বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
“নামায কায়েম কর” হুবহু শব্দে নির্দেশনাটি পবিত্র কুরআনে বারটি স্থানে এসেছে।আমরা উক্ত আয়াতগুলোর অনুবাদের দিকে খেয়াল করলেই নামায কায়েমের দ্বারা রব্বে কারীম কী উদ্দেশ্য নিয়েছেন তা পরিস্কার হয়ে যাবে।
১জামাতের সাথে নামায কায়েমের নির্দেশঃ
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ [٢:٤٣]
আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। [সূরা বাকারা-৪৩]
২আল্লাহর ভয় নিয়ে নামায কায়েমের আদেশঃ
وَأَنْ أَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَاتَّقُوهُ ۚ وَهُوَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ [٦:٧٢]
এবং তা এই যে, নামায কায়েম কর এবং তাঁকে ভয় কর। তাঁর সামনেই তোমরা একত্রিত হবে। [সূরা আনআম-৭২]
৩সময়মত নামায কায়েমের আদেশঃ
فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۚ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا [٤:١٠٣]
অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড়। নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। [সূরা নিসা-১০৩]
৪নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসরণ করে নামায কায়েম করার আদেশঃ
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ [٢٤:٥٦]
নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও। [সূরা নূর-৫৬]
বাকি আয়াতগুলোতেও কাছাকাছি শব্দে উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকেই জোর দেয়া হয়েছে।তাহলে নামায কায়েম করা বলতে কী বুঝনো হয়েছে তা আয়াতে কারীমা দ্বারাই বুঝা যায়।
তাহল,
(১)ওয়াক্তমত নামায পড়া।
(২)জামাতের সাথে নামায পড়া।
(৩)আল্লাহর ভয় আখেরাতের ভয় নিয়ে নামায পড়া।
(৪)নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের প্রতি খেয়াল করে নামায পড়া।
উপরোক্ত বিষয়গুলো নামায কায়েমের আয়াত সম্বলিত নির্দেশ থেকে প্রতিভাত হয়।সুতরাং বুঝা গেল, কুরআনে কারীমে নামায কায়েম করার অর্থ হল, উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে নামায আদায় করা।
বিখ্যাত তাফসীরকারগণ উপরোক্ত তাফসীরই তাদের তাফসীগ্রন্থগুলোতে এনেছেন।
আবু জা’ফর তাবারী রাহ বলেন,
ذُكِر أن أحبارَ اليهود والمنافقين كانوا يأمرون الناس بإقام الصلاة وإيتاء الزكاة ولا يفعلونه، فأمرهم الله بإقام الصلاة مع المسلمين المصدِّقين بمحمد وبما جاء به، وإيتاء زكاة أموالهم معهم، وأن يخضعوا لله ولرسوله كما خضعوا. (تفسير تبرى، سورة البقرة-43، رقم-838)
বর্ণিত রয়েছে যে, ইহুদী এবং মুনাফিকরা মানুষদেরকে নামাযের আদেশ দিত, যাকাত আদয়ের আদেশ দিত, তবে তারা নিজেরা তা করত না। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা সত্যবাদী মুসলমানদের সাথে নামায আদায়ের নির্দেশ দিলেন। এবং তাদের সাথে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন। এবং আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর সামনে আনুগত্য স্বাীকার করার নির্দেশ দিলেন।
ইমাম তাবারি রাহ বলেন,
يعني بقوله: (وأقيموا الصلاة) ، أدوها بحقوقها الواجبة عليكم فيها (تفسير تبرى، سورة البقرة-83، رقم-1457)
তোমরা নামাযকে তার পরিপূর্ণ হক আদায় পূর্বক আদায় করো।
ইমাম কুরতুবী রাহ বলেন,
وَإِقَامَةُ الصَّلَاةِ أَدَاؤُهَا بِأَرْكَانِهَا وَسُنَنِهَا وَهَيْئَاتِهَا فِي أَوْقَاتِهَا، (تفسير قرطبى، سورة البقرة-1/164)
নামাযকে তার রুকুন এবং সুন্নত ও মুস্তাহাব আদায় পূর্বক আদায় করার নামই হল, ইকামতে সালাত।
(২)আল্লাহ তা'আলা বলেন,
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।(সূরা আনকাবুত-৪৫)
মুফাস্সিরীনে কেরাম উক্ত আয়াতের ব্যখ্যায় বলেন,
{ﻭَﺃَﻗِﻢْ اﻟﺼَّﻼَﺓ ﺇﻥَّ اﻟﺼَّﻼَﺓ ﺗَﻨْﻬَﻰ ﻋَﻦْ اﻟْﻔَﺤْﺸَﺎء ﻭَاﻟْﻤُﻨْﻜَﺮ} ﺷَﺮْﻋًﺎ ﺃَﻱْ ﻣِﻦْ ﺷَﺄْﻧﻬَﺎ ﺫَﻟِﻚَ ﻣَﺎ ﺩَاﻡَ اﻟْﻤَﺮْء ﻓِﻴﻬَﺎ
নামাযে যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ থাকবে,ততক্ষণ পর্যন্ত সে মন্দ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকবে।অর্থাৎ যে ইকামতে সালাত করবে,তথা নামাযকে গুরুত্বের সাথে আদায় করবে,তার নামায কবুল হবে,এবং মূলত ঐ নামাযই মানুষকে গোনাহের কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে।যদি কারো নামায পূর্ণ ভাবে আদায় না হয়,তাহলে তার নামায তাকে গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখবে না।অর্থাৎ মাকবুল নামাযই মানুষকে গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে।যার নামায তাকে গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেনি,তার নামাযই কবুল হবে না।
(৩)আল্লাহ তা'আলা বলেন,
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُونُوا شُيُوخًا وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّى مِن قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوا أَجَلًا مُّسَمًّى وَلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
তিনি তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা, অতঃপর শুক্রবিন্দু দ্বারা, অতঃপর জমাট রক্ত দ্বারা, অতঃপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে, অতঃপর তোমরা যৌবনে পদর্পণ কর, অতঃপর বার্ধক্যে উপনীত হও। তোমাদের কারও কারও এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং তোমরা নির্ধারিত কালে পৌঁছ এবং তোমরা যাতে অনুধাবন কর।(সূরা মু'মিন-৬৭)
আল্লাহ বলছেন,
প্রথমে আমি তোমাদের মূল পদার্থকে মাঠি দ্বারা তৈরী করেছি।অতঃপর বীর্য দ্বারা।সুতরাং সমস্ত মানুষকে মাঠি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে,কথাটা বিশুদ্ধ। কেননা প্রত্যেক মানুষের মূল আদম আঃ সালামকে মাঠি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে।এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى
এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব।(সূরা ত্বোহা-৫৫)
কেউ যদি বীর্য দ্বারা বলে,সেটাও অশুদ্ধ নয়।কেননা পরবর্তীতে আল্লাহ এই ধারাবাহিকতা রেখেছেন।