শরীয়তের বিধান হলো যদি সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা না থাকে,তাহলে বনাঞ্চলে পশুপাখি শিকার করা যাবে।
অন্য এলাকাতেও যদি পাখি শিকার করতে নিষেধাজ্ঞা না থাকে,তাহলে অন্য অঞ্চলেও মালিকানা নেই এমন হালাল পাখি শিকার করা যাবে।
হালাল পশুপাখি সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ كُلِّ ذِي نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ وَعَنْ كُلِّ ذِي مِخْلَبٍ مِنَ الطَّيْرِ
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল প্রকার হিংস্র পশু এবং নখর ধারী পাখি (খেতে) নিষেধ করেছেন।”
[সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ৩৫/ শিকার ও জবেহ কৃত জন্তু এবং যে সব পশুর গোশত খাওয়া হালাল]
সুতরাং যে সব পাখি পাঞ্জা দ্বারা শিকার ধরে খায় তা খাওয়া জায়েজ নয়। যেমন: শকুন, চিল, ঈগল, কাক, বাজ ইত্যাদি।
আর যে সব পাখী পাঞ্জা দ্বারা শিকার ধরে খায় না তা (জবাই করে) খাওয়া জায়েজ ও হালাল। যেমন: হাঁস, মুরগি, ময়না, টিয়া, বক, সারস, চড়ুই ইত্যাদি।
,
★শিকারের পর জবাই করতে হবে।
এক্ষেত্রে বন্দুক দ্বারা শিকারের বিষয় স্পষ্ট করছি।
সাধারণত বন্দুকের বুলেট দুই ধরনের হয়ে থাকে।
১. এমন বুলেট যা ধারালো বা চোখা নয়। এরকম বুলেট দ্বারা শিকার করা পশু বা পাখি জবেহের আগে মারা গেলে তা খাওয়া হালাল হবে না।
২. এমন বুলেট যা ধারালো বা চোখা হয়। এরকম বুলেট দ্বারা বিসমিল্লাহ বলে শিকার করলে তা জবেহের আগে মারা গেলেও খাওয়া হালাল। কেননা দ্বিতীয় প্রকার বন্দুকের বুলেট তীরের হুকুমে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي السَّفَرِ عَنْ الشَّعْبِيِّ قَالَ سَمِعْتُ عَدِيَّ بْنَ حَاتِمٍ قَالَ سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْمِعْرَاضِ فَقَالَ إِذَا أَصَبْتَ بِحَدِّه„ فَكُلْ فَإِذَا أَصَابَ بِعَرْضِه„ فَقَتَلَ فَإِنَّه“ وَقِيذٌ فَلاَ تَأْكُلْ فَقُلْتُ أُرْسِلُ كَلْبِي قَالَ إِذَا أَرْسَلْتَ كَلْبَكَ وَسَمَّيْتَ فَكُلْ قُلْتُ فَإِنْ أَكَلَ قَالَ فَلاَ تَأْكُلْ فَإِنَّه“ لَمْ يُمْسِكْ عَلَيْكَ إِنَّمَا أَمْسَكَ عَلٰى نَفْسِه„ قُلْتُ أُرْسِلُ كَلْبِي فَأَجِدُ مَعَه“ كَلْبًا آخَرَ قَالَ لاَ تَأْكُلْ فَإِنَّكَ إِنَّمَا سَمَّيْتَ عَلٰى كَلْبِكَ وَلَمْ تُسَمِّ عَلٰى آخَرَ.
আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তীরের শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ যদি তীরের ধারালো অংশ দ্বারা আঘাত করে থাক তাহলে খাও, আর যদি ফলার আঘাত লেগে থাকে এবং শিকারটি মারা যায়, তাহলে খেও না। কেননা, সেটি ওয়াকীয বা থেতলে মরার মধ্যে গণ্য। আমি বললামঃ আমি তো শিকারের জন্য কুকুর ছেড়ে দেই। তিনি উত্তর দিলেনঃ যদি তোমার কুকুরকে তুমি বিসমিল্লাহ পড়ে ছেড়ে থাক, তা হলে খাও। আমি আবার বললামঃ যদি কুকুরটা কিছু খেয়ে ফেলে? তিনি বললেনঃ তা হলে খেও না, কারণ সে তা তোমার জন্য ধরে রাখেনি বরং সে ধরেছে নিজের জন্যই। আমি বললামঃ আমি আমার কুকুরকে পাঠিয়ে দেবার জন্য যদি তার সঙ্গে অন্য কুকুরকেও দেখতে পাই, তখন? তিনি বললেনঃ তাহলে খেও না। কেননা, তুমি তো কেবল তোমার কুকুরের উপর বিসমিল্লাহ বলেছ, অন্য কুকুরের উপর বিসমিল্লাহ বলনি।(বুখারী শরীফ আধুনিক প্রকাশনী- ৫০৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৬৮)
عَبْدُ اللهِ بْنُ يَزِيدَ حَدَّثَنَا حَيْوَةُ قَالَ أَخْبَرَنِي رَبِيعَةُ بْنُ يَزِيدَ الدِّمَشْقِيُّ عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ عَنْ أَبِي ثَعْلَبَةَ الْخُشَنِيِّ قَالَ قُلْتُ يَا نَبِيَّ اللهِ إِنَّا بِأَرْضِ قَوْمٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ أَفَنَأْكُلُ فِي آنِيَتِهِمْ وَبِأَرْضِ صَيْدٍ أَصِيدُ بِقَوْسِي وَبِكَلْبِي الَّذِي لَيْسَ بِمُعَلَّمٍ وَبِكَلْبِي الْمُعَلَّمِ فَمَا يَصْلُحُ لِي قَالَ أَمَّا مَا ذَكَرْتَ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَإِنْ وَجَدْتُمْ غَيْرَهَا فَلاَ تَأْكُلُوا فِيهَا وَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فَاغْسِلُوهَا وَكُلُوا فِيهَا وَمَا صِدْتَ بِقَوْسِكَ فَذَكَرْتَ اسْمَ اللهِ فَكُلْ وَمَا صِدْتَ بِكَلْبِكَ الْمُعَلَّمِ فَذَكَرْتَ اسْمَ اللهِ فَكُلْ وَمَا صِدْتَ بِكَلْبِكَ غَيْرِ مُعَلَّمٍ فَأَدْرَكْتَ ذَكَاتَه“ فَكُلْ.
আবূ সা’লাবা আল খুশানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহ্র নবী! আমরা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের এলাকায় বসবাস করি। আমরা কি তাদের থালায় খেতে পারি? তাছাড়া আমরা শিকারের অঞ্চলে থাকি। তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করি এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দিয়ে শিকার করে থাকি। এমতাবস্থায় আমার জন্য কোন্টা বৈধ হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ তুমি যে সকল আহলে কিতাবের কথা উল্লেখ করলে তাতে বিধান হলঃ যদি অন্য পাত্র পাও তাদের পাত্রে খাবে না। আর যদি না পাও, তাহলে তাদের পাত্রগুলো ধুয়ে নিয়ে তাতে আহার কর। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ সেটি খাও। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের দ্বারা শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ, সেটি খাও। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দ্বারা শিকার করেছ, সেটি যদি যবহ করতে পার তবে তা খেতে পার। [বুখারী শরীফ ৫৪৮৮, ৫৪৯৬; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯৩০, আহমাদ ১৭৭৬৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫০৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৭০)
শরীয়তের বিধান হলো কোনো কুকুর যদি হিংস্র হয়,ক্ষতিকারক হয়,চায় সে পাগলা কুকুর হোক,বা সুস্থ কুকুর হোক,যদি তাকে মেরে ফেলা ছাড়া তার থেকে পরিত্রানের কোনো ছুরত না থাকে, তাহলে তাকে মেরে ফেলা জায়েয আছে।
তাকে অন্যান্য যন্ত্র দিয়ে যেমন মেরে ফেলা জায়েয আছে,বিষ দিয়েও মেরে ফেলা জায়েয আছে।
তবে বিষ এমন হওয়া উচিত যেটার দ্বারা কুকুর দ্রুত মারা যাবে।
অন্যথায় সাধারন বিষ প্রয়োগ করা হলে সেটা আরো ভয়ংকর রকমের সমস্যার কারন হতে পারে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৪/৪৪০)
আরো জানুনঃ-