আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
230 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আস্সালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বরাকাতুহু
ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলার জন্য প্রশ্ন টি দীর্ঘ হবে, তাই ক্ষমা চাচ্ছি।
গত বছর আল্লাহর ইচ্ছায় আমার বাবা মা আলাদা হয়ে জান (ডিভোর্সড ). ছোটবেলা থেকেই তাঁদের মধ্যে সমস্যা দেখে এসেছি. সমস্যার মূল কারণ দীন নিয়ে অমত. বিভিন্ন ব্যাক্তিগত সমস্যার কারণে আমার বাবার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসতে থাকে. তিনি নামাজ- দোয়া পড়েন কিন্তু গান -বাজনা, মুভি সিনেমা দেখা শুরু করেন এবং আমি এবং আমার ভাই- বোন কেও এগুলো দেখতে এবং শুনতে এনকারেজ করেন. এছাড়াও আরো সমস্যা তার আগে থেকেই ছিলো - তার আসে পাশের সবকিছু কঠোর ভাবে কন্ট্রোল করার একটি স্বভাব ছিলো. একটুও এদিক সেদিকে হতে পারবে না, তার ইচ্ছা মতো কিছুই না হলে তিনি অত্যন্ত রেগে যেতেন যার কারণে বাসার সবাই তাকে ভয় পায় এবং তার সাথে মানিয়ে চলাটা সবার জন্য কষ্টকর হয়ে থাকে . এ ব্যাপারে তাকে অনেকেই অনেকবার বুঝাতে চেয়েছে, রুকিয়া ও করানো হয়েছিলো এক সময়. কিন্তু তিনি বুঝতে চান না. তাকে মানসিক ডাক্তার দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো : তার ব্যবহারের বিবরণ শুনে এক দুইজন নামকরা স্যাকলোজিস্ট বলেছেন তার খুব সম্ভবত মানসিক কিছু সমস্যা এবং disorder রয়েছে, যার কারণে তার সবকিছু কন্ট্রোল করতে হয় এবং সে অল্প কারণেই রাগ এবং খারাপ ব্যবহার করেন. এই সমস্যা গুলো আগে থেকেই ছিলো কিছুটা। কিন্তু এরপরে তিনি বিদেশে একটি কোর্স করতে যান এবং ফেরার সময় তাকে কিছু অভিযোগে এরেষ্ট করা হয়

তিনি ৫-৬ বছর জেলে ছিলেন। এর মধ্যে আমাদের অল্প অল্প যোগাযোগ হত এবং তিনি আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতেন।
তিনি গত বছর আল্লাহর রহমতে বাড়ি ফিরেন এবং প্রথম কয়েকদিন ঠিক থাকার পর আবার সমস্যা গুলো দ্বিগুন ভাবে দেখা যায়। আমরা তার কথা মত চলতে চেষ্টা করি, মেনে নেই যে জেলে থাকার ফলে মানসিক সমস্যা আরো খারাপ হয়েছে। কিন্তু মাসের পর মাস সহ্য করাটা কষ্টকর হয়ে যায়। আমাদের (আমরা ভাইবোন এবং আমার মা ) তার সাথে থাকতে অনেক কষ্ট হয়. তার মা বাবা (আমার দাদা দাদি ) তাকে কাউন্সেলিং করাতে চাইলেও তিনি একদমই রাজি হন না বরং রেগে যান এবং বলেন তার কোনো সমস্যা নেই। প্রতিদিন ভুল বুঝা বুঝি, তুমুল ঝগড়া, সারাক্ষন ভয়ের মধ্যে থাকা, আর সহ্য না করতে পেরে মা কয়েকবার ইসতেখারা করেন এবং আমরাও করি .. তারপর আমরা মানসিক সুস্থতার জন্য আমার নানার বাড়ি চলে যাই কিছুদিনের জন্য( আমার নানা এর আগের বছর মারা গিয়েছিলেন, বর্তমানে আমার নানী আছেন ). তখন আমার  পরীক্ষা চলছিল.


আমরা দূরে সরে গেলে আমার  আমাদের বাবার সাথে ফোন মাধ্যমে মোটামোটি একটি ভালো ফর্মাল সম্পর্ক থাকে. তাই এভাবেই কিছুদিন চলতে থাকে. কিছু দিন পর বাবা মার ডিভোর্স হয়ে যায় কাগজে ( মুখে আগেই হয়েছিলো ).


আমি ব্যাক্তিগত ভাবে আমার বাবার সাথে কিছুদিন পরপর ফোনে কথা বলতাম, সম্পর্ক বিচ্ছেদ করা হারাম তাই নিজের রাগ দুঃখ সব ভুলে, দূর থেকে হলেও একটা সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইতাম. আল্লাহ সাক্ষী.

মায়ের বাড়িতে আসার পর থেকে 2-3 মাস আমার মা আমাদের সব খরচ চালাতেন (আগে আমরা আমাদের দাদার জমানো টাকায় চলতাম, বাবার আয় ব্যবস্থা ছিলো না এতদিন কারাবন্দী থাকার কারণে )

তারপর বাবা বলেন তিনি আমাদের ভরণ পোষণ দিবেন কোনো এক ভাবে , ঠিক ঠাক মতো ডিভোর্স, ভরণ পোষণের এগ্রিমেন্ট করবেন. কিন্তু উকিলদের সাথে কথা বার্তা বলার পর তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং একবার দুইবার মায়ের সাথে কথা কাটাকাটি হওয়ার পর আমাকে ফোনে ব্লক করে দেন.কয়েকমাস ধরেই তার number বন্ধ, তিনি কোথায় সেটাও আমরা জানি না. আমি অনেকবার ফোন / মেসেজ করার চেষ্টা করেছি.


তিনি তার মায়ের সাথে ছিল ঢাকায় কয়েকদিন তারপর জিনিস পত্র গুছায় কই জানি চলে যায়... অনেকে অনেক কিছু বলেছে কিন্তু আমরা সঠিক জানি না তিনি আসলে কই এবং কি করছেন . বর্তমানে আমার দাদি একা এবং অসুস্থ থাকায়, তার অনুরোধে মা আমাদেরকে দাদির কাছে এনে রেখেছেন. দাদি / দাদা ( দাদা সিলেটে থাকেন, ঢাকায় আসতে পছন্দ করেন না ) আমাদের খাওয়া পড়ার খরচ দেখছেন এখন.


এখন মূল কথায় আসি.


আমার বয়স 18+, আমার জন্য আলহামদুলিল্লাহ একটি ভালো সমন্ধ আসছে. পাত্রর সাথে দেখা দেখি হয়েছে এবং কথা হয়েছে (মায়ের সামনে ), উভয় পক্ষের পছন্দ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ . আমার এবং মায়ের মনে হয়েছে পাত্র যথেষ্ট দীনদার এবং আমাদের কুফু মিলেছে.


এখন দুইটি প্রশ্ন আমার.


1) পাত্র পক্ষ আমার বাবার বিষয়টা জানেন.কিন্তু তারা জিজ্ঞেস করছেন যে বাবাকে না জানিয়ে মেয়ের বিয়ে দেয়া ঠিক হবে কিনা. এখন বাবাকে যোগাযোগ করবো কিভাবে তা জানি না. আর যোগাযোগ করলেও, তাকে বলা কি ঠিক হবে? আগেই উল্লেখ করেছি যে তার ভীষণ রাগী এবং কন্ট্রোলিং স্বভাব, ঝামেলা করার আশংকা আছে. এছাড়া সে যাওয়ার আগে একবার আমাকে বলেছিলো যেন মায়ের কথায় আমি একদমই বিয়ে না করি, বলছিলো আমাদের ইউনিভার্সিটি কমপ্লিট করতে হবে আগে ইত্যাদি. তাছাড়া তার পরিবর্তন গুলো দেখে আমার মনে হয় নি তিনি সত্যিকারের দীনদার পাত্র পছন্দ করবেন।  এছাড়া পাত্র আমার থেকে বয়সে 11 বছরের বড় ( এটাতে আমার নিজের কোনো সমস্যা নেই ), তাই তিনি আপত্তি করতে পারেন.

এখন বাবাকে কি বিয়ের বিষয়টা জানাতে চেষ্টা করবো? তার সাথে এখনো কোনো যোগাযোগ নেই, ফোন মেসেজ আনসার করেন না. যোগাযোগ করতে পারলে কি তাকে জানানো ঠিক হবে? তাকে না জানালে কি বিয়েটা জায়েজ হবে না?


2) আমার বাবার দিকে দীনদার ছেলে আত্মীয় শুধু আছেন আমার আপন চাচা এবং আমার চাচাতো ভাই. আমার দাদার দীনের বুঝ নেই, তাকে কোনোদিন নামাজ পড়তে দেখি নি (আল্লাহ হেদায়েত দান করুক ) এবং বয়সের কারণে কিছুটা জ্ঞান বুদ্ধিহীনতায় ভুগেন . চাচাতো ভাই 18 বছর বয়স এবং আমার মাহরাম কারণ আমরা দুধ ভাই বোন।  চাচা আর চাচাতো ভাই বিদেশে থাকে। আমার চাচাকেও বাবার মতো অভিযোগে কারাবন্দী করা হয়েছিল, তিনি এখনো কারাবন্দী আছেন যার কারণে সরাসরি বা ভিডিও কল মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ আছে আলহামদুলিল্লাহ. এখন আমার চাচার পরামর্শ নিয়ে আমার চাচাতো ভাই কি আমার বিয়ের অভিভাবক হিসেবে দাঁড়াতে পারবেন, অনলাইন মাধ্যমে? ( দেশে আসা সম্ভব না )


আমি বিয়েটা নিয়ে অনেকবার ইসতেখাড়া করেছি, এবং ঠান্ডা মাথায় সব দিক দিয়েই ভেবেছি. আমার মনে হয় বিয়েটা করা উচিৎ এবং কারণ ছাড়া দেরি করা উচিৎ নয়, বিশেষ করে যেহেতু আমাদের বলতে গেলে কোনো অভিভাবক নেই, তাছাড়া নিজের দীন কে হেফাজত রাখতে চাই. বর্তমান ভাস্যমান পরিস্থিতি আল্লাহর একটি বড় পরীক্ষা আমাদের জন্য।
ধর্য সহকারে প্রশ্ন টি পড়ার জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান. আপনাদের পরামর্শের অপেক্ষায় রইলাম ইনশাআল্লাহ।

1 Answer

+1 vote
by (566,160 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নটি পুরাটা পড়েছি।
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনার বাবা আপনাকে ফোনে ব্লক করে দেন.কয়েকমাস ধরেই তার number বন্ধ, তিনি কোথায় সেটাও আপনারা জানেন না. আপনি অনেকবার ফোন / মেসেজ করার চেষ্টা করেছেন.তবে রিপ্লাই আসেনি।

তিনি তার মায়ের সাথে ছিলেন ঢাকায় কয়েকদিন। তারপর জিনিস পত্র
নিয়ে কোথায় যেনো চলে যায়,আপনারা জানেননা।
আপনারা জানেননা যে তিনি আসলে কই এবং কি করছেন।

সুতরাং এমতাবস্থায় তাকে না জানিয়ে এই বিবাহ করলে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
এটি জায়েজ।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

أَنَّ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، زَوَّجَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عَبْدِ الرَّحْمنِ، الْمُنْذِرَ بْنَ الزُّبَيْرِ. وَعَبْدُ الرَّحْمنِ غَائِبٌ بِالشَّأْمِ.
সারমর্মঃ
আঈশা রাঃ তার ভাই আব্দুর রহমানের মেয়ে হাফসাকে তার অভিভাবক আব্দুর রহমানকে ছাড়াই নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন মুনজির বিন যুবায়েরের সাথে। 
{মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-২০৪০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৫৫, সুনানুস সাগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৩৭৪, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৩৫২২, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৩৬৫৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৫}

বিস্তারিত জানুনঃ- 

(০২)
হ্যাঁ, আপনার চাচার পরামর্শ নিয়ে আপনার চাচাতো ভাই আপনার বিয়ের অভিভাবক হিসেবে দাঁড়াতে পারবেন, অনলাইন মাধ্যমে।

তবে চাচাতো ভাই যেহেতু গায়রে মাহরাম, তাই প্রয়োজন অতিরিক্ত কথা তার সাথে বলবেননা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (1 point)
প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান প্ৰিয় শাইখ. অনেক উপকার করলেন আলহামদুলিল্লাহ. একটি বিষয়, চাচাতো ভাই যিনি তিনি আমার দুধ ভাই ও, তবে তার সাথে সাধারণত বেশি কথা হয় না.

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...