ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
* অবিবাহিতদের ক্ষেত্রেঃ
==============
(১) অবিবাহিত অবস্থায় তালাক দিলে কিংবা তালাক নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে বিয়ে করার পর কোনো ধরনের তালাক হবে না। তবে শর্ত করে বললে, যেমন, আমি যদি বিয়ে করি, তাহলে তালাক, বিয়ের পর আমার স্ত্রী অমুক কাজ করলে তালাক,ইত্যাদি,ইত্যাদি।
(২)কেউ যদি অবিবাহিত অবস্থায় বলে যে, "আমার সাথে যার বিয়ে হবে, সে আমার জন্য হারাম", এরূপ কথা মনে ও মুখে বললে বিয়ে করার পর তালাক হবে না।
(৩) অবিবাহিত অবস্থায় তালাক নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে যদি মনে হয় "আমার সাথে যার বিয়ে হবে সে তালাক হবে বা তাকে আমার হারাম মনে হচ্ছে", এরূপ কথায় বিয়ে করার পর তালাক হবে , বা এধরনের কোনো কথা না বুঝে যদি অতিতে কেউ বলে, তাহলে বিয়ের পর তালাক হয়ে যাবে।
(৪) অবিবাহিত অবস্থায় তালাক দেয়ার কোনো ইচ্ছা নেই এবং তালাক নিয়ে মোটেও চিন্তা করতে চায় না কিন্তু তারপরও তালাক হয়ে যাবে এমন কথা বার্তা মাথায় আসলে এবং মুখে বলে ফেললে বিয়ের পর তালাক হবে না।
৫. বিয়ে না করলে যেহেতু কোনো পুরুষ কোনো নারীর মালিকানা পায় না, এজন্য বিয়ের আগে তালাকও হয় না। এই কথা সঠিক। বিয়ের পূর্বে সাধারণ তালাক দেয়া যায় না, তবে শর্তযুক্ত করে তালাক দেয়া যায়।
(৬) বিয়ের পূর্বে শর্ত সাপেক্ষ তালাকের কোনো কথা মনে ও মুখে আসলে বিয়ের পর তালাক হয়ে যাবে। যেমনঃ যার সাথে আমার বিয়ে হবে সে অমুক কাজটি করলে তালাক হয়ে যাবে, সুতরাং স্ত্রী ঐ কাজ করলে তালাক হবে।
(৭) উপরের ১ থেকে ৬ নং প্রশ্নের অনুরুপ চিন্তাভাবনা যদি ওয়াসওয়াসা জনিত কারণে বারংবার মনে আসতে থাকে এবং মুখে বলা হয় তাহলেও বিয়ের পর তালাক হবে না।
(৮) অনেক সময় বন্ধুদের সাথে কেউ মজা করে বলে যে, বিয়ের আগেই বউকে বিধবা করে দিবি নাকি। এই ধরনের কথাতে বিয়ের পর তালাক হয় না।
(৯) অবিবাহিত অবস্থায় কোনো ছেলে যদি বলে সে তার নিজের উপর তালাক বা তিন তালাক নিয়েছে কিংবা এরূপ কথা যদি ওয়াসওয়াসা জনিত কারণে কারোর মাথায় আসে, তাহলে বিয়ের পর তালাক হবেনা।
বিবাহিতদের ক্ষেত্রেঃ
============
(১) বিবাহিত অবস্থায় তালাক দেয়ার মোটেও ইচ্ছা নেই তবুও ওয়াসওয়াসার কারনে মাথায় তালাক সংশ্লিষ্ট কথাবার্তা আসতে থাকলে তালাক হবে না।
(২) স্বামী স্ত্রী কোনো কারণ বশত দুইজন দুইজনকে ধরে আছে, এমতাবস্থায় তালাকের নিয়ত ছাড়া স্ত্রী যদি স্বামীকে বলে "ছেড়ে দাও" এবং স্বামী তালাকের নিয়ত ছাড়া যদি বলে "ছেড়ে দিলাম" তাহলে তালাক হবে না।
(৩) যে ধরনের কথা বললে তালাক হয়ে যায়, সে সকল কথা যদি তালাক না দেয়ার নিয়তেও বলা হয় তাহলে তালাক হবে না। যেমনঃ তুমি তোমার বাবার বাড়ি চলে যাও, তোমাকে আর দরকার নেই, তোমাকে বিয়ে করা ভুল হয়েছে, তুমি আমার জন্য হারাম ইত্যাদি কথাবার্তা যদি তালাক না দেয়ার নিয়তে বলা হয় তাহলে তালাক হবে না বা এই কথা গুলোর মধ্যে কোন কথা দ্বারাই তালাক হবে না।
(৪)তালাক বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য কেউ অন্য মানুষের তালাকের প্রশ্ন ও উত্তর পড়ছে এবং নিজের অজান্তে সেগুলো নিজের বিবাহিত জীবনের সাথে কল্পনা করছে। এমন করলে তালাক হবে না।
(৫) বিয়ের সময় আমাদের দেশে যে কাবিন নামা দেয়া হয় সেখানে ১৮ নং শর্তে স্বামীকে স্ত্রী তালাক দিতে পারবে এমন ধরনের শর্ত দেয়া হয়। এর ফলে ওই কাবিননামাতে স্বামী জেনেবুঝে স্বাক্ষর করলে স্ত্রী তখন তার স্বামীকে তালাক দেয়ার অধিকার পাবে।
(৬)কোনো পুরুষ বিয়ের সময় কাবিননামার সেই ১৮ নং শর্ত বা স্ত্রীকে তালাকের অধিকার আরোপ করার শর্ত মেনে নিল না অর্থাৎ শর্তটি ফাঁকা রেখে বিয়ে করলো এতে স্ত্রী তালাক দেয়ার অধিকার পাবে না।এবং ওই শর্ত ফাঁকা রাখার কারণে বিয়ে হবে।
(৭)আমাদের দেশে কোনো পুরুষ চাইলে সেই ১৮ নং শর্ত বা স্ত্রীকে তালাকের অধিকার আরোপ করার শর্ত বাদ রেখে বা ফাঁকা রেখে বিয়ে করার সুযোগ পাবে।
(৮) কেউ একটি স্ট্যাম্প কাগজ তৈরি করে রাখলো যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি স্বজ্ঞানে এই কাগজে স্বাক্ষর না করছি ততক্ষণ তালাক হবে না। এমন ধরনের কোনো কিছু করে রাখা যাবে।
(৯)বিয়ের পর যদি রাগারাগি করে স্বামী স্ত্রী আলাদা ঘরে বা আলাদা বিছানায় রাত্রিযাপন করে এতে তালাক হবে না।
(১০)বিয়ের পর রাগারাগির কারণে স্বামী যদি স্ত্রীকে শাসন করার জন্য বাপের বাড়ি রেখে আসে বা বাপের বাড়ি যেতে বলে, তালাকের নিয়তে নয় বরং শাসন করার জন্য। এতে তালাক হবে না।
(১১)সাধারণত একজন মানুষ স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে সব সময় হুবুহু স্বাক্ষর হয়তো মিলে না। এক্ষেত্রে বিয়ের কাবিন নামায় স্বাক্ষর করার সময় যদি স্বাক্ষর হুবুহু না মিলে বা যদি এমন হয় যে কেউ প্রায় সময়ই স্বাক্ষর করে ইংরেজিতে কিন্তু বিয়ের কাবিননামা বা নিকাহনামায় স্বাক্ষর করে বাংলাতে।
এমন কিছু করলে বিয়ে সম্পূর্ণ হবে।
(১২)বিবাহের সময় কোনো মেয়ে যদি তালাক দেয়ার অধিকার দাবি করে কিন্তু ছেলে অর্থাৎ স্বামী যদি সে দাবি মেনে না নেয় বা তালাকের অধিকার স্ত্রীকে না দেয় এবং তাদের বিয়েও হয়ে যায়। এক্ষেত্রে স্বামী যেহেতু দাবি মেনে নিল না, সেজন্য সেই বিয়ের কোনো ত্রুটি থাকবে না।
(১৩)কোনো ছেলে বিয়ের পর নিজের উপর নিজে তালাক নিতে পারবে না।বরং স্ত্রীকেই তালাক দিতে হবে।
(১৪)স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্কে তালাক হতে পারে না।