আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
439 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (21 points)
আসসালামু আলাইকুম।

১) জ্বীন ও জাদু সম্পর্কে আমাদের কি আকিদা রাখতে হবে?

২) জাদু কি এখনও প্রচলিত রয়েছে? এখনো কি মানুষ যাদু করে?
৩) যদি কেউ বিশ্বাস করে জাদু আগের যুগে ছিল এখন কেউ যাদু পারেনা বা করেনা তার বিধান কি?

৪) কারও ভাই যদি কোন খারাপ কাজে লিপ্ত থাকে তার কারনে বাবা মা কোন বিপদে পড়েছেন বা তাদের মানসম্মান নষ্ট হচ্ছে বা তারা কষ্টে আছে তাহলে কি তার বাবা মা এমন কোন সন্তানকে এবিষয়ে জানাতে পারবে যার তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার ছাড়া তেমন কিছু করার সামর্থ্য নেই? এমন কথা বলা বা শোনা কি গীবত?

৫) কোন নিকট আত্মীয় কেমন আছে তা খোঁজ নেওয়ার জন্য কাউকে জিজ্ঞেস সে যদি বলে সে তো অমুক অমুক খারাপ কাজে জড়িয়ে গেছে এটা কি গীবত হবে ? গীবত হলে আত্মীয়রা কেমন আছে কি করছে এসব খবর কিভাবে নেয়ার নিয়ম কি?

1 Answer

0 votes
by (671,200 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
জিন ও যাদু সম্পর্কে আকীদাঃ 
★জিন আল্লাহ তা'আলার এক প্রকার শরীরী আত্মাধারী ও মানুষের ন্যায় জ্ঞান এবং চেতনাশীল সৃষ্টজীব। জিন এর শাব্দিক অর্থ গুপ্ত। তারা মানুষের দৃষ্টিগোচর নয়। এ কারণেই তাদেরকে জিন বলা হয়। জিন ও ফেরেশতাদের অস্তিত্ব কুরআন ও সুন্নাহর অকাট্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। এটা অস্বীকার করা কুফর।

 মানব সৃষ্টির প্রধান উপকরন যেমন মৃত্তিকা তেমনি জিন সৃষ্টির প্রধান উপকরণ অগ্নি। এই জাতির মধ্যেও মানুষের ন্যায় নর ও নারী আছে এবং সন্তান প্রজননের ধারা বিদ্যমান আছে।
পবিত্র কুরআনে যাদেরকে শয়তান বলা হয়েছে, তারা জিন্নদের দুষ্ট শ্রেনীর নাম। অধিকাংশ আলেমের মতে, সমস্ত জিনই শয়তানের বংশধর। তাদের মধ্যে কাফের ও মুমিন দু’শ্রেণী বিদ্যমান। যারা ঈমানদার তাদেরকে জিন বলা হলেও তাদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে শয়তান বলা হয়। 

তবে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, জিন্নরা ভিন্ন প্ৰজাতি, তারা শয়তানের বংশধর নয়। তারা মারা যায়। তাদের মধ্যে ঈমানদার ও কাফির দু শ্রেণী রয়েছে। পক্ষান্তরে ইবলীসের সন্তানদেরকে শয়তান বলা হয়, তারা ইবলীসের সাথেই মারা যাবে, তার আগে নয়। 

পবিত্র কুরআনে একটি পুরা সুরা নাযিল হয়েছে জিন সম্পর্কে,   সুরা আল জিন,কুরআনের ৭২ নং সুরা।
সুরার প্রথম আয়াতঃ

قُلۡ اُوۡحِیَ اِلَیَّ اَنَّہُ اسۡتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الۡجِنِّ فَقَالُوۡۤا اِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡاٰنًا عَجَبًا

বলুন, ‘আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগের সাথে শুনেছে, অতঃপর বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি।
,

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
ما مِنكُم مِن أحَدٍ، إلَّا وقدْ وُكِّلَ به قَرِينُهُ مِنَ الجِنِّ قالوا: وإيَّاكَ؟ يا رَسولَ اللهِ، قالَ: وإيَّايَ، إلَّا أنَّ اللَّهَ أعانَنِي عليه فأسْلَمَ، فلا يَأْمُرُنِي إلَّا بخَيْرٍ. غَيْرَ أنَّ في حَديثِ سُفْيانَ وقدْ وُكِّلَ به قَرِينُهُ مِنَ الجِنِّ وقَرِينُهُ مِنَ المَلائِكَةِ.
“তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে তার সহচর জিন (শয়তান) নিযুক্ত করে দেয়া হয়নি।
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: আপনার সাথেও কি হে আল্লাহর রাসূল?
তিনি বললেন: আমার সাথেও তবে আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করেছে ( বা আমার অনুগত হয়ে গেছে)। ফলে সে আমাকে কেবল ভাল কাজেরই পরামর্শ দেয়।”
সুফিয়ানের বর্ণনায় আছে:
وقد وكِّل به قرينُه من الجنِّ وقرينُه من الملائكة
“(তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে) তার সহচর জিন (শয়তান) এবং সহচর ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেয়া হয় নি।” [সহিহ মুসলিম, হা/২৮২৪]

,
★যাদুর অস্তিত্ব সম্পর্কে মনীষীদের উক্তি ও মতামতঃ

১। খাত্তাবী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ প্রকৃতিবাদীদের একদল যাদুকে অস্বীকার করে ও তার বাস্তবতাকে খন্ডন করে।
এর উত্তরঃ নিশ্চয় যাদু প্রমাণিত ও তার বাস্তবতা রয়েছে। আরব অনারব তথা পারস, ভারত উপমহাদেশীয় দেশসমূহ, রোমানও এরূপ অধিকাংশ জাতিই একমত যে, যাদু প্রমাণিত। অথচ এরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক দিয়ে সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম জাতির অন্তর্ভুক্ত।
আর আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ
অর্থঃ “তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দেয়।” (বাকারঃ ১০২)
অনুরূপ আল্লাহ তায়ালা যাদু হতে আশ্রয় প্রার্থনার হুকুম দিয়ে বলেনঃ
وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ
অর্থঃ “গ্রন্থিতে ফুৎকার কারিনীদের অনিষ্ট হতে (আশ্রয় চাই)। (সুরা ফালাকঃ ৪)

তিনি আরোও বলেনঃ এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে আরো এমন অনেক খবর এসেছে, যা কেউ অস্বীকার করে না একমাত্র যারা বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তারা ব্যতীত। আর ইসলামী ফেকাহবিদগণও যাদুকরের কি শাস্তি সে ব্যাপারেও আলোকপাত করেছেন। আর যার ভিত্তি নেই তার এত চর্চা ও প্রসিদ্ধি হওয়ার কথা নয়। সুতরাং যাদুকে (অস্তিত্বকে) অস্বীকার করা একটি অজ্ঞতা ও যাদু অস্বীকার কারীদের প্রতিবাদ একটি অনার্থক বিষয়।” (শারহুস সুন্নাহঃ ১২/১৮৮)

২। ইমাম নববী বলেনঃ বিশুদ্ধ মত হলো নিশ্চয় যাদুর বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে। এটিই জমহুর উলামা ও সাধারণ উলামার মত। এ মত প্রমাণিত হয় কুরআন ও প্রসিদ্ধ বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা। (ফতহুল বারী হতে সংকলিতঃ ১০/২২২)

৩। আবুল ইযয হানাফী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদুর বাস্তবতা ও প্রকারের ক্ষেত্রে অনেকেই মতভেদ করেন; কিন্তু অধিকাংশই বলেনঃ নিশ্চয়ই যাদুগ্রস্তের মৃত্যু ও তার অসুস্থতায় প্রভাব বিস্তার করে থাকে। কোন কিছুর প্রকাশ্য ক্রিয়া ব্যতীতই------ (শরহুল আকীদা আততাহাবিয়াঃ ৫০৫)

৪ । ইবনে কুদামা (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদুর প্রভাবে মানুষ শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করে এবং স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছিন্নতা ঘটে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ
অর্থঃ “তারা তাদের কাছ থেকে এমন যাদু শিক্ষা নিত যার দ্বারা তারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করত।” (ফতহুল মজিদ হতে সংকলিতঃ ৩১৪) অতএব যাদু সম্পর্কে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এর অস্তিত্ব অবশ্যই আছে এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যাদুকরের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন কোন বস্তু থেকে নিষেধ করতে পারেন না যার অস্তিত্ব নেই। সুতরাং এতে বুঝা যায় যে যাদুর অস্তিত্ব আছে।

,
(০২) যাদুর অস্তিত্ব এখনো আছে,এখনো মানুষ যাদু করে ।
,
(০৩) যদি কেউ বিশ্বাস করে জাদু আগের যুগে ছিল এখন কেউ যাদু পারেনা বা করেনা,তাহলে কোনো সমস্যা নেই। 
এর দ্বারা সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের  থেকে বের হবেননা। 
,
(০৪)
কাহারো গীবত করা হারাম।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   
عَنْ أَبِي سَعْدٍ، وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا “، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا؟ قَالَ: ” إِنَّ الرَّجُلَ لَيَزْنِي فَيَتُوبُ فَيَتُوبُ اللهُ عَلَيْهِ “وَفِي رِوَايَةِ حَمْزَةَ ” فَيَتُوبُ فَيَغْفِرُ لَهُ، وَإِنَّ صَاحِبَ الْغِيبَةِ لَا يُغْفَرُ لَهُ حَتَّى يَغْفِرَهَا لَهُ صَاحِبُهُ  

হযরত আবু সাঈস এবং জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। উভয়ে বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ গীবত করা ব্যভিচার করার চেয়েও জঘন্য। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! গীবত করা ব্যভিচারের চেয়ে জঘন্য হয় কি করে? রাসূল সাঃ বললেনঃ নিশ্চয় ব্যভিচারকারী ব্যভিচার করে তওবা করে থাকে, ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, কিন্তু গীবতকারীকে ক্ষমা করা হয় না, যতক্ষণ না যার গীবত করেছে সে তাকে ক্ষমা করে। {শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬৩১৫, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৫৯০}

হ্যাঁ বিশেষ মাছলাহাত এর স্বার্থে,যেমন তাকে বললে সে আর এমন কাজ করবেনা,বা সে এর সমাধান করতে পারবে,বা সে এর থেকে বেঁচে থাকতে পারবে, ইত্যাদি ছুরতে  এটা বলা যেতে পারে।
তবে সীমাতিরিক্ত বলা যাবেনা,এমনি এক জনের কাছে বলা যাবেনা।

বিস্তারিত জানুনঃ  

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত গীবতের অন্তর্ভুক্ত।     

(০৫)
হ্যাঁ এটাও গীবত  হবে।
নিয়ম হলো শুধু তার ভালো কাজ সম্পর্কে জানা,বলা।
 
যাদের গীবত করা জায়েজ,, 
গীবত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...