আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
138 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
edited by
দ্বীনি ইলম শিখার জন্য পুরুষ উস্তাজদের পড়া শোনানো জায়েজ হবে কিনা?

আমার জানা মতে কওমি মহিলা মাদ্রাসাগুলোতে পর্দার আড়ালে উস্তাজরা পড়ান এবং পড়া নেন।বর্তমানে অনলাইনে যদি মহিলা মাদ্রাসায় পুরুষ উস্তাজদের পড়া শোনানোর প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে কি পড়া শোনানো জায়েজ হবে যেহেতু কন্ঠের পর্দা আছে? আরবি ভাষা, আরবি গ্রামার, উর্দু এসব উস্তাদরা ভালো বুঝাতে পারেন উস্তাজাদের থেকে কারন উনারা বড় বড় প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পান। এক্ষেত্রে অনলাইনে মহিলা মাদ্রাসায় আলেমা কোর্সে যুমে কি তাদের পড়া শুনানো যাবে, যেখানে সবাই বোন থাকবে ভাইদের ফিত্নার আশংকা নেই। এক্ষেত্রে কি করনীয় এখানে পড়া কি জায়েজ হবে দ্বীনি ইলম অর্জন করা ও তো ফরযে কেফায়া। মুফতি সাহেব এর কাছে জানতে চাচ্ছি মনে সারাদিন এই চিন্তা আসছে বুঝতেছিনা শয়তান এর ওয়াস ওয়াসা কিনা।

কলেজ ভার্সিটিতে প্রয়োজনে স্যারদের সাথে কথা বলার বিধান জানালেও উপকৃত হতাম।


আরেকটি প্রশ্ন কলেজ ভার্সিটি মেডিকেলে এপ্লাই বা আবেদনের জন্য ফ্রম পুরন অনলাইনে করতে হয় এবং কম্পিউটারে করার প্রয়োজন পড়ে ছবি নির্দিষ্ট সাইজে দিতে হয় এজন্য কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে করা লাগে এক্ষেত্রে দোকানের লোকেরা ছবি কম্পিউটার এর স্কিনে দেখতে পায় এক্ষেত্রে কি পর্দা নষ্ট হবে যেহেতু দোকানের লোক মাহরম নন এবং এছাড়া উপায় না থাকলে কি করনীয়।


জাজাকাল্লাহ খইরন।

1 Answer

0 votes
by (63,440 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

https://ifatwa.info/29244/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পরিপূর্ণ পর্দা করা ফরজ। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ   

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।

প্রশ্ন হল নারীদের আওয়াজ কি সতরের অন্তর্ভুক্ত?

এ সম্পর্কে উলামাদের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। এমনকি হানাফি মাযহাবের উলামাদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে-

হানাফি উলামাদের কিছুসংখ্যকের গবেষকদের বর্ণননামতে নারীদের আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত। তবে এ রেওয়াত মারজুহ(অগ্রগণ্য নয়)।

অন্যদিকে কিছুসংখ্যক গবেষকদের বর্ণনামতে নারী আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়।এ রেওয়াত-ই রাজেহ(অগ্রগণ্য) । অর্থাৎ ফিৎনার আশঙ্কা না থাকলে কোমলতা পরিহার করে প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে নারী কথা বলতে পারবে।

নারীর প্রতি শরীয়তের নির্দেশনা হল, সে যেন প্রয়োজন ছাড়া এত জোরে কথা না বলে যে, তার আওয়াজ গাইরে মাহরাম পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

এ জন্য ইবাদত বন্দেগীর ক্ষেত্রেও তা লক্ষ রাখা হয়েছে। যেমন, আযান দেয়ার দায়িত্ব নারীদের দেয়া হয়নি। কারণ আযান উচুঁ শব্দে দিতে হয়। নারীগণকে সকল নামাযের কেরাত নিম্নস্বরে পড়তে হয়। হজ্বের তালবিয়া পুরুষগণ উচ্চ আওয়াজে পড়বে কিন্তু মহিলারা পড়বে নিম্ন আওয়াজে ইত্যাদি। আলবাহরুর রায়েক ১/২৭০; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৫৬৩; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৬)

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/1058

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

মহিলাগণ সাধারণ অবস্থায় তাদের কথাবার্তা এমনভাবে বলার চেষ্টা করবে যেন তা নিজেদের পরিসর পর্যন্ত সীমিত থাকে। নিজ ঘরেও এত জোর আওয়াজে কথা বলবে না, যাতে বাইরের লোকজন শুনতে পায়। আর নারীগণ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া পর পুরুষের সাথে কথা বলবে না, সে যেই হোক না কেন। কোন দরকারী কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকেই বলবে এবং কোমলতা পরিহার করে স্বাভাবিক স্বরে বলবে। এভাবে কথা বললে পর্দা নষ্ট হবে না। 

সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতেও পুরুষ উস্তাযের সাথে যতটুকু কথা বলা একান্ত প্রয়োজন, ঠিক ততোটুকু কন্ঠে কোমলতা পরিহার করে স্বাভাবিক ভাবে বলার অনুমতি আছে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...