বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
হযরত জাবের রাযি থেকে বর্ণিত,
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: " «لَا يُسْأَلُ بِوَجْهِ اللَّهِ إِلَّا الْجَنَّةُ» "
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,আল্লাহর জাতকে উল্লেখ করে কিছু চাওয়া যাবে না।(সুনানু আবি-দাউদ-,মিরকাতুল মাফাতিহ-১৯৪৪)
মোল্লা আলী কারী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,
«لا يسأل بوجه الله» ") أي بذاته " إلا الجنة " بالرفع أي لا يسأل بوجه الله شيء إلا الجنة، مثل أن يقال: اللهم إنا نسألك بوجهك الكريم أن تدخلنا جنة النعيم، ولا يسأل روي غائبا نفيا ونهيا ومجهولا، ورفع الجنة، ونهيا مخاطبا معلوما مفردا، ونصب الجنة، قال الطيبي: أي لا تسألوا من الناس شيئا بوجه الله، مثل أن تقولوا: أعطني شيئا بوجه الله أو بالله، فإن اسم الله أعظم من أن يسئل به متاع الدنيا، بل اسألوا به الجنة، أو لا تسألوا الله متاع الدنيا بل رضاه والجنة، والوجه يعبر به عن الذات
মর্মার্থ-আল্লাহ নাম দ্বারা জান্নাত ব্যতীত অন্য কিছু চাওয়া যাবে না।ইমাম তিবি রাহ বলেন,আল্লাহর নাম ব্যবহার করে মানুষের কাছে কিছু চাওয়া যাবে না।যেমন,কেউ বলল,আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে কিছু দাও।কেননা আল্লাহর নাম বড় ও মহান।সুতরাং আল্লাহর নাম ব্যবহার পূর্বক দুনিয়ার তুচ্ছ জিনিষকে চাওয়া যাবে না।বরং আল্লাহ নাম দ্বারা একমাত্র জান্নাত চাওয়াই উচিৎ।অথবা অর্থ হল,আল্লাহর কাছে দুনিয়ার কোনো তুচ্ছ জিনিষ চাইবে না।বরং তুমি কিছু চাইলে আল্লাহর নিকট জান্নাতই চাইবে।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/ও বোন!
আল্লাহর নাম ব্যবহার করে কিছু চাওয়া উচিৎ নয়।তবে যদি কেউ চেয়ে নেয়,তাহলে কেউ কেউ বলেন,কিছু দিয়ে দেয়া উত্তম।আবার কেউ কেউ বলেন,শিক্ষা দেয়ার জন্য তাকে কিছুই দেয়া যাবে না।
আপনি যে বলেছেন,আল্লাহর নামে চাইলে কিছু দিতে হবে,না দিলে ফিরিস্তারা লা'নত দিবেন।এমন কোনো কথা কুরআন হাদীসে নেই।
3719 নং ফাতাওয়ায় আমরা উল্লেখ করেছি যে, সুওয়াল করার হুকুম ভিক্ষুকের অবস্থার উপর নির্ভর করবে।সে যদি সাবলম্বী হয় তাহলে সুওয়াল করা তার জন্য উপরের বর্ণিত ধারা অনুযায়ী হারাম হবে ঠিক কিন্তু সুওয়ালকৃত ব্যক্তির জন্য কিছু দিয়ে দেয়াটা উচিৎ।কেননা সুওয়ালের কারণে তার উপর সুওয়ালকারীর জন্য একরকম হক্ব বা অধিকার স্থাপিত হয়ে গেছে।তবে সাধারণত সদকার(নফল) নিয়্যাত থাকলে বাস্তব অবস্থা অনুসন্ধান করে দেয়াটাই উত্তম হবে।কারো সম্পর্কে যদি প্রবল ধারণা হয় যে,সে সর্বদিক দিয়ে অক্ষম তাহলে তাকে দিয়ে দিবে।তবে যদি কেউ ধনী বা সুস্থ-সবল,উপার্জনোক্ষম কাউকে সদকা দিয়ে দেয় তাহলে তার বৃথা যাবে না।বরং অবশ্যই সে সওয়াব পাবে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ الْخِيَارِ، قَالَ أَخْبَرَنِي رَجُلَانِ، أَنَّهُمَا أَتَيَا النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ وَهُوَ يَقْسِمُ الصَّدَقَةَ فَسَأَلَاهُ مِنْهَا فَرَفَعَ فِينَا الْبَصَرَ وَخَفَضَهُ فَرَآنَا جَلْدَيْنِ فَقَالَ " إِنْ شِئْتُمَا أَعْطَيْتُكُمَا وَلَا حَظَّ فِيهَا لِغَنِيٍّ وَلَا لِقَوِيٍّ مُكْتَسِبٍ "
উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আদী ইবনুল খিয়ার (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’ ব্যক্তি আমাকে সংবাদ দেন যে, তারা বিদায় হাজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাদাকা বিতরণ করছিলেন। তারা উভয়ে তাঁর কাছে যাকাত হতে কিছু চাইলেন। তিনি আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে আবার চোখ নামালেন। তিনি দেখলেন, তারা উভয়েই স্বাস্থ্যবান। তিনি বললেনঃ তোমরা চাইলে আমি তোমাদেরকে দিবো, কিন্তু এতে ধনী ও কর্মক্ষম ব্যক্তির অংশ নেই।
(আবু দাউদ ১৬৩৩.নাসায়ী (অধ্যায় : যাকাত, হাঃ ২৫৯৭), আহমাদ, বায়হাক্বী, ত্বাবারানী।)
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ هَارُونَ بْنِ رِيَابٍ، قَالَ حَدَّثَنِي كِنَانَةُ بْنُ نُعَيْمٍ الْعَدَوِيُّ، عَنْ قَبِيصَةَ بْنِ مُخَارِقٍ الْهِلَالِيِّ، قَالَ : تَحَمَّلْتُ حَمَالَةً فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم فَقَالَ " أَقِمْ يَا قَبِيصَةُ حَتَّى تَأْتِيَنَا الصَّدَقَةُ فَنَأْمُرَ لَكَ بِهَا " . ثُمَّ قَالَ " يَا قَبِيصَةُ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لَا تَحِلُّ إِلَا لأَحَدِ ثَلَاثَةٍ: رَجُلٌ تَحَمَّلَ حَمَالَةً فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيبَهَا ثُمَّ يُمْسِكُ، وَرَجُلٌ أَصَابَتْهُ جَائِحَةٌ فَاجْتَاحَتْ مَالَهُ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ " . أَوْ قَالَ " سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ " . " وَرَجُلٌ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ حَتَّى يَقُولَ ثَلَاثَةٌ مِنْ ذَوِي الْحِجَا مِنْ قَوْمِهِ قَدْ أَصَابَتْ فُلَانًا الْفَاقَةُ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ - أَوْ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ - ثُمَّ يُمْسِكُ وَمَا سِوَاهُنَّ مِنَ الْمَسْأَلَةِ يَا قَبِيصَةُ! سُحْتٌ يَأْكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتًا "
ক্বাবীসাহ ইবনু মুখারিক আল-হিলালী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি অন্যের ঋণের জামিনদার হলাম। পরে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলে তিনি বললেনঃ হে ক্বাবীসাহ! আমাদের কাছে যাকাতের মাল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আমরা তা থেকে তোমাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিবো। পরে তিনি বললেন, হে ক্বাবীসাহ! তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো জন্য সওয়াল করা বৈধ নয়। (১) যে ব্যক্তি কোন ঋণের জামিনদার হয়েছে ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা হালাল, পরিশোধ হয়ে গেলে সে বিরত থাকবে। (২) যে ব্যক্তির সমস্ত মাল আকস্মিক দুর্ঘটানায় ধ্বংস হয়ে গেছে, তার জীবন ধারণের পরিমাণ সম্পদ পাওয়া পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা হালাল। (৩) যে ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ কবলিত, এমনকি তার গোত্র-সমাজের তিনজন বিবেচক ও সুধী ব্যক্তি বলে যে, অমুক ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ পীড়িত। তখন জীবন ধারণের পরিমাণ সম্পদ পাওয়া পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা বৈধ, এরপর তা থেকে বিরত থাকবে। অতঃপর বলেন, হে ক্বাবীসাহ! এ তিন প্রকারের লোক ছাড়া অন্যদের জন্য সওয়াল করা হারাম এবং কেউ করলে সে হারাম ভক্ষণ করলো।
(মুসলিম (অধ্যায় : যাকাত), নাসায়ী (অধ্যায় : যাকাত, হাঃ ২৫৭৮), আবু দাউদ ১৬৪০.দারিমী, আহমাদ।)
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، عَنِ الأَخْضَرِ بْنِ عَجْلَانَ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ الْحَنَفِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَجُلاً، مِنَ الأَنْصَارِ أَتَى النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم يَسْأَلُهُ فَقَالَ " أَمَا فِي بَيْتِكَ شَىْءٌ " . قَالَ بَلَى حِلْسٌ نَلْبَسُ بَعْضَهُ وَنَبْسُطُ بَعْضَهُ وَقَعْبٌ نَشْرَبُ فِيهِ مِنَ الْمَاءِ . قَالَ " ائْتِنِي بِهِمَا " . فَأَتَاهُ بِهِمَا فَأَخَذَهُمَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهِ وَقَالَ " مَنْ يَشْتَرِي هَذَيْنِ " . قَالَ رَجُلٌ أَنَا آخُذُهُمَا بِدِرْهَمٍ . قَالَ " مَنْ يَزِيدُ عَلَى دِرْهَمٍ " . مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا قَالَ رَجُلٌ أَنَا آخُذُهُمَا بِدِرْهَمَيْنِ . فَأَعْطَاهُمَا إِيَّاهُ وَأَخَذَ الدِّرْهَمَيْنِ وَأَعْطَاهُمَا الأَنْصَارِيَّ وَقَالَ " اشْتَرِ بِأَحَدِهِمَا طَعَامًا فَانْبِذْهُ إِلَى أَهْلِكَ وَاشْتَرِ بِالآخَرِ قَدُومًا فَأْتِنِي بِهِ " . فَأَتَاهُ بِهِ فَشَدَّ فِيهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عُودًا بِيَدِهِ ثُمَّ قَالَ لَهُ " اذْهَبْ فَاحْتَطِبْ وَبِعْ وَلَا أَرَيَنَّكَ خَمْسَةَ عَشَرَ يَوْمًا " . فَذَهَبَ الرَّجُلُ يَحْتَطِبُ وَيَبِيعُ فَجَاءَ وَقَدْ أَصَابَ عَشَرَةَ دَرَاهِمَ فَاشْتَرَى بِبَعْضِهَا ثَوْبًا وَبِبَعْضِهَا طَعَامًا . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " هَذَا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تَجِيءَ الْمَسْأَلَةُ نُكْتَةً فِي وَجْهِكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لَا تَصْلُحُ إِلَا لِثَلَاثَةٍ لِذِي فَقْرٍ مُدْقِعٍ أَوْ لِذِي غُرْمٍ مُفْظِعٍ أَوْ لِذِي دَمٍ مُوجِعٍ "
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক আনসারী ব্যক্তি এসে ভিক্ষা চাইলে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার ঘরে কিছু আছে কি? সে বললো, একটি কম্বল আছে, যার কিছু অংশ আমরা পরিধান করি এবং কিছু অংশ বিছাই। একটি পাত্রও আছে, তাতে আমরা পানি পান করি। তিনি বললেন, সেগুলো আমার কাছে নিয়ে এসো, লোকটি তা নিয়ে এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হাতে নিয়ে বললেনঃ এ দুটি বস্তু কে কিনবে? এক ব্যক্তি বললো, আমি এগুলো এক দিরহামে নিবো। তিনি দুইবার অথবা তিনবার বললেনঃ কেউ এর অধিক মূল্য দিবে কি? আরেকজন বললো, আমি দুই দিরহামে নিতে পারি। তিনি ঐ ব্যক্তিকে তা প্রদান করে দিরহাম দু‘টি নিলেন এবং ঐ আনসারীকে তা প্রদান করে বললেনঃ এক দিরহামে খাবার কিনে পরিবার-পরিজনকে দাও এবং আরেক দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে নিয়ে এসো।
লোকটি তাই করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বহস্তে তাতে একটি হাতল লাগিয়ে দিয়ে বললেনঃ যাও, তুমি কাঠ কেটে এনে বিক্রি করো। পনের দিন যেন আমি আর তোমাকে না দেখি। লোকটি চলে গিয়ে কাঠ কেটে বিক্রি করতে লাগলো। অতঃপর সে আসলো, তখন তার নিকট দশ দিরহাম ছিলো। সে এর থেকে কিছু দিয়ে কাপড় এবং কিছু দিয়ে খাবার কিনলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ভিক্ষা করে বেড়ানোর চেয়ে এ কাজ তোমার জন্য অধিক উত্তম। কেননা ভিক্ষার কারণে কিয়ামতের দিন তোমার মুখমন্ডলে একটি বিশ্রি কালো দাগ থাকতো। ভিক্ষা করা তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারোর জন্য বৈধ নয়। (১) ধুলা-মলিন নিঃস্ব ভিক্ষুকের জন্য; (২) ঋণে জর্জরিত ব্যক্তি; (৩) যার উপর রক্তপণ আছে, অথচ সে তা পরিশোধ করতে অক্ষম।
(তিরমিযী (অধ্যায় : যাকাত, হাঃ ১২১৮), নাসায়ী (অধ্যায় : ব্যবসা, হাঃ ৪৫২০), ইবনু মাজাহ (অধ্যায় : তিজারাত, হাঃ ২১৯৮), আহমাদ।)