بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আল্লাহ তা'আলা নামাযে
কুরআনে কারিম তেলাওয়াতের কথা বলেছেন। উসূলে ফিকহের নীতি অনুযায়ী যে কোনো আদেশকে একবার
বাস্তবায়ন করে নিলে সেই আদেশকে পালন করা হয়ে যায়।সে হিসেবে নামাযে প্রথম রা'কাতে কুরআন
তেলাওয়াত করে নিলেই আল্লাহ তা'আলার আদেশ-
ﻓَﺎﻗْﺮَﺅُﻭﺍ ﻣَﺎ
ﺗَﻴَﺴَّﺮَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ
কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের
জন্যে সহজ, ততটুকু(নামাযে) আবৃত্তি কর। (সূরা মুযযাম্মিল-২০)
-কে মান্য করা হয়ে যাবে।
কিন্তু যেহেতু প্রথম বৈঠকের
পূর্বের রা'কাত গুলো সাদৃশ্যপূর্ণ,তাই ফরয
নামাযের প্রথম দুই রাকাতে মতলকে তেলাওয়াত তথা কুরআনের যে কোনো অংশ থেকে শুধুমাত্র কিছু
তেলাওয়াত করে নেয়া ফরয।এক্ষেত্রে কোনো শর্ত নেই।
হ্যা এ দুই রা'কাতে সূরায়ে
ফাতেহা তেলাওয়াত করা ওয়াজিব।এবং সাথে আরও একটি সূরা মিলানো ওয়াজিব।
(বিঃদ্রঃ ফরয ছেড়ে দিলে নামায হয় না কিন্তু ওয়াজিব ছেড়ে দিলে
সেজদায়ে সাহুর সাথে নামায আদায় হয়ে যাবে)
শেষ দুই রা'কাতে তেলাওয়াত
করা সুন্নাত।চায় সূরায়ে ফাতেহা হোক বা কুরআনের অন্য কোনো সূরা হোক।কেউ ইচ্ছা করলে শেষ
দুই রা'কাতে সূরায়ে ফাতেহার সাথে অন্য যেকোনো সূরাকেও মিলাতে পারে।এমনকি
সারা কুরআনও পড়তে পারে। এতে কোনো সমস্যা নাই। তবে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতেহা পড়া মুস্তাহাব।
সূরায়ে ফাতেহা ব্যতীত অন্য সূরা পড়ে নিলেও এক্ষেত্রে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। (আহসানুল
ফাতাওয়া;৪/৫০, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ;৭/৪১২)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে
বর্ণিত,তিনি বলেন,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠّﻢ ﻗﺎﻝ
: ( ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ
ﻛَﺬَﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘُﻮﻝَ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﺭَﺑَّﻚَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﻌِﺬْ
ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟْﻴَﻨْﺘَﻪِ ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻣﺴﻠﻢ : ( ﺁﻣﻨﺖ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻠﻪ)
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,শয়তান তোমাদের কারো নিকট
উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, এটা কে বানিয়েছে?ওটা
কে বানিয়েছে?শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে, খোদা-কে বানিয়েছে? যখন এমন অবস্থায় কেউ পতিত
হবে,সে যেন আল্লাহর নিকট পানাহ চায়।এবং সাথে সাথে সে যেন উক্ত
বিষয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকে।এক বর্ণনায় এসেছে সে যেন আ'মানতু
বিল্লাহি ওয়া রুসুলিহি পড়ে নেয়।(সহীহ বোখারী-৩১০২,সহীহ
মুসলিম-১৩৪)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ( ﺟَﺎﺀَ
ﻧَﺎﺱٌ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺴَﺄَﻟُﻮﻩُ
ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﺠِﺪُ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻨَﺎ ﻣَﺎ ﻳَﺘَﻌَﺎﻇَﻢُ ﺃَﺣَﺪُﻧَﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﻜَﻠَّﻢَ ﺑِﻪِ ،
ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻗَﺪْ ﻭَﺟَﺪْﺗُﻤُﻮﻩُ ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻧَﻌَﻢْ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺫَﺍﻙَ ﺻَﺮِﻳﺢُ
ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ )
কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন,আমাদের
অন্তরে অনেক সময় মন্দ চিন্তাভাবনা চলে আসে।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, এটা কি সম্ভব? তারা বলল, জ্বী হ্যা। রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, মাঝেমধ্যে এমন সন্দেহ মনে
উঁকি দেয়াই হল, কামিল ঈমানের পরিচায়ক। (সহীহ
মুসলিম-১৩২)
ইমাম নববী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,
ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺃﻥ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﻮﺳﻮﺱ ﻟﻤﻦ ﺃﻳﺲ ﻣﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻓﻴﻨﻜﺪ ﻋﻠﻴﻪ
ﺑﺎﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ؛ ﻟﻌﺠﺰﻩ ﻋﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ : ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺄﺗﻴﻪ ﻣﻦ ﺣﻴﺚ ﺷﺎﺀ ، ﻭﻻ ﻳﻘﺘﺼﺮ ﻓﻲ
ﺣﻘﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ، ﺑﻞ ﻳﺘﻼﻋﺐ ﺑﻪ ﻛﻴﻒ ﺃﺭﺍﺩ ، ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : ﺳﺒﺐ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ :
ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﺃﻭ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ﻋﻼﻣﺔ ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﺧﺘﻴﺎﺭ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻋﻴﺎﺽ ...
অর্থাৎ শয়তান সে ব্যক্তিকেই প্ররোচনা দেয়, যাকে গোমরাহ করতে সে নিরাশ
হয়ে যায়। সে কাউকে গোমরাহ করতে নিরাশ হয়ে গেলে সর্বশেষে সে মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে
চায়।
আর কাফিরের নিকট শয়তান যেকোনো থেকে যেহেতু আসতে পারে,তাই
কাফিরকে প্ররোচনা দেয়ার কোনো প্রয়োজন তার থাকে না।কেননা সে যেকোনো সময় তার
ইচ্ছামত কাফিরকে ব্যবহার করতে পারে।সুতরাং হাদীসের অর্থ হলো এই যে,ঈন্তরে
ঈমানের দানা থাকার দরুণই শয়তান ঈমানদারদেরকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে এটাই
কাযী ঈয়ায রাহ এর পছন্দনীয় ব্যাখ্যা। (আল-মিনহাজ্ব-২/১৫৪)
এরকম শয়তানি প্ররোচনা থেকে বাচতে হলে, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর
বিধিনিষেধকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করতে হবে।সাথে সাথে ঐ চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে
নিতে হবে।এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া সহ আল্লাহর যিকিরে নিজেকে ব্যস্ত
করে রাখতে পারলেই তবে এরকম শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে নিজেবে বাঁচিয়ে রাখা
সম্ভব।(আল-মিনহাজ-২/১৫৫-১৫৬
★প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনি ভাই/বোন!
১. ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ শেষ দুই রা'কাতে তেলাওয়াত করা সুন্নাত। চায় সূরায়ে ফাতেহা হোক বা কুরআনের
অন্য কোনো সূরা হোক। কেউ ইচ্ছা করলে শেষ দুই রা'কাতে সূরায়ে ফাতেহার সাথে অন্য যেকোনো সূরাকেও মিলাতে পারে। এমনকি সারা কুরআনও
পড়তে পারে। এতে কোনো সমস্যা নাই। তবে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতেহা পড়া মুস্তাহাব। সূরায়ে
ফাতেহা ব্যতীত অন্য সূরা পড়ে নিলেও এক্ষেত্রে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। (আহসানুল
ফাতাওয়া;৪/৫০ ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ;৭/৪১২)
২. জ্বী না। প্রশ্নল্লিখিত
ছুরতে যদি তালাকের নিয়ত ছাড়া উক্ত বাক্য বলা হয় তাহলে তালাক হবে না।