আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
234 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ
উস্তাদ আমার এক বোনের স্বামী তাকে রাগের মাথায় ৩ তালাক দিয়ে ফেলেছে। যদিও সে জানতো না যে ৩ তালাক দিলে আসলেই তালাক হয় কি না। লোকটা ভাবতেছে সূরা তালাকে যেহেতু ৩ ইদ্দতের কথা লিখা আছে তাই তালাক হয় নাই, আরো ২ বার টাইম আছে। আর যেহেতু সে হাদিস মাসালা কিছু জানেনা তাই ভাবছে তালাক হয় নাই, তাই অনুসূচনাও নাই।  বোনটার একটা বাচ্চা আাছে এবং সে আবারও প্রেগনেন্ট৷  প্রেগনেন্ট অবস্থায় তালাক দিলে কি তা হয়ে যাবে? মেয়েটা অনেক অসহায়। বাবা মা কেউ নাই। আত্নীয় স্বজন তেমন নাই যে মেয়েটাকে দেখবে। অসহায় বোনটা বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই।
উস্তাদ উনাদের কি তালাক হয়ে গেছে? করণীয় কি এখন?

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

https://ifatwa.info/10036/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

‘গর্ভাবস্থায় তালাক পতিত হয় না’ এমন একটা কথা সাধারণ লোকদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এটা নিতান্তই ভ্রান্ত এবং অজ্ঞতা পূর্ণ কথা। বরং গর্ভাবস্থায়ও তালাক পতিত হবে- এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই।

গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে সেই তালাক পতিত হয়ে যায়। এমন অবস্থায় তালাক দেওয়া জায়েজ আছে। (ফাতাওয়ায়ে হতে হিকমত ২/২১২)

তিরমিজি শরীফের ১১৭৬ নং হাদীসে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، مَوْلَى آلِ طَلْحَةَ عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ فِي الْحَيْضِ فَسَأَلَ عُمَرُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " مُرْهُ فَلْيُرَاجِعْهَا ثُمَّ لْيُطَلِّقْهَا طَاهِرًا أَوْ حَامِلاً " . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ يُونُسَ بْنِ جُبَيْرٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَكَذَلِكَ حَدِيثُ سَالِمٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَغَيْرِهِمْ أَنَّ طَلاَقَ السُّنَّةِ أَنْ يُطَلِّقَهَا طَاهِرًا مِنْ غَيْرِ جِمَاعٍ . وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنْ طَلَّقَهَا ثَلاَثًا وَهِيَ طَاهِرٌ فَإِنَّهُ يَكُونُ لِلسُّنَّةِ أَيْضًا . وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ بْنِ حَنْبَلٍ . وَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ تَكُونُ ثَلاَثًا لِلسُّنَّةِ إِلاَّ أَنْ يُطَلِّقَهَا وَاحِدَةً وَاحِدَةً . وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَإِسْحَاقَ . وَقَالُوا فِي طَلاَقِ الْحَامِلِ يُطَلِّقُهَا مَتَى شَاءَ . وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ . وَقَالَ بَعْضُهُمْ يُطَلِّقُهَا عِنْدَ كُلِّ شَهْرٍ تَطْلِيقَةً .

সালিম (রাহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তার স্ত্রীকে হায়িয থাকা অবস্থায় তালাক দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উমার (রাঃ) এর বিধান জানতে চাইলেন। তিনি বললেনঃ তাকে তার স্ত্রীকে ফিরত নেওয়ার হুকুম দাও। অতঃপর সে যেন তাকে তুহরে (পবিত্র অবস্থা চলাকালে) অথবা গর্ভাবস্থায় তালাক দেয়। (সহীহ, ইবনু মাজাহ (২০২৩))

ইবনু উমারের সূত্রে ইউনুস ইবনু জুবাইর (রাহঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। ইবনু উমার হতে সালিম (রাহঃ) বর্ণিত হাদীসটিও হাসান সহীহ। এ হাদীসটি বিভিন্ন সূত্রে ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ আমল করেছেন।

তালাকের সুন্নাত (আইনানুগ) পদ্ধতি প্রসঙ্গে তাদের মত হলঃ যে তুহরে সঙ্গম করা হয়নি সেই তুহরে তালাক দেওয়া। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, তুহর অবস্থায় তিন তালাক দিলে তাও সুন্নাত নিয়মে হয়ে যাবে। এই মত ইমাম শাফিঈ ও আহমাদের।

আর একদল আলিম বলেছেন, সুন্নাত পদ্ধতি মুতাবেক তালাক হবে এক তালাক দেওয়া হলে কিন্তু একসাথে তিন তালাক দেওয়া হলে তা হবে না। এই মত সুফিয়ান সাওরী ও ইসহাকের।

গর্ভবতী স্ত্রীলোক প্রসঙ্গে তাদের মত হল, যে কোন সময়ই তাকে তালাক দেয়া যায়। এই মত শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাকের। অন্য এক দল আলিম বলেছেন, প্রতি মাসে এক তালাক করে দিবে (তিন তালাক একসাথে দিবে না)।

وجاز طلاقہن أی الآیسۃ والصغیرۃ والحامل، مجمع الأنہر ج اول ص۳۸۲ مطبوعہ احیاء التراث العربی ومثلہ فی در المنتقیٰ ﴾

সারমর্মঃ আয়েছাহ মহিলা,ছোট মহিলা,গর্ভবতী মহিলাকে তালাক দেওয়া জায়েজ আছে। 

তবে তালাক পতিত হলেও তার ইদ্দতের মেয়াদ হল সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ অন্যত্র বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইল তাকে অবশ্যই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সে অন্যত্র বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

সুরা আত তলাক এর ০৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

 وَ الّٰٓیِٴۡ یَئِسۡنَ مِنَ الۡمَحِیۡضِ مِنۡ نِّسَآئِکُمۡ اِنِ ارۡتَبۡتُمۡ فَعِدَّتُہُنَّ ثَلٰثَۃُ اَشۡہُرٍ ۙ وَّ الّٰٓیِٴۡ لَمۡ یَحِضۡنَ ؕ وَ اُولَاتُ الۡاَحۡمَالِ اَجَلُہُنَّ اَنۡ یَّضَعۡنَ حَمۡلَہُنَّ ؕ وَ مَنۡ یَّتَّقِ اللّٰہَ یَجۡعَلۡ لَّہٗ مِنۡ اَمۡرِہٖ یُسۡرًا ﴿۴

তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুবর্তী হওয়ার কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদের ইদ্দতকালও হবে তিন মাস। আর গর্ভধারিনীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।

এই আয়াতের ব্যখ্যায় বলা হয়েছে,

তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যদি গর্ভবতী হয়, তবে তার ইদ্দত হল সন্তান প্রসব করা সময় পর্যন্ত, যদিও সে তালাকের দ্বিতীয় দিনে প্রসব করে তবুও। এ ছাড়া আয়াতের বাহ্যিক অর্থ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেক গর্ভবতীর ইদ্দত এটাই; তাতে সে তালাকপ্রাপ্তা হোক অথবা তার স্বামীর মৃত্যু হয়ে থাকুক।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়েছে। তালাক শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর ভালবেসে বলুক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়।  তিন তালাক দিলেও তিন তালাক হয়ে যায়। তাই এই অবস্থায় তার সাথে সংসার করা স্বামীর জন্য হারাম। তবে তার সাথে সংসার করতে চাইলে প্রথমে তার স্ত্রী তালাকের ইদ্দত পালন করবে অর্থাৎ তিন পিরিয়ড পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। ইদ্দত পালন শেষ হলে শরীয়তসম্মত পন্থায় অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তার সাথে সহবাস করতে হবে।

অতঃপর দ্বিতীয় স্বামী স্বেচ্ছায় তাকে তালাক দিলে অথবা মারা গেলে পুনরায় তালাক অথবা মৃত্যুর ইদ্দত পালন করবে। ইদ্দত পালন শেষ হলে তিনি ইচ্ছা করলে নতুন মহর নির্ধারণ করে আবার তাকে বিবাহ করে তার সাথে ঘর সংসার করতে পারবেন।

আরো বিস্তারিত জানুন: https://ifatwa.info/3190/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...