর আমাদের ইলাহ্ ও তোমাদের ইলাহ্ তো একই। আর আমরা তাঁরই প্রতি মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)।”[সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৬]
মানুষের অন্তরগুলো গড়ে তুলতে এবং সেগুলোকে সত্যের পথে নিয়ে আসতে ধৈর্য ও ত্যাগের প্রয়োজন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন এবং কাফের, ইহুদী ও মুনাফিকদের নির্যাতনের উপর ধৈর্য ধারণ করেছেন। তারা তাঁর সাথে উপহাস করেছে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, কষ্ট দিয়েছে, পাথর ছুড়ে মেরেছে। তারা বলেছে- তিনি যাদুকর, পাগল। তারা তাঁকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বলেছে যে, তিনি কবি বা গণক। এসব কিছুর ওপর তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেছেন, তাঁর ধর্মকে বিজয়ী করেছেন। তাই দাঈর কর্তব্য হচ্ছে- তাঁর অনুসরণ করা। “অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, নিশ্চয় আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য। আর যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয় তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে।”[সূরা রূম, আয়াত: ৬০]
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)
ক,
হেকমতের সাথে আপনি আপনার দাওয়াত কার্যক্রমকে পরিচালিত করবেন।
দাওয়াতের মূলনীতি সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত পাবেন মুফতি জুবাইর সাহেব দাঃবাঃ এর কিতাবে।
ইসলামীক অনলাই মাদ্রাসার অফিস থেকে গ্রন্থগুলো সংগ্রহ করতে পারেন।
খ,
এটি ফরজে কিফায়াহ।
(০২)
এজন্য সর্বাগ্রে যে বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে, সেটা হল, তার প্রতি আপনার মুহব্বত ও ভালবাসা দেখানো।
ইসলামিক অনলাইন মাদরাসার অফিসে যোগাযোগ করলে, মুফতি জুবাইর সাহেব দাঃবাঃ এর লিখিত দাওয়া সম্পর্কে অনেক কিতাব আপনি পেয়ে যাবেন।
বিশেষ করে "হিন্দু ভাইদের দাওয়াত দেয়ার পথ ও পদ্ধতি" "দায়ীর গুনাবলী" গ্রন্থগুলি সংগ্রহ করতে পারেন।
সেগুলো নিজে পড়বেন।
এক্ষেত্রে আপনি দাওয়া দেয়ার পদ্ধতি গুলো জানতে পারবেন।
তাকে হযরত মাওলানা কালিম সিদ্দিকী দাঃবাঃ লিখিত "হিন্দু থেকে মুসলমান" সিরিজের বইগুলো উপহার দিতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আপনি দাওয়ার দেয়ার পদ্ধতি বুঝতে পারবেন।
ইসলামিক অনলাইন মাদরাসার অফিসে যোগাযোগ করে মুফতি জুবাইর সাহেব দাঃবাঃ থেকে প্রয়োজনীয় টিপস নিতে পারেন।
(০৩)
আপনি আগে নিজে এ সংক্রান্ত গ্রন্থ গুলি পড়ুন,দাওয়াত দেয়ার পদ্ধতি ভালোভাবে জানুন।
এর পর অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তাদেরকে নিজ বাসায় এনে দাওয়াত দেয়া যেতে পারে।
নিজ বাসায় নিয়ে এসে বা শুধুমাত্র তাদের জন্য কোনো সেমিনারের আয়োজন করেও তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া যেতে পারে। যখন তাদের সাথে সু-সম্পর্ক হয়ে যাবে, এবং যখন তারা তাদের বাসায় আপনাকে দাওয়াত দিবে।
আস্তে-ধীরে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি হলে দাওয়াত দেয়ার পদ্ধতি গুলো আয়ত্ত করে সেই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিবেন।
মনে রাখবেন, কাউকে দাওয়াত দিলেই যে সে গ্রহণ করে নিবে এমন নয়, বরং আপনার ব্যবহার ও নববী আদর্শ দ্বারা প্রথমে তাদেরকে আকৃষ্ট করতে হবে।তারপরই দাওয়াত ফলপ্রসূ হবে।