আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
213 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম, হুজুর। গত বছরের শুরুর দিকে আমার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব আসে। দুই ফ্যামিলির পরস্পরকে পছন্দ হয়।

তো দুই ফ্যামিলির কথা হয়। বিয়েও ঠিক হয়। যেই মাসে ঠিক হয় তার পরের মাসে।


তো কিছু কারণে আমরা বাসায় না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলি। আমাদের ফ্যামিলিতে সব মেয়ের বিয়েতে যে পরিবারের সবকিছু পছন্দ হত, সেই পরিবারের ছেলেকেই মেয়ে দেখাত এবং ওখানেই বিয়ে হত। সেকারণেই মনে হয়েছিল যে বিয়ে তো হবেই একদিন না একদিন।
বিয়ের আগে ইস্তিখারাও করেছিলাম।


কিন্তু বিয়ে ঠিক হওয়ার দেড়/দুই মাস পর আমার পরিবার উল্টে যায়। আমার আম্মু, ছেলের আম্মুর অনেক পুরাতন কথা টেনে এনে বলেন যে উনার কথা নাকি তার অপমানজনক লেগেছে।

(বলে রাখা ভাল, ছেলে দ্বীনদারিতার দিক থেকে আমার চেয়ে উপরে। অন্তত বিয়ের পর আমার তাই মনে হয়েছে।

আরো কয়েকটা প্রস্তাব এসেছিল বিয়ের। আমি যদি এখন বিবাহিত নাও হতাম ওসব আমার পছন্দ হত না।
এখন আমার কী করা উচিত??
মা বাবাক্ব কষ্ট দেওয়ায় কি আমার গুনাহ হবে? বা হচ্ছে? আমার সাথে উনারা ঠিকমতো কথাও বলে না।

অন্যদিকে মা বাবার কথামত বিয়ে করতে হলে তো আমার হাজবেন্ড থেকে তালাক্ব নিতে হবে। মানুষটা অনেক ভালো। কোন অপরাধে আমি তাকে কষ্ট দিব? আমিও বা কীভাবে কষ্ট পাব? মা বাবাকে খুশি করার জন্য কি এভাবে তালাক্ব দেওয়া জায়েয? নবী ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর কথায় তার ছেলে স্ত্রীকে তালাক্ব দিয়্বছিলেন। এই ঘটনার ব্যাখ্যায় পড়েছিলাম- উনি তো নবী ছিলেন। এখনের মা বাবাদের ক্ষেত্রে এটা খাটে না।

মাঝেমধ্যে মনে হয় "মা-বাবাকে কষ্ট দিয়ে তো জান্নাতে যেতে পারভ না। তাইলে বেঁচে থেকে কী লাভ? সুইসাইড করে ফেলি.." আল্লাহুম্মাগফিরলী। কিন্তু দিনশেষে আমারই লস এটা ভেবে বির‍ত থাকি।


তাদেরকে অনেক বুঝিয়েছি। পড়াশোনার দোহাই দিয়েছি। তাদের উত্তর ছিল যে আমি পারলে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে পারব তাও ওখানে আমাকে বিয়ে দিবেনা।
এসব ভাবতে ভাবতে আমার দৈনন্দিন কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আমি আর পারছিনা। কী করব আমি?

1 Answer

+1 vote
by (58,830 points)
edited by
   بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ
বাবা-মায়ের আদেশ পালন করা ওয়াজিব। সুতরাং বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই অসদাচারণ করা যাবে না। মনে রাখবেন, পিতামাতার সেবা ও সদ্ব্যবহারের জন্য তাঁদের মুসলমানও হওয়া জরুরী নয়। মহান আল্লাহ বলেন-

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا

‘‘পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে।” (সূরা লুকমান : আয়াত ১৫)

কিন্তু তারা যদি অন্যায় আদেশ করে, তাহলে তা পালন করা হারাম। কেননা, ইসলামের শিক্ষা হল, لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা যেখানে আসবে, সেখানে সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না। সৃষ্টির আনুগত্যের সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ অর্থাৎ অসৎকাজে আনুগত্য নয় ;আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে’’। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৪৫)

সুতরাং বাবা-মা বউকে তালাক দিতে বললে কারণ জানতে হবে। কারণ যদি সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত হয় এবং সে কারণে তালাক ছাড়া আর কোনো পথ বাকি না থাকে, পাশাপাশি যদি তালাক প্রদান করার দ্বারা আপনার জিনায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে পিতা মাতার সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে।

عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَتْ لِي امْرَأَةٌ كُنْتُ أُحِبُّهَا، وَكَانَ أَبِي يَكْرَهُهَا، فَقَالَ لِي: طَلِّقْهَا، فَأَبَيْتُ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ: «طَلِّقْهَا» فَطَلَّقْتُهَا

হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার একজন স্ত্রী ছিল। যাকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা [হযরত উমর বিন খাত্তাব রাযি. যৌক্তিক কারণে] তাকে পসন্দ করতো না। তিনি আমাকে বললেন, তাকে তালাক দিতে। কিন্তু আমি তালাক প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানালাম। তখন আমার পিতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকে তালাক দিয়ে দিতে। ফলে আমি আমার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করি। (মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালিসী, হাদীস নং-১৯৩১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৪৭১২, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৩৮)

পক্ষান্তরে কারণ যদি সঠিক না হয়, কেবল বউয়ের প্রতি ঈর্ষাবশতঃ হয়, তাহলে তালাক দেওয়া আপনার জন্য জায়েয নয়।
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই/ বোন!
প্রথমত মা বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করা আপনার জন্য উচিত হয়নি। এক্ষেত্রে আপনার জন্য আমাদের পরামর্শ হলো আপনি আপনার মা বাবাকে আপনার বিয়ে হয়েছে একথা অবগত করবেন। নিজে না পারলে নিকটতম কোন আত্নীয়ের মাধ্যমে জানাবেন। এ অবস্থায় আপনার জন্য কিছু পরীক্ষা আসবে, কিন্তু হতাশ হওয়া যাবে না। আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, কম বলুন,বেশি শুনুন। বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দুআ করুন,যেন আপনার পিতামাতার মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়। আপনার বাবা-মাকে বোঝান যে, তারা যেন আপনার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেন এবং আপনার স্বামীকে মেনে নেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...