আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
277 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (19 points)
আসসালামুআলাইকুম উস্তায,

উস্তায আমার প্রশ্ন হলো:

১.কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক কোন সহিহ হাদিস আছে কি?জৈনিক শায়েখ সুরা ইউনুস এর ৯৯ আয়াত এর সাথে জিহাদ বিষয়ক একটা হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক বলে বক্তব্য রেখেছেন।
আয়াত টি হলো:
وَ لَوۡ شَآءَ رَبُّکَ لَاٰمَنَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ کُلُّہُمۡ جَمِیۡعًا ؕ اَفَاَنۡتَ تُکۡرِہُ النَّاسَ حَتّٰی  یَکُوۡنُوۡا مُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۹۹﴾
অর্থ:আর আপনার রব ইচ্ছে করলে যমীনে যারা আছে তারা সবাই ঈমান আনত [১]; তবে কি আপনি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবেন [২]?
তিনি উপরের আয়াত দলিল হিসেবে পেশ করে বলেন‌ আল্লাহ নবীকে  জোর করে মানুষ কে ঈমান গ্রহন করাতে  নিষেধ করেছেন।
আর তিনি এর সাথে নিচের হাদিসটিকে সাংঘর্ষিক হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছেন।
“আমি এই মর্মে আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবো যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই ও মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল এবং তারা সালাত প্রতিষ্ঠিত করে ও যাকাত দেয়।”

সূত্রঃ ফাতহুল বারী ১/৯৫, তাফসির ইবনে কাসির (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) – কুরআন ৯:৫ এর তাফসীর; সুনানে নাসাঈ (ইফাবা Hadithbd) ৩৯৬৮ থেকে ৩৯৮৭; সহিহুল বুখারী (ইফাবা) ৩৮৫

বি:দ্র: এটি তার কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক মাত্র একটি হাদিসের বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমি তার বক্তব্য পর্যালোচনার জন্যে আপনাদের মতামত জানতে চাই।

1 Answer

0 votes
by (590,550 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
আয়াতের অর্থ তার স্ব অবস্থানেই বহাল থাকবে। হ্যা, হাদীসের অর্থ হবে নিম্নরূপ-

ইবনুল আরাবি মালিকি রাহ বলেন,
( فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ ) عامٌّ في كل مشرك ، لكنَّ السنَّة خصَّت منه من تقدم ذكره قبل هذا من امرأة ، وصبي ، وراهب ، وحُشوة [ وهم رذال الناس ، وتبعهم ، ومن لا شأن له فيهم ] ، حسبما تقدم بيانه ، وبقي تحت اللفظ : مَن كان محارباً أو مستعدّاً للحرابة والإذاية ، وتبيَّن أن المراد بالآية : اقتلوا المشركين الذين يحاربونكم "
মুশরিকদেরকে হত্যার করার অর্থ হল, সমস্ত মুশরিকদেরকে হত্যা করো, তবে নারী শিশু এবং পাদ্রী এবং সব লোক যাদের সমাজে কোনো দাপট নেই তাদেরকে হত্যা করবে না। মোটকথাঃ- ঐ সমস্ত মুশরিকদেরকে হত্যা করো,যারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত,বা মুসলিমদেরকে কষ্ট দেয়। সুতরাং অায়াতের অর্থ হবে, ঐ সমস্ত মুশরিকদেরকে হত্যা করো,যারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে।(আহকামুল কুরআন-৪/১৭৭)

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন,
 " وقول النبي صلى الله عليه وسلم ( أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلهَ إِلاَّ الله وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ الله وَيُقِيمُوا الصَّلاَةَ وُيُؤتُوا الزَّكَاة ) مراده : قتال المحاربين الذين أذن الله في قتالهم ، لم يُرد قتال المعاهَدين الذين أمر الله بوفاء عهدهم "
অত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম' যুদ্ধরত মুশরিকদের সাথে জিহাদ করার ঘোষণা দিয়েছেন।  এখানে চুক্তিবদ্ধ মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে না।(মাজমুউল ফাতাওয়া-১৯/২০)

নিম্নোক্ত হাদীসে এ বিষয়টাকে আরো সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বুরাইদাহ কর্তৃক বর্ণিত,
عن بُرَيْدَةَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا أَمَّرَ أَمِيرًا عَلَى جَيْشٍ أَوْ سَرِيَّةٍ أَوْصَاهُ فِى خَاصَّتِهِ بِتَقْوَى اللهِ وَمَنْ مَعَهُ مِنَ الْمُسْلِمِينَ خَيْرًا ثُمَّ قَالَ اغْزُوا بِاسْمِ اللهِ فِى سَبِيلِ اللهِ قَاتِلُوا مَنْ كَفَرَ بِاللهِ اغْزُوا وَ لاَ تَغُلُّوا وَلاَ تَغْدِرُوا وَلاَ تَمْثُلُوا وَلاَ تَقْتُلُوا وَلِيدًا وَإِذَا لَقِيتَ عَدُوَّكَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَادْعُهُمْ إِلَى ثَلاَثِ خِصَالٍ - أَوْ خِلاَلٍ - فَأَيَّتُهُنَّ مَا أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلاَمِ فَإِنْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى التَّحَوُّلِ مِنْ دَارِهِمْ إِلَى دَارِ الْمُهَاجِرِينَ وَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ إِنْ فَعَلُوا ذَلِكَ فَلَهُمْ مَا لِلْمُهَاجِرِينَ وَعَلَيْهِمْ مَا عَلَى الْمُهَاجِرِينَ فَإِنْ أَبَوْا أَنْ يَتَحَوَّلُوا مِنْهَا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ يَكُونُونَ كَأَعْرَابِ الْمُسْلِمِينَ يَجْرِى عَلَيْهِمْ حُكْمُ اللهِ الَّذِى يَجْرِى عَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَلاَ يَكُونُ لَهُمْ فِى الْغَنِيمَةِ وَالْفَىْءِ شَىْءٌ إِلاَّ أَنْ يُجَاهِدُوا مَعَ الْمُسْلِمِينَ فَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَسَلْهُمُ الْجِزْيَةَ فَإِنْ هُمْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ فَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَقَاتِلْهُمْ وَإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تَجْعَلَ لَهُمْ ذِمَّةَ اللهِ وَذِمَّةَ نَبِيِّهِ فَلاَ تَجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّةَ اللهِ وَلاَ ذِمَّةَ نَبِيِّهِ وَلَكِنِ اجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّتَكَ وَذِمَّةَ أَصْحَابِكَ فَإِنَّكُمْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَمَكُمْ وَذِمَمَ أَصْحَابِكُمْ أَهْوَنُ مِنْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَّةَ اللهِ وَذِمَّةَ رَسُولِهِ وَإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تُنْزِلَهُمْ عَلَى حُكْمِ اللهِ فَلاَ تُنْزِلْهُمْ عَلَى حُكْمِ اللهِ وَلَكِنْ أَنْزِلْهُمْ عَلَى حُكْمِكَ فَإِنَّكَ لاَ تَدْرِى أَتُصِيبُ حُكْمَ اللهِ فِيهِمْ أَمْ لاَ
 আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সেনাদল বা অভিযানের কাউকে আমীর নিযুক্ত করতেন তখন তাকে আল্লাহভীতি ও তার মুসলিম সঙ্গীদের ব্যাপারে কল্যাণের অসিয়ত করতেন; বলতেন, ’’অভিযান শুরু কর আল্লাহর নামে, যুদ্ধ কর কাফের দলের বিরুদ্ধে। অভিযান কর; কিছু আত্মসাৎ করো না, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করো না, কারো নাক-কান কেটো না, শিশু হত্যা করো না তোমার কোন মুশরিক শত্রুদলের সাথে সাক্ষাৎ হলে, তাদেরকে তিনটি আচরণের প্রতি আহবান কর। এর যে কোনটিও মান্য করলে তাদের নিকট হতে তা গ্রহণ কর এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে বিরত হয়ে যাও ; তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান কর। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদের নিকট হতে তা গ্রহণ কর এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে বিরত হও অতঃপর তাদেরকে তাদের স্বদেশ হতে মুহাজেরীনদের দেশে স্থানান্তরিত হতে আহবান কর তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, যদি তারা এরূপ করে তবে মুহাজেরীনদের যে সুযোগ-সুবিধা আছে, তাদেরও সেই সুযোগ-সুবিধা হবে এবং মুহাজেরীনদের যে কর্তব্য আছে, তাদেরও সেই কর্তব্য হবে যদি তারা স্থানান্তরিত হতে অসম্মত হয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তারা মরুবাসী মুসলিমদের মত হবে তাদের উপর আল্লাহর হুকুম (শাসন-ব্যবস্থা) চলবে, যা মুসলিমদের উপর চলে।
মুসলিমদের সপক্ষে যুদ্ধ না করে গনীমত বা ’ফাই’-এর (যুদ্ধলব্ধ) কিছু মালও তারা পাবে না তাতে (ইসলাম গ্রহণ করতে) যদি তারা অসম্মত হয় তবে তাদের নিকট থেকে জিযিয়া চাও তাতে যদি তারা সম্মত হয় তবে তাদের নিকট থেকে তা গ্রহণ কর এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাক। কিন্তু তাতে যদি তারা রাজি না হয় তাহলে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করআর যখন তুমি কোন দুর্গবাসীকে অবরুদ্ধ করবে তখন যদি তারা চায় যে, তুমি তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের যিম্মা (সংরÿণের দায়িত্ব) প্রদান কর তাহলে তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের যিম্মা দিয়ো না, বরং তাদেরকে তোমার ও তোমার সঙ্গীদের যিম্মা প্রদান করো কারণ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের যিম্মা প্রত্যাহার করার চেয়ে তোমাদের যিম্মা প্রত্যাহার করা অধিক সহজ আর যখন কোন দুর্গবাসীকে অবরুদ্ধ করবে তখন তারা আল্লাহর ফায়সালায় অবতীর্ণ হতে চাইলে তাদেরকে আল্লাহর ফায়সালায় অবতীর্ণ করো না বরং তাদেরকে তোমার নিজের ফায়সালায় অবতারণ কর যেহেতু তুমি জান না যে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা সঠিকভাবে দিতে পারবে কি না।(সহীহ মুসলিম-১৯৯৮)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (590,550 points)
উত্তর দেয়া হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...