আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
67 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (60 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তায

১. আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে ইহুদী সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু কথা বলেছি কয়েকদিন। তো আড্ডার মাঝে সে মশা মারছিলো নিজের এবং আমার গায়ে। আমাকে মারার ফোর্স একটু বেশি হওয়ায় আমি মজার ছলে বলে ফেলেছি, মনে হইতেছে আমি ইহুদী তাই এভাবে মারতাছো। এই কথার দ্বারা কি ঈমান ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?

 ২. অনেক সময় আমরা ফ্রেন্ডরা এভাবে কথা বলে থাকি যে, তোমরা বাঙ্গালীরা এটা করলা, তোমরা জেনারেল স্টুডেন্টরা এমন, ইত্যাদি এই ভঙ্গি তে মজা করে এটা ওটা বলি, যদিও এই তোমরা শব্দটির মাঝে নিজেও অন্তর্ভুক্ত তবু মজা করে এভাবে বলি। তো কথা প্রসঙ্গে এভাবেও বলে ফেলেছি তোমরা মুসলিমরা এমন। এই তোমরার মাঝেও আমি অন্তর্ভুক্ত কিন্তু শব্দ চয়নটা এভাবে হওয়াতে কি ঈমান ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
এক ফতোওয়ায় জেনেছিলাম ঈমান ভঙ্গ হলে সকল নেক আমল বরবাদ হয়ে যায়, স্ত্রী তালাক হয়ে যায়। এর পর থেকে ওয়াসওয়াসা কাজ করে।

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

মনের মাঝে শুধুমাত্র বাজে চিন্তা বা কুফরী চিন্তা আসলেই ব্যক্তি কাফের হয়ে যায় না। হাদীস শরীফে এসেছেঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ جَاءَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلُوهُ إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا مَا يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ . قَالَ ” وَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ ” . قَالُوا نَعَمْ . قَالَ ” ذَاكَ صَرِيحُ الإِيمَانِ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবী তাঁর সমীপে এসে বললেন, আমাদের অন্তরে এমন কিছু সংশয়ের উদয় হয়, যা আমাদের কেউ মুখে উচ্চারণ করতেও মারাত্মক মনে করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ সত্যই তোমাদের তা হয়? তারা জবাব দিলেন, জ্বী, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটই স্পষ্ট ঈমান। (কারণ ঈমান আছে বলেই সে সম্পর্কে ওয়াসওয়াসা ও সংশয়কে মারাত্মক মনে করা হয়।) [সহীহ মুসলিম-১/৭৯, হাদীস নং-১৩২, ইফাবা, হাদীস নং-২৪০]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ

 

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। [সহীহ বুখারী-১/৩৪৩, হাদীস নং-২৫২৮, ইফাবা, হাদীস নং-২৩৬১]

সুতরাং মনের মাঝে কুফরি চিন্তা আসলে ঈমানের কোনো ক্ষতি হবে না। এগুলো মূলত শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই যখনই এ জাতীয় চিন্তার উদ্রেগ হবে, আল্লাহ তাআলার কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। (ফাতহুল বারি ৫/১৬১)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ-

عن أنس بن مالك قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( من صلى صلاتنا واستقبل قبلتنا وأكل ذبيحتنا فذلك المسلم

অনুবাদ-হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের কিবলাকেই কিবলা নির্ধারণ করে, এবং আমাদের জবাইকৃত পশু খায়, সে মুসলমান। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮৪}

অন্য হাদীসে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন।

صلوا على كل ميت من أهل القبلة

অর্থাৎ তোমরা আহলে কিবলার উপর জানাযা নামায পড়বে। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৯}

আহলে কিবলা বলতে কি অর্থ? ফুক্বাহায়ে কেরাম এর ব্যাখ্যা করেছেন।

মোল্লা আলী কারী রহঃ শরহুর ফিক্বহুল আকবারে “আহলে কিবলা” এর ব্যাখ্যায় লিখেন-

اعلم ان المراد باهل القبلة الذين اتفقوا على ما هو من ضروريات الدين كحدوث العالم وحشر الاجاد وعلم الله تعالى بالكليات والجزئيات وما اشبه ذلك من المسائل المهمات، فمن واذب طول عمره على الطاعات والعبادات مع اعتقاد قدم العالم ونفى الحشر او نفى علمه سبحانه وتعالى بالجزئيات لا يكون من اهل القبلة، وان المراد بعدم تكفير احد من اهل القبلة عند اهل السنة انه لا يكفر احد ما لم يوجد شيئ من امارات الكفر وعلاماته، ولم يصدر عنه شيئ من موجباته، (شرح الفقه الاكبر-189

ভাল করে জেনে রাখ যে, আহলে কিবলা দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ ব্যক্তি, যে ঐ সকল আক্বিদাকে মান্য করে, যা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়। যেমন পৃথিবী সৃজিত বস্তু, কিয়ামত, হাশর-নশর, আল্লাহ তাআলার ইলম সমস্ত দেখা অদেখা বস্তুর উপর বিস্তৃত। এমন ধরণের অন্যান্য আক্বিদা। যে ব্যক্তি সারা জীবন ইবাদত বন্দেগীতে কাটায়, কিন্তু এর সাথে পৃথিবী সৃজিত নয় বরং প্রাকৃতিক বলে বিশ্বাস করে, কিংবা কিয়ামতে মানুষের জীবিত হওয়াকে বা অথবা আল্লাহ তাআলার ইলম বিস্তৃত হওয়াকে অস্বিকার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি আহলে কেবলার অন্তুভূক্ত নয়। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে আহলে কেবলাকে কাফের না বলার দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই যে, এসব ব্যক্তিদের মাঝে কাউকে ততক্ষণ পর্যন্ত কাফের বলা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের থেকে এমন কোন কাজ সংঘটিত হয় যা কুফরীর আলামত বা কুফরকে আবশ্যক করে। (শরহুল ফিক্বহিল আকবার-১৮৯}

বিস্তারিত জানুনঃ- https://ifatwa.info/5957/

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

১. কোন মসলমান এমন কথা বলতে পারে না। যদিও প্রশ্নেল্লিতি ছুরতে উক্ত কথাটি আক্বীদা বা বিশ্বাসের আলোকে বলা হয়নি তথা এমন কথা মুখ থেকে বের হলে তাৎখনিকভাবে তওবা করতে হবে। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকতে হবে যেন এমন কথা মুখ থেকে বের না হয়। কারণ, শয়তান এজাতীয় কথার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে দেয়, যা কখনো কখনো ইমানের জন্য হুমকি হয়ে যায়।

২. যদি ইসলাম ও মুসলিম সম্প্রদায়কে অস্বীকার করে উপহাস ও ঠাট্টার ছলে এমন কথা বলে তাহলে তা ইমান ভঙ্গের কারণ। আর যদি জাহালতের কারণে এজাতীয় কথা বলে তাহলে তাকে কাফের বলা যাবে না কিন্তু তার জন্য তওবা করা আবশ্যক। কারণ, ইসলাম আল্লাহ তায়ালার প্রিয় ধর্ম । এ ব্যাপারে আল-কোরআনের ঘোষণা: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম’ (সূরা আলে ইমরান ৩ঃ১৯)

সুতরাং এমন পবিত্র দ্বীন নিয়ে এজাতীয় কথা বলার অবকাশ নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...