আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
888 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (5 points)
closed by
১)জান্নাত জাহান্নামের বিস্তারিত একটু বলবেন?
২)জান্নাতে মেয়েদের জন্য হুর বা ছেলেদের জন্য গেলবান থাকবে? থাকলে কি হবে তাদের দিয়ে? আমরা তো জানি দুনিয়াতে সমকামিতা হারাম। জান্নাতে কি এইসব হালাল?
৩) জান্নাতে আমাদের নেকি অনুযায়ী আমরা সুবিধা পাবো। যার বেশি নেকি সে বেশি আরামে থাকবে এইকরম কিছু কি?
৪) জান্নাতে নেকি এর প্রতিদান শেষ হয়ে গেলে কিভাবে নেয়ামতের এর স্তর থাকবে?
closed

1 Answer

+1 vote
by (565,890 points)
edited by
 
Best answer
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
জান্নাত ইসলামিক পরিভাষা অনুযায়ী, পার্থিব জীবনে যে সকল মুসলিম আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলবে এবং পরকালীন হিসাবে যার পাপের চেয়ে পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে তাদের জন্য আল্লাহ যে সকল জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন।
,
জান্নাতীদের বর্ণনায় মহান আল্লাহ বলেন,
اُولَئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَعْلُوْمٌ فَوَاكِهُ وَهُمْ مُّكْرَمُوْنَ فِىْ جَنَّتِ النَّعِيْمِ عَلَى سُرُرٍ مُّتَقَابِلِيْنَ يُطَافُ عَلَيْهِم بِكَأْسٍ مِن مَّعِينٍ بَيْضَاءَ لَذَّةٍ لِّلشَّارِبِيْنَ لَافِيْهَا غَوْلٌ وَلَاهُمْ عَنْهَايُنْزَفُوْنَ وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتِ الطَّرْفِ عِيْنٌ كَأَنَّ هُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُوْن.
‘তাদের জন্যই রয়েছে নির্ধারিত রুযী ফল-মূল এবং তারা সম্মানিত। তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতের বাগান সমূহ। তারা মুখোমুখি হয়ে আসনে আসীন থাকবে। তাদেরকে ঘুরে ফিরে পরিবেশন করা হবে স্বচ্ছ পানপাত্র। তা হবে উজ্জ্বল পানীয় পানকারীদের জন্য সুপেয় সুস্বাদু। তার দরুন তাদের দেহে কোন ক্ষতি হবে না এবং তাদের জ্ঞান বুদ্ধিও নষ্ট হবে না। তাদের নিকট দৃষ্টি সংরক্ষণকারী সুন্দর চক্ষু বিশিষ্ট নারীগণ থাকবে। তারা এমন স্বচ্ছ যেমন ডিমের খোসার নীচে লুকানো ঝিল্লি’ (ছাফফাত ৪১-৪৯)। 

জান্নাতে মানুষের জন্য রুযী রয়েছে। তাদের জন্য ফল বাগান রয়েছে। তারা হুরদের নিয়ে মুখোমুখি উঁচু আসনে বসে থাকবে। তাদের সামনে উৎকৃষ্টমানের শরাব পরিবেশন করা হবে। তাতে বিবেকের কোন ক্ষতি হবে না। তাদের উপভোগের জন্য হরিণ নয়না সুদর্শনা নারীগণ থাকবেন। তারা এত সচ্ছ ও নরম যেমন ডিমের খোসার নীচে লুকানো ঝিল্লি।
শরবের এ পানপাত্র নিয়ে ঘুরতে থাকবে সুশ্রী বালকেরা। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَيَطُوْفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَّهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَّكْنُونٌ ‘তাদের খেদমতের জন্য ঘুরতে থাকবে তাদের জন্য নিযুক্ত সেবক বালক। তারা যেন লুকানো মুক্তা’ (তুর ২৪)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنثُورًا ‘তাদের সেবার জন্য ঘুরতে থাকবে এমন সব ছেলে যারা সব সময় বালকই থাকবে। তোমরা তাদেরকে দেখলে বিক্ষিপ্ত মণি-মুক্তা বলেই মনে করবে’ (দাহর ১৯)।

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ يُطَافُ عَلَيْهِم بِصِحَافٍ مِّن ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ وَأَنتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ لَكُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ كَثِيْرَةٌ مِّنْهَا تَأْكُلُوْنَ.
‘তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা জান্নাতে প্রবেশ কর তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করে দেওয়া হবে। তাদের সামনে সোনার থালা ও পানপাত্রসমূহ পরিবেশন করা হবে এবং মন ভুলানো ও দৃষ্টির পরিতৃপ্তকারী জিনিস সমূহ সেখানে থাকবে। তাদেরকে বলা হবে এখন তোমরা চিরদিন এখানেই থাক। তোমরা পৃথিবীতে যে নেক আমল করেছিলে সে সব আমলের দরুন তোমরা এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছ। তোমাদের জন্য এখানে প্রচুর ফল-ফলাদী রয়েছে যা তোমরা খাবে’ (যুখরূফ ৭০-৭৩)। 

আল্লাহ তাআ‘লা অন্যত্র বলেন,
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاء غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ.
‘মুত্তাকী লোকদের জন্য যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে, তার পরিচয় তো এই যে, তাতে স্বচ্ছ ও সুমিষ্ট পানির ঝরণাধারা প্রবাহমান রয়েছে। এমন দুধের ঝর্ণাধারা প্রবাহমান রয়েছে যার স্বাদ ও বর্ণ কখনও বিকৃত হবে না। এমন পানির ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু ও সুপেয় হবে। আর এমন মধুর ঝর্ণাধারা প্রবাহমান রয়েছে, যা অতীব স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন। সেখানে তাদের সর্ব প্রকারের ফল থাকবে এবং তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রয়েছে ক্ষমা’ (মুহাম্মাদ ১৫)। 

আল্লাহ আরো বলেন,
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ، ذَوَاتَا اَفْنَانٍ، فِيْهِمَا عَيْنَانِ تَجْرِيَانِ، فِيْهِمَا مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانٌ.
‘আর যারা আপন প্রতিপালকের সামনে আসার ব্যাপারে ভয় পোষণ করে তাদের প্রত্যেকের জন্যই দু’টি করে বাগান রয়েছে’ (রহমান ৪৭)। উভয় বাগানই সবুজ-সতেজ ডাল-পালায় পরিপূর্ণ (রহমান ৪৯)। দু’টি বাগানেই ঝর্ণাধারা সদাসর্বদা প্রবাহমান রয়েছে (রহমান ৫১)। উভয় বাগানের ফলসমূহের অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হবে (রহমান ৫২)। 

আল্লাহ আরো বলেন,
مُتَّكِئِينَ عَلَى فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ- فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ- كَأَنَّهُنَّ الْيَقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ- وَمِنْ دُوْنِهِمَا جَنَّتَانِ- مُدْهَامَّتاَنِ- فِيْهِمَا عَيْنَانِ نَضَّاخَتَانِ- فِيْهِمَا فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ- فِيْهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٍ.
‘জান্নাতী লোকেরা এমন শয্যার উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে যার আবরণ মোটা রেশমের তৈরী হবে আর বাগানের ডাল-পালা ঝুঁকে নুয়ে থাকবে (রহমান ৫৪)। এ অফুরন্ত নিয়ামত সমূহের মধ্যে লজ্জাবনত নয়না ললনারাও থাকবে। তাদেরকে এ জান্নাতী লোকদের পূর্বে কোন মানুষ বা জ্বিন স্পর্শ করেনি (রহমান ৫৬)। তারা এমনই সুন্দরী রূপসী যেমন হীরা ও মণি-মুক্তা (রহমান ৫৮)। জান্নাতী লোকদের পূর্ববর্তী দু’টি বাগান ছাড়াও আরও দু’টি বাগান দেওয়া হবে, যা হবে ঘন-সন্নিবেশিত সবুজ-শ্যামল ও সতেজ। দু’টি বাগানে দু’টি উৎক্ষিপ্তমান ঝর্ণাধারা থাকবে (রহমান ৬৬)। তাতে বিপুল পরিমাণ ফল, খেজুর ও আনার থাকবে। এসব নিয়ামতের মধ্যেই থাকবে স্বচরিত্রের অধিকারী সুদর্শনা স্ত্রীগণ (রহমান ৭০)।

حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ- لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ- مُتَّكِئِينَ عَلَى رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ.
তাবুসমূহের মধ্যে সুরক্ষিত থাকবে বড় চোখবিশিষ্ট শ্বেত সুন্দরী নারীগণ। তাদেরকে কোন মানুষ বা জ্বিন স্পর্শ করেনি (রহমান ৭৪)। তারা অস্বাভাবিক উৎকৃষ্টমানের উত্তম সবুজ গালিচা এবং সুন্দর সুসজ্জিত শয্যায় হেলান দিয়ে অবস্থান করবে (রহমান ৭৭)।

اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِىْ مَقَامٍ اَمِيْنٍ فِىْ جَنَّتٍ وَعُيُوْنٍ يَلْبَسُوْنَ مِنْ سُنْدُسٍ وَّاِسْتَبْرَقٍ مُّتَقَابِلِيْنَ كَذَلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ.
‘আল্লাহভীরু লোকেরা দুশ্চিন্তা ও ভয়ভীতি মুক্ত নিরাপদ ও শান্তিময় স্থানে থাকবে। তা হবে বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারা পরিবেষ্টিত জায়গা। চিকন রেশম ও মুখমলের পোশক পরে সামনা-সামনি আসীন হবে। এটাই হবে তাদের জাঁকজমকের অবস্থা। সুন্দরী রুপসী হরিণ নয়না নারীদেরকে তাদের স্ত্রী করে দিবে’ (দুখান ৫১-৫৪)।

وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ اُولَئِكَ الْمُقَرَّبُوْنَ فِىْ جَنَّتٍ النَّعِيْمِ ثُلَّةٌ مِّنَ الْأَوَّلِينَ وَقَلِيْلٌ مِنَ الْاَخِرِيْنَ عَلىَ سُرُرٍ مَوْضُوْنَةٍ مُتَّكِئِينَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِينَ يَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ لَايُصَدَّعُوْنَ عَنْهَا وَلَا يُنْزَفُوْنَ وَفَاكِهَةٍ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ وَلَحْمِ طَيْرٍ مِّمَّا يَشْتَهُونَ وَحُوْرٍ عِيْنٍ كَأَمْثَالٍ اللُّؤْلُوٍ الْمَكْنُوْنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنُ لَايَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيْمًا اِلَّا قِيْلًا سَلَامًا سَلَامَا وَأَصْحَابُ الْيَمِيْنِ مَاأَصْحَابُ الْيَمِيْنِ فِىْسِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ وَطَلْحٍ مَنْضُوْدٍ وَظِلِّ مَمْدُوْدٍ وَمَاءٍ مَسْكُوْبٍ وَفَاكِهَةٍ كَثِيْرَةٍ لَاَمَقْطُوْعَةٍ وَّلَا مَمْنُوْعَةٍ وَفُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ اِنَّا أَنْشَائْنَاهُنَّ اِنْشَاءَ فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا عُرُبًا أَتْرَابًا.

‘আর অগ্রবর্তী লোকেরা তো সব ব্যাপারেই অগ্রবর্তী থাকবে। তারাই তো সান্নিধ্য লাভকারী লোক। তারা নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতে অবস্থান ও বসবাস করবে। পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে বেশিসংখ্যক আর পরবর্তী লোকদের মধ্যে কমসংখ্যক, তারা মণিমুক্তা খচিত আসন সমূহের উপর হেলান দিয়ে মুখোমুখি হয়ে বসে থাকবে। চির কিশোরীগণ তাদের সামনে প্রবাহমান ঝর্ণার সুরায় ভরা পানপাত্র পরিবেশন করবে। হাতলধারী বড় বড় সুরাভান্ড, হাতলবিহীন পানপাত্র নিয়ে দৌড়া দৌড়ি করতে থাকবে। এসব পানীয় পান করে তাদের মাথা ঘুরবে না, তাদের বিবেক বুদ্ধিও লোপ পাবে না। আর চির কিশোরীগণ তাদের সামনে নানা রকমের সুস্বাদু ফল পরিবেশন করবে। যেন ইচ্ছামত নিতে পারে। আর তাদের জন্য সুন্দর চক্ষুধারী নারীগণও থাকবে। তারা লুকিয়ে রাখা মুক্তার মত সুশ্রী, সুন্দরী হবে। এসব কিছু তাদের সেই আমলের শুভ প্রতিফল যা তারা দুনিয়ার জীবনে করেছিল। তারা সেখানে কোন বাজে কথা বা পাপের কথা শুনতে পাবে না। যা কথা হবে তা ঠিক ঠিক ও যথাযথ হবে। আর ডান বাহুর লোকেরা, ডান বাহুর লোকদের সৌভাগ্যের কথা আর কি বলা যায়। তাদের জন্য থাকবে কাটাবিহীন কুল বৃক্ষসমূহ, থরে থরে সাজানো কলা সমূহ, বিস্তীর্ণ এলাকাব্যাপী ছায়া, সর্বদা প্রবাহমান পানি, আর প্রচুর পরিমাণে ফল থাকবে। যা কোনদিন শেষ হবে না, খেতে কোন বাধা বিপত্তি ঘটবে না। তারা উচ্চ আসনসমূহে সমাসীন থাকবে। তাদের স্ত্রীগণকে আমি বিশেষভাবে সম্পূর্ণ নতুন করে সৃষ্টি করব এবং তাদেরকে কুমারী করে দিব। তারা নিজেরদের স্বামীদের প্রতি থাকবে আসক্ত। আর তারা বয়সে সবাই সমান হবে’ (ওয়াক্বিয়া ১০-৩৭)। (أبْكَارَ) শব্দটি মহিলাদের অতীব উত্তম নারীসুলভ সৌন্দর্য-বৈশিষ্ট্য বুঝাবার জন্য ব্যবহার হয়। অর্থাৎ এমন সব মহিলাকে বুঝাই যারা নারীত্বে উত্তম, উন্নতমান, শুভ আচার-আচরণ মিষ্ট-ভদ্র কথা-বার্তা ও নারীসূলভ প্রেম-ভালবাসা ও হৃদয়াবেগে ভরপুর। যারা নিজেদের স্বামীগণকে মন-প্রাণ দিয়ে পেতে চায়, কামনা করে, ভালবাসে এবং তাদের স্বামীরাও তাদের প্রতি অকৃত্রিম প্রেমিক।
,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تَعَالَى اَعَدَدْتُ لِعِبَادِىْ الصَّالِحِيْنَ مَالَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا اُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তত করে রেখেছি, যা কখনও কোন চক্ষু দেখেনি কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তর কখনও কল্পনাও করেনি (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৭১)। অত্র হাদীছের স্পষ্ট বিবরণ দেওয়া খুব কঠিন। কারণ আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে মানুষের ভোগ-বিলাস আরাম-আয়েশের জন্য এমন কিছু ব্যবস্থা করেছেন যা মানুষের চোখ কোন দিন দেখেনি। অথচ মানুষ পৃথিবীর অনেক কিছু দেখেছে। মানুষের কান কোনদিন শুনেনি। অথচ মানুষের কান অনেক নতুন পুরাতন রাজাধিরাজের ভোগ-বিলাসের কাহীনী শুনেছে। মানুষের অন্তর কোনদিন পরিকল্পনা করে নি। অথচ মানুষের অন্তরে অনেক কিছুই পরিকল্পনা হয়। জান্নাত এ সকল পরিকল্পনার চেয়েও ভিন্ন।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَوْضِعُ سَوْطٍ فِى الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি চাবুকের সমপরিমাণ জায়গা গোটা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৭২)। জান্নাতের সাথে পৃথিবীর আসলেই কোন তুলনা হয় না।

عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُدْوَةٌ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا وَلَوْ اَنَّ اِمْرَأةً مِنَ نِّسَاءِ اَهْلِ الْجَنَّةِ اِطَّلَعَتْ اِلَى الْاَرْضِ لَاضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا وَلَمَلَاَتْ مَابَيْنَهُمَا رِيْحًا وَلَنَصِيْفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আল্লাহর পথে এক সকাল এক সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও তার সমস্ত সম্পদ হ’তে উত্তম। যদি জান্নাতের কোন নারী পৃথিবীতে উঁকি দেয় তবে গোটা পৃথিবী তার রূপের ছটায় আলোকিত হয়ে যাবে এবং আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানসমূহ সুগন্ধিতে পরিণত হবে। এমনকি জান্নাতের নারীদের মাথার ওড়না গোটা দুনিয়া ও তার সব কিছুর চেয়ে উত্তম (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৭৪)। জান্নাতের কোন কিছুর সাথে পৃথিবীর কোন বস্ত্তর তুলনা চলে না। 

তাই নবী করীম(সা.) ইহকাল ও পরকালের তুলনা পেশ করে বলেন,
عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ وَاللهِ مَا الدُّنْيَا فِى الْاَخِرَةِ اِلَّا مِثْلَ مَايَجْعَلُ اَحَدُكُمْ اِصْبَعَهُ فِى الْيَمِّ فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ.
মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রা.) বলেন, আমি রাসূল(সা.) -কে বলতে শুনেছি আল্লাহর কসম! পরকালের তুলনায় দুনিয়ার উদাহরণ হ’ল যেমন তোমাদের কেউ সাগরের মধ্যে নিজের একটি আঙ্গুল ডুবানোর পর লক্ষ্য করে দেখুক আঙ্গুল কি পরিমাণ পানি নিয়ে আসল (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৬)। অত্র হাদীছে বুঝানো হয়েছে আঙ্গুলের পানি এবং সাগরের পানি কম-বেশী হওয়ার ব্যাপারে তুলনা যেমন ইহকাল ও জান্নাতের তুলনা তেমন।

عَنْ جَابِرٍ اَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِجَدْىٍ اَسَكَّ مَيِّتٍ فَقَالَ اَيُّكُمْ يُحِبُّ اَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ فَقَالَ مَا نُحِبُّ اَنَّهُ لَنَابِشَيْئٍ قَالَ فَوَاللهِ لَلدُّنْيَا اَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ.
জাবির (রা.) হ’তে বর্ণিত, রাসূল(সা.) একটি কানকাটা ছোট মরা ছাগলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, তোমাদের এমন কেউ আছে যে, ছাগলটি এক দিরহামের বিনিময়ে নিতে পসন্দ করে। ছাহাবীগণ বললেন, আমরা তো কোন কিছুর বিনিময়েই নিতে পসন্দ করি না। তখন নবী করীম(সা.) বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের কাছে এ মরা কানকাটা বাচ্চা ছাগলটি যত তুচ্ছ দুনিয়া আল্লাহর কাছে তার চাইতে অনেক গুণ বেশি তুচ্ছ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৩০)।

عَنْ سَهْلٍ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْكَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللهِ جَنَاحُ بَعُوْضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شُرْبَةً.
সাহ্ল ইবনে সা‘দ (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ‘যদি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহর কাছে মাছির একটি পাখার সমমূল্য হত, তা‘হলে তিনি কোন কাফিরকে এক ঢোকও পানি পান করতে দিতেন না’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৯৫০)। পৃথিবীর মূল্য একটি কানকাটা মরা বাচ্চা ছাগলের সমান নয়, আঙ্গুলের এক ফোটা পানির সমানও নয়, এমন কি একটি মাছির পাখার সমানও নয়। যা উপরের হাদীছগুলো প্রমাণ করে। অতএব, আল্লাহর কাছে পৃথিবীর কোন মূল্য নেই যাকে আমরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে অধিক প্রাধান্য দিয়েছি। অথচ জান্নাত একটি চিরস্থায়ী ভোগবিলাসের অতীব উত্তম স্থান।

عَنْ اَبِىْ مُوْسَى قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ لِلْمُؤْمِنِ فِى الْجَنَّةِ لَخِيْمَةٌ مِنْ لُؤْلُؤَةٍ وَاحِدَةٍ مَجُوْفَةٍ عَرْضُهَا سِتُّوْنَ مَيْلًا وَفِى رِوَايَةٍ طُوْلُهَا سِتُّوْنَ مَيْلًا فِىْ كُلِّ زَاوِيَةٍ مِنْهَا اَهْلٌ مَايَرَوْنَ الْاَخَرِيْنَ يَطُوْفُ عَلَيْهِمُ الْمُؤْمِنُ وَجَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ اَاَنِيَتُهُمَا وَمَا فِيْهِمَا وَجَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ اَنِيَتُهُمَا وَمَا فِيْهِمَا.
আবু মূসা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে মুমিনদের জন্য মুক্তা দ্বারা তৈরী একটি তাঁবু থাকবে, যার মধ্যস্থল হবে ফাঁকা। তার প্রশস্ততা ষাট মাইল। অন্য বর্ণনায় আছে তার দৈর্ঘ্যতা ষাট মাইল। তার প্রত্যেক কোণে জান্নাতীরা থাকবে। এক কোণের লোক অপর কোণের লোককে দেখতে পাবে না। ঈমানদারগণ তাদের নিকট যাতায়াত করবে। দু’টি জান্নাত হবে রূপার। তার ভিতরের পাত্র ও অন্যান্য সব কিছু হবে রূপার এবং অপর দু’টি জান্নাত হবে সোনার। তার পানপাত্র ও ভিতরে সব কিছু হবে সোনার (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৫)।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ فِى الْجَنَّةِ شَجَرَةٌ يَسِيْرُ الرَّاكِبُ فِىْ ظِلِّهَا مِائَةَ عَامٍ لَايَقْطَعُهَا وَلَقَابُ قَوْسِ اَحَدِكُمْ فِى الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهُ الشَّمْسُ اَوْ تَغْرِبُ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে এমন একটি বড় গাছ আছে, যদি কোন সওয়ারী তার ছায়ায় একশত বছর ভ্রমণ করে তবুও তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। জান্নাতে তোমাদের কারো একটি ধনুকের সমপরিমাণ জায়গাটাও সূর্য যার উপর উঠে ও ডুবে তার চেয়ে উত্তম (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৪)। হাদীছে বুঝা গেল জান্নাতের ধনুকের সমপরিমাণ জায়গা গোটা পৃথিবীর চেয়ে উত্তম।

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْجَنَّةِ مِائَةُ دَرَجَةٍ مَا بَيْنَ كُلِّ دَرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْاَرْضِ وَالْفِرْدَوْسُ اَعْلَاهَا دَرَجَةً مِنْهَا تَفَجَّرُ اَنْهَارُ الْجَنَّةِ الْاَرْبَعَةُ وَمِنْ فَوْقِهَا يَكُوْنُ الْعَرْشُ فَاذَا سَأَلَتُمُ اللهَ فاسْئَلُوْهَا الْفِرْدَوْسَ.
ওবাদা ইবনে ছমেত (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতের স্তর হবে একশতটি। প্রত্যেক দু’স্তরের মাঝখানের ব্যবধান হবে আসমান ও জমিনের দূরত্বের সমান। জান্নাতুল ফেরদাউসের স্তর হবে সবচেয়ে উপরে। সেখান থেকে প্রবাহিত রয়েছে চারটি ঝরণাধারা এবং তার উপর আল্লাহর আরশ। সুতরাং তোমরা যখনই আল্লাহর কাছে চাইবে তখন ফেরদাউস চাইবে (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৬)। অত্র হাদীছে যে চারটি ঝরণার কথা রয়েছে তা পানি, মধু, দুধ ও শরবের ঝরণা হ’তে পারে।

عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ فِى الْجَنَّةِ لَسُوْقًا يَأْتُوْنَهَا كُلَّ جُمْعَةٍ تَهُبُّ رِيْحُ الشِّمَالِ فَتَحَثُّوْا فِىْ وُجُوْهِهِمْ وَثِيَابِهِمْ فَيَزْدَادُوْنَ حُسْنًا وَجَمَالًا فَيَرْجِعُوْنَ اِلَى اَهْلِيْهِمْ وَقَدِ ازْدَادُوْا حُسْنًا وَجَمَالًا فَيَقُوْلُ لَهُمْ اَهْلُوْهُمْ وَاللهِ لَقَدِ ازْدَدَتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالًا.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে একটি বাজার আছে। প্রত্যেক জুম‘আর দিন জান্নাতীরা সেখানে একত্রিত হবে। তখন উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হবে এবং সে বাতাস তাদের মুখে ও পোশাকে সুগন্ধি নিক্ষেপ করবে। ফলে তাদের রূপ আরও বেশি হয়ে যাবে। অতঃপর তারা যখন বর্ধিত সুগন্ধি ও সৌন্দর্য অবস্থায় নিজের স্ত্রীদের কাছে যাবে তখন স্ত্রীগণ তাদেরকে বলবে, আল্লাহর কসম! আপনারা তো আমাদের অবর্তমানে সুগন্ধি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ফেলেছেন। এর উত্তরে তারা বলবে আল্লাহর কসম! আমাদের অবর্তমানে তোমাদের রূপ-সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে (মুসলিম,বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৭)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাতে বাজার থাকবে জান্নাতীরা জুম’আর দিন বাজারে যাবে। বাজারে কোন ক্রয়-বিক্রয় হবে না। সেখানে গেলে জান্নাতীদের রূপ বৃদ্ধি পাবে। এ সময় তাদের স্ত্রীগণ যারা বাড়ীতে আছে তাদেরও রূপ বেশি হয়ে যাবে।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلْوَنَ الْجَنَّةَ صُوْرَةَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ ثُمَّ الّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ كَاَشَدِّ كَوْكَبٍ دُرِّىٍّ فِى السَّمَاءِ اِضَاءَةً قُلُوْبُهُمْ عَلَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ لَااِخْتِلَافَ بَيْنَهُمْ وَلَاتَبَاغُضَ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ يُرَى مُخُّ سُوْقِهِنَّ مِنْ وَّرَاءِ الْعَظْمِ واللَّحْمِ مِنَ الْحُسْنِ يُسَبِّحُوْنَ اللهَ بُكْرَةً وَعَشِيًّا لَايَسْقُمُوْنَ وَلَايَبُوْلُوْنَ وَلَايَتَغَوَّطُوْنَ وَلَايَتْفُلُوْنَ وَلَا يَمْتَخِطُوْنَ اَنِيَتُهُمُ الذَّهَبُ وَالْفِضَّةُ وَاَمْشَاطُهُمُ الذَّهَبُ وَوَقُوْدُ مَجَامِرِهِمُ الْاُلُوَّةُ وَرَشْحُهُمْ الْمِسْكُ عَلَى خُلُقِ رَجُلٍ وَاحِدٍ عَلَى صُوْرَةِ اَبِيْهِمْ اَدَمَ سِتُّوْنَ ذِرَاعًا فِى السَّمَاءِ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা ১৫ দিনে চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল ও সুন্দর রূপ ধারণ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা হবে আকাশের তারকার ন্যায় ঝকঝকে। জান্নাতীদের সকলের অন্তর এক ব্যক্তির অন্তরের ন্যায় হবে। তাদের মধ্যে কোন মতবিরোধ থাকবে না এবং হিংসা বিদ্বেষও থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের জন্য বিশেষ হুরদের মধ্য থেকে দু’জন দু’জন করে স্ত্রী থাকবে। বেশি সুন্দরী হওয়ার দরুন তাদের হাড় ও গোশতের উপর হ’তে নলার ভিতরের মজ্জা দেখা যাবে। তারা সকাল-সন্ধায় আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনায় রত থাকবে। তারা কখনও অসুস্থ হবে না। তাদের পেশাব হবে না। তাদের পায়খানার প্রয়োজন হবে না। তারা থুথু ফেলবে না। তাদের নাক দিয়ে শ্লেষ্যা বের হবে না। তাদের ব্যবহারিক পাত্র সমূহ হবে সোনা-রূপার। তাদের চিরনী হবে স্বর্ণের এবং তাদের সুগন্ধির জ্বালানী হবে আগরের। তাদের গায়ের ঘাম হবে কস্তরীর মত সুগন্ধি। তাদের স্বভাব হবে এক ব্যক্তির ন্যায়। শারীরিক গঠন হবে তাদের পিতা আদম (আঃ)-এর মত, উচ্চতায় ষাট গজ লম্বা হবে (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৮)।
অত্র হাদীছে বুঝা গেল, যারা সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল হবে। মানুষের মধ্যে কোন মতবিরোধ কোন হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না। অন্যের তুলনায় বিশেষ মর্যাদাসম্পূর্ণ দু’জন স্ত্রী থাকবে। তারা খুব বেশি সুন্দরী হবে। এ জন্য তাদের পায়ের নলার ভিতরের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হবে না। তাদের মুখে থুথু আসবে না, তাদের নাকে শিকনি আসবে না। সেই জান্নাতের পাত্রসমূহ হবে সোনা-রূপার। সুগন্ধি জ্বালানী হবে এক ধরনের আগরবাতি। শরীরের ঘামের গন্ধ হবে কস্তরীর মত সুগন্ধি। সকলের স্বভাব ও আচার আচরণ হবে একই।

عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُوْنَ فِيْهَا وَيَشْرَبُوْنَ وَلَايَبُوْلُوْنَ وَلَايَتَغَوَّطُوْنَ وَلَايَتْفُلُوْنَ وَلَايَمْتَخِطُوْنَ قَالُوْا فَمَا بَالُ الطَّعَامِ قَالَ جُشَاءٌ وَرَشْحٌ كَرَشْحِ الْمِسْكِ يُلْهَمُوْنَ التَّسْبِيْحَ وَالتَّحْمِيْدَ كَمَا تُلْهَمُوْنَ النَّفْسَ.
জাবের (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতীরা সেখানে খাবে, পান করবে। কিন্তু তারা থুথু ফেলবে না, মল-মূত্র ত্যাগ করবে না এবং তাদের নাক হ’তে শিকনীও বের হবে না। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন তাহ‘লে তাদের এসব খাদ্যের পরিণতি কি হবে? নবী করীম(সা.) বললেন, ঢেকুর এবং মেশকের ন্যায় সুগন্ধি ঘাম দ্বারা শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহর তাসবীহ্ ও তার প্রশংসা এমনভাবে তাদের অন্তরে ঢেলে দেওয়া হবে যেমন শ্বাস-নিঃশ্বাস অবিরাম চলছে (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৯)। অত্র হাদীছে প্রমাণিত হয় যে, তারা জান্নাতে খাবে ও পান করবে কিন্তু পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হবে না। কারণ সেগুলি ঢেকুর ও ঘামের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে। আর শ্বাস-প্রশ্বাস যেমন নিজ গতিতে চলে। এ জন্য কোন চিন্তা ভাবনা বা কোন পরিকল্পনা লাগে না তেমনি জান্নাতীদের মুখে সর্বদা তাসবীহ্ চলতে থাকবে। তাসবীহ্ পাঠের জন্য কোন চেষ্টা করা লাগবে না।

জান্নাতের প্রশস্ততাসম্পাদনা

জান্নাতের প্রশস্ততা সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে ও সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে। (সূরা আল ইমরান- ১৩৩)
জান্নাত দেখার পরই সঠিকভাবে বোঝা যাবে যে জান্নাত কত বিশাল এবং তার নেয়ামত কত অসংখ্য। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
তুমি যখন দেখবে তখন দেখতে পাবে ভোগ বিলাসের নানান সামগ্রী আর এক বিশাল রাজ্য। (সূরাহ আদ্-দাহ্রঃ ২০)
জান্নাতে শত স্তর আছে আর প্রত্যেক স্তরের মাঝে এত দূরত্ব আছে যতটা দূরত্ব আছে আকাশ ও যমিনের মাঝে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে শত স্তর আছে। প্রত্যেক স্তরের মাঝে দূরত্ব হল আকাশ ও যমীনের দূরত্বের সমান। আর ফেরদাউস তার মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে আছে। আর সেখান থেকেই জান্নাতের চারটি ঝর্ণা প্রবহমান। এর উপরে রয়েছে আরশ। তোমরা আল্লাহ্র নিকট জান্নাতের জন্য দু'আ করলে জান্নাতুল ফেরদাউসের জন্য দু'আ করবে'। (তিরমিজী- কিতাবুল জান্নাহ)

জান্নাতে একটি বৃক্ষের ছায়া এত লম্বা হবে যে কোন অশ্বারোহী ঐ ছায়ায় শত বছর পর্যন্ত চলতে পারবে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে যার ছায়ায় কোন আরোহী শত বছর পর্যন্ত চলতে পারবে। আর তোমরা ইচ্ছা করলে তিলাওয়াত করতে পার ‘এবং দীর্ঘ ছায়া"। আর জান্নাতে তোমাদের কারও একটি ধনুকের পরিমাণ জায়গাও ঐ জায়গা অপেক্ষা উত্তম যেখানে সূর্য উদিত হয় আর সূর্য অস্তমিত হয় (অর্থাৎ পৃথিবীর চেয়ে)"। (সহীহ বুখারী, হাদীস সংখ্যা- ৩২৫২, ৩২৫৩)

সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারীকে এ দুনিয়ার চেয়ে দশগুণ বড় জান্নাত দান করা হবে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন', জাহান্নামে থেকে সবশেষে বের হয়ে আসা ব্যক্তিকে আমি চিনি। সে হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে। তাকে বলা হবে, "যাও জান্নাতে প্রবেশ কর"। নবী সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "সে গিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে দেখবে, লোকেরা স্ব স্ব স্থান অধিকার করে আছে। অতঃপর তাকে বলা হবে, "আচ্ছা সে যুগের (জাহান্নামের শাস্তি) কথা তোমার স্মরণ আছে কি?" সে বলবে, "হ্যাঁ, মনে আছে"। তাকে বলা হবে, "তুমি কি পরিমাণ জায়গা চাও তা ইচ্ছা কর"। সে ইচ্ছা করবে। তখন তাকে বলা হবে, "তুমি যে পরিমাণ ইচ্ছা করেছো তা এবং দুনিয়ার দশগুণ জায়গা তোমাকে দেয়া হল"। একথা শুনে সে বলবে, "আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন? অথচ আপনি হলেন সর্ব শক্তিমান"। বর্ণনাকারী ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, "এ সময় আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়েছে'। (সহীহ মুসলিম - কিতাবুল ঈমান)

জান্নাতে সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করার পরও অনেক জায়গা বাকী থাকবে যা পূর্ণ করার জন্য আল্লাহ্ তা'আলা নতুন জীব সৃষ্টি করবেন। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন', জান্নাতে যতটুকু স্থান আল্লাহ্ চাইবেন ততটুকু স্থান খালি থেকে যাবে। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী অন্য এক জীব সৃষ্টি করবেন'। (সহীহ মুসলিম - কিতাবুল জান্নাহ)


জান্নাতের অট্টালিকাসমূহসম্পাদনা

কুরআন মাজীদে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
মু'মিন পুরুষ আর মু'মিন নারীর জন্য আল্লাহ্ অঙ্গীকার করেছেন জান্নাতের যার নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, আর জান্নাতে চিরস্থায়ী উত্তম বাসগৃহের; আর সবচেয়ে বড় (যা তারা লাভ করবে তা) হল আল্লাহ্র সন্তুষ্টি। এটাই হল বিরাট সাফল্য। (সূরা তওবা
জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ সোনা-রূপার ইট দিয়ে নির্মিত হবে। সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরাইরাহ রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, "আমি জিজ্ঞেস করলাম, "ইয়া রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সৃষ্টিকে কী দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে?" রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "পানি দিয়ে"। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "জান্নাত কী দিয়ে নির্মিত?" তিনি বললেন, "একটি ইট রৌপ্যের এবং আরেকটি ইট স্বর্ণের। তার গাঁথুনি হল সুগন্ধিযুক্ত মেশক আম্বর। তার কংকর মোতি ও ইয়াকুতের। তার মাটি জাফরানের। যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করবে সে জীবন উপভোগ করবে, তার কোন কষ্ট হবে না। চিরকাল জীবিত থাকবে, মৃত্যু হবে না। জান্নাতীদের কাপড় কখনো পুরানো হবে না। আর তাদের যৌবন কখনো বিনষ্ট হবে না"। (তিরমিজী- কিতাবুল জান্নাহ)

জান্নাতের কোন কোন অট্টালিকায় স্বর্ণের বাগান থাকবে। আবার কোন কোনটিতে রূপার বাগান থাকবে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন', দুইটি জান্নাত এমন রয়েছে যে, এর যাবতীয় পাত্রসমূহ ও তার মধ্যে যা কিছু আছে সবই রৌপ্য নির্মিত। আবার দুইটি জান্নাত এমন আছে যে এর সমস্ত আসবাবপত্র এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে সবই স্বর্ণ নির্মিত। জান্নাতে আদনের অধিবাসীদের মধ্যে এবং তাদের প্রতিপালককে দর্শনের মধ্যে কেবল তাঁর বড়ত্ব ও মহানত্বের চাদরখানা ব্যতীত আর কোন আড়াল থাকবে না'। (সহীহ মুসলিম - কিতাবুল ঈমান)

জান্নাতের অট্টালিকাসমূহে সাদা মোতির নির্মিত বড় বড় সুন্দর গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। আনাস বিন মালেক রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে মেরাজের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন', অতঃপর আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হল, যাতে সাদা মোতির নির্মিত গম্বুজ আছে। আর তার মাটি হল মেশক আম্বরের'। (সহীহ মুসলিম - কিতাবুল ঈমান)

জান্নাতের তাঁবুসমূহসম্পাদনা

জান্নাতীদের প্রত্যেকের অট্টালিকায় তাঁবু থাকবে যেখানে হুরেরা অবস্থান করবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
তাঁবুতে সুরক্ষিত থাকবে সুলোচনা সুন্দরীরা। (আর রাহমান - ৭২)
জান্নাতের তাঁবু ষাট মাইল প্রশস্ত হবে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন', জান্নাতের মধ্যে ফাঁপা মোতির একটি তাঁবু থাকবে। এর প্রশস্ততা হবে ষাট মাইল। এর প্রতি কোণে থাকবে হুর-বালা। এদের এক কোণের জন অপর কোণের জনকে দেখতে পাবে না। ঈমানদার লোকেরা তাদের কাছে যাবে। এতে থাকবে দু'টি বাগান, যার সকল পাত্র এবং ভেতরের সকল বস্তু হবে রূপার তৈরি'। (সহীহ বুখারী, হাদিস সংখ্যা- ৪৮৭৯)

জান্নাতের বৃক্ষসমূহসম্পাদনা

জান্নাতের বৃক্ষসমূহ কাঁটা বিহীন হবে ও তাদের ছায়া অনেক লম্বা হবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
আর ডানদিকের দল, কত ভাগ্যবান ডানদিকের দল! তারা থাকবে কাঁটা বিহীন বরই গাছগুলোর মাঝে। কলা গাছের মাঝে যাতে আছে থরে থরে সাজানো কলা, বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছায়া, অবিরাম প্রবাহমান পানির ধারে, আর পর্যাপ্ত ফলমূল পরিবেষ্টিত হয়ে। (সূরাহ আল-ওয়াক্বি'আহঃ ২৭-৩২)
জান্নাতের বৃক্ষসমূহ সর্বদা শস্য-শ্যামল থাকবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
ঘন সবুজ এ বাগান দু'টি। (সূরা আর রাহমান ৬৪)
জান্নাতের বৃক্ষসমূহের শাখাগুলো লম্বা ও ঘন হবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
দু'টোই শাখা পল্লবে ভরপুর। (সূরা আর রাহমান ৪৮)
'রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জান্নাতের প্রতিটি বৃক্ষের মূল হবে স্বর্ণের'। (তিরমিজী- কিতাবুল জান্নাহ)

জান্নাতের ফলসমূহসম্পাদনা

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
তাতে আছে ফলমূল, আর খেজুর আর ডালিম । (সূরা আর-রহমান - ৬৮)
জান্নাতের প্রত্যেক জান্নাতীর পছন্দমত সর্ব প্রকার ফলমূল মজুদ থাকবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
মুত্তাকীরা থাকবে ছায়া আর ঝর্ণাধারার মাঝে, আর তাদের জন্য থাকবে ফলমূল-যেটি তাদের মন চাইবে। (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা তৃপ্তির সাথে খাও আর পান কর, তোমরা যে কাজ করেছিলে তার পুরস্কারস্বরূপ। সৎকর্মশীলদের আমি এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি। (সূরাহ আল-মুরসালাতঃ ৪১-৪৪)
জান্নাতের ফল সর্বদা জান্নাতীদের নাগালের মধ্যে থাকবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
জান্নাতের বৃক্ষরাজির ছায়া তাদের উপর থাকবে, আর ফলের গুচ্ছ একেবারে তাদের নাগালের মধ্যে রাখা হবে। (আদ-দাহর ১৪)
জান্নাতের ফলের ছড়া অনেক বড় হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে সূর্য গ্রহণের সলাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে, সাহাবাগণ রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু 'আলায়হি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, "ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু 'আলায়হি ওয়া সাল্লাম! আমরা আপনাকে দেখলাম, আপনি এ স্থানে দাঁড়িয়ে কোন কিছু হাত বাড়িয়ে নিতে যাচ্ছেন। আবার একটু পরে দেখলাম হাত ফিরিয়ে নিলেন"। রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু 'আলায়হি ওয়া সাল্লাম বললেন, "আমি জান্নাত দেখতে পেলাম। অতএব জান্নাতে থেকে ফলের একটা ছড়া নিতে যাচ্ছিলাম। যদি তা নিয়ে নিতাম তবে তোমরা তা পৃথিবী কায়েম থাকা পর্যন্ত খেতে পারতে"। (সহীহ মুসলিম)

জান্নাতের নদীসমূহসম্পাদনা

জান্নাতের নদীসমূহের পানির রং ও স্বাদ সর্বদা একই রকমের থাকবে। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
মুত্তাক্বীদেরকে যে জান্নাতের ও'য়াদা দেয়া হয়েছে তার উপমা হলঃ তাতে আছে নির্মল পানির ঝর্ণা, আর আছে দুধের নদী যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু মদের নদী আর পরিশোধিত মধুর নদী। (সূরাহ মুহাম্মদঃ ১৫)
আবু হুরাইরাহ রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "সাইহান, জাইহান, ফোরাত ও নীল জান্নাতের নদী"। (সহীহ মুসলিম- কিতাবুল জান্নাত)
হাকীম বিন মোয়াবিয়া তার পিতা থেকে তিনি নবী সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, "জান্নাতে পানির সাগর, মধুর সাগর, দুধের সাগর ও শরাবের সাগর রয়েছে। এগুলো থেকে পরে আরো নহরের শাখা-প্রশাখা বের হবে"। (তিরমিজী)
আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ্ স্বীয় দয়ায় যাকে খুশি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। (অতঃপর দীর্ঘদিন পর বলবেন) দেখ যে ব্যক্তির অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান আছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের কর। তখন তারা এমন অবস্থায় বের হবে যে তাদের শরীর কয়লার ন্যায় জ্বলে গেছে। তখন তাদেরকে হায়াত বা হায়া নামক নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। তখন তারা এমনভাবে সজীব হয়ে উঠবে, যেমন বন্যার আবর্জনার মাঝে চারাগাছ সজীব হয়ে উঠে। তোমরা কি কখনো দেখনি যে কেমন হলুদ রং বিশিষ্ট হয়ে ওঠে"। (সহীহ মুসলিম- কিতাবুল ঈমান)

কাওসার নদীসম্পাদনা

আনাস ইবনু মালিক রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সূত্রে নবী সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, "আমি জান্নাতে ভ্রমণ করছিলাম, এমন সময় এক নহরের কাছে এলে দেখি যে তার দু'ধারে ফাঁপা মুক্তার গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম, "হে জিব্রীল! এটা কী?" তিনি বললেন, "এটা ঐ কাউসার যা আপনার প্রতিপালক আপনাকে দান করেছেন"। তার ঘ্রাণে অথবা মাটিতে ছিল উত্তম মানের মিশ্ক এর সুগন্ধি"। (সহীহ বুখারী, হাদীস সংখ্যা-৬৫৮১)[৩৪]
আবদুল্লাহ বিন ওমর রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "কাওসার জান্নাতের একটি নদী। যার উভয় তীর স্বর্ণ নির্মিত। তার পানি ইয়াকুত ও মোতির উপর প্রবহমান। তার মাটি মেশকের চেয়েও বেশি সুগন্ধময়। তার পানি মধুর চেয়ে অধিক মিষ্টি এবং বরফের চেয়ে অধিক সাদা"। (তিরমিজী)

আনাস বিন মালেক রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কাওছার কি? তিনি বললেন, "এটি একটি নদী, যা আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে জান্নাতে দান করবেন। তা দুধ অপেক্ষা সাদা এবং মধু থেকেও সুমিষ্ট। এর মাঝে রয়েছে বহু পাখি। এগুলোর গর্দান হবে উটের গর্দানের মত"। উমর রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, "এগুলো তো খুব মোটা-তাজা হবে"। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "এগুলোর আহারকারী আরো সুখী হবে"। (তিরমিজী- কিতাবুল জান্নাহ)

জান্নাতীদের খাবার ও পানীয়সম্পাদনা

জান্নাতীদের প্রথম খাবার ও পানীয়

রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোলাম সাওবান রাযিয়াল্লাহু তা'আলা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট দাঁড়িয়ে ছিলাম। ইতোমধ্যে ইহুদীদের পাদ্রীদের মধ্য থেকে একজন পাদ্রী আসল এবং জিজ্ঞেস করল, "যে দিন আকাশ ও যমিন প্রথম পরিবর্তন করা হবে তখন মানুষ কোথায় থাকবে?" রাসূলুল্লাহ্ সল্লল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "পুলসেরাতের নিকটবর্তী এক অন্ধকার স্থানে"। অতঃপর ইহুদী আলেম জিজ্ঞেস করল, "সর্ব প্রথম কে পুলসিরাত পার হবে?" তিনি বললেন, "গরীব মুহাজিরগণ (মক্কা থেকে মদীনার হিযরতকারী)"। ঐ ইহুদী পাদ্রী আবার জিজ্ঞেস করল, "জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর সর্ব প্রথম তাদেরকে কী খাবার পরিবেশন করা হবে?" রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "মাছের কলিজা"। ইহুদী জিজ্ঞেস করল, "এর পর কী পরিবেশন করা হবে?" রাসূলুল্লাহ সল্লল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "এরপর জান্নাতীদের জন্য জান্নাতে পালিত গরুর গোশত পরিবেশন করা হবে"। এরপর ইহুদী জিজ্ঞেস করল, "খাওয়ার পর পানীয় কী কী পরিবেশন করা হবে?" রাসূলুল্লাহ সল্লল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "সালসাবীল নামক ঝর্ণার পানি"। ইহুদী পাদ্রী বলল, "তুমি সত্য বলেছ..."। (সহীহ মুসলিম- কিতাবুল হায়েজ)

এ পৃথিবী হবে জান্নাতীদের রুটি

আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সল্লল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেনঃ কিয়ামতের দিন এ পৃথিবী একটি রুটির ন্যায় হবে। আল্লাহ্ স্বীয় হস্তে তা এমনভাবে উলট পালট করবেন যেমন তোমাদের কেউ সফররত অবস্থায় তার রুটিকে উলট পালট কর। আর ঐ রুটি দিয়ে জান্নাতীদেরকে মেহমানদারী করা হবে"। (সহীহ মুসলিম)

সকাল সন্ধ্যায় জান্নাতীদের খাবার পরিবেশন করা হবে

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
এবং সকাল সন্ধ্যায় তাদের জন্য রিযিকের ব্যবস্থা থাকবে। (সূরাহ মারইয়ামঃ ৬২)

জান্নাতের শরাব পান করার পর কোন প্রকার মাতলামি ভাব দেখা দিবে না। (সূরাহ আস্-সা-ফ্ফাতঃ ৪১-৪৭)

জান্নাতীদেরকে এমন শরাব পান করানো হবে যার মধ্যে আদার স্বাদ থাকবে। (সূরাহ আদ্-দাহ্রঃ ১৫-১৮)

জান্নাতীদের পানের জন্য সুস্বাদু পানি, সুমিষ্ট দুধ, সুস্বাদু শরাব, পরিষ্কার স্বচ্ছ মধুর নদীও জান্নাতে বিদ্যমান থাকবে। (সূরাহ মুহাম্মদঃ ১৫)

জান্নাতীদের মেহমানদারীর জন্য অন্যান্য ফল ব্যতীত খেজুর, আঙ্গুর, আনার, বরই, আনজীর ইত্যাদি ফলও থাকবে। (সূরাহ আর-রহমানঃ ৬৮), (সূরাহ আল-ওয়াক্বি'আহঃ ২৭-৩২)

জান্নাতীদের সেবায় 'শারাবান ত্বাহুরা' (পবিত্র পরিচ্ছন্ন পানীয়) পেশ করা হবে। (সূরাহ আদ্-দাহ্রঃ ২১)

উটের গর্দানের মত পাখির গোশত জান্নাতীদের পরিবেশন করা হবে। (তিরমিজী- কিতাবুল জান্নাহ)

★★জাহান্নাম ইসলামের পরিভাষায় পরকালের আবাসস্থল যা এমন পাপীদের জন্য নির্দিষ্ট যারা আল্লাহ’র ক্ষমা লাভ করবে না। 

হযরত আনাস সূত্রে নবী করিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, 'হে লোক সকল ! তোমরা (আল্লাহর আযাবের ভয়ে) বেশি করে কাঁদ । আর যদি তোমরা এরূপ করতে না পার (কান্না যদি না আসে) , তাহলে অন্তত (ভয়ে) কান্নার ভান কর । কেননা, জাহান্নামীরা জাহান্নামে গিয়ে এমনভাবে কাঁদবে যে, তাদের অশ্রু তাদের মুখের উপর এভাবে গড়িয়ে পড়বে , মনে হবে এটা পানির নালা । এভাবে কাঁদতে কাঁদতে তাদের অশ্রু শেষ হয়ে যাবে এবং এর স্হলে রক্ত প্রবাহিত হতে শুরু করবে । তারপর (এ রক্ত ক্ষরণের দরুন) তাদের চোখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে যাবে । ( এরপর এই ক্ষত স্হান থেকে আরো বেশি রক্ত বের হবে, তখন জাহান্নামীদের এই অশ্রু এবং রক্তের পরিমাণ এমন হবে যে,) সেখানে যদি অনেকগুলো নৈাকা চালিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে অনায়াসে চলতে পারবে । - শরহুস সুন্নাহ ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণিত , রাসূলূল্লাহ এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন, 'তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর যে, মুসলিম না হয়ে তোমরা মরবেনা ।' এরপর তিনি (আল্লাহকে এবং আল্লাহর আযাবকে ভয় করা প্রসঙ্গে ) বললেনঃ যাককুম (যার প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে এটা জাহান্নামে উৎপন্ন এক প্রকার গাছ এবং এটা জাহান্নামীদের খাবার হবে ) এর একটি ফোটা যদি এই দুনিয়ায় ছিটকে পড়ে, তাহলে পৃথিবীতে বসবাসকারী সবার জীবনোপকরণ বিনষ্ট করে দিবে । অতএব, ঐ ব্যক্তির কি অবস্হা হবে যার খাবারই হবে যাক্কুম ?' - তিরমিযি ।

জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি হবে আবু তালিবের। তার পায়ে দু’খানা আগুনের জুতা পরিয়ে দেয়া হবে, ফলে তার মাথার মগজ ফুটতে থাকবে। বুখারী- ইবেন আব্বাস দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুনে ঢুকিয়ের বের করা হবে। তাকে বলা হবে, তুমি দুনিয়াতে কখনো সুখ ভোগ করেছিলে? সে বলবে না, আমি কখনো সুখ ভোগ করিনি। মুসলিম- আনাস জাহান্নামের সবচেয়ে কম ও সহজতর শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তি পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ থাকলেও তার বিনিময়ে এ আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতো। বুখারী, মুসলিম- আনাস

মানুষের  উচিত জাহান্নাম হ’তে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চাওয়া।
عَنَ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا اسْتَجَارَ عَبْدٌ مِنَ النَّارِ سَبْعَ مَرَّاتٍ فِىْ يَوْمِ اِلَّا قَالَتِ النَّارُ يَارَبِّ اِنَّ عَبْدَكَ فُلَانًا قَدْ اسْتَجَارَكَ مِنِّى فَأَجِرْهُ وَلَايَسْأَلُ اللهَ عَبْدٌ الْجَنَّةَ فِىْ يَوْمٍ سَبْعَ مَرَّاتٍ اِلَّا قَالَتِ الْجَنَّةُ يَارَبِّ اِنَّ عَبْدَكَ فُلَانًا سَأَلَنِىْ فَاَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, কোন মানুষ সাতবার জাহান্নাম হ’তে পরিত্রাণ চাইলে জাহান্নাম বলে, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আপনার ওমক দাস আমার থেকে আপনার নিকট পরিত্রাণ চেয়েছে। আপনি তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আর কোন বান্দা আল্লাহর নিকট সাতবার জান্নাত চাইলে, জান্নাত বলে, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আপনার ওমুক বান্দা আমাকে চেয়েছে। আপনি দয়া করে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৫০৬)।

عَنْ اَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَأَلَ اللهَ الْجَنَّةَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ الْجَنَّةُ اللهُمَّ اَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ. وَمَنِ اسْتَجَارَ مِنَ النَّارِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ النَّارُ اللهُمَّ اجِرْهُ مِنَ النَّارِ.
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তিনবার জান্নাত চায়, তখন জান্নাত বলে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চায়, তখন জাহান্নাম বলে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দাও (ইবনে মাজাহ হা/৪৩৪০, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেকের উচিত দিনে তিনবার অথবা সাতবার করে জান্নাত চাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চাওয়া। জান্নাত চাওয়ার শব্দগুলি এরূপ হ’তে পারে اللهُمَّ اِنِّى أسْئَلُكَ جَنَّةَ الْفِرْدَوْسِ ‘হে আল্লাহ! আমাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান কর’। আর জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চাওয়ার শব্দগুলি এরূপ হ’তে পারে اللهُمَّ أجِرْنِىْ مِنَ النَّارِ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও’
এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ اصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ ‘এই সেই জাহান্নাম, যার ব্যাপারে তোমাদেরকে সাবধান ও সতর্ক করা হচ্ছিল। তোমরা দুনিয়াতে যে কুফরী করতেছিলে, তার প্রতিফল হিসাবে এখন এ জাহান্নমে প্রবেশ কর’ (ইয়াসীন ৬৪)। অত্র আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে দেয়ার সময় পৃথিবীর কথা স্মরণ করিয়ে অপমান করে জাহান্নামে দেয়া হবে।

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
اَذَلِكَ خَيْرٌ نُزُلًا اَمْ شَجَرَةٌ الزَّقُّوْمِ اِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةَ للِّظَّالِمِيْنَ اِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِىْ اَصْلِ الْجَحِيْمِ طَلْعُهَا كَاَنَّهُ رُؤُسٌ الشَّيَاطِيْنِ فَاِنَّهُمْ لَاكِلُوْنَ مِنْهَا فَمَا لِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ ثُمَّ اِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِنْ حَمِيْمٍ ثُمَّ اِنَّ مَرْجِعَهُمْ لَااِلَى الْجَحِيْمِ.
‘বল, জান্নাতের এ বড় সফলতা উত্তম, না এ যাক্কুম গাছ? আমি এ যাক্কুম গাছটি অত্যাচারীদের জন্য বিপদজনক করেছি। এটা এমন একটা গাছ যা জাহান্নামের তলদেশ হ’তে বের হয়। এর ছড়াগুলি যেন শয়তানের মাথা। জাহান্নামীরা তা খাবে এবং তা দ্বারা পেট পূর্ণ করবে। তারপর পান করার জন্য তাদেরকে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। তারপর তারা সে জাহান্নামের আগুনের দিকেই ফিরে যাবে’ (ছাফফাত ৬৩-৬৯)। 
যাক্কুম এক প্রকার গাছ। এ গাছ আরব দেশের তেহামা অঞ্চলে হয়। তার স্বাদ তিক্ত ও কটু আর গন্ধ অসহ্যকর। ভাঙ্গলে দুধের মত রস বের হয়। শরীরে লাগলে ফোস্কা পড়ে যায়।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
اِنَّ شَجَرَةَ الزَّقُّوْمِ طَعَامُ الْاَثِيْمِ كَالْمُهْلِىْ يَغْلِىْ فِى الْبُطُوْنِ كَغَلْىِ الْحَمِيْمِ خُذُوْهُ فَاعْتِلُوْهُ اِلَى سَوَاءِ الْجَحِيْمِ ثُمَّ صُبُّوْا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيْمِ ذُقْ.
‘যাক্কুম গাছ হবে পাপীদের খাদ্য। তেলের তলানীর মত। এ খাদ্য পেটের মধ্যে এমনভাবে উথলে উঠবে, যেমন টগবগ করে ফুটন্ত পানি। (ফেরেশতাদের বলা হবে) তাকে ধর এবং টেনে হেচড়ে নিয়ে যাও জাহান্নামের মাঝখানে। তারপর ঢেলে দাও তার মাথার উপর টগবগ করা ফুটন্ত পানি আর বলা হবে এখন গ্রহণ কর এর স্বাদ’ (দুখান ৪৫-৪৭)। وَسُقُوْا مَاءً حَمِيْمًا فَقَطّعَ اَمْعَائَهُمْ- ‘তাদেরকে এমন উত্তপ্ত পানি পান করানো হবে যা তাদের নাড়ী-ভূঁড়ি পর্যন্ত ছিন্ন ভিন্ন করে দিবে’ (মুহাম্মাদ ১৫)।

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, اِنَّ الْمُجْرِمِيْنَ فِى ضَلَالٍ وَّسُعُرٍ يَوْمَ يُسْحَبُوْنَ فِى النَّارِ عَلى وُجُوْهِهِمْ ذُوْقُوْا مَسَّ سَقَرَ. ‘অপরাধী লোকেরা ভুল ধারণায় নিমজ্জিত এবং তাদের বিবেক বুদ্ধি তিরোহিত যেদিন তাদেরকে উল্টাভাবে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেদিন তাদেরকে বলা হবে এখন সাকার নামক জাহান্নামের স্বাদ আস্বাদন কর’ (কামার ৪৭-৪৮)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
ثُمَّ اِنَّكُمْ اَيُّهَا الضَّالُّوْنَ الْمُكَذِّبُوْنَ لَأَكِلُوْنَ مِّنْ شَجَرٍ مِنْ زَقُّوْمِ فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ فَشَارِبُوْنَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيْمِ فَشَارِبُوْنَ شُرْبَ الْهِيْمِ هذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّيْنِ.
‘তাহলে হে পথভ্রষ্ট ও অবিশ্বাসকারী লোকেরা! তোমরা যাক্কুম গাছের খাদ্য অবশ্যই খাবে। তা দ্বারা তোমরা পেট ভর্তি করবে। আর ফুটন্ত টগবগে পানি পিপাসায় কাতর উটের ন্যায় পান করবে। এটাই হচ্ছে অপরাধীদের জন্য শেষ বিচারের দিনে মেহমানের খাদ্য (ওয়াকিয়া ৫৩-৫৬)। 

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
يَالَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ مَا اَغْنَى عَنّى مَالِيَة هلَكَ عَنّى سُلْطَانِيَة خُذُوْهُ فَغُلُّوْهُ ثُمَّ الْجَحِيْمَ صَلُّوْهُ ثُمّ فِىْ سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُوْنَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوْهُ اِنّهُ كَانَ لَايُؤْمِنُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَلَايَحُضّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ ههُنَا حَمِيْمٌ وَلَا طَعَامٌ اِلّا مِنْ غِسْلِيْنَ لَا يَأْكُلُهُ اِلّا الْخَاطِئُوْنَ.
‘অপরাধী ক্বিয়ামতের মাঠে বলবে, হায়! আফসোস দুনিয়ার মরণই যদি চূড়ান্ত হত! আজ আমার অর্থ-সম্পদ কোন কাজে আসল না। আমার সব ক্ষমতা-আধিপত্য প্রভূত্ব শেষ হয়ে গেল। বলা হবে তাকে ধর তার গলায় লোহার শিকল দিয়ে ফাঁস লাগাও। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। আর তাকে ৭০ হাত দীর্ঘ শিকলে বেঁধে দাও। এ তো আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে নি এবং মিস্কীনকে খাদ্য দেওয়ার প্রতি মানুষকে উৎসাহ দান করেনি। এ কারণেই আজ এখানে তার কোন সহযোগী বন্ধু নেই। আর ক্ষত নিঃসৃত রক্ত পুজ ছাড়া তার আর কোন খাদ্য নেই। নিতান্ত অপরাধী ছাড়া এ খাদ্য আর কেউ খায় না’ (হাককাহ ২৭-৩৭)।

 আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
كَلّا اِنّهَا لَظى نَزَّاعَةً لّلِشَّوَى تَدْعُوْ مَنْ اَدْبَرَ وَتَوَلّى وَجَمَعَ فَاَوْعَى.
‘কক্ষণই নয়। তাতো হবে তীব্র উৎক্ষিপ্ত আগুনের লেলিহান শিখা। যা শরীরকে ঝলসিয়ে দিবে। আর ঐ সব ব্যক্তিকে নিজের দিকে ডাক দিবে যারা সত্য হ’তে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং পিঠ প্রদর্শন করেছে, এবং অর্থ-সম্পদ সঞ্চয় করেছে ও গুণে গুণে সংরক্ষণ করে রেখেছে’ (মা‘আরিজ ১৬)। 

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, اِنّ لَدَيْنَا اَنْكَالًا وَجحِيْمًا وَطَعَامًا ذَا غُصّةٍ وَعَذَابًا اَلِيْمًا নিশ্চয়ই আমার নিকট তাদের জন্য রয়েছে দূর্বহ বেড়ী, আর দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন, গলায় আটকে যাওয়া খাদ্য এবং কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি (মুযাম্মেল ১২-১৩)। 

অত্র আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, খুব ভারী ও দুর্বহ বেড়ী পাপাচারী অপরাধী লোকের পায়ে বেঁধে দেওয়া হবে। এটা হচ্ছে শাস্তির বেড়ি শাস্তির উপর শাস্তি। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, سَاُصْلِيْهِ سَقَرَ وَمَا َادْركَ مَا سَقَرَ لَا تُبْقِىْ وَلَا تَذَرْ لَوَّاحَةٌ لِلْبَشَرِ عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ. খুব শীঘ্রই আমি তাকে সাকার নামক জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর আপনি কি জানেন সে সাকার নামক জাহান্নাম কি? তা এমন একটি জাহান্নাম যা কাউকেও জীবিত রাখে না আবার মরা অবস্থায় ছেড়েও দেয় না। জাহান্নামীদের চামড়া ঝলসিয়ে দেয়। সে জাহান্নামে কর্মচারী হিসাবে ১৯জন ফেরেশতা নিয়োজিত আছে (মুদ্দাসসির ২৬-৩০)। 

এ কথাটি আল্লাহ অন্য আয়াতে এভাবে বলেছেন. لاَيَمُوْتُ فِيْهَا وَلَا يَحْي সে সেখানে মরবেও না বাঁচবেও না (আলা ১৩)। 

জাহান্নাম এমন একটি কঠিন ও জটিল জায়গা যেখানে মানুষের মরণও হবে না বাঁচতেও পারবে না। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
إِنَّ جَهَنّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا لِلطّاغِيْنَ مَآبًا لّابِثِيْنَ فِيْهَا اَحْقَابًا لَايَذُوْقُوْنَ فِيْهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا اِلّا حَمِيْمًا وَغَسّاقًا جَزَاءً وِّفَاقًا اِنَّهُمْ كَانُوْا لَاَيْرجُوْنَ حِسَابًا وَكَذّبُوْا بِايَتِنَا كِذّاَبًا وَكُلَّ شَيْئٍ اَحْصَيْنَاهُ كِتَابًا فَذُوْقُوْا فَلَنْ نَزِيْدَكُمْ اِلّاعَذَابًا.
‘নিশ্চয়ই জাহান্নাম একটি ফাঁদ। আল্লাহদ্রোহীদের জন্য আশ্রয়স্থল। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে। সেখানে তারা কোন শীতল ও সুপেয় জিনিসের স্বাদ আস্বাদন করবে না। তাদের পান করার জন্য রয়েছে ফুটন্ত গরম পানি এবং ক্ষত হ’তে নির্গত রক্তপুঁজ। এ হবে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল। তারা তো হিসাব-নিকাশের কোন প্রকার আশা পোষণ করত না। বরং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে প্রত্যাখ্যান করত। অথচ আমি তাদের প্রত্যেকটি বিষয় গুণে গুণে লিখে রেখেছিলাম। অতএব, এখন স্বাদ গ্রহণ কর। আমি একমাত্র তোমাদের শাস্তিই বেশি করব’ (নাবা ২১-৩০)। 

অত্র আয়াতে একটি শব্দ রয়েছে غَسَّاقٌ গাসসাক্ব হচ্ছে কঠিন নির্যাতনের ফলে চক্ষু এবং চামড়া হ’তে যে সব রস নিঃসৃত হয় তাকে গাসসাক্ব বলে, আর এ খানে পুঁজ মিশ্রিত রক্তকে বুঝানো হয়েছে।

(০২)
জান্নাতের হুররা মেয়ে হবে।
হুর পুরুষদের জন্য হবে,মহিলাদের হুর থাকবেনা,তারা তাদের নিজ স্বামীর উপরেই সন্তুষ্ট থাকবে।
হুররা সঙ্গিত গাইবে।  

বাদী শরীফে এসেছেঃ  
عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ فِي الجَنَّةِ لَمُجْتَمَعًا لِلْحُورِ العِينِ يُرَفِّعْنَ بِأَصْوَاتٍ لَمْ يَسْمَعِ الخَلَائِقُ مِثْلَهَا»، قَالَ: ” يَقُلْنَ: نَحْنُ الخَالِدَاتُ فَلَا نَبِيدُ، وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبْأَسُ، وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلَا نَسْخَطُ، طُوبَى لِمَنْ كَانَ لَنَا وَكُنَّا لَهُ
অর্থাৎ, আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, জান্নাতের মধ্যে হুরদের একটি সমষ্টি থাকবে, যারা এমন মধুর সুরে সঙ্গীত গাবে, আল্লাহর কোন সৃষ্টি এত সুন্দর কণ্ঠের সঙ্গীত আর কোনো দিন শোনে নি। তারা এ বলে গাইবে-
نَحْنُ الخَالِدَاتُ فَلَا نَبِيدُ++ وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبْأَسُ
وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلَا نَسْخَطُ++طُوبَى لِمَنْ كَانَ لَنَا وَكُنَّا لَهُ
‘আমরা চিরস্থায়ী, কোন দিন খতম হবো না, আমরা চিরসুখী, কোনদিন দুঃখী হবো না। আমরা চিরসন্তুষ্ট, কোন দিন অসন্তুষ্ট হবো না, সুসংবাদ, আমরা যাদের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য। (তিরমিযী, ২৫৬৪)
,
হুর মহিলা হবে।
বিস্তারিত জানুনঃ 
,
গেলমান প্রসঙ্গেঃ 
কুরআন শরিফে এরশাদ হয়েছেঃ  
وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَّهُمْ

তাদের খেদমতের জন্য ঘুরতে থাকবে তাদের জন্য নিযুক্ত সেবক বালক। (সুরা তুর ২৪)

তারা সাথে নিয়ে ঘুরবে,খেদমত করবে।
তাদের সাথে সহবাস করা হবেনা।

(০৩)
আল্লাহ তায়ালা যাকে যত বেশি সুবিধা দিবেন,সে তত বেশি সুবিধা পাবে।
কারো নেকি বেশি হলেও আল্লাহর কাছে তেমন গ্রহনযোগ্য নাও হতে পারে।
,
(০৪)
জান্নাতের নেকির প্রতিদান কোনোদিন শেষ হবেনা।
এক বার নেক আমলের প্রতিদান স্বরুপ আল্লাহ তায়ালা জান্নাত্র প্রবেশ করাইলে আর বের করবেননা।
,
অনন্তকাল সেখানেই থাকতে হবে।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...