জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(১.২) শাতিমে রাসুল আর মুরতাদ উভয়েই কাফের।
অমুসলিমদের জন্য দোয়া করার ক্ষেত্রে সাধারণ মূলনীতি হল, তাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করা যায় না।
ইমাম নববী রহ. বলেন,
الصلاة على الكافر والدعاء له بالمغفرة : حرام بنص القرآن والإجماع
অমুসলিমের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করা কোরআনের বক্তব্য ও সকলের ঐক্যমতে হারাম। (আলমাজমু’ ৫/১১৯)
তবে তাদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করা যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَ الطُّفَيْلُ بْنُ عَمْرٍو إِلَى النَّبِيِّ ﷺ ، فَقَالَ : إِنَّ دَوْسًا قَدْ عَصَتْ وَأَبَتْ ، فَادْعُ اللَّهَ عَلَيْهِمْ ، فَقَالَ : اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْسًا وَأْتِ بِهِمْ
তুফায়েল ইবনু আমর রাযি. রাসূল ﷺ–এর কাছে এসে বললেন, দাওস গোত্র হালাক হয়ে গেছে। তারা নাফরমানী করেছে এবং (দীনের দাওয়াত) গ্রহন করতে অস্বীকার করেছে। সুতরাং আপনি তাদের প্রতি বদদোয়া করুন। তখন রাসূল ﷺ বললেন, হে আল্লাহ্! দাওস গোত্রকে হেদায়েত দান করুন এবং (দীনের দিকে) নিয়ে আসুন। (বুখারী ২৯৩৭ মাগাযী অধ্যায়)
অনুরূপভাবে জাগতিক বিষয় যেমন, রিজিক সুস্থতা ইত্যাদির জন্য দোয়া করা যায়। বিশেষত যদি তার সুস্থতার কারণে মুসলমানদের উপকার হয় কিংবা তার জন্য দোয়া করলে ইসলামের প্রতি তার অন্তর বিনম্র হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং অনুরূপভাবে যদি সে দোয়াকারীর আত্মীয় হয় তাহলেও তার জন্য দোয়া করা নিষেধ নয়।
আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাযি. হতে বর্ণিত যে,
নবী ﷺ–এর সহাবীদের কতক সহাবী আরবের এক গোত্রের নিকট আসলেন। গোত্রের লোকেরা তাদের কোন আতিথেয়তা করল না। তাঁরা সেখানে থাকতেই হঠাৎ সেই গোত্রের নেতাকে সর্প দংশন করল। তখন তারা এসে বলল, আপনাদের কাছে কি কোন ঔষধ আছে কিংবা আপনাদের মধ্যে ঝাড়-ফুঁককারী লোক আছেন কি? তাঁরা উত্তর দিলেন, হাঁ। তবে তোমরা আমাদের কোন আতিথেয়তা কর নি। কাজেই আমাদের জন্য কোন পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত আমরা তা করব না। ফলে তারা তাদের জন্য এক পাল বকরী পারিশ্রমিক দিতে রাযী হল। তখন একজন সহাবী উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) পড়তে লাগলেন এবং মুখে থুথু জমা করে সে ব্যক্তির গায়ে ছিটিয়ে দিলেন। ফলে সে রোগমুক্ত হল। এরপর তাঁরা বকরীগুলো নিয়ে এসে বলল, আমরা নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করার পূর্বে এটি স্পর্শ করব না। এরপর তাঁরা এ বিষয়ে নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলেন। নবী ﷺ শুনে হেসে দিলেন এবং বললেন, তোমরা কীভাবে জানলে যে, এটি রোগ সারায়? ঠিক আছে বকরীগুলো নিয়ে যাও এবং তাতে আমার জন্যও এক ভাগ রেখে দিও। (বুখারী ৫৭৩৬ চিকিৎসা অধ্যায়)
বলা বাহুল্য, ঝাড়-ফুঁক করা মানে দোয়া করা। যা উক্ত সাহাবী একজন মুশরিকের সুস্থতার জন্য করেছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ তা সমর্থন করেছেন। এর মাধ্যমে অমুসলিমের জাগতিক বিষয়ের জন্য দোয়া করার বৈধতা পাওয়া গেল
তবে তাদেরেক বন্ধু হিসেবে গ্রহন করা যাবেনা।
আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হচ্ছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। (সূরা আলি ইমরান ১১৮)
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে শাতিমে রাসুল এবং মুরতাদের জন্য হেদায়াতের জন্য দোয়া করা জায়েজ আছে।
তাদের জন্য ধ্বংসের দোয়া করার বিধান সংক্রান্ত জানুন
(০৩) জালিম মুসলমান শাসক এর জুলুম যদি অত্যাধিক কঠোর হয়,তাহলে তার জন্য ধ্বংসের জন্য দুআ করা জায়েজ আছে।
(আশরাফুল আমালিয়্যাত ৮৯)
তবে এহেন দোয়া না করাই উত্তম।
এই ভাবে দোয়া করা দরকারঃ
رَبَّنَا لاَ تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ - وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِين
অর্থ- হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর এ জালেম কওমের শক্তি পরীক্ষা করিও না। আর আমাদেরকে অনুগ্রহ করে ছাড়িয়ে দাও এই কাফেরদের কবল থেকে।
(সূরা ইউনুস : আয়াত ৮৫-৮৬)
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৯৬)
মহান আল্লাহর কাছে এই ভাবে দোয়া করা করতে হবে যে তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন ।