বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
নামাজে মনোযোগ বাড়ানোর কিছু পদ্ধতি:
১. নামাজে একাগ্র থাকা। অর্থাৎ এমন ভাবে নামাজ পড়তে হবে
যেনো আমি আল্লাহ তায়ালার সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছি। আর আল্লাহ তায়ালা নামাজ পড়া
দেখছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
قَالَ
مَا الإِحْسَانُ قَالَ " أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ
لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ".
‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর
যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন। ’ (বুখারি, হাদিস
: ৫০; মুসলিম, হাদিস
: ৮)
অন্য এক হাদীসে এসেছে-
ثُمَّ
قَالَ مَنْ تَوَضَّأَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ
نَفْسَهُ فِيهِمَا بِشَيْءٍ إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে
সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে একাগ্রতার সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ
আদায় করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে যে নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না) তার সমস্ত গুনাহ
মাফ করে দেওয়া হয়)। ’ (নাসাঈ, হাদিস
: ১৫১; বুখারি, হাদিস : ১৯৩৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২. নামাজের সূরা কেরাত ও দুআগুলো বিশুদ্ধ
উচ্চারণে পড়ার চেষ্টা করা ও ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করা। বিশেষ করে সূরা ফাতিহা, ছোট
ছোট কয়েকটি সূরা ও তাসবিহগুলোর অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করা। এগুলো করলে নামাজে
মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَوْ زِدْ عَلَيْهِ
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
‘স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তিলাওয়াত করো। ’ (সুরা :
মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিটি সুরা তারতিল সহকারে তিলাওয়াত
করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৩, তিরমিজি, হাদিস
: ৩৭৩)
৩. নামাজের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে
নামাজ পড়া এবং খুব বিনয়ের সাথে নামাজে দন্ডায়মান হওয়া। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন, وَقُومُوا لِلَّهِ
قَانِتِينَ ‘তোমরা
আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে। ’ (সূরা : বাকারা, আয়াত
: ২৩৮)
আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেন,
وَعَنْ
اَبِىْ قَتَادَة قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَسْوَأُ النَّاسِ سَرِقَةً الَّذِي
يَسْرِقُ مِنْ صَلَاتِه قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ يَسْرِقُ مِنْ
صَلَاتِه قَالَ لَا يُتِمُّ رُكُوعَهَا وَلَا سُجُودَهَا. رَوَاهُ أَحْمَد
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চুরি হিসেবে সবচেয়ে বড় চোর হল
ঐ ব্যক্তি যে সলাতে (আরকানের) চুরি করল। সহাবীগণ আরয করলেন, হে
আল্লাহর রসূল! সলাতের চুরি কিভাবে হয়? নাবী
(সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সলাতের
চুরি হল রুকূ’-সাজদাহ্ পূর্ণ না করা। সহীহ : আহমাদ ২২১৩৬, সহীহ
আত্ তারগীব ৫২৪।
৪. নামাজ পড়ার সময় এমন ধ্যান খেয়াল রাখা যে, এই নামাজই মনে হয় আমার জীবনের শেষ নামাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ
কামনা করলে তিনি তাকে বলেন, ‘যখন তুমি নামাজে দণ্ডায়মান হবে তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন
এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ। ’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
৫. নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে কল্যাণ আশা কামনা
করা।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ
وَالصَّلَاةِ ۚ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ
‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। ’
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৫)
৬. নামাজের মধ্যে নিজের গোনাহের কথা চিন্তা করে একজন
অপরাধীর মতো মস্তক অবনত রেখে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রেখে নামাজ
আদায় করা। দাঁড়ানোর সময় সেজদার দিকে, রুকুর সময়
দুই পায়ের মাঝে, বসার সময় কোলের উপর দৃষ্টি রাখা
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
১.
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি অফিসে নামাজ পড়ার সময় অফিসের এক কোনায় যেখানে সাধারণত
কেউ যায় না সেখানে নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন এবং নামাজের মধ্যে উত্তরে উল্লেখিত
বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন। তাহলে দেখবে নামাজের মধ্যে
মনোযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।
২.
আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে নিয়মিত নামাজ পড়ার চেষ্টা করবে। কোনো নামাজ কাযা যেনো না
হয়ে যায় সে দিকে খেয়াল করবেন। একান্ত কখনো কাযা হয়ে গেলে তা পরবর্তীতে আদায় করে
নিবেন।